বিবেকিন্দ্রিয়-লোচন ভাল লাগল। তাই, কাট কপি পেস্ট করা পোস্টঃ
চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রোযা রাখা, ঈদ উজ্জাপন করার তারিখের ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক দেশ থেকে আর এক দেশে, ক্ষেত্র বিশেষে দুই/তিন দিন আগে পরে রোযা রাখা ও ঈদ উজ্জাপন করা হয়। এমনকি একই দেশেও বিভিন্ন তারিখে রোযা রাখা ও ঈদ উজ্জাপন করা হয়ে থাকে। এ নিয়ে কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশেও ব্যাপক আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক চলছে।
প্রকৃতপক্ষে এ সকল বিতর্কের অবসান হওয়া উচিত। কারণ এটা আমাদের ইবাদতের বিষয়। এখানে বিতর্ক চলতে দেয়া যায় না। আর এ বিতর্কের অবসান হওয়া উচিত কুরআন, সুন্নাহর দলিলের ভিত্তিতে। অন্য কোন তাত্ত্বিক যুক্তি তর্কের ভিত্তিতে নয়।
এ বিতর্কের অবসান করার জন্য আমি দেশের ধর্ম প্রাণ মানুষ, মসজিদের খতীব ও আলেম সমাজকে এগিয়ে এসে সত্যের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাচ্ছি এবং আমি কিছু দালিলীক তথ্য ও যুক্তির অবতারণা করছি। আশা করছি এখান থেকে একটি সঠিক সিন্ধান্ত গ্রহণ করা সহায়ক হবে।
চাঁদ দেখার বিষয়ে কুরআনিক দলিলঃ
আল্লাহ তায়ালা ভৌগলিক অবস্থান নির্বিশেষে সকল মুসলমানদেরকে নিম্নোক্ত আদেশ করেছেন।
‘‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ (রমযান) মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে [২: ১৮৫]।
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের রোযা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং রমযান মাসের উপস্থিকে রোযা পালন করার শর্ত হিসেবে উল্লখে করেছেন।
এখন দেখা যাক যে, মাসের উপস্থিতি বলতে কি বুঝায়। পৃথিবীর আকাশে কোথাও নতুন চাঁদের অস্থিত্ব প্রামানীত হলেই সারা বিশ্বময় চাঁদের উপস্থিতি প্রমানীত হবে এবং পৃথিবীতে মাস শুরু হবে। আর মাস শুরু হলেই রোযা পালন করতে হবে।
অপর এক আয়াতে আললাহ তায়ালা বলেন, ‘‘হে রসুল (সাঃ) মানুষ আপনাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এগুলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারক।
’’ [২:১৮৯]
এখানে লক্ষ্যনীয় যে, আয়াতে নতুন চাঁদ সম্পর্কে বলা হয়েছে। পূর্ববর্তী চন্দ্রমাস শেষ হওয়ার পরে, আবার নতুন করে পৃথিবীর আকাশে সর্বপ্রথম যে চাঁদ দেখা যায়, ঐ চাঁদই হচ্ছে নতুন চাঁদ [তাফসীরে কারীর ২য় খন্ড পৃঃ-২৫৫-২৫৬, তাফসীরে বায়জাবী] এবং প্রতি মাসে চাঁদ এক দিনই নতুন থাকে। পরবর্তী দিনগুলোর চাঁদ কখনোই নতুন নয়।
অতএব এ আয়াত থেকে প্রমানিত হয়, যখনই নতুন চাঁদের উপস্থিতি প্রমানীত হবে, তখনই মাস গনণা শুরু হবে, আর রমযান মাসের ক্ষেত্রে মাস শুরু হলেই রোযা পালন করতে হবে।
চাঁদ দেখার বিষয়ে কুরআনিক দলিলঃ
আল্লাহ তায়ালা ভৌগলিক অবস্থান নির্বিশেষে সকল মুসলমানদেরকে নিম্নোক্ত আদেশ করেছেন।
‘‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ (রমযান) মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে [২ঃ১৮৫]।
এ আয়াতে আল্লাহ সুবানাহু ওয়াতায়ালা মুসলমানদের রোযা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং রমযান মাসের উপস্থিতিকে রোযা পালন করার শর্ত হিসেবে উলেলখ করেছেন। এখন দেখা যাক যে, মাসের উপস্থিতি বলতে কি বুঝায়। পৃথিবীর আকাশে কোথাও নতুন চাঁদের অস্থিত্ব প্রামানীত হলেই সারা বিশ্বময় চাঁদের উপস্থিতি প্রমানীত হবে এবং পৃথিবীতে মাস শুরু হবে। আর মাস শুরু হলেই রোযা পালন করতে হবে।
অপর এক আয়াতে আললাহ তায়ালা বলেন, ‘‘হে রসুল (সাঃ) মানুষ আপনাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এগুলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারক। ’’ [২:১৮৯]
এখানে লক্ষ্যনীয় যে, আয়াতে নতুন চাঁদ সম্পর্কে বলা হয়েছে। পূর্ববর্তী চন্দ্রমাস শেষ হওয়ার পরে, আবার নতুন করে পৃথিবীর আকাশে সর্বপ্রথম যে চাঁদ দেখা যায়, ঐ চাঁদই হচ্ছে নতুন চাঁদ [তাফসীরে কারীর ২য় খন্ড পৃঃ-২৫৫-২৫৬, তাফসীরে বায়জাবী] এবং প্রতি মাসে চাঁদ এক দিনই নতুন থাকে। পরবর্তী দিনগুলোর চাঁদ কখনোই নতুন নয়।
অতএব এ আয়াত থেকে প্রমানিত হয়, যখনই নতুন চাঁদের উপস্থিতি প্রমানীত হবে, তখনই মাস গনণা শুরু হবে, আর রমযান মাসের ক্ষেত্রে মাস শুরু হলেই রোযা পালন করতে হবে।
চাঁদ দেখার বিষয়ে হাদিস থেকে দলীলঃ
রাসুলুললাহ (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমরা চাঁদ না দেখে রোযা রাখবে না এবং চাঁদ না দেখে রোযা ছাড়বেনা। ’’-[বুখারী শরিফ]
এবং ‘‘চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোযা ছাড় এবং ঈদ করো’’ [মুসলিম শরিফ]
চাঁদ দেখার ব্যাপারে যতগুলো হাদিস রয়েছে, তার মধ্যে সকলে নিজ নিজ বক্তেব্যের সমর্থনে উপরোক্ত দুটো হাদিস বেশি উল্লেখ করেন। যে সকল ফকীহ ও আলেমগণ সারা পৃথিবীতে একই দিনে রোযা পালন করার পক্ষ্যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তারা বলেছেন যে, হাদিসে ‘‘তোমরা’’ শব্দটি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য ব্যাপক অর্থবোধক সম্বোধন। আর যারা বিভিন্ন দেশে আলাদা ভাবে আমলের যুক্তি দিয়েছেন তারা বলেছেন যে ‘‘তোমরা’’ শব্দটি এলাকা বা দেশের জন্য সীমিত অর্থে সম্বোধন।
কাদের যুক্তি এখানে বেশি গ্রহণযোগ্য, আমরা এ বিতর্কে না গিয়ে, রাসুলুললাহ (সাঃ) কিভাবে আমল করেছেন, তা থেকে সিন্ধান্তে পৌছতে পারি। তিনি (সাঃ) দ্বিতীয় হিজরী থেকে দশম হিজরী পর্যন্ত মোট নয় বার পবিত্র রমযানের রোযা পালন করেছেন। তার রোযা পালন করার ক্ষেত্রে নিম্নের দুটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে।
১) আববাস (রাঃ) থেকে বর্নীত, ‘‘একজন মরুচারী রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর নিকট এসে বললেন, আমি রমজানের চাঁদ দেখেছি। মহানবী (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই’ এ কথা সাক্ষ্য দান করো, লোকটি বলল হ্যা।
তিনি (সাঃ) আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ রাসুল’ তুমি কি এ কথা সাক্ষ্য দান করো, লোকটি বলল হ্যা। মহনবী (সাঃ) তখন বললেন, হে বেলাল মানুষের কাছে ঘোষনা করে দাও, তারা যেন আগামী দিন থেকে রোযা রাখে। (তিরমিযী পৃঃ-১৪৮, আবু দাউদ পৃঃ-৩২০, নাসায়ী পৃঃ-২৩১, ইবনু মাজাহ পৃঃ-১১৯, মিশকাত পৃঃ-১৭৪)
২) আর একটি ঘটনা, আনাস (রাঃ) থেকে বর্নীত, একদা মদিনার বাইরে থেকে একদল লোক রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর নিকট এসে বললেন, যে তারা গতকাল শাওয়ালের চাঁদ দেখেছেন। ফলে মহানবী (সাঃ) মানুষদেকে রোযা ছাড়ার নির্দেশ দিলেন এবং পরের দিন প্রাতঃকালে ঈদগাহে সমবেত হলেন। (আবু দাউদ, নাসায়ী, মিশকাত পৃঃ-১২৭)
এ হাদিস দুটি থেকে শরিয়াতের নির্দেশনা হচ্ছে-
১. প্রত্যেক লোকের জন্য আলাদা ভাবে চাঁদ দেখা জরুরী নয়, কোন ন্যায় পরায়ন মুসলিম চাঁদ দেখেছে প্রমানিত হলেই সকলের জন্য দলীল হিসেবে প্রতিয়মান হবে।
২. নিজ দেশের আকাশে চাঁদ দেখতে হবে এমন কোন শর্ত প্রযোজ্য নয়।
৩. দূরবর্তী স্থানে চাঁদ দেখা গেলেও সকলের জন্য আমল বাধ্যতামূলক হবে।
অর্থাৎ পৃথিবীর কোথাও যদি চাঁদ দেখা যায় এবং তা যদি গ্রহণযোগ্য ভাবে প্রমানিত হয়, তাহলে সকল মুসলমানকে রোযা পালন করতে হবে এবং তা শাওয়ালের চাঁদ হলে সকল মুসলমানকে রোযা ভংগ করতে হবে। প্রত্যেক এলাকায় আলাদা-আলাদা ভাবে চাঁদ দেখার কেন বাধ্যবাদকতা নাই। এক রাষ্ট্রের মুসলমান চাঁদ দেখলে অন্য রাষ্ট্রে জন্য সেই একই দেখা কার্যকর হবে।
পৃথিবীর কোথাও যদি চাঁদ দেখা যায় এবং অন্য রাষ্ট্রে যদি এ খবর অবহিত হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের রমযান পালন করতে হবে। পরের দিন রোযা পালন না করলে তাদের গুনাহগার হতে হবে। কারন ইসলাম প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ববোধ আর ঐক্যের শিক্ষা দেয়।
চাঁদ দেখার বিষয়ে ফিক্হী দলীলঃ
অনেক বিশ্বমানের ফিক্হী কিতাবে চাঁদ দেখার ব্যাপারে যে সকল মতামত প্রদান করা হয়েছে সংক্ষেপে সূত্রসহ তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো।
ফাতওয়া-ই-আলমগিরী কিতাবে বলা হয়েছে, ‘‘যদি পাশ্চাত্যবাসী চাঁদ দেখে, তবে সে দেখার দ্বারা প্রচ্যবাসীর জন্য রোযা ওয়াজিব হবে’’ [১ম খন্ড, পৃঃ-১৯৮]।
ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরাবায়া কিতাবে বলা হয়েছে,‘‘পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে চাঁদ দেখা প্রমানিত হলে, সকল স্থানেই উক্ত দেখার দ্বারা রোযা ফরজ হবে। চাঁদ নিকটবর্তী দেশে বা দূরবর্তী দেশে দেখা যাক এতে কোন পার্থক্য নাই। তবে চাঁদ দেখার সংবাদ প্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌঁছতে হবে। তিন ইমাম আবু হানিফা(রহঃ), ইমাম মালেক(রহঃ) এবং ইমাম হাম্বল(রহঃ)- এর মতে চাঁদের উদয় স্থলের বিভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অর্থাৎ প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সর্বত্র আমল ফরজ হবে’’ [১ম খন্ড,পৃঃ-৪৪৩]।
ফিকহুস সুন্নাহ কিতাবে বলা হয়েছে, ‘‘জমহুর ফুকাহাগণের সিন্ধান্ত হচ্ছে, চাঁদের উদয় স্থলের বিভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অতএব যখনই কোন দেশে চাঁদ দেখা প্রামনিত হবে, তখনই অন্য সকল দেশে রোযা রাখা ফরজ হবে’’ [১ম খন্ড, পৃঃ-৩০৭]।
আল-মুগনী কিতাবে বলা হয়েছে, ‘‘কোন এক দেশের মানুষ চাঁদ দেখলে সকল দেশের মানুষের জন্য রোযা রাখা ফরজ হবে’’ [৪র্থ খন্ড, পৃঃ-১২২]।
ফতহুল কাদীর কিতাবে বলা হয়েছে, ‘‘যখন কোন শহরে চাঁদ দেখা প্রমানিত হবে, তখন সকল মানুষের উপর রোযা রাখা ফরজ হবে। ফিক্হের প্রতিষ্ঠিত মাযহাব অনুযায়ী পাশ্চাত্যবাসীর চাঁদ দেখার দ্বারা প্রাচ্যবাসীর জন্য রোযা রাখা ফরজ হবে[২য় খন্ড,পৃঃ-৩১৮]
বাহরুর রায়েক কিতাবে বলা হয়েছে, ‘‘চাঁদের উদয় স্থলের বিভিন্নতা গ্রহণীয় নয়।
অতএব যখন কোন এক দেশের মানুষ চাঁদ দেখবে, তখন অন্য দেশের মানুষের জন্য রোযা রাখা ফরজ হবে, যদিও তারা চাঁদ দেখেনি। যদি তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছে যায়[২য় খন্ড, পৃঃ-৪৭১]।
কাযীখান কিতাবে বলা হয়েছে, ‘‘ফিক্হের সুপ্রতিষ্ঠিত মতানুসারে চাঁদের উদয় স্থলের বিভিন্নতা গ্রহণীয় নয়’’ [১ম খন্ড, পৃঃ-১৯৫]।
এরুপ আরো অনেক কিতাবে একই রকম রায় প্রদান করা হয়েছে। বইয়ের কলেবর সীমিত রাখার জন্য কেবলমাত্র রেফারেন্স উল্লেখ করা হলো।
যেমন ফাতওয়া-ই-হাশমী ২য় খন্ড পৃঃ-১০৫, তাবয়ীনুল হাকায়েক ২য় খন্ড পৃঃ-১৬৪-১৬৫, হাশিয়া-ই-তাহতাবী পৃঃ-৩৫৯, মায়ারিফুস সুনান ৫ম খন্ড পৃঃ-৩৩৫, মুনতাকা ফি শারহিল মুয়াত্তা ২য় খন্ড পৃঃ-৩৭, ফাতওয়া-ই-ইবনু তাইমিয়া ২৫তম খন্ড পৃঃ-১০৭ ইত্যাদি।
উপ মহাদেশের উলামায়ে কিরামের সিন্ধান্তঃ
উপ মহাদেশের অনেক প্রখ্যাত আলেম উলাময়ে কিরাম এ বিষয়ের উপর মতামত প্রদান করেছেন। এবারে এরকম কয়েকটি মতামাত দেখে নেয়া যাক।
উপমহাদেশের অন্যতম ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দের গ্রান্ড মুফতী আযিযুর রহমান বলেছেন, ‘‘হানাফি মাযহাবের মতে উদয় স্থলে বিভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়। যদি কোন স্থানে শাবান মাসের ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা যায় এবং শরিয়ত ভাবে তা প্রমানিত হয়, তখন ঐ হিসেবেই সকল স্থানে রোযা রাখা অপরিহার্য হয়ে যাবে।
যে স্থানের লোকেরা সংবাদ পরে পাওয়ার কারণে শাবান মাস ত্রিশ দিন পূর্ন করে রোযা শুরু করেছে তারাও প্রথমদের সাথে ঈদ করবে এবং একটি রোযা কাযা করবে’’ [ফতোয়া-ই- উলুম দেওবন্দ, ষষ্ঠ খন্ড, পৃঃ-৩৯৮]।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুফতি আব্দুল বারি মূলতানী (রহ) বলেছেন, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম হাম্বল, ইমাম লাইছ ইবনু সাদ আল মিশরী, অধিকাংশ ফকিহ্গণ এবং ইমাম শাফেয়ী তারা একসাথে রমযানের রোযা রাখার ক্ষেত্রে এ রায় দিয়েছেন যে, যখন কোন &&ক জনপদে চাঁদ দেখা প্রমানিত হবে তখন দুনিয়ার অন্য সকল জনপদে ঐ দেখা গ্রহণীয় হবে। [মিফতাহুন নাজজাহ ১ম খন্ড পৃঃ-৪৩২]
হাট হাজারী মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস আললামা হফেজ আবুল হাসান বলেছেন, চাঁদের উদয় স্থলের বিভিন্নতা ইমাম আবু হানিফা (রহ)-এর নিকট গ্রহণীয় নয়। শামী কিতাবে এমনটাই আছে। এটাই আমাদের (হানাফিদের) রায়।
মালেকি ও হাম্বলী মাযহাবের মতও এটা। অতএব যে কোন স্থানে চাঁদ দেখা প্রমানিত হলে সর্বই আমল অত্যাবশ্যকীয় হবে। [তানযীমুল আশতাত, ১ম খন্ড, পৃঃ-৪১]
উপ মহাদেশের আর একজন প্রখ্যাত আলেম আশরাফ আলী থানভী (রহ) বলেছেন, ‘‘এক শহরের চাদ দেখা অন্য সকল শহরবাসীদের জন্য গ্রহণীয় হবে। ঐ শহরগুলোর সাথে চাঁদ দেখা শহরের দুরত্ব যতই হোকনা কেন। এমকি সর্ব পশ্চিমের চাঁদ দেখার সংবাদ সর্ব পূর্বের মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে পৌঁছলে ঐ দিনই তাদের উপর রোযা রাখা ফরজ হবে।
[বেহেস্তি জেওর, ১১তম খন্ড, পৃঃ-৫১০]
এভাবে উপমহাদেশের আরো প্রায় শ’খানে প্রখ্যাত আলেম উলামা উপরোক্ত বিষয়ে একই ভাবে মতামত প্রদান করেছেন। লেখার কলেবর সংক্ষিপ্ত রাখার জন্য তা উলেলখ করা হলো না।
বিপক্ষে কিছু যুক্তি ও তার উত্তরঃ
১. হযরত শিবিবর আহমাদ উসমানী (রহ) ফতহুল মুলহিম কিতাবে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন যে, আরবী মাস ২৯ দিন বা ৩০ দিন হয়ে থাকে। কোন দেশে ২৮ রমযানের দিন যদি খবর আসে যে অন্য দেশে চাঁদ দেখা গিয়েছে, সে অনুযায়ী রোযা ভাংগ করলে তো তাদের রমযান মাস ২৮ দিন হয়ে যাবে। আবার ৩০ দিন রোযা রাখার পরেও যদি কোথাও চাঁদ দেখার খবর না আসে, তাহলে তো তাদের ৩১ টি রোযা রাখতে হবে।
তাই যার যার দেশের চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে রোযা পালন বা মাস গণনা করাই শ্রেয়।
এর সমাধান হচ্ছে, মাস গণনা শুরু করা এবং শেষ করা একই নিয়মে হতে হবে। অর্থাৎ চাঁদ দেখার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই মাস শুরু করতে হবে এবং চাঁদ দেখার সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে মাস শেষ করতে হবে। মাস শুরু করা এবং শেষ করার ক্ষেত্রে একই নিয়ম পালন করলে আর এরকম সমস্যা হবে না। আর যথাযথ ভাবে মাস শুরু করার ৩০ দিন পরেও চাঁদ দেখা না গেলে রোযা ভংগ করা যায়।
অতএব উপরোক্ত অভিমত শরিয়তের বিচারে কিংবা যুক্তির বিচারে গ্রহণযোগ্য নয়।
২. এক শ্রেণীর মানুষ বলেন যে একই সময় রোযার কথা বলেন তাহলে একই সময় নামাযের কথা বলেন না কেন?
মূলতঃ আমরা একই দিনে রোযা রাখার কথা বলি, একই সময় নয়। একই দিনে রোযা রাখার অর্থ হচ্ছে চাঁদ দেখার খবর নিশ্চিত হওয়ার পরে আমদের যখন সেহরীর সময় হবে আমরা তখন সেহরী খাব এবং অন্য দেশে যদি তার এক ঘন্টা পরে সেহরীর সময় হয় তাহলে তারা তাদের সময় অনুযায়ী সেহরী খাবে। সে আর নতুন করে চাঁদ দেখার জন্য এক দিন বা দুই দিন বসে থাকবে না। অর্থাৎ চাঁদ দেখার পর যার যখন সময় শুরু হবে, সে তখন রোযা রাখবে।
নামাযের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। যেমন আমদের যখন ফজরের নামায শুরু হয় আমরা তখন নামায আদায় করি। পাকিস্থানে তার এক ঘন্টা পর ফজরের ওয়াক্ত হয়, তারা তখন নামায আদায় করে।
ইসলামে জাতীয়তাবাদ হারামঃ
কেউ কেউ যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলেন যে আমাদের দেশে তো চাঁদ দেখা যায় নাই। এ কথা রাসুলুললাহ (সাঃ)-এর উপরোক্ত রোযা রাখার ঘটনার আলোকে টিকে না।
মূলতঃ জাতীয়তাবদী চেতনা থেকে এ কথা বলা হয়ে থাকে। ইসলাম এ জাতীয়তাবাদ স্বীকার করে না। জাতীয়তাবাদ দ্বারা মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। ইসলাম ‘‘অখন্ড মুসলিম উম্মাহ’’র চেতনায় বিশ্বাস করে এবং জাতীয়তাবাদকে হারাম বিবেচনা করে। রাসুলুলস্নাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদের (আসাবিয়্যার) প্রতি আহবান করে সে আমাদের অমত্মভূক্ত নয়।
’’
অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ দ্বারা মুসলমানদের কোন ভূখন্ড আলাদা করা যাবে না। তেমনি কোথাও চাঁদ দেখা যায, সে আকাশ সমগ্র পৃথিবীর আকাশ। তা কোন জাতীয়তাবাদী সীমানার দ্বারা ভাগ করা যায় না। আর মুসলমানরা হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীতে একটি মাত্র জাতী বা একটি মাত্র উম্মাহ তাও কোন সীমানা দ্বারা বিভাজ্য নয়। ফলে পৃথিবীর আকাশে কোন চাঁদ দেখা গেলে সে চাঁদ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর চাঁদ।
আর সে চাঁদ দেখার সংবাদ কোন মুসলমান কর্তৃক নিশ্চিত হলেই তা সকলে জন্যই ‘‘দেখা গেছে’’ বলে বিবেচ্য হবে।
পাকিস্তান আমলের রোযা বনাম বাংলাদেশ আমলের রোযাঃ
পাকিস্তান যখন একত্রে ছিল, তখন পশ্চিম পাকিসত্মানে চাঁদ দেখা গেলে আমাদের দেশেও রোযা রাখা এবং ঈদ উজ্জাপন করা হতো। এখন আলাদা দিনে রোযা এবং ঈদ পালন করা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দুটি দেশ আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণে ইবাদতের সময় বা তারিখ কি আলাদা হয়ে যেতে পারে? তাহলে পাকিস্তান আমলে আমরা যে তারিখে রোযা রাখতাম সে তারিখ কি সঠিক ছিল না? তখনকার রোযা রাখার তারিখ যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে এখনকার তারিখ সাঠক নয়। আর এখনকার তারিখ যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে তখনকার তারিখ সঠিক ছিল না।
মূলতঃ অনৈসলামী শাসক কর্তৃক মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য তৈরি করে রাখা হয়েছে। চাঁদ দেখা কিংবা মাস গনণার ক্ষেত্রে মানুষের তৈরি সীমানা কোন বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে খিলাফতের সময়ও এ ভূখন্ডগুলো একত্রে ছিল। তখনো যতদুর সংবাদ পৌঁছানো যেত ততদুর একত্রে রোযা ও ঈদ উজ্জাপন করা হতো।
ইবাদত পালন হবে কার কথার উপর ভিত্তি করে?
মুসলমান ভূখন্ডে কোন অনৈসলামীক দালাল তাবেদার শাসক কর্তৃক রোযা রাখা এবং ঈদ উজ্জাপন করার ক্ষেত্রে রাসুলুলস্নাহ (সাঃ) হাদীসের বিপক্ষে কোন রায় প্রদান করলে বা অবস্থান গ্রহণ করলে তা মুসলমানদের অবশ্যই উপেক্ষা করতে হবে।
আমরা রোযা এবং ঈদ পালন করব কোন অসৈলামী শাসকের কথার উপর ভিত্তি করে নয় কিংবা কোন অনৈসলামী শাসকের চাঁদ দেখা কমিটির উপর ভিত্তি করে নয়। কিংবা এমন কোন মুফতীদের কথার উপর ভিত্তি করেও নয়, যারা আলস্নাহ সুবানাহু তায়ালার সন্তুষ্টির চেয়ে অনৈসলামী শাসকদের সন্তুষ্টির জন্যই বেশি উগ্রীব থাকে। আমরা অবশ্যই রোযা পালন করব এবং রোযা ভংগ করব আলস্নাহ তায়ালার আয়াত এবং রাসুলস্নাহ (সাঃ) এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে।
ঈদের দিন রোযা রাখা হারামঃ
চাঁদ দেখার সংবাদ পাওয়ার পরও দেরীতে রোযা শুরম্ন করলে প্রথম দিকের ফরজ রোযাগুলো ছুটে যাবে এবং শেষের দিকে যখন আমরা রোযা রাখব তখন রমযান মাস পার হয়ে যাবে। প্রতি বছর আমরা এভাবে প্রথম দিকের ফরজ রোযাগুলো রাখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি এবং দেরীতে রোযা শুরম্ন করার কারণে ঈদের দিন রোযা রাখতে হচ্ছে যা ষ্পষ্টই হারাম।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নীত রাসুলুললাহ (সাঃ) ঈদেও দিনে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)। প্রতি বছর আমাদের জীবনে এ রকম কাজটি হয়তো আমাদের অজান্তেই এভাবে ঘটে যাচ্ছে। ইবাদাতের বিষয় কারো খেয়াল খুশির উপর ছেড়ে দেয়া যায় না। ঈদের দিনে রোযা রাখা হারাম, এ হারাম সংগঠিত হলে, আলস্নাহর কাছে জবাবদিহী করার জন্য তখন চাঁদ দেখা কমিটি খুজে পাওয়া যাবে না।
কি হবে আমাদের শবে কদরের রাত্রিরঃ
রোযা রাখার তারিখ যদি সঠিক না হয় তাহলে বেজোড় রাত্রি গণনাও সঠিক হবে না। শবে কদরের রাত্রি নির্ণয়ও সঠিক হবে না। ফলে এভাবে আমরা শবে কদরের রাত্রির ইবাদাত ও ফজিলত থেকেও কি বঞ্চিত হচ্ছি? তাই এ বিষয়গুলো গভীর ভাবে জেনে সঠিক সিন্ধান্তে অটল থাকা উচিত। তাই আসুন আমরা ভাল ভাবে জানি এবং সঠিক সিন্ধান্তে অটল থাকি।
বাংলাদেশের জন্য কি আলাদা জান্নাত জাহান্নাম আছে?
রাসুলুললাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন আসমান তথা জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়’’- [বোখারী শরিফ পৃ-২৫৫]।
এখন প্রত্যেক দেশের জন্য যদি আলাদা-আলাদা তারিখে রমযান মাস শুরু হয়, তাহলে যে দেশে যখন রমযান মাস আসবে, আললাহ তায়ালা তখন সে দেশের জান্নাতের দরজা খুলে দিবেন এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দিবেন। তাহলে প্রত্যেক দেশের জন্য আলাদা-আলাদা জান্নাত জাহান্নাম থাকতে হবে। বাংলাদেশে যারা আলাদা তারিখে রমযান মাস শুরু করেন, তাদের কাছে জিজ্ঞাস্য, বাংলাদেশের জন্য কি আলাদা জান্নাত জাহান্নাম আছে? নইলে বাংলাদেশের পহেলা রমযানের দিন আললাহ তায়ালা কোন জান্নাতের দরজা খুলবেন, আর কোন জাহান্নামের দরজা বন্ধ করবেন?
বাংলাদেশে কি ২/৩ দিন পরে কিয়ামত হবে?
একটু চিমত্মা করে দেখুন, আমরা যেদিন শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করি, মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতও একই দিন জুমার নামায আদায় করে। অথচ রোযা রাখার ক্ষেত্রে দুই/তিন দিন তারতম্য করা হচ্ছে। আমরা জানি যে ১০ মহরম পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে যাবে।
তাহলে সৌদি আরবে যেদিন ১০ মহরম হবে আমাদের দেশে কি তার ২/৩ দিন পরে ১০ মহররম হবে? তাহলে সৌদি আরবে কিয়ামত হওয়ার পর, আমরা পত্র-পত্রিকায় ও টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারব যে সৌদি আরবে কিয়ামত হয়ে গেছে এবং আমাদের দেশে তখনো ১০ মহরম তারিখ অসেনি, তাই আমরা কি আরো ২/৩ দিন ধরে কিয়ামতের প্রস্ত্ততি নেয়ার সময় পাব? ব্যাপারটি মোটেও এরকম নয়। একই দিন কিয়ামত হবে, আর ১০ই মহরম ও একই দিন হবে। তাই পহেলা রমযান ও একই দিন।
পূর্ব ও পশ্চিম এক হয়েছে, আমরা থাকি চাঁদ দেখা কমিটির অপেক্ষায়ঃ
পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে তার সাথে মিল রেখে আমাদের পূর্বে ইন্দোনেশিয়াতে রোযা পালন করা হয়। আর আমাদের পশ্চিম দিকে মধ্যপ্রাচ্যেও রোযা শুরু হয়।
মাঝখান দিয়ে আমরা বসে থাকি ‘‘আমাদের সরকারী চাদ দেখা কমিটি কি বলে তার অপেক্ষায়’’। মূলত মুসলিম দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেখানেই পশ্চিমাদের অনুগত দালালরা বসে আছে, সে সব দেশেই উম্মাহর ঐক্যের ব্যাপারে ও সঠিক ভাবে ইসলাম পালনে তত বেশি অন্তরায়। এ সকল অন্তরায়গুলো মুছে ফেলে সঠিক ভাবে ইসলাম পালনে এগিয়ে আসতে হবে। ।
আসুন আমরা হকের পক্ষ্যে কথা বলিঃ
আলেম সমাজ ও আম জনতাকে আহবান জানাচ্ছি, আসুন আমরা সকল অসত্যের জাল ছিন্ন করে বেড়িয়ে আসি. সঠিক দ্বিনী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসকল সমস্যার সমাধান করি।
আজকের মুসলমানদের ফরজ দায়িত্ব হচ্ছে, মানুষের তৈরি সীমানা উপরে ফেলে মরোক্ক থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ইসলামী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার, যারা জীবনের সকল ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে ইসলাম বাস্তবায়ন করবে এবং ইসলাম অনুযায়ী সমাধান প্রদান করবে, সকল মুসলমানকে একই তারিখে রোযা রাখা এবং ঈদ উজ্জাপন করার ঘোষনা প্রদান করবে এবং সকল উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করবে। মূলতঃ একমাত্র ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রের পক্ষেই তা সম্ভব। আমিন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।