আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেখানে গাধার ভয়

অনেকদিন পর লিখতে বসলাম। নতুন অফিসে জয়েন করার পরে আজই বোধহয় প্রথম। মাঝে অনেক কিছু ঘটে গেল। শাহাবাগ আন্দোলন, আস্তিক, নাস্তিক, ব্লগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অবুঝ এবং সবুঝ ২ রকমের মানুষেরই স্বাধীন মতপ্রকাশ। বিষয়গুলো সবার বোঝার জন্য ততটা সহজও নয়।

তারপরেও মত প্রকাশ তাতে থেমে থাকেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে রিকশাওয়ালা; সবাই নিজ নিজ মত প্রকাশে উচ্চকণ্ঠ। অনেকদিন পর মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু শুধুই রাজনীতি। ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর এবারই প্রথম মানুষ রাজনীতি নিয়ে অনেক সম্পৃক্ত হল। এসব বিষয় নিয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখিও কম হয়নি।

আমি আসলে ওসব গুরু আলোচনার জাবর কাটবো না। তথাকথিত আল কায়েদা টুইন টাওয়ার এ হামলা করার পরে উম্মাতাল বুশ একটি কথা বলেছিল, “Either you are with us, or with the enemy.” বুশ সাহেব বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, কেউ যদি তার সাথে তথাকথিত সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শামিল না হয় তবে তাকে তিনি সন্ত্রাসবাদী/ সন্ত্রাসবাদীদের সহচর হিসেবে জানবেন। পৃথিবী এই বাক্যটিকে নির্বুদ্ধিতার একটি উদাহরণ হিসেবেই মনে রেখেছে। আমরা সেই ঘটনার প্রায় ১ যুগ পরেও সেই বোকার রাস্তা ধরে হাঁটছি। আমাদের দেশে এক পক্ষ বলছে, হয় আপনি রাজাকারের ফাঁসির জন্য আমাদের সাথে আন্দোলনে অংশ নিন, নচেত আপনি রাজাকার।

অন্য পক্ষ বলছে আমাদের সাথে ইসলাম রক্ষার আন্দোলনে শরিক হয়ে রাস্তায় গাড়ি ভাঙতে আসেন, তা নয়ত আপনি নাস্তিক। এই ২ চরমপন্থি নির্বোধদের ভিড়ে মধ্যম্পন্থা অবলম্বন করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রথম পক্ষকে আমি যদি বলি, রাজাকারের বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত। কিন্তু আমার মতে তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা সেতুর দ্রুত ও গ্রহণযোগ্য বাস্তবায়ন, ফারাক্কা সহ সকল আন্তর্জাতিক নদীর পানির সুষম বণ্টন, শেয়ার বাজারটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। তাহলে কিছু মানুষের চোখে আমি হব নব্য রাজাকার! দ্বিতীয় পক্ষকে যদি বলি যে, আমি আস্তিক না নাস্তিক সেটা বিচার করার আপনি কে? ব্লগ এ কি লেখা হয় তা না হয় বাদই দিলাম, নিদেনপক্ষে ব্লগ কি জিনিষ সেটাও তো ইসলাম রক্ষার জঙ্গি আন্দোলনের ৯৯% মানুষ পরিষ্কার জানে না।

একথা বললে আমাকে বোধকরি তারা কতল করতে আসবে। এই দুই ধরনের চরমপন্থিদের ভিড়ে একটা আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মুল আতংকটা ছড়াচ্ছে দ্বিতীয় দলটাই। গত প্রায় মাস খানেক যাবত মোবাইল কোম্পানি বাংলালিংকের একটি বিজ্ঞাপন দেখে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। সেখানে এক হকার বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির কল রেটের বৃত্তান্ত দিয়ে একটি বই বিক্রি করছে।

কল রেট এর উপর PhD করাচ্ছে। তার বইয়ে নাকি আছে যে “কোন নেটওয়ার্কে কুলি করার আগে, আর কোন নেটওয়ার্কে কুলি করার পরে কথা বললে” কম টাকায় কথা বলা যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। হাস্য রসাত্মক একটা বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনটিতে বইটির নাম দেখানো হচ্ছিল “সহি মোবাইলনামা” গত সপ্তাহ থেকে খেয়াল করলাম বিজ্ঞাপনটি ঠিকই দেখানো হচ্ছে শুধু বইয়ের নামের জায়গাটি মুছে দেয়া হয়েছে। যদিও এই নাম ব্যবহার করলে কোনক্রমেই ইসলামের কোন অবমাননা করা হয় না।

কিন্তু কোম্পানিটি কোন রকম ঝুকি নিতে চায়নি। কে জানে কখন কোন গাধা চিৎকার শুরু করবে যে, এই আরবি শব্দ ব্যবহার করে কোম্পানিটি ইসলামের চরম অবমাননা করেছে। আর একবার চিৎকার শুরু হলে তো আর রক্ষা নেই। আরও লাখ লাখ গাধার সমস্বরে চিৎকারে তখন অন্য কিছু বলার বা সঠিক ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ আর নাও থাকতে পারে। স্বাধীনতার ৪ যুগ পরেও তো আমাদের দেশে গাধার সংখ্যা তো নেহায়েত কম নয়।

এটা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থারও একটা বড় ব্যর্থতা নিঃসন্দেহে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.