আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবদুল আজিজের চমকপ্রদ উদ্ভাবন

রফিকুল ইসলাম ঃঃঃঃ------- প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়াই যে জ্ঞান চর্চার জন্য বা বুদ্ধিবৃত্তির চর্চার জন্য সব সময় অনিবার্য নয়, তার প্রমাণ দেশ-বিদেশে অনেক আছে। সম্প্রতি তেমনি এক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন অথচ বিজ্ঞানচিন্তা আছে এমন মানুষের সন্ধান মিলল মৌলভীবাজার সদর উপজেলায়। তিনি গবেষক আবদুল আজিজ। কৃষি খাতে ব্যবহৃত নতুন নতুন কৃষি সরঞ্জাম উদ্ভাবন করে মৌলভীবাজারে চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি। কৃষি উপকরণ উদ্ভাবনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ বৃক্ষের ওপর গবেষণা করে তিনি যুগান্তকারী সাফল্য পেয়েছেন।

আবদুল আজিজ সম্প্রতি উদ্ভাবন করেছেন কৃষিবান্ধব একটি যন্ত্র। যা ব্যবহার করে একসঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই এবং ধান বস্তাবন্দির কাজ করা যায়। মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার রামপুর গ্রামের মরহুম আবদুর রাজ্জাকের ছেলে আবদুল আজিজ। একজন সৌখিন বৃক্ষপ্রেমিক থেকে তিনি আজ গবেষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আজিজের গবেষণার ফসল এক গাছে উৎপাদন করেছেন হরেক রকম ফুল ও ফল।

তার উৎপাদিত ফলে রয়েছে স্বাদের ভিন্নতা। আজিজের বাড়িতে সারা বছর ধরছে সুস্বাদু কুল (বরই)। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান আবদুল আজিজের উদ্ভাবিত একসঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই এবং ধান বস্তাবন্দি করতে সক্ষম এ মেশিনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর আগে আবদুল আজিজ ২০০৯ সালে প্রথম একটি ধান ঝাড়াই মেশিন আবিষ্কার করেন। ধান ঝাড়াই মেশিনটি এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

এরপর থেকে তিনি ভাবতে থাকেন এ যন্ত্রকে কেমন করে আরও আধুনিকীকরণ করা যায়। এক সময় তিনি তার আবিষ্কৃত এ ধান ঝাড়াই মেশিনের সঙ্গে কনভার্টার বেল্টের মাধ্যমে সংযুক্ত করে একটি মাড়াই মেশিন। এখন কৃষক মাঠ থেকে ধান কেটে ওই মেশিনে দেওয়ার পর ধান মাড়াই ও ঝাড়াই হয়ে সোজা বস্তায় গিয়ে পড়ে। এ মেশিনটি তৈরি করতে একজন কৃষকের খরচ হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। প্রয়োজন হয় একটি ডিজেল মেশিনের।

৫ লিটার ডিজেলে ঘণ্টায় এ মেশিন দিয়ে ১০০ মণ ধান মাড়াই ও ঝাড়াই করে বস্তাবন্দি করা যায়। এ বছর পুরো ধানের মৌসুমে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে কাজে লাগিয়েছেন মেশিনটি। পরীক্ষামূলক ব্যবহারেও আর্থিকভাবে আজিজ অনেক লাভবান হয়েছেন। এক বছর আগে তার বাড়িতে ১৭০ জন শ্রমিক (কৃষক) কাজ করতেন। এখন এ মেশিনের জন্য তার লোকসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ জনে।

পুরো মৌসুমে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শতভাগ সফলতা নিশ্চিত হয়ে অন্য কৃষকদের জন্য এ ফর্মুলা উন্মুক্ত করে দিতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। আবদুল আজিজ জানান, এ মেশিন নিয়ে তার গবেষণা তিনি অব্যাহত রেখেছেন। এটিকে আরও আধুনিকীকরণ করে তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অংশ নিতে চান। এ মেশিনটি তৈরিতে তাকে কারিগরি সহায়তা করেছেন শ্রীমঙ্গল কাজল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের স্বত্বাধিকারী কাজল রায়। কাজল রায় জানান, আবদুল আজিজের ফর্মুলা অনুযায়ী তিনি এ মেশিন তৈরি করেছেন।

এটি খুব বেশি জটিল কাজ নয়। মজবুত আকারে তৈরি করলে এর জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। আবদুল আজিজ তার আবিষ্কৃত প্রাকৃতিক কীটনাশক, ধান পরিষ্কারের মেশিন ও গ্রাফটিংয়ের ফর্মুলাগুলো সরকারি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চান। উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ররেন্দ্র শর্মা জানান, আবদুল আজিজ একজন আদর্শ, সৌখিন ও সৃজনশীল কৃষক। তিনি কৃষিক্ষেত্রে নতুন কিছু সৃষ্টি করার বিষয়ে নিজেকে নিবেদিত রাখায় নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন।

এ প্রযুক্তি সাধারণ চাষিদের মধ্যে সম্প্রসারণ ও ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হলে কৃষকরা লাভবান হবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.