আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইনানী সৈকতে আজিব দুর্ঘটনা

আমাদের অফিসিয়াল ট্যুরে যেসব জায়গায় গিয়েছিলাম তার মধ্যে ফয়েজ লেক , ডুলাহাজরা সাফারী পার্ক আর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কথা আগে বলেছি। আজকে বলব ইনানী সৈকতে ভ্রমণের কথা। এখানে এক আজিব দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছিল আমাদের এক বড় ভাইয়ার সাথে। আসছি সে কথায়। শুরুতে একটু খাওয়ার কথা।

মাফ চেয়ে নিচ্ছি, রোজার দিনে খাওয়ার কথা দিয়ে শুরু করলাম। সেদিন সকালে গিয়েছিলাম ডুলাহাজরা সাফারী পার্কে। সেখান থেকে ফিরে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সারলাম পৌষী হোটেলে। এখানকার মেনুর সবচেয়ে আকর্ষণীয় আইটেম ছিল শুটকী ভর্তা। এটা ঠিক ভর্তা না, শুটকী ছোট ছোট টুকরো করে কড়া করে ভেজে পেঁয়াজ আর শুকনা মরিচ দিয়ে ডলা দিয়ে বানানো হয়।

একটু খানি মুখে দিয়েই সবার হুহ হাহ্ শুরু হয়ে গেল। কিন্তু এত মজা যে না খেয়েও পারা যায় না। সবাই বেশি করে ভাত আর ডাল নিয়ে তার সাথে একটু করে শুটকী ভর্তা মেখে খেয়ে নিল। কিন্তু একজন ভাইয়াকে দেখা গেল মনের সুখের শুটকী ভর্তা খেয়ে যাচ্ছেন। সবাই তাকে সাবধান করে দিচ্ছিল, ভাইজান, একটু সামলে, পরে কিন্তু পেট জ্বলবে।

এক পোংটা বলল, শুধু পেট না রে, সাথে আরও কিছু জ্বলবে। পোংটার অভাব নাই আমাদের দলে, আরেকজন বলে বসল, শুধু জ্বলবে না রে ভাই, বোমা ফাটবে, ভাইজানের রুমমেটের আজকে খবরই আছে। যাকে নিয়ে এত কথা সেই ভাইজান কিন্তু কোন কথায় কান না দিয়ে মন ভরে খেয়ে গেলেন। আর আমরা কয়েকজন যারা বেশি ঝাল খেয়ে অভ্যস্ত নই, কাস্টার্ড খেয়ে মুখের আগুন নিভালাম। যা হোক, আমরা এরপর রওনা দিলাম ইনানী সৈকতের উদ্দেশ্যে।

বাসে আমি এক আপুর পাশে বসেছি। যাবার আগে আমাদের হোটেলের সামনে বাস একটু থামল, হোটেল থেকে এক্সট্রা কাপড় নিয়ে নিলাম, কারণ ইনানীতে গিয়ে সমুদ্রে না নেমে পারব না। কাপড় নিয়ে এসে বাসে উঠে দেখি আমার জায়গা দখল। আপুর পাশে তার এক পোংটা দোস্ত বসে পড়েছে, আর আমার জন্য জায়গা রেখেছে আরেক পোংটা বড় ভাইয়ার পাশে। ইনিই আমাদের আজকের দুর্ঘটনার নায়ক।

যা হোক, বসলাম ভাইয়ার পাশে। দুই পাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে যাচ্ছি। একদিকে সাগর, একদিকে পাহাড়। এই সৌন্দর্য্য বর্ণনা করা আমার কম্ম না। এক পর্যায়ে শুরু হল দুই পোংটার পোংটামি।

আপুর দোস্ত বলল, এই যে ভাইয়া, কেমন লাগছে বাইরের দৃশ্য? হঠাৎ করেই কি একটু বেশি সুন্দর হয়ে গেছে না? আফটার অল পাশে একজন রমণী বসে আছে। ভাইয়া বললেন, তা আর বলতে? কিন্তু রমণীর সৌন্দর্য্যের দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে বাইরে তো দেখাই হচ্ছে না। পোংটা দোস্ত বলল, রাস্তায় একটু খানা-খন্দ থাকলে ভালো হত, তাই না? বাসটায় একটু ঝাঁকুনি হত। ভাইয়ার জবাব, আরে না রে, খানা-খন্দ দিয়ে তো কাজ হবে না, লাগবে হল আঁকাবাঁকা রাস্তা, যাতে বাসটা ডানে-বায়ে দুলতে দুলতে যায়। আমি ওদের কথায় কান না দিয়ে বাইরের সাগরের দৃশ্য দেখতেই ব্যস্ত থাকলাম।

এক সময় আপুর দোস্ত ছবি তোলার জন্য বাসের সামনের দিকে এগিয়ে গেল। এই তো সুযোগ। এক লাফে এসে আমি আপুর পাশের সিট দখল করে ফেললাম। পোংটা দোস্ত এসে এই অবস্থা দেখে চিল্লাপাল্লা শুরু করে দিল, ভাইয়া! ঘটনা কী? আপনি কী এমন কাজ করে ফেললেন এর মধ্যেই যে আপনার পাশের রমণী পলায়ন করল? ঠিক করে বলেন, কী করেছেন? ভাইয়াও বলে চলেছেন, খোদার কসম! আমি কিছু করার সুযোগই পাইনাই। আমি ওদের কথা শুনতেই পাচ্ছিলাম না, পাহাড় দেখতেই তখন ব্যস্ত আমি।

যা হোক, প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে দেখতে আর পোংটাদের পোংটামি সহ্য করতে করতে আমরা ইনানী পৌঁছুলাম। সাগর দেখে মনটা ছুটে গেল সেদিকে, হেঁটে যেতে যতটুকু সময় লাগে ঐটুকুও আর তর সইছিল না। একটা ইজি চেয়ারে সবার এক্সট্রা কাপড়-চোপড় রেখে নেমে গেলাম সমুদ্রে। আমি নেমেই সুন্দর আরামদায়ক দেখে একটা বড় পাথর দখল করে ফেললাম। আমার উদ্দেশ্য হল এই পাথরের উপরেই বসে থাকব পুরোটা সময়, সমুদ্রে পা ডুবিয়ে।

অন্যরা বিভিন্ন পোজে ছবি তুলতে ব্যস্ত। আমি বসে পড়লাম আমার পাথর আসনে। তখনও পানিতে আমার পা ডুবে না। সাগরের ঢেউ এসে এসে আমার পা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল। যারা ছবি তুলতে ব্যস্ত, একজন দুজন করে আমার পাশে চলে আসল।

ছবি তোলা চলছিল এভাবেই। এক সময় দেখা গেল আমাকে ঘিরে রীতিমত গ্রুপ ছবি তোলা হচ্ছে। তারপর আবার একেকজন একেক দিকে ছুট লাগাল। আমি বসে রইলাম আমার মতন। সাগরে তখন জোয়ার।

পানি এখন আমার পা ডুবিয়ে দিয়েছে। একেকটা ঢেউ এসে আমার কোমর পর্যন্ত ভিজিয়ে দিচ্ছে। এবার আসি সেই ভাইয়ার কথায়। ভাইয়া সাদা টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরে এসেছিলেন দেখে এক পোংটা ভাই তাকে বলছিলেন, কি রে তুই যে সাদা কাপড় পরেছিস রে, পানিতে ভিজে তো সবকিছু দেখা যাবে। ভাইয়া শুনেও পাত্তা দিলেন না।

বরং আরও ভালো করে দেখানোর ব্যবস্থা করে দিলেন। সাগরে এত জোরে লাফঝাঁপ শুরু করে দিলেন যে তার ট্রাউজার সইতে না পেরে ফড়াৎ করে জায়গামত ছিঁড়ে গেল। কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী ভাইয়া তার কানে কানে কথাটা তুলতেই তিনি বললেন, অসুবিধা নাই, কেউ দেখেনাই তো। এই কথা শুনে শুভাকাঙ্ক্ষীদের আর কিছুই বলার থাকে না, কারণ তারাও জানেন যে সবার মাঝখানে ঘটে যাওয়া এই দৃশ্য কেউ না দেখে থাকার কথা না। যাক, বেচারার আনন্দে কেউ আর বাধা দিল না।

মনের সুখের সাগরে লাফ-ঝাঁপ চালিয়ে গেলেন ভাইজান। তার প্রদর্শনে অন্যরাই বাধ্য হল অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে রাখতে। আমি অবশ্য ঐদিকে আর যাইনি, কয়েকজন আপুকে খিল খিল করে হাসতে দেখছিলাম শুধু, পরে তাদের কল্যাণে পুরো কাহিনী শুনেছি। আমি তো আমার পাথর আসন থেকে আর উঠিইনি। সাগরের পানি বাড়তে বাড়তে এক সময় আমার গলা পর্যন্ত ভিজিয়ে দেয়া শুরু করল।

তখন স্থির হয়ে বসে থাকা একটু কষ্টকর হয়ে গেল। ঢেউয়ের তোড়ে দুইবার পড়েও যাচ্ছিলাম। যা হোক সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম, পানি আরেকটু বাড়লে একেবারেই ভেসে যাবো। আস্তে আস্তে বাকীরাও উঠে এল। এবার ফেরার পালা।

আমাদের সাদা ট্রাউজার ভাইজান কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী ভাইয়ার আড়ালে এইবার ট্রাউজার পাল্টে নিলেন। ধরেই নিলেন কেউ কিচ্ছু জানতে পারে নি। কিন্তু আমাদের অফিসিয়াল ভিডিওম্যান একটু দুষ্টু প্রকৃতির ছিলেন বুঝলাম। ট্যুরের ভিডিও দেখতে গিয়ে দেখা গেল তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন ভাইয়ার প্রদর্শনী ভিডিও করায়। শেষ করি আমার ভাগ্নের লেখা গান দিয়ে, যে এই ভিডিও দেখার পর স্বতস্ফূর্তভাবে গানটা লিখে সুর করেছে।

পরে গিটার বাজিয়ে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে আমাকে গানটা শুনিয়েছে। গানটা অবশ্য হিন্দী, হিন্দীতে ডোরেমন কার্টুন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে লেখা। যাব মেরে চাড্ডি ফাট গ্যায়ীইইইই সাব লোক মুঝপার হাস্ গ্যায়ীইইইই অর ভিডিও মে ভী আ গ্যায়ীইইইই....... আর এই যে আমার সেই পাথর আসন। ভিডিওম্যান কখন যেন এই দৃশ্যও ভিডিও করে ফেলেছে আর ছবিও তুলে রেখেছে। এরপর আমার খেতাব দেয়া হয়েছিল, Silent Mermaid.  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.