আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শোকাবহ আগস্ট: বাঙালি জাতির শোকের মাস

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধূর শোকের দিন বর্ষ পরিক্রমায় আবার বাঙালি জাতির দ্বারে সমাগত। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মানবতার দুশমন প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকদের হাতে আবহমান বাংলা ও বাঙালির আরাধ্য পুরুষ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন সেদিন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী নীরবে-নিভৃতে যিনি প্রেরণা যুগিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ও বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ ফুটবলের আধুনিকতার স্রষ্টা, আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা ও সাংস্কৃতিক জগতের অন্যতম পুরোধা শেখ কামাল, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পুত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত বীর সেনানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল, বঙ্গবন্ধুর আদরের কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল, জাতির জনকের নবপরিণীতা পুত্রবধূ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ উপাধিপ্রাপ্ত দেশসেরা অ্যাথলেট সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক কৃষক নেতা জাতির জনকের ভগ্নিপতি তাঁর মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্ব বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এই ঘৃণ্য নরপশু, কাপুরুষ হায়েনাদের বর্বরতা থেকে শিশু-নারী কেহই রেহাই পায়নি।

ক্ষণজন্মা যে পুরুষ জাতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার উজ্জ্বল পতাকা; কিন' ঘাতকের বুলেটে তিনি পেয়েছেন নির্মম প্রতিদান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে জাতীয় ও আন-র্জাতিক চক্রান-কারীদের পদলেহী ঘাতকগোষ্ঠী বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতাকে, তথা বাঙালির সকল মহতী আকাঙ্ক্ষাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলতে অপপ্রয়াস চালিয়েছে বাঙালির বীরত্বগাঁথা ইতিহাস। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে পাকিস্তানি সামপ্রদায়িক ধারা পরাভূত হয়েছিল তাই আবার যেন পুনর্জন্ম লাভ করেছিল। মূলতঃ তাদের উদ্যত সঙ্গীন আমাদের সুমহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালির হাজার বছরের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতা, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ও অর্থনৈতিক মুক্তির সোনালী শুভ গণমুখী পদক্ষেপগুলোকে স্তব্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে নস্যাৎ করার প্রয়াসে এবং সমাজ প্রগতির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্যই এই আঘাত হেনেছিল।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ অবধি ধারাবাহিক সংগ্রামের ভিতর দিয়ে যে বাংলাদেশ তৈরি হয়েছিল ঐ বাংলাদেশকে তার মূল রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় চেতনা থেকে বিচ্যুত করে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতির চাকাকে মূলতঃ থামিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের সংবিধানকে তারা ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত চেতনার বিপরীতে নিয়ে যায়। শেষ অবধি তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে যেখানে নিয়ে যায় ঐ সংবিধানের চেতনার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের কোন চেতনাগত ও নৈতিক মিল থাকে না। বাংলাদেশের সংবিধানের জননী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আর এই ঘোষণাপত্রের উৎস ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ অবধি বাঙালি জাতির সংগ্রামের চেতনা।

আর এই চেতনার শীর্ষবিন্দু ও একক রক্ষকে পরিণত হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁকে বাঁচিয়ে রেখে কোনমতেই এই চেতনা থেকে বাঙালি জাতি ও তার জাতিক রাষ্ট্রটিকে বিচ্যুত করার কোন পথ শত্রুদের হাতে ছিল না। এ কারণেই ঘটানো হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মর্মন'দ হত্যাযজ্ঞ। বাঙালির শুভ চেতনা, সামনে এগিয়ে চলা প্রগতির জয়যাত্রাকে বাঁধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। লক্ষ প্রাণের রক্তমূল্যে অর্জিত স্বাধীনতার চার মূলনীতি বিসর্জন দিয়ে একদলীয় শাসনের নগ্ন প্রকাশের মাধ্যমে জাতি ও রাষ্ট্রকে পঙ্কিলতার আবর্তে নিক্ষেপ করেছিল।

বাঙালির সকল ইতিবাচকতাকে তারা হত্যা করেছিল। নারী-শিশু নির্বিচারে হত্যা করে তারা মানব ইতিহাসে এক জঘন্য কলঙ্কতম হত্যাকাণ্ডের নজির স্থাপন করেছিল। এই নরপিশাচের দল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ভাবাদর্শ ও উত্তরাধিকারকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে অপসারণের মধ্য দিয়ে এই দেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু হয়। গণতন্ত্রকে পাঠানো হয় নির্বাসনে।

প্রতিষ্ঠিত হয় স্বৈরশাসন; প্রতিক্রিয়া ও সামপ্রদায়িকতার বিষ-বৃক্ষ, যা আমাদের আত্মপরিচয় ক্রমশঃ বিলীন ও শৃঙ্খলিত করার সুগভীর চক্রান্তের অংশ ছিল। তাই এখন ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য যেমন জাতির জনকের কাছে সশ্রদ্ধচিত্তে মাথা নম্র করার দিন, তেমনি তাঁর আদর্শকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বাস-বায়ন করার শপথ নেবারও দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকারী আত্মস্বীকৃত খুনির দল মোশতাক, ফারুক, রশিদচক্র হত্যাকাণ্ডের দায়ভার থেকে মুক্তি লাভের কাপুরোষিত হীনউদ্দেশ্যে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। অবৈধ ক্ষমতা দখলদার সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান লাখো শহীদের রক্তমূল্যে অর্জিত সংবিধানকে বুটের তলায় পিষ্ট করে পঞ্চম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে আইনে পরিণত করে আইনের শাসনের হাত থেকে খুনিদের রেহাই দেয়। নিরাপদে দেশত্যাগের ব্যবস্থা করে।

জাতির জনকের হত্যাকারীদের রাজনীতি ও প্রশাসনে পুনর্বাসন করেন। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহের কূটনীতিকের চাকরিদানের মধ্য দিয়ে পুরস্কৃত করেন। মৌলিক মানবাধিকার ও আইনের শাসনের কবর রচনা করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। আইনের শাসনকে আপন গতিতে চলতে দেয়নি।

বরং অন্যায় অপরাধীদের প্রশ্রয় দিয়েছে, লালন করেছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে কায়েম করে সামরিক স্বৈর একনায়কতন্ত্র। ১৯৭৫ সাল পরবর্তী দীর্ঘসময় বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণ লড়াই-সংগ্রাম রক্তদানের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালে স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটাতে সক্ষম হন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় জাতির কাছে তিনজোট হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠনে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।

সরকার গঠনে আওয়ামী লীগের সমর্থন লাভের সময় কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার করেছিল। জাতির জনকের বিচারের পথে সকল বাধা অপসারণের প্রশ্নে ঐকমত্য পোষণ করেছিল। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস-বায়নের লক্ষ্যে ইনডেমনিটি আইন বাতিল বিল উত্থাপন করে। কিন' বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি খালেদা জিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল না করে পুনরায় জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ দেশসেবার সুযোগ লাভের পর কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন বাতিলের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত করে।

অতঃপর দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হত্যাকারীদের বিচার কার্য সুসম্পন্ন করে। নিম্ন আদালত ঘাতকদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় প্রদান করে। মহামান্য হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। ২০০১ সালে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ না দেয়াসহ বিচারের পথে একের পর এক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। হত্যাকারীদের রেহাই দেয়ার নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালায়।

২০০৮ সালে জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় কার্যকর করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ থেকে শুরু করে সর্ববিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সর্বোচ্চ আদালত মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট দীর্ঘ শুনানি শেষে ঘাতকদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণিত হয় ইতিহাস কখনো অত্যাচারী ঘাতকদের ক্ষমা করে না। স্বাধীন বিচারের মাধ্যমে ৫ নরঘাতক হায়েনাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা করা হয়েছে।

কলঙ্কিত বাঙালি জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। বিদেশে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা গণহত্যা শুরু ও জাতির জনককে গ্রেফতার করার পরে সারা দেশে যে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো তার একটি কেন্দ্রিভূত রূপ সৃষ্টি হয় ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠন করার পর। শুরু হয় চূড়ান- মুক্তির লক্ষ্যে একটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা। ১৯৮১-এর ১৭ মে তেমনি ১৯৭৫-এর পনের আগস্ট স্বাধীনতার চেতনা হারানোর পর সেটা ফিরে পাবার জন্যে যে প্রতিবাদ ও কান্না শুরু হয়েছিলো সেই সকল প্রতিবাদ, সকল শোক, সকল ক্ষোভ, সকল চোখের জলের একটি কেন্দ্রিভূত রূপ নিয়ে ১৭ মে দেশে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

তাই বলা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশকে যে উল্টো পথে হাঁটানো শুরু হয়েছিল সেটাকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম কেন্দ্রীভূতভাবে শুরু হয় ১৯৮১-এর ১৭ মে। যেমন ১৯৪৮ থেকে বাঙালি তার আত্মপরিচয় ও রাষ্ট্র খুঁজে পাবার পথে যাত্রা করেছিল। সেই ১৯৮১’র ১৭ মে থেকে আজ ২০১১-তে এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা রক্ষা ও তা পুনরুদ্ধারের শীর্ষবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার চেতনা পুনরুদ্ধারের পথে চলতে গিয়ে নতুন করে যে চেতনার রূপ বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে ওই রূপের শীর্ষবিন্দু শেখ হাসিনা। তাই বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু যেমন সমার্থক শব্দ তেমনি আজ শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমার্থক শব্দ।

বঙ্গবন্ধু যেমন ১৯৪৮ থেকে ধাপে ধাপে সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালিকে স্বাধনীতার দ্বারে নিয়ে এসেছিলেন। উপহার দিয়েছিলেন স্বাধীনতা শব্দটি বাঙালি জাতিকে। শেখ হাসিনা তেমনি ১৯৭৫-এর পনের আগস্ট হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতার চেতনা ও রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে ধাপে ধাপে আবার পুনরুদ্ধার করছেন বাঙালি জাতির জন্যে। আর এ জন্যে তাঁকে পাড়ি দিতে হচ্ছে কঠিনতম পথ। সাংবিধানিকভাবে অর্জন করতে হচ্ছে এক একটি অধ্যায়।

আর সেটা যে কত বড় বিপদসংকুল তা শেখ হাসিনার সংগ্রামের ইতিহাসের দিকে তাকালে বোঝা যায়। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে এ দেশের রাষ্ট্রীয় মূল চেতনা ধ্বংস করার জন্যে, স্বাধীনতার মূল্যবোধ নষ্ট করার জন্যে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হয় । এই পথে চলার সময় তাকে ১৮ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এই মৃত্যুকে উপেক্ষা করে পিতার মতো অবিচল সংগ্রামের ফলে তিনি দেশ থেকে প্রত্যক্ষ স্বৈরশাসন উৎখাত করতে সমর্থ হন। তারপরেও ষড়যন্ত্রকারীরা তখনও যে বিপুলভাবে শক্তিশালী ছিলো তার প্রমাণ ৯১-এর নির্বাচনে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসতে না পারা।

ষড়যন্ত্রের কাছে তিনি পরাজিত হন। ক্ষমতায় অব্যাহত থাকে পরোক্ষ স্বৈরশাসন। দেশরত্ন শেখ হাসিনা তারপরেও তার সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। তখনও বার বার তার ওপর নেমে আসে মৃত্যুর আঘাত। তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

এবং এক পর্যায়ে ষড়যন্ত্রকারীদের জাল ছিন্ন করে ১৯৯৬ সালে সামান্য মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় যেতে সমর্থ হন। আর তাতেই তিনি ১৯৭৫-এর খুনিদের রক্ষা করার সাংবিধানিক ধারা বাতিল করেন। বিচারের আওতায় আনেন ১৯৭৫-এর প্রত্যক্ষ খুনিদের। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খুনিরা ও সুবিধাভোগী, ছদ্মাবরণে থাকা স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী সকলে এক হয়ে আঘাত হানে ২০০১ সালে। জাতীয় ও আন-র্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংস করার চেষ্টা হয় শেখ হাসিনার রাজনৈতিক শক্তিকে।

কিন' নির্বাচনে তাকে পরাজিত করেও প্রমাণিত হয় তাকে ধ্বংস করা যাবে না। তখন ১৫ আগস্টের খুনিপক্ষ বুঝতে পারে শেখ হাসিনা ধীরে ধীরে স্বাধীনতার চেতনা প্রতিষ্ঠা ও সাংবিধানিকভাবে সেটা রক্ষার পুনরায় শীর্ষবিন্দুতে পরিণত হচ্ছেন। তাই তারাও ২১ আগস্ট ২০০৪-এ শেখ হাসিনার ওপর চরম আঘাত হানে যেমন তারা আঘাত হেনেছিলো ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। কিন' বাঙালি জাতির সৌভাগ্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে যান। এরপরে তার ওপর সর্বশেষ আঘাত করা হয় ১/১১ ২০০৭।

সে আঘাতও পর্যুদস- করে শেখ হাসিনা আরো শক্তিশালী হিসেবে আবির্ভূত হন। অর্থাৎ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট হারিয়ে যাওয়া রাষ্ট্রীয় চেতনার সংগ্রাম আরো শক্তিশালী হয়। এই চেতনার সংগ্রামকে শেখ হাসিনা সাংবিধানিক রূপ দেন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। সংবিধানের এই সংশোধনী বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট হারিয়ে যাওয়া চেতনার প্রায় তীরে নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ ১৯৮১-এর ১৭ মে থেকে শেখ হাসিনা যে সংগ্রামের তরী বাইতে শুরু করেছিলেন তা এখন কূলের সবুজ বনরাজি দেখতে পাচ্ছে ২০১১-তে এসে।

এর থেকে স্পষ্ট হয়, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ভিতর দিয়ে দেশ ও জাতিকে কোন তিমিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো! সেখান থেকে ফেরা কত দুর্গম ছিলো। আর সেখান থেকে সম্পূর্ণ রূপে ফিরতে হলে বাঙালি জাতির জন্যে এখন শেখ হাসিনা কত প্রয়োজনীয়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহ এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শোকে, শ্রদ্ধায়, ভালবাসায় বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করবে; সমগ্র দেশবাসীর সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অক্ষয়, অমর, অব্যয়, স্মৃতি স্মরণের লক্ষ্যে পুরো আগস্ট মাস জুড়ে শোক প্রকাশের ভাবগম্ভীর কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরে সকাল ১০টায় তিনি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে কৃষকলীগের উদ্যোগে আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি উদ্বোধন শেষে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখবেন।

এছাড়া বেলা ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শ্রমিকলীগ আয়োজিত শোকর্যালি অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে শোকের প্রথম প্রহরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে আলোর মিছিলের কর্মসূচি পালিত হয়। আওয়ামী লীগ আইনজীবী পরিষদ কালোব্যাজ ধারণ ও কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করবে আজ। বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্বাধীনতা পরিষদ বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘স্বাধীনতার চল্লিশ বছর ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাদার তেরেসা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শোকর্যালি বের করবে। এতে দেশের বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি’র আহ্বান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি আগামী ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস- শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার জন্য বিনীত অনুরোধ জ্ঞাপন করেছেন। Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.