আমাদের সবার প্রিয় মিশুক মুনীর স্যার। প্রথম যখন এই অফিসটাতে যোগ দেই তখন তিনি ছিলেন দেশের বাইরে। লিবিয়ার অসহায় বাংলাদেশীদের খবর তুলে আনতে স্যার ছুটে গেছেন ক্যামেরা হাতে সঙ্গে আমাদের মুন্নি্ দি। এরপর হঠাৎ একদিন তার আগমন। কেউ একজন বলে দিল ইনিই আমাদের সিইও স্যার।
প্রথম দেখাতেই ভাল লাগে এরকম একটা সৌম্যদর্শন মানুষকে দেখলাম। গোঁফে চুলে ব্যাক্তিত্ববান মহাপুরুষ।
তখন আমাদের নতুন যোগ দেয়া রিপোর্টারদের ট্রেনিং ক্লাস হত কনফারেন্স রুমে। একদিন শুনলাম স্যার আজ বসবেন নতুনদের নিয়ে। সবাই মিলে কনফারেন্স রুমে বসলাম।
স্যার এলেন শুরু করলেন কোন ভুমিকা ছাড়াই। কিন্তু অপরিচিত মানুষদের এভাবে আপন করে ভুমিকা ছাড়াই কথা শুরু করা যায় প্রথম দেখলাম। মুগ্ধ হলাম। সবার সাথে স্যার পরিচিত হলেন । শুনলেন কার কোন বিটে আগ্রহ।
আমার আগ্রহ আইন আদালত শুনে কারণ জিজ্ঞেস করলেন। ,আমি বললাম স্যার আমার একসময় আইন পড়ার খুব শখ ছিল। সাথে সাথে প্রাণখোলা হাসি । যে হাসির মধ্যে আমি খুজে পেলাম তার হৃদয়। হাসি দিয়েও যে নিজের ব্যাক্তিত্ব ফুটে তোলা যায় তা স্যারকে না দেখলে বোঝা যেত না।
এরপর বেশ কয়েকটা মাস চলে গেল । দেখলাম একজন প্রকৃত কাজপাগল মানুষ। যতক্ষণ অফিসে থাকতেন কোন না কোন কাজে ব্যাস্ত থাকতেন। স্যার ছিলেন সব বিষয়ে পারদর্শী । যে কোন বিভাগে যে কোন যন্ত্রিক সমস্যা সবাই ছুটতেন স্যারের কাছে।
সমস্যার সমাধান নিমেষেই। স্যারকে আমরা সবসময় অফিসে পেতামও না । কোন না কোন কাজে তিনি অনেকসময় দেশের বাইরে থাকতেন। দেশে যখন আসতেন শুনতাম আমাদের জন্য নতুন প্রযুক্তি আসছে। সাপ্তাহিক রিপোর্টার্স মিটিংয়ে হঠাৎ মিশুক স্যার জানিয়ে যেতেন কি আসছে আমাদের জন্য।
বলতেন রিপোর্টার যেখানে থাকবে সেখানে থেকেই হবে সম্প্রচার। আর আমার চ্যানেলর সব রিপোর্টার হবে ব্যকপ্যাক রিপোর্টার। স্যার ছিলেন একজন পুর্ণাঙ্গ সম্প্রচার প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ।
শুক্রবার রাতেও(১১.৩০মি) অফিসে বসে যখন একটি রিপোর্ট লেখছি তখন স্যার পিছনে এসে দ্বাড়ালেন। কাঁধে হাত রেখে স্ক্রিপ্ট দেখলেন।
বললেন একটি ব্যাক্যে চেষ্টা করবে একটি বা বেশি হলে দুটি তথ্য দেবার। খেয়াল রাখবে তোমার বাক্যের গঠন যেন তথ্য ভারাক্রান্ত না হয়। কে জানত কাল এই মনুষটির জন্য দুঃখে এত ভারাক্রান্ত হতে হবে? স্যারকে হারিয়ে আজ মনের ভার যে আর নামাতে পারছিনা। কদিনইবা পেয়েছি স্যারকে? তবু কেন যেন স্যারকে মনে হত একজন আপন মানুষ।
স্পটে কোন সমস্যা ? স্যার নিজেই ছুটে আসতেন সমাধানে।
মনে আছে হরতালের দিনও লাইভ এ সমস্যা হওয়ায় স্যার ছুটে এসেছেন সমাধান দিতে। বিমোহিত করার মত ব্যক্তিত্বর জন্য স্যার ছিলেন অফিসের সবার নয়নমনি।
স্যারকে এভাবে হারিয়ে আজ মনে হচ্ছে যে চেয়ারটা স্যার খালি করে গেলেন সেটা হয়ত একদিন পূরণ হবে। কিন্তু যে শূণ্যস্থান তিনি রেখে গেলেন বাংলাদেশের সম্প্রচার সাংবাকিতায় তা কি পূরণ হবে আর কোনদিন? সম্প্রচার সাংবাদিকতার এই উৎকর্ষের যুগে একজন মিশুক মুনীরের অনেক প্রয়োজন ছিল।
আমরা অবিলম্বে রাজপথের এ হত্যাকান্ড বন্ধে সরাকারের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করছি।
এভাবে আমাদের সপ্নগুলোকে আর আমরা সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে চাই না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।