আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়েটার রোল ছিল আনলাকি থারটিন (দ্বিতীয় পর্ব)

:-) প্রথম পর্ব তিতলী হাসতে হাসতে মুখের সামনে পড়ে থাকা এলোচুল সরিয়ে দিয়ে বলল,"কোথায় যাচ্ছেন সাব্বির ভাই?” “এই তো! একটু হেঁটে আসি। বিকাল বেলা হোষ্টেলে ফিরতে ভাল লাগেনা। " সাব্বির মিথ্যাটা বলতে একটু বিব্রত বোধ করল। কিন্তু সুহাসিনী রূপবতী একটা তরুণীকে নিশ্চয় বলা যায়না ধারের টাকা ফেরত আনতে যাচ্ছি। সাব্বির তিতলীকে দেখে খুশি হয়েছিল,ভেবেছিল তিতলীর সাথে নিশাত-ও থাকবে।

নিশাতকে চট করে দুপুরের খারাপ ব্যবহারের জন্য একটা সরি বলে ফেলা যাবে। তিতলীর সামনে সরি বললে নিশাত আর রাগ করে থাকতে পারবেনা। কিন্তু তিতলীর আশে-পাশে নিশাতকে না দেখে সাব্বির বেশ হতাশ হল। “তিতলী,নিশাতকে দেখেছ?" “না তো সাব্বির ভাই,আমি কলেজ থেকে ফিরছি। নিশাত আপা তো হোষ্টেলে চলে গেছে মনে হয়।

আমার ফিজিওলজী ক্লাস ছিল। একটু আগে ক্লাস শেষ হল। দেখেন না হাতে এপ্রণ? হোষ্টেল থেকে আসলে কি এপ্রণ নিয়ে আসতাম নাকি?" “ও হ্যাঁ,তাইতো! খেয়াল করিনি। আচ্ছা,তুমি হোষ্টেলে যাও তিতলী। আমার একটু কাজ ছিল।

পরে তোমার সাথে কথা বলব। " তিতলী হঠাৎ খুব গম্ভীর হয়ে গেল। গম্ভীর গলাতেই বলল,"আপনি আমাকে সবসময় এভয়েড করেন কেন সাব্বির ভাই? আচ্ছা যান,আপনার মহা মূল্যবান কাজে যান। ” তিতলী উত্তরের অপেক্ষা না করেই প্রায় একছুটে সাব্বিরের সামনে থেকে সরে অন্যদিকে চলে গেল। সাব্বির ভাইয়ের অহংকারী আচরণে তার খুব খারাপ লেগেছে।

সব কথাতেই ‘নিশাত কই,নিশাত কই’! ভাল লাগেনা একটুও। একা একা কিছুক্ষণ কাঁদতে পারলে শান্তি পাওয়া যেত। কিন্তু মরার মেডিকেলের হোষ্টেলে সবজায়গাতেই গিজগিজে মেয়ে। ঘিন্না লাগে! তিতলীর ছুটে পালিয়ে যাওয়া দেখে সাব্বির পড়ল মহা মুশকিলে। এই মেয়ে বলে কি? পিচ্চি একটা মেয়ে--তার এইসব এভয়েড টেভয়েড নামের জটিল কথা বলার কি দরকার? এই বয়সের মেয়েরা একটুতেই অভিমান করতে পছন্দ করে।

তিতলীও যে সেই দলে এটা সাব্বির বুঝেনি। আজকে প্রথম বুঝতে পারল। তিতলী মেয়েটা চটপটে,কথা বেশি বলে। বুদ্ধিমতীও বটে। প্রথমদিন কলেজে যেদিন নিশাতের সাথে এসেছিল,সেদিন মনেই হয়নি এই বাচ্চা মেয়েটা এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে।

নিশাতের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যামলা,রোগা মতন চশমা পড়া মেয়েটাকে দেখিয়ে নিশাত বলেছিল,“সাব্বির,আমার মামাতো বোন তিতলী। তিতলী এবার চিটাগাং মেডিকেলে চান্স পেয়েছিল। কিন্তু মামা-মামী আমার কাছে রাখতে চান দেখে পরে রাজশাহীতে মাইগ্রেট করে নিয়ে এসেছেন। " সাব্বির কিছু বলার আগেই তিতলী ছটফট করে বলে ঊঠে,"স্লামালিকুম ভাইয়া। ভাল আছেন? আপনার কথা অনেক শুনেছি নিশাত আপার কাছে।

" এভাবেই প্রথম দিন কথা হয়েছিল তিতলীর সাথে সাব্বিরের। নিশাতের সাথে কোথায় যেন বড় রকমের একটা মিল আছে তিতলীর। অথচ দুই বোন সম্পূর্ন দুই রকম। কথাবার্তা,চেহারায়। একদিন ব্যাপারটা নিশাতকে জিজ্ঞেস করেছিল সাব্বির।

নিশাত হিহি করে কিছুক্ষণ হেসে তারপর বলেছিল,"ঠিক-ই ধরেছিস। আমাদের দু’বোনের মধ্যে একটা ভয়াবহ মিল আছে। তবে সেটা আজ না,অন্য কোন দিন তোকে বলব। ” ----------- সার্জারী ওয়ার্ড ফাইনালের আগের রাতে নিশাত ব্যাকুল হয়ে বারবার সাব্বিরের মোবাইলে ফোন করল। ফোন বন্ধ।

নিশাতের কিছুই পড়া হচ্ছেনা। রুমমেট তামান্নার দিকে তাকিয়ে মিহি গলায় নিশাত বলল,"সাব্বির তো ফোন ধরছে না রে!” তামান্না চোখ থেকে খুলে পড়া চশমাটা ঠিক জায়গায় বসিয়ে বলল,"দ্যাখ নিশু,সাব্বির তোর বয়ফ্রেন্ড না-বাচ্চা ছেলেও না। ওর ইচ্ছা হলে পরীক্ষা দিবে,না হলে পরে সাপ্লি দিবে। এত চিন্তা না করে নিজের পড়া পড়। আমার কানের কাছে ক্যানক্যান করবিনা।

আমাকে পড়তে দে। " “কিন্তু আমাকে কালকেও সাব্বির বলেছে পরীক্ষা দিবে!” “তাহলে দিবে। চিন্তা করিস ক্যান? “জানিনা!” “নিশু,একটা ভাল উপদেশ দিই। সাব্বিরকে বলেই ফেল। তোরা দুইজন হচ্ছিস মেইড ফর ইচ আদার।

" “নাহ,ভয় লাগে রে—এমনিতেই পাত্তা-টাত্তা দেয়না,যদি এসব বললে আরো দূরে সরে যায়!” ----------- পরেরদিন সকালে সার্জারী ওয়ার্ডে গিয়ে সাব্বিরকে দেখে শান্তি পায় নিশাত। বাবু তো দেখি মহা ফিটফাট হয়ে পরীক্ষা দিতে চলে এসেছেন। তাহলে ফোন বন্ধ রাখার ঢংটা না করলে চলছিল না! পরীক্ষার পর নিশাত এগিয়ে যায় সাব্বিরের কাছে। “কি মনে করে পরীক্ষা দিতে আসলি?" “আতিক ভাই জোর করে পাঠায় দিল। " মুখ কালো করে কথাটা বলে সাব্বির।

“বললাম প্রিপারেশন নাই,তারপরও বলল,আরে যা যা। পাশ করে যাবি। " “তুই যখন পরীক্ষা দিতে এসেছিস,তার মানে ভাল প্রিপারেশন নিয়েই এসেছিস। এবং বুঝতে পারছি পরীক্ষাও ভাল দিয়েছিস। " “হুঁ, দিয়েছি আর কি! তবে আমি জানি নিশাত মেয়েটা ভাল প্রিপারেশন নিয়েই এসেছিল।

কিন্তু খারাপ পরীক্ষা দিয়েছে। কারণ তার রোল হচ্ছে আনলাকি থার্টিন। " এই সাধারণ কথাটা বলে নিজেই অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়ে সাব্বির। নিশাত অবাক হয়ে সাব্বিরকে দেখে। এই অহংকারী,উদ্ধত ছেলেটার হাসিতে কেমন একটা মায়া থাকে।

এটা ঠিক না! মোটেও ঠিক না! উদ্ধত মানুষের হাসি তো অট্টহাসি হ্‌ওয়া উচিত না! ----------- সাব্বিরের আজকাল খুব অস্থির লাগে। আর ক’টা দিন পরেই ফাইনাল প্রফ,পড়াশোনা সেভাবে হচ্ছেনা। ঢাকায় অসুস্থ রিয়াটার্ড বাবা একা। নিজের হাতখরচ নিয়ে টানাটানি। ছন্নছাড়া নিয়মবিহীন জীবনের জন্য দুইটা টিউশনি হাতছাড়া হ্‌ওয়া।

এদিকে নিশাতের মত সহজ সরল মেয়ে তার প্রেমে পড়ে গেছে জেনেও ঝুলিয়ে রাখা। সব কিছু নিয়ে সাব্বিরের মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অসহায় লাগে। “কিরে কি লইয়া এত চিন্তা করস দোস্ত?" “ধুর! শালার জীবন আর ভাল্লাগেনা!” সিগারেটের ধোঁয়া দিয়ে রিং বানাতে বানাতে মামুনকে বলে সাব্বির। তারপর হোষ্টেলের ঝুলওয়ালা রুমের সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আপন মনেই বলে,"নিশাতকে নিয়ে খুব ঝামেলায় আছি রে। মেয়েটা নিশ্চিত আমাকে পছন্দ করে।

কিন্তু ওকে ভালোও লাগে,আবার লাগেও না। ঢাকায় ওদের নিজেদের বাড়ি আছে। টাকা-পয়সার টানাটানি তেমন শুনিনি। সেই তুলনায় আমাদের অবস্থা তো কেরোসিন। ওর বাবা তো জীবনেও রাজি হবেনা আমার মত ভবঘুরে ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে।

" “আব্বে এখন ত্থিকাই বিয়ের চিন্তা করস ক্যান? বিসমিল্লাহ বইলা প্রপোজ কইরা ফেলা। তোরে গ্যারান্টি দিতেছি নিশাত ভাল মাইয়া। কয়েকদিন প্রেম-ট্রেম কইরা ল'। " “নিশাত ভাল মেয়ে সেইটা তো জানি। এজন্য-ই তো ওকে ঠকাতে ইচ্ছা করেনা।

" “ধুস শালা! তোরে দিয়া কিছু হইবনা। পুরাই পুতুপুতু হইয়া গেছস। " একটা অশ্লীল গালি ছুড়ে দিয়ে সপাটে সাব্বিরের কাঁধে একটা ঘুষি মারে মামুন। ------------ “আপা,ও আপা! কি পড় এত? চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি। " তিতলীর ডাকে চমকে ঊঠে নিশাত।

নিশাত আসলে মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল না। Davidson’s এর বইটা টেবিলের উপর খুলেই রেখেছিল শুধু। নিশাত ভাবছিল বাবার কথা,বাড়ির কথা। বাবা-মা নিশাতের বিয়ের জন্য খোঁজখবর করছেন। বিয়ের প্রস্তাব ও এসেছে দুই-তিনটা।

এর মধ্যে চিটাগাং-এর এক ব্যবসায়ীড় ছেলেকে বাবার খুব পছন্দ হয়েছে। হয়ত ফাইনাল প্রফটা পাশ করে গেলেই বাবা বিয়ে দিয়ে দিবেন। “তোমার সাথে শুধু হোষ্টেলে ঘুরে বেড়ালেই হবে? আছ তো ফার্ষ্ট ইয়ারের মজাতে। সাতদিন পরে ফাইনাল প্রফ হইলে বুঝতা পড়া কাকে বলে!” “ফাইনাল প্রফের পড়া অনেক কঠিন আপা?” “হুঁ। তবে এখন ভালমত ফার্ষ্ট প্রফের পড়াটা পড়।

" “আচ্ছা,সাব্বির ভাই অনেক ট্যালেন্ট, না আপা?” “হুঁ। তুই কিভাবে বুঝলি?” “সাব্বির ভাইকে একটা ধাঁধা ধরেছিলাম। উনি ঠিক উত্তরটা দিয়েছেন। " “কি ধাঁধা?” “উহু। ওইটা তোমাকে বলা যাবেনা।

" তিতলী বাচ্চা মেয়েদের মত মাথা নাড়ায়। দেখতে বড় ভাল লাগে নিশাতের। তিতলীর চোখদুটো খুব গভীর আর উজ্জ্বল। চশমার হাই পাওয়ার সে উজ্জ্বলতা ঢেকে দিতে পারেনি। নিশাত মুগ্ধ হয়ে তিতলীকে দেখে।

বড় আহ্লাদী তার এই বোনটা! “তুমি সাব্বির ভাইকে খুব পছন্দ কর,তাইনা আপা?” “হাহাহা। তোকে এসব কে বলল রে?” “কেউ বলেনি। আমি জানি। " তিতলী মুখটা শক্ত করে ফেলে। নিশাত সেই মুখের দিকে তাকিয়ে এক ধরণের আতঙ্ক অনুভব করে।

তিতলীর মত বয়সে ফার্ষ্ট ইয়ারে থাকতে একদিন সাব্বিরের এলোচুল আর ঔদ্ধত্যের প্রেমে পড়েছিল নিশাত। ঠিক এই বয়সেই! আরো পাঁচ বছর আগে। পাঁচ বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও সেই মোহ কাটানো সম্ভব হয়নি নিশাতের। -------------- ভাঙ্গাচোরা গেইটের সামনে মরচে পড়া সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা “রাজশাহী মেডিকেল কলেজ”। মেডিকেলের ভেতরে নোটিস বোর্ডের সামনে প্রচন্ড ভীড়।

ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। নোটিসবোর্ডের ভীড়ের দিকে আর একবার মাথা ঘুরিয়ে সাব্বির বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পায়ের কাছে পড়ে থাকা ইটে লাথি মেরে বলল,"যাহ শালা! ডাক্তার হয়েই গেলাম তাহলে!” সাব্বির তখনো জানেনা তার সবচে’ কাছের বন্ধু গাধাটাইপ কিন্তু সিরিয়াস ছাত্রী নিশাত ডাক্তার হতে পারেনি। প্রফ পরীক্ষায় মেডিসিনে ফেল করেছে আটত্রিশ জন। নিশাত সেই আটত্রিশ জনের একজন। (চলবে) তৃতীয় পর্ব শেষ পর্ব  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.