আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন থেকে নেয়া, আমি এবং আঁকা (পর্ব-৪)

একলা মানুষ মাতৃ গর্ভে একলা মানুষ চিতায় একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ পিতায় আর, মধ্যে খানে বাকিটা সময় একলা না থাকার অভিনয় [ডাউন টাউনে একটা বাসা ভাড়া নিলাম। জায়গাটা ভিষণ অদ্ভুত। বাড়িটার পেছনের অর্ধেকটা নোম্যান্স ল্যান্ড। উ এন সোলজারস দের সারাক্ষণ দেখা যায় ঘোরা ফেরা করতে। অদূরেই পতিতা পল্লী।

পতিতাদের প্রত্যেকেরই নিজের বাড়ি। কিছু কিছু বৃদ্ধাকে দেখা যায় সারাদিন বারান্দায় বসে থাকতে খদ্দেরের আশায়। বাড়ির সামনে দিয়ে গেলেই চেচিয়ে বলত, "থেলিস ধিকিধিকি রে মানাম" মানে বুজতেই পারছেন... কে যাবে বুড়ির কাছে? খুব মায়া লাগত দেকতে। ] অনেক চেষ্টা করলাম কলেজ কে ম্যানেজ করতে যেন আমি সাইপ্রাসেই চিকিৎসা নিয়ে থেকে যেতে পাড়ি। কিন্তু কিছুতেই তারা মানল না।

রিপন মানে আমার যে বন্ধু আমাকে হস্টেল থেকে নিয়ে এসেছিল ওর সাথে একজন বিশেষ বড় ভাই ছিল সাইপ্রাসের বাঙালী সমাজে যাকে তখন বিগ শার্ক বলা হত নাম রাকিব। তাদের কাজ স্টুডেন্ট ভিসা বের করা, ব্যাংক একাউন্ট করে দেয়া, হাউজ এগ্রিমেন্ট সহ বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের কে আইনি সহায়তা দেয়া বিনিময়ে মোটা অংকের ফি। পরের দিন বিকেল ৪:৩০ মি আমার কল এল এমিরেটস এয়ার লাইনস থেকে। রাকিব ভাই বললেন ফোনটা আমার কাছে দাও। উনি সেট থেকে সিম টা খুলে ভেঙে ফেললেন, বললেন খাও দাও ঘুমাও চার মাস অপেক্ষা কর সাইপ্রাস ইউরোপে পদার্পণ করতে যাচ্ছে।

আমার কাছে প্রায় ১২০০ ডলার ক্যাশ ছিল, চলতে কোন সমস্যা হচ্ছিল না। আমি উঠেছিলাম রাকিব ভাইয়ের ছোট ভাই এর বাসায়। ইতিমধ্যে আমাদের আর দুজন বন্ধু আসল ঢাকা থেকে। ডাউন টাউনে একটা বাসা ভাড়া নিলাম। জায়গাটা ভিষণ অদ্ভুত।

বাড়িটার পেছনের অর্ধেকটা নোম্যান্স ল্যান্ড। উ এন সোলজারস দের সারাক্ষণ দেখা যায় ঘোরা ফেরা করতে। অদূরেই পতিতা পল্লী। পতিতাদের প্রত্যেকেরই নিজের বাড়ি। কিছু কিছু বৃদ্ধাকে দেখা যায় সারাদিন বারান্দায় বসে থাকতে খদ্দেরের আশায়।

বাড়ির সামনে দিয়ে গেলেই চেচিয়ে বলত, "থেলিস ধিকিধিকি রে মানামো" মানে বুজতেই পারছেন... কে যাবে বুড়ির কাছে? খুব মায়া লাগত দেকতে। শুয়ে বসে আর পুল খেলে দিন কেটে যাচ্ছিল। শিত চলে এল। এখানে সামারে কোন বৃষ্টি নেই । প্রচন্ড শিতে, অদ্ভুদ বৃষ্টি।

আঁকার প্রথম চিঠি পেলাম। মন্ত্র মুগ্ধর মত পড়লাম। একদম শেষে লিখা - "এই মুহূর্তে আল্লাহ যদি আমকে বলতেন, একটা কিছু চাইতে, আমি বলতাম, আমি আমার স্বামীর বুকে যেতে চাই। তারপর বলতাম আমি আমার স্বামীর বুক থেকে আর কোথাও যাব না " আমি লাইনটা হাজার বার পড়লাম যতক্ষণ না বুকের সবটুকু ব্যথা অস্রু হয়ে ভেসে যায়। তিন মাস কেটে গেল আমার হাতের টাকা শেষের পথে।

তিনজনের খরচ আমাকে একাই চলাতে হচ্ছে। ওদের খরচ রিপনের দেয়ার কথা ছিল, যা কখনই দেয়নি। আমি ডাউন টাউনের বাসা ছেড়ে অন্য বাসায় চলেগেল। এখানে আরো ৮ জন এক সাথে থাকে তাই খরচ কম হবে। একদিন একটা কাজের অফার আসল।

এক মাছরের সাথে ভিলেজে যেতে হবে ফলের বাগানের কাজ করতে। গ্রীক ভাসায় মালিক বা বস কে মাছরে বলে। থাকা এবং খাওয়ার ব্যাবস্থা মাছরেই করে দিবেন। লুফে নিলাম। অন্তত নিরাপদে থাকা যাবে।

শহরে মামুদের ভয়ে অস্থির থাকতে হয়। ইমিগ্রেশন পুলিশরা নাকি দরজায় করা নেড়ে বলে "মামুরা আইছি দরজা খোল" ওরা এই বাক্য টা কোথা থেকে শিকল শে আমর কাছে এক বিরাট রহস্য। শুনেছি কোন কোন বাঙালী পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে টাকার লোভে। হায়রে বাঙালী যেখানেই যাই রাজাকার আর মিরজাফররা আমাদের পিঠে চেপে বসে সিন্দাবাদের ভুতের মত। আমরা ৬ জন একটা মাইক্রোতে চেপে রওনা দিলাম ।

দু ঘন্টা পর আমরা একটা পাহাড়ি ঢাল বেয়ে উঠে এলাম একটা "পেরেস্তেরনা" নামের একটা ছোট্ট ভিলেজে। পাহাড়ের উপর গড়ে ওঠা অসম্ভব সুন্দর একটা গ্রাম যার তিন দিকেই সমুদ্র দেখা যায়। মাছরে আমাদের কে একটা মলে নিয়ে গেলেন বললেন যা যা লাগবে এখান থেকে নিয়ে নিবে আমি বলে দিচ্ছি। আমরা কেনাকাটা করে আমাদের জন্য নির্ধারিত বাড়িতে আসলাম। আগামি কাল সকাল ৬ টায় ফোরম্যান গাড়ি নি্যে আসবে আমাদের কে কর্মস্থলে নিয়ে যেতে, জানিয়ে মাছরে চলে গেলেন।

আমরা একটা বিষয় আবিস্কার করলাম। বাড়ি ভেতের বিভিন্ন জায়গায়, দেয়ালে, দরজায়, ম্যাগাজিনে বাংলা এবং ইংরেজিতে লিখা "ভাই এই মাছরের কাম কইরেন না টাকা দিবনা", "মাছরে ভালা না", "Go back now" ইত্যাদি। । কাজত নয় আর্মি ট্রেনিং। পাহাড়ের ডালে মাটি সমতল করে কাটা বড় বড় একেকটা বাগান ।

মাল্টার মত দেকতে যাকে ওরা বলে মান্দরা আর মিষ্টি লেবু পেড়ে ২৫ কেজির বক্স ভরে কাধে নিয়ে লরিতে লোড করতে হত। তাতেও সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে যখন প্রচন্ড শিত আর বৃষ্টিতে হাত পা অবশ হয়ে যেত আর সেই সাথে কাদামাটি বুট জুত কামড়ে ধরত। আমাদে সাথে এক বড় ভাই ছিলেন আলি নাম। আলি ভাই আর আমি বক্স কাধে নিয়ে পাশা পাশি খুব দ্রুত হাটছি উনি বললেন, নিজেকে গাধা গাধা মনে হচ্ছে বুজলে? গাধায় পিঠে কিছু না থাকলে চলবার চায়না।

দুই মনের দুইটা বস্তা পিঠে তুইলা দিবা দেখবা আমাগো মতন দৌড়াইয়া যাইব। আমি বাক্স নামিয়ে কতক্ষণ হেসে নিলাম। এই ছিল আমাদের গাধার খাটুনি। কেটে গেল ৪০টা দিন ততদিনে আমরা বুঝে ফেলেছি ঘটনা সত্য, টাকা পাওয়া যাবেনা। একদিন আরো কিছু নতুন ছেলে আসল কাজ করতে ওরা আফগানিস্তানী ।

আমি ওদের সতর্ক করলাম, বললাম আমরাও চলে যাচ্ছি দু এক দিনের মধ্যেই। বুজতে পারিনি এরা পাকিদের সহদর। মাছরের কানে গেল। আমাদের কে ডেকে হুমকি দিল, চলে জেতে চাইলে পুলিশে দিবে বলে। পরের দিন আফগানি দের বললাম "হাম তুমহে দিল দিয়া পেয়ার সামসকে তুম উচ্ছে খা লিয়া বাদাম সামাসকে?"।

দিল হেয় তোমহাড়ে পাছ? হারামি গুলোর উত্তর। পরের দিনই আমরা জান নিয়ে পালিয়ে আসলাম পাওনা টাকাত পরের কথা। সাইপ্রাসের সবাই এই মাছরের মত নয়। মেসে ফেরার ২ দিন পর এক এডভোকেটের অফিস শিফটিং এর কাজ করতে গিয়েছিলাম । কাজ কিছুই না, ফাইল আর বই পত্র দোতলা থেকে তিন তলায় নেয়া।

ভদ্রলোক আমাদের থেকে বেশি কাজ করলেন, পিজ্জা খাওয়ালেন, গল্প করলেন। ফেরার সময় বললেন, তোমাদের কত দিলে খুশি হবে। আমরা লজ্জায় পরে গেলাম। ওর এখানে বেরাতে এসে পারিশ্রমিক নেই কি ভাবে? ১০০ ডলার করে ৫ জনকে ৫০০ ডলার দিলেন। সময়ের চাকা ঘুরছে।

সাইপ্রাস ইউ তে অন্তর ভুক্ত হল। সবাই হাত তোলা দিচ্ছে মানে পাসপোর্ট গুম করে রেফিউজি অথবা পলিটিক্যাল সেলটাররে জন্য আবেদন করছে। বিগ শার্ক, রাকিব ভাই বললেন ধীরে চলাও গাড়ি নিরাপদে ফির বাড়ি। আমি ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষায় রইলাম। ৪-৫ দিন পর উনি বললেন, কাল কাক ডাকা ভোরে রেডি থাকবা কাম আছে।

একটা বিষয় আমি সেদিন লক্ষ্য করলাম ওরা খৃস্টান, ফজরের নামাজ পড়েনা । কিন্তু ভোরের আল ফুটতেই কাজে বের হয়ে যায়। ৭:৩০ এর মধেই ব্যাংক, বিমা সব খুলে যায়। অথচ আমরা নামাজ পড়লেও আবার ঘুমাই কারণ অফিস ৯/১০ টায় । আর ডে লাইট সেভিং এর নামে ঘড়ির কাটা ধরে টানা টানি করি।

রাকিব ভাই কাক ডাকা ভোরেই আসলেন পাসপোর্ট টা নিয়ে গাড়িতে বসতে বললেন। আমরা ইমিগ্রেশন অফিসে গেলাম। উনি আমাকে অফিসে ঢুকে কোসতানদিনো নামে এক এডভোকেটের কাছে যেতে বললেন। লং কোর্ট পরা চুল ব্যাক ব্রাস করা এডভোকেটের কোসতানদিনো কে খুজে পেলাম। উনি একটা রুমে আমাকে ঢুকিয়ে গ্রীক ভাসায় এক ভদ্র মহিলাকে কি জেন বলে বের হয়ে গেলেন।

ভদ্র মহিলা আমার পাসপোর্ট নাম্বার নিয়ে কম্পিউটারে সার্চ দিলেন। অনেক লেখার নিচে লাল কালি দিয়ে লেখা একটা বাক্য আমার নজরে পড়ল "Action to be taken " জীবন থেকে নেয়া, আমি এবং আঁকা - সম্পূর্ণ (পর্ব- ১ থেকে পর্ব-৭) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.