পারলৌকিক হ্যাঙ্গারে হ্যাঙ্গ হয়ে আছে ইহকাল / পুনরায় জন্ম নেয়া এখন বিশেষ প্রয়োজন আবিদ উচ্চমাধ্যমিকে আমাদের সহপাঠী ছিল। ওর ডাক নাম ছিল বাপ্পী। ও ক্লাসে শিক্ষক না আসলে অন্য কক্ষে বসে গান গাইত। ওর সাথে বেঞ্চের উপর তবলা বাজাতো আর একজন, হাতে তালি দিত অন্যজন। খুলনার কালচারাল অঙ্গনে আমি তখন কবিতা লিখি, আঞ্চলিক দৈনিকে গল্প লিখি।
ফার্স্টইয়ার থেকেই লিটলম্যাগ করতাম। আবিদের গানের গলা ভাল ছিল বলে ওকে আমি ঈর্ষা করতাম আর কখনই ওর সাথে কথা বলতাম না। ওর বাব মা-ও খুলনার কালচারাল বেল্টের বেশ পরিচিত মুখ। শিল্পী পরিবারের সন্তান সে। একবার পরিসংখ্যান ব্যবহারিক ক্লাসে রউফ স্যারের ক্লাসে ও আমার ব্যাগ পেছনের বেঞ্চে সরিয়ে রাখল আর অমনি আমি সুযোগ পেয়ে ওকে ধরলাম, ছেলেটা কোনও প্রতিবাদ করেনি।
ধীরে আবার ব্যাগটা জায়গায় রেখে দিল। ও শহরের ছেলে, আমি খালিশপুর থাকি, ওর বন্ধু-বান্ধব সব দল করে, আমি ভাবলাম পরে ঝামেলা হবে, বল্লাম। বল্লাম বসো, আমি বরং পেছনে বসি। ও বসলো। একবার কবি সমুদ্রগুপ্ত খুলনা উমেসচন্দ্রপাবলিক লাইব্রেরিতে গেলেন এক অনুষ্ঠানে।
দেখলাম আবিদের ঘাড়ে হাত রেখে হেটে গল্প করছে। আমার হাতে ছিল বাউন্ডুলের দ্বিতীয় সংখ্যা। আমি সমুদ্রদাকে দেব বলে ডাক দিলাম। সমুদ্রদা ওর ঘাড় ছেড়ে আমার ঘাড়ে হাত রাখতেই দেখলাম আবিদ উধাও। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।
বাবা তুই গান করিস বলে লিটলম্যাগ পুছবি না! সেই আবিদ যখন ক্লোজআপ ওয়ানে গেল আমরা সিটি কলেজের কয়েক বন্ধু এসএমএস সংগ্রহ অভিযানে নামলাম। যাক আমাদের শহরের একটা ছেলে স্টার হয়ে যাক। আবিদ স্টার হয়ে গেল। এরপরও সে খুলনা যেত, বাবা মায়ের সাথে একই মঞ্চে গাইত। আমি শহীদ হাদিস পার্কে রবীন্দ্রসংগীতের অনুষ্ঠানে ওর গান শুনেছিলাম খুলনা ছাড়ার কিছুদিন আগেও।
আবিদ খুলনা গেলে বন্ধুদের সাথে দেখা করতো। কিছুদিন আগে টিএসসিতে খুলনার কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা হল, ওরা আড্ডার এখফাকে আবিদকে দেখে উঠে গেল। আমার পিত্তি জ্বলে গেল। আজ সারাদিন একটা ইভেন্টে কাজ করে, লেকচার দিয়ে, ক্লান্ত মনে ফেসবুক খুলে বুকটা ধুক্ করে উঠলো। আমার এক বন্ধু লিখেছে এ মাসে আর কতগুলো মৃত্যুর সংবাদ শুনতে হবে।
আমি একটা দৈনিকের লিঙ্কে ক্লিক করে বিশ্বাস করতে পারি নি যে আবিদ চলে গেছে। ওর সাথে আমার একটা কথা ছিল! ওকে আমার বলার ছিল, তুই বড্ড দেমাগী, কিন্তু আমার খোলা হাওয়ায় গানটা তুই ভালই গাইতিস। এইতো আমার কম্পিউটারে গানটা বাজছে আর আমি টাইপ করছি আর কাদছি। এতো অভাগা চলে যায় আর আমি কীভাবে থেকে যাই! কেন থেকে যাই! বাবা মা ছেড়ে ঢাকা এসে আমাদের যদি চলে যেতে হয় তাহলে আমাদের বাবা মা একা হয়ে যায়। আবিদের মৃত্যুতে আমি একজন মানুষ হারালাম যাকে আমি ঈর্ষা করতাম।
আমি এখন কাকে ঈর্ষা করবো! আমার ক্লাসমেটদের মধ্যে আর একজনও নেই যাকে আমি ঈর্ষা করি প্রতিবাভাবান বলে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।