আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল্লামা শফীর কাতারে যারা তাদের উক্তি নিয়ে কি কখনো প্রতিবাদ করেছি??

লেখিতে এবং পড়িতে ভালবাসি। লেখাটি কারো পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। কারো অনুকুল বা প্রতিকূলে নয়। ধর্মান্ধ বা ধর্মবিদ্বেসীদের জন্য নয়। কোন সমাজ, সম্প্রদায়, জাতি বা শ্রেণীকে উদ্দেশ্য করে নয়।

পুরুষ বা নারী (আমি বলি জননী জাতী) কে হেয় বা সম্মানিত করার জন্য নয়। নারী (জননী জাতী) কে নিয়ে শুধু যে আল্লামা শফী সাহেব কটাক্ষ বা বিদ্রুপ করেছেন সেটা আমি মানতে রাজী না। যুগে যুগে অনেক স্বনাম ধন্য লেখক, কবি, সাহিত্যিক, গল্পকার, মনীষী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিকারীরাও নারীকে নিয়ে বিভিন্ন লেখায় বিদ্রূপ, উপহাস, কটাক্ষ করেছেন, আমি সেই বিষয়ে কিছু উক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করবো মাত্র। আল্লামা শফী সাহেব কি বলেছেন, কি উপমা দিয়েছেন পত্রিকা এবং হুলুদ সাংবাদিকতার কারণে আমরা সবাই জেনে গেছি। তবে সাংবাদিকরা বা যারা ওনার ওয়াজের খন্ডিত অংশ মিডিয়াতে প্রচার করছেন তাঁরা কেউ ওনার ওয়াজের সম্পুর্ণ অংশ প্রকাশ করছেন না।

যারা ওনার মন্তব্যের বা কুৎসিত উপমার অংশটুকু নিয়ে হৈচৈ করছেন, তাঁরা কেউ ওনার সম্পূর্ণ ওয়াজটি শোনেননি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে যে সাংসদরা সংসদে আল্লামা শফীর বক্তব্য নিয়ে শোরগোল পাকালেন, ওনারাও কেউ শফী সাহেবের সম্পূর্ণ মক্তব্য শোনেননি না হয় শোনে থাকলেও রাজনৈতিক কারনে এড়িয়ে যাচ্ছেন। আমিও পুরোটা শুনিনি, এবং শোনার ইচ্ছাও নাই। ওনি সম্মানিত ব্যক্তি নিশ্চয়ই সম্মান রেখে কথা বলবেন এবং কথা বলার পেছনে পটভূমি তৈরি করেই বলবেন বলে আমার বিশ্বাস। আল্লামা শফী সাহেবের উপমার অংশটুকু নিয়ে কথা বলার আগে দেখি আমাদের সুশীল সমাজের কাছে, নারীবাদী এবং নারী নেত্রীদের কাছে, প্রগতিশীল তরুন সমাজের কাছে প্রিয়, আস্থাভাজন স্বপ্নের লেখক, কবি, সাহিত্যিক, মনীষী ও চিন্তাবিদরা সম্মানিত মা জাতীকে নিয়ে কতটা সম্মান প্রদর্শন করেছেন যার জন্য সবাই এদেরকে শ্রদ্ধার সাথে সম্মান করে আর শফী সাহেব তেতুলের সাথে তুলনা করেছেন বলে আজ ঘৃণার সাথে সমালোচিত হচ্ছেন- আমাদের সবার প্রিয় লেখক, সাহিত্যিক, চলচিত্র নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদ সম্মানিত মা জাতীকে নিয়ে তাঁর লীলবতী বইতে যা বলেছেন সেটা কতটুকু মর্যাদার বা সম্মানের আমার ছোট মাথায় বোধগম্য নয়, এই বইয়ের ঐ অংশটুকু লক্ষ লক্ষ হুমায়ুন ভক্তরা পড়েছেন কিন্তু একটা টু শব্দও করেননি।

সাংবাদিকরাতো ওনার গুনকীর্তনেই মশগুল, সুতরাং ইস্যূ বানানোরতো প্রশ্নই আসে না। লীলাবতী বইয়ের কোন এক জায়গায় একজন নারীকে দিয়েই আরেক জন নারীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন "হরিণ সুন্দর চোখে আর নারী সুন্দর বুকে"- বাহ্ নারীকে নিয়ে কি সম্মানীয় উপমা, যা নিয়ে কোন নারীবাদী বা নারী নেত্রীদের হৈচৈ শোনা যায়নি, সুশীল সমাজ তখন নারীর স্তন কল্পনা করে মনে মনে সুখানুভূতিতে মগ্ন ছিলেন। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এতো সময় কই বই পড়ার যে ওনি জানবেন, এর জন্যতো ওনার ভোট কমবে না বরং বাড়বে বলেই মনে করেন। এইতো গেল হাল জমানার জনপ্রিয় লেখকের নারী প্রীতি এবং সম্মান জানানোর ভাষা। এবার আসুন দেখি আরো কিছু সম্মানিত প্রিয় লেখদের নারী প্রীতি ও সম্মান জানানোর ভাষা, যা নিয়ে আমাদের সুশীল সমাজের, নারীনেত্রীদের, নারী সমাজের, প্রগতিশীল তরুন সমাজের কোন মাথা ব্যাথা নেই, যত ব্যাথা শফী সাহেবের তেতুল উপমার জন্য! আধুনিক জনপ্রিয় কবি শামসূর রহমান তার কোন এক কবিতায় নারীকে যে ভাবে বর্ণনা করেছেন "হয়তো স্নানের ঘরে নিজেকে দেখেছো অনাবৃতা, জানালার ফাঁকে বৃষ্টিভেজা নর্তকীর মতো।

গাছটিকে (যৌণাঙ্গ) তীব্র দেখছিলাম তখন! সরার মত স্তন. নাভিমূল. উরু, এবং ত্রিকোন মাংসপিন্ড, কি মন্জুল!!" বাহ্ নারী কে নিয়ে সুন্দর উপমা!!! আরক বিখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আযাদ নারীকে সম্মান দিতে গিয়ে লিখেছেন- "এক একটি উর্বশীকে আমি মেপে মেপে দেখি, ঠোট দেখি! মোটা ঠোট আমার পছন্দ. জিভ দেখি, মোটা ধারালো চ্যাপ্টা খসখসে জিহ্বা আমার পছন্দ! স্তন দেখি, মাঝারী স্তন আমার পছন্দ. পানি ভরা ব্লাডের মত স্তন আমি সহ্য করতে পারি না! স্তনে দাঁতের লাল দাগ আমার চুনির থেকেও ভালো লাগে! উরু দেখি: সরু মাংসল উরু আমার পছন্দ!" বাহ্ কি চমৎকার উপমা, কেউ কথা বলে না। এই উপমা পড়ে নারীরা সম্মানিত বোধ করেন মনে হয় আর সুশীলরা মজা পান। পুরুষ বিদ্বেসী লেখিকা তসলিমা নাসরিন বলেছেন- "পূরুষরা যেমন খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায় নারীরাও তেমনি খালি গায়ে ঘুরে বেড়াবে. তাদের সূউচ্চ স্তন সবাই দেখবে। " চমৎকার সম্মান জানানোর ভাষা! বিখ্যাত লেখক ড. আহমদ শরীফ বলেছেন- "পুরুষদের যদি সততা দরকার না হয় তবে নারীদের সতীত্বের কেন দরকার? নারীরাও পুরুষদের মত যেভাবে খুশি তার যৌণাঙ্গ বিলাতে পারবে"। আতি উত্তম কথা, এর চেয়ে আর সম্মানের ভাষা কি হতে পারে?? ইংরেজী লেখক লিও টলস্টয় বলেছেন “মাঠে ঘোড়া আর ঘরে বউকে বিশ্বাস নেই”।

সবাই মহান উক্তি বলে বাহবা দিয়েছেন এখনো দেন, এখানে কত সম্মান নারীর প্রতি লুকানো! লিও টলস্টয় আরো বলেছেন- “মেয়েরা সাধারণত এতই খারাপ যে, ভাল এবং মন্দ মেয়ের মধ্যে কোন পার্থক্যই করা যায় না”। আহা কি সম্মানিত মন্তব্য! সুশীল সমাজের মনের কথা। ভারতীয় লেখক শংকর বলেছেন- “কম বয়েসী মেয়েরা হলো রসগোল্লার মত, যেখানে রাখবে সেখানেই পিঁপড়ে ধরবে”। চমৎকার উপমা!!! শফী সাহেব কেন তেতুল বললেন, রসগোল্লা বললেওতো পারতেন!! মেনানডার বলেছেন- “পৃথিবীতে বা সমুদ্রে যত হিংস্র প্রাণী আছে তার মাঝে সবচেয়ে বৃহত্তম প্রাণী হল মেয়েরা”। আহা সুশীল সমাজের মনের কথা, নারীবাদী নেত্রীরা মনে হয় এই উক্তি গুলো কোনদিন দেখেন নি, পড়েন নি, শুধু মাত্র শফী সাহেবের তেতুলের উপমাই পড়েছেন, আর তাই গাত্রদাহ হচ্ছে! বিখ্যাত নেপোলিয়ান বলেছেমন- “পুরুষেরা মেয়েদের খেলার সামগ্রী আর মেয়েরা শয়তানের খেলার সামগ্রী, মেয়েরা সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র বৈ কিছু নয়”।

কি মহান উপমা, সবাই মুখে কুলুপ দিয়ে থাকেন। ম্যাস্কিম গোর্কি, সবাই ভালো করে ওনাকে চিনি, বিখ্যাত লেখক, ওনি বলেছেন- “ছোট ছোট পা আর মোটা নিতম্ব বিশিষ্ট নারীজাত সন্তান উৎপাদন ছাড়া কোন কাজে লাগেনা”। নারীরা এই মন্তব্য পড়ার পরওকি সম্মানবোধ করেন!!!! লেখক হুমায়ন অজাদ বলেছেন- “গর্ভবতী নারী দেখতে অনেকটা গর্ভবতী পশুরই মতো”- কোথায় আমাদের সংসদ? কোথায় নারী নেত্রীরা? কোথায় প্রগতিশীল তুরন সমাজ, প্রতিবাদ করার কি কোন প্রয়োজন নেই?? সব দোষ ঐ তেতুল উপমায়??? উপরের উক্তি গুলো লিখছিলাম আর শফী সাহেবের তেতুল তত্বের সাথে মিলাচ্ছিলাম, আল্লামা শফী সাহেব নারীদের তেতুলের সাথে তুলনা করায় যাদের গায়ে ফুসকা পড়লো তাদের গায়ে কি এই সব উক্তি (কটুক্তি) একটুও জ্বালা ধরায় না?? এই গুলো পড়ে কি নারী নেত্রীরা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা, রাজনিতীবিদরা, প্রগতিশীল তরুন সমাজ পুলকিত হোন??? তেতুলের সাথে তুলনা করেছে বলে আপনারা অপমানিত বোধ করছেন? আপনাদের মান সম্মান এতোই ঠুঁনকো যে একটু কথাতেই শেষ হয়ে যায়? লেখক, সাহিত্যিকরা যদি লেখার জন্য অশ্লীল ভাবে নারী জাতীকে তুলে ধরতে পারেন, তাহলে আল্লামা শফী সাহেব কেন নারী অধিকার নিয়ে আলোচনায় তেতুলের সাথে তুলনা করতে পারবেন না (যদিও আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওনার মন্তব্যকে গ্রহন করতে পারি নাই, মা জাতীকে নিয়ে এহেন মন্তব্য কোন ভাবেই কারো থেকেই কাম্য নয়। ) ? আমাদের শিক্ষিত ডক্টরেট ডিগ্রিধারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সংসদে শফী সাহেবের উক্তি নিয়ে বক্তব্য দেয়ার আগে কি এই উক্তি গুলো নিয়ে কখনো কথা বলেছেন? বলেন নি, শফী সাহেব এখন ভোটের ফ্যাক্টর হয়ে দাড়িয়েছেন বলে, আওয়ামীপন্থী লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, নারীনেত্রী, প্রগতিশীল তরুন (সবাই না, আওয়ামীপন্থী) সমাজরা নারীকে অসম্মান করা হয়েছে বলে চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন, টক শোতে বড় বড় কথা বলছেন, বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন, কেউ কেউ ওনার বিচার চাচ্ছেন, তথ্য মন্ত্রী শফী সাহেবকে গ্রেফতার করার জন্য দাবী করেছেন। শামসুর রহমান, হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরীন, হুমায়ুন আহমেদ, সংকর সাহেবরা যখন অশ্লীল বাক্য ব্যবহারে উপমা দিয়ে নারীদের উপমায়িত করলেন, তখন কি ওনি ঘুমিয়ে ছিলেন, নাকি ওনি লেখা পড়া জানেন না, শুধু শোনলেই বুঝেন?? পরিশেষে বলবো, নারী সমাজ আমাদের মা জাতী, এদের সম্মান জানানো আমাদের সবার দায়িত্ব।

ঠিক তেমনি আমাদের সম্মান আদায় করাও মা জাতীর দায়িত্ব। এমন কোন পুরুষ আছেন, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, -"সুন্দরী রমনীদের খোলামেলা দেখলে, অর্ধনগ্ন দেখলে মনের ভেতরে সুরসুরি জাগে না। নিজের অজান্তেই লোভনীয় দৃষ্টি নিয়ে তাকান না?? যে শফী সাহেব তেতুলের সাথে তুলনা করেছেন, যৌবন কালে ওনিও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাই হয়তো ওনি পুরুষদের নিয়ে পরের উক্তি টুকু করেছেন। একটা উদাহরণ প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখি সেটা হলো বেপর্দানশীল নারী কে খোলামেলা মশা মাছি যুক্ত মিষ্টির সাথে তুলনে করে একটি প্রশ্ন করেন-"আপনি মিষ্টি কিনতে গেলে কি খোলা মশা মাছি পড়া মিষ্টি কিনবেন, না ঢাকা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মিষ্টি কিনবেন?" -তবে আমি শরীরের পর্দার চেয়ে মনের এবং চোখের পর্দারকেই বেশী গুরুত্ব দেই।

যার চোখের এবং মনের পর্দা নেই সে সব কিছু করতে পারে। নারীকে বোরখা পড়িয়ে পর্দানশীল করার চেয়ে পুরুষের মন এবং চোখের পর্দার শিক্ষা দেয়া উচিত, তাহলেই প্রকৃত নারীর মর্যাদা বাড়বে, নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠা হবে। তেতুলের উপমাতে নারী সম্মান হানী হয়নি, নারী সমাজের সম্মান বৃদ্ধির জনই আল্লামা শফী সাহেব একটা উপমা টেনেছেন মাত্র। এই নিয়ে যারা হৈচৈ করছেন, শোরগোল করছেন তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ উপরের উক্তি গুলো পড়ুন, বুঝুন এবং আগে সেই গুলোর প্রতিবাদ করুন। ভোটের বৈতরনী পাড় হবার জন্য অযথা মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।

সাংবাদিক সমাজের প্রতি আকূল আবেদন, নারীর সম্মান রক্ষার্থে শফী সাহেবের সম্পূর্ণ ওয়াজটি প্রকাশ করুন, খন্ডিত অংশ প্রকাশ করে মানুষকে ধোঁকা দিবেন না। এতে সমাজে লাভের চেয়ে ক্ষতি হয় বেশী। পরিশেষে আবারও বলি আমি কোন দল, মত, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে খুশী বা সমর্থন দেয়ার জন্য এই লেখাটি লিখিনি। শুধু নিজস্ব স্নাতন্ত্য থেকে, নিরপেক্ষতা থেকে কিছু উক্তি তুলে ধরলাম, সে সব উক্তি বা লেখা বা কটুক্তি নারী জাতীকে চরম ভাবে অপমানিত করেছে, অসম্মান করেছে, অবহেলা করেছে, অবজ্ঞা করেছে মাত্র। যদি সত্যিকারের নারী জাতিকে সম্মান জানানোর জন্য শফী সাহেবের উপমাকে বিরুদ্ধাচারণ করেন, তাহলে আপনাকে উপরের উক্তি গুলের জন্যও সমালোচনা করতে হবে, লেখকদের শাস্তি চাইতে হবে, নিষিদ্ধ ঘোষনা করার দাবী তুলতে হবে, তাহলেই সকলের দাবী যুক্তিযুক্ত হবে অন্যথায় আপনাদের বর্তমান অবস্থান যে শুধুমাত্র নারী ভোটকে আকর্ষন করার জন্য সেটা সচেতন নারী সমাজ বুঝে যাবে।

পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.