আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সফল বিজ্ঞানী কে?

পাঠ্য-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা থেকে আমরা দেশের কিছু কিছু বিজ্ঞানী সম্পর্কে অবগত আছি। উইকিপিডিয়াতে দেশের বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের একটা লিস্ট আছে। কিন্তু ঐ লিস্টে বা পাঠ্যপুস্তকে (নতুন সংস্করন সম্পর্কে জানা নেই) দেশের সবচেয়ে সফল বিজ্ঞানীর নাম উঠে আসেনি। পত্র-পত্রিকাতেও তার সম্পর্কে তেমন ফোকাস করা হয়নি। আমাদের জানা নামগুলো আন্তর্জাতিকভাবে তেমন পরিচিত নন এবং এদের অনেকে বাংলাদেশে জন্মগ্রহনকারী, কিন্তু কর্মক্ষেত্র হচ্ছে অন্যদেশে।

অনেকে আবার প্রবাসী দেশের নাগরিকত্বও নিয়েছেন। এ রকম কিছু পরিচিত বিজ্ঞানীর নাম হচ্ছে পাটের জেনোম সিকোয়েন্সের প্রধান বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম (আমেরিকা), ফজলুর রহমান খানক (আমেরিকা), আবেদ চৌধুরী (অস্ট্রেলিয়া) প্রমুখ। বিজ্ঞানী হিসেবে ড. জাফর ইকবাল যতটুকু না পরিচিত, তার চেয়ে উনি জনপ্রিয় লেখক, শিক্ষাবিদ ও এক্টিভিস্ট হিসেবে বেশী পরিচিত আমি যার কথা বলতে চাচ্ছি তিনি আমাদের দেশের সন্তান এবং বাংলাদেশেই কাজ করে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বনামধন্য হয়েছেন। অথচ জাতি অজ্ঞাতসারে! দেশের তরুন সমাজ তাঁর সম্পর্কে অন্ধকারে! তিনি ২০০৫ সালে উন্নয়নশীল দেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে (TWAS Prize-2005) সর্বোচ্চ পুরুষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিকভাবে এই স্বীকৃতি অর্জনের নেপথ্যে রয়েছে সায়েন্টিফিক জার্নালের পাবলিকেশন।

তিনি এ পর্যন্ত বিশ্বমানের ১০০’র উপরে পিয়ার রিভিউ গবেষনাপত্র প্রকাশ করেছেন। তার গবেষনার মান পৃথিবীর ঐ সমস্ত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় (যেমন হার্ভার্ড, কেমব্রীজ) বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (NIH) কর্মরত বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সাথে তুলনীয়। সম্প্রতি (২০১০) তার গবেষনালব্ধ তথ্য বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা সায়েন্টিক জার্নাল নেচার (Nature)-এ প্রকাশিত হয়েছে, যেটা হয়ত অনেকে ব্লগের মাধ্যমে জেনেছেন। কিন্ত পত্র-পত্রিকাতে তেমন গুরুত্ব পায়নি। ছবি- কলেরা জীবানু (Vibrio cholera) কলেরা জীবানু নিয়ে নেচারে ঐ পাবলিকেশনের আগেই তিনি অনেকগুলো যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন।

এগুলোর কমপক্ষে ১৩ টি বিখ্যাত জার্নাল PNAS–এ প্রকাশিত হয়েছে, যা নামীদামী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক বিজ্ঞানীর স্বপ্ন। গবেষনাপত্রের অনেকগুলো প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বনন্দিত ASM Journal গুলোতে। তিনি কলেরা জীবানু'র উপর প্রকাশিত বইয়ের সংকলনে এডিটর হয়েছেন। প্রসঙ্গগত, সায়েন্টিক জার্নালের মান নির্নয়ের মাপকাঠি হচ্ছে ইম্পেক্ট ফ্যাক্টর (Impact factor)। এর উপর ভিত্তি করে বলার যায় প্রকাশিত গবেষনারলব্ধ তথ্যের মান ও কার্যকারিতা।

সাধারনত ইম্পেক্ট ফ্যাক্টর যতবেশী হয়, সে জার্নাল ততবেশী মানসম্পন্ন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যাতিক্রম রয়েছে। যেমন Lancet জার্নালের ইম্পেক্ট ফ্যাক্টর Nature-এর চেয়ে বেশী হলেও নেচার জার্নাল বিজ্ঞানী মহলে সবচেয়ে সন্মানীয়। আবার কিছু জার্নালের মান (সাধারনত কোন নির্দিষ্ট রিসার্চকে ফোকাস করে, যেমন Journal of Virology, Impact factor 5.2) শুধু ইম্পেক্ট ফ্যাক্টর দিয়েও সহজে মূল্যায়ন করা যায় না। আমার জানা মতে বাংলাদেশে থেকে প্রকাশিত জার্নালের কোন ইম্পেক্ট ফ্যাক্টর নেই।

এক নজরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নালে তাঁর প্রকাশিত কিছু গবেষনাপত্র ১। Nature (Impact factor 31.4)- ১ টি ২। Lancet (Impact factor 33.6)- ৩ টি ৩। PNAS (Impact factor 9.7)- ১৩ টি ৪। Journal of Clinical Microbiology (IF 4.2)- ১৯ টি ৫।

Infection and Immunity (IF 4.2)- ১১ টি ৬। Book- Vibrio cholerae: Genomics and Molecular Biology, Editors: Faruque SM, Nair GB. 2008. Horizon Scientific Press, Ltd. UK কে এই বাংলাদেশে কর্মরত রহস্যময় (!) বাংলাদেশী বিজ্ঞানী? তিনি হচ্ছেন ঢাকার মহাখালিতে অবস্থিত আইসিডিডিআরবি (ICDDRB)'তে কর্মরত বিজ্ঞানী ড. শাহ ফারুক (জার্নালে FARUQUE, SM নামে পরিচিত)। তিনি ১৯৭৮ ও ১৯৭৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগ থেকে যথাক্রমে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। ড. ফারুক ইংল্যান্ডের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে পিএইচডি লাভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে তিনি আইসিডিডিআরবি-তে সায়েন্টিস্ট হিসেবে যোগদান করেন।

ড. ফারুক এর ল্যাবের বিশেষত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটরা কাজ করেন এবং তাঁর প্রকাশিত জার্নালগুলোতে তাদের অবদান রয়েছে। এক কথায় বলা যায় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ । সায়েন্টিফিক জার্নালে গবেষনাপত্র রিভিউ করা বিজ্ঞানীদের অত্যন্ত সন্মানকজক ব্যাপার। ড. ফারুক বর্তমানে অনেক বিখ্যাত জার্নালে রিভিউয়ার প্যানেলে আছেন, যেমন Nature, PNAS, Journal of Infectious Disease, Infection and Immunity, Journal of Bacteriology Journal of Clinical Microbiology, Journal of Medical Microbiology, Applied Environmental Microbiology. দেশের জনপ্রিয় মিডিয়াতে চোখে বুলাতেই হতাশায় বুক ভারী হয়ে যায়। হতাশাব্যঞ্জক খবরগুলো শিরোনাম দখল করে।

মিডিয়ার কল্যানে অতি তুচ্ছ খবরও রাস্তা-ঘাটে, চায়ের কাপে ঝড় তোলে। কিন্তু আমাদের দেশে এত বড় আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞানী অন্ধকারেই রয়ে গেছেন! তরুণদের তাকে চেনা দরকার। তাঁর অবদান স্কুলের বই-পুস্তকে থাকার যথেষ্ট দাবী রাখে। ড. ফারুক আমাদের তরুণ সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস ও একজন জীবন্ত উদাহরন। নোট- লেখাটি প্রথমে Scientific Bangladesh ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

পাবলিকেশনের লিস্ট সেখানে যুক্ত করা হয়েছে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.