জনকণ্ঠ ॥ --- স্নাতক ও সমমান পর্যায় পর্যন্ত ছাত্রীদের বেতন ফ্রি, উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বহু প্রতিৰীত ট্রাস্ট ফান্ডের কার্যক্রম। এ জন্য ৩৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। এটি বাস্তবায়ন হলে স্নাতক ও সমমান পর্যায় ছাত্রীদের শিক্ষার হার বৃদ্ধি, মহিলাদের চাকরির সুযোগ ও উপার্জন ৰমতা বৃদ্ধি, দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও জেন্ডার সমতা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি সারাদেশে বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর।
সূত্র জানায়, নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করার লৰ্যে ১৯৯৪ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে ছাত্রী উপবৃত্তি কার্যক্রম শুরু হয়।
বর্তমানে শিৰা মন্ত্রণালয়ের আওতায় চারটি প্রকল্পের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দেশের ৪৮১ টি উপজেলায় প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। চলমান এ প্রকল্পগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ৫৩টি উপজেলায়, আইডিএ এবং সরকারের যৌথ অর্থায়নে সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি এ্যান্ড একসেস ইনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ১২৩টি উপজেলায়, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সেকেন্ডারি এডুকেশন স্টাইপেন্ড প্রজেক্টের আওতায় ৩০৫টি উপজেলায় এবং সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান (চতুর্থ পর্যায়) শীর্ষক একটি প্রকল্প বাসত্মবায়ন হচ্ছে।
বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নারী শিৰার ব্যাপক বিসত্মারে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ভিত্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গৃহীত ছাত্রী উপবৃত্তি কার্যক্রম স্নাতক পর্যায় পর্যনত্ম সম্প্রসারণ, বিনা বেতনে শিৰা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং উপবৃত্তি প্রদানের লৰ্যে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের ওপর গুরম্নত্ব আরোপ করেন। এ প্রেৰিতে ৩৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে জুলাই ২০১১ থেকে জুন ২০১৬ মেয়াদে বাসত্মবায়নের জন্য স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান শীর্ষক একেবারেই নতুন এ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াকরণে প্রসত্মাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান, ছাত্রীদের জন্য বই-পুসত্মক ক্রয়, টিউশন ফি ফ্রি প্রদান, পরীৰার ফি প্রদান, জনবলের বেতন ভাতা, পিআইইউ পরিচালনা ব্যয় মেটানো, ওয়ার্কশপ আয়োজন, উপবৃত্তি সংক্রানত্ম বিভিন্ন ফরম ও লিফলেট ছাপানো, ব্যাংক সার্ভিস চার্জ, উপবৃত্তি বিতরণে উপজেলা অফিসারদের জন্য কন্টিনজেন্সি, ডাটা এন্ট্রি ও প্রসেসিং, আসবাবপত্র ক্রয়, অফিস যন্ত্রপাতি ক্রয়, কম্পিউটার ও এঙ্সেরিজ এবং যানবাহন ক্রয় করা হবে।
প্রসত্মাবিত প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র ছাত্রীদের উপবৃত্তি পাওয়ার শর্তগুলো হচ্ছে পিতামাতা বা অভিভাবকের জমির পরিমাণ ৭৫ ডেসিমেলের উর্ধে হবে না, পিতামাতা বা অভিভাবকের বার্ষিক আয় ৭৫ হাজার টাকার বেশি নয়, দুস্থ, অসহায় গোষ্ঠী যেমন বিকলাঙ্গ, এতিম অনাথ ছাত্রীরা অগ্রাধিকার পাবেন, চরম দুর্দশাগ্রসত্ম পরিবারের সনত্মান এবং বিল, হাওড়, মঙ্গা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি এলাকার সকল ছাত্র।
এ ছাড়া শিৰাবর্ষে নূ্যনতম ৭৫ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিতি এবং স্নাতক পর্যায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীৰায় কৃতকার্যতার সঙ্গে সম্পন্ন করা।
প্রকল্পের প্রসত্মাবনায় বলা হয়েছে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ডিগ্রী পর্যনত্ম ছাত্রীদের বিনা বেতনে অধ্যয়ন, গরিব ও মেধাবী ছাত্রীদের উপবৃত্তি, শিৰা উপকরণ ও পরীৰার ফিসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হবে। এর ফলে উচ্চ শিৰায় ছাত্রীদের অধ্যয়নের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিৰা অর্জনের ভারসাম্য সৃষ্টি হবে এবং মানব সম্পদ তৈরি হবে।
যা দেশের বিদ্যমান পরিকল্পনা নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, শিৰা মন্ত্রণালয় থেকে প্রসত্মাব পাওয়ার পর গত বছরের ২২ ডিসেম্বর প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্পটি আগামী একনেক সভায় চূড়ানত্ম অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ থেকে উপস্থাপন করা হবে।
প্রসত্মাবিত স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের প্রধান প্রধান অঙ্গভিত্তিক ব্যয়ের খাতগুলো হচ্ছে দরিদ্র ছাত্রীদের উপবৃত্তি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৫৮ লাখ ছাত্রীর জন্য ১৩৩ কোটি ৮১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ। একই সংখ্যক ছাত্রীর সাবভেশন টু এডুকেশন ইনস্টিটিউশন ফি (টিউশন সাবসিডি) খাতে ৪০ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ।
ছাত্রীদের বই-পুসত্মক ক্রয় খাতে একই সংখ্যক ছাত্রীর জন্য ৮৩ কোটি ৬৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ২৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। পরীৰার ফি বাবদ একই সংখ্যক ছাত্রীর জন্য আর্থিক সাহায্য ৫৫ কোটি ৭৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। বিল, হাওড়, মঙ্গা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি এলাকায় সকল ছাত্রীর উপবৃত্তি প্রদান বাবদ প্রতিবছর ২ কোটি টাকা করে ১০ কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ২ দশমিক ৯২ শতাংশ। ১৭ জন জনবলের বেতন খাতে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, যা মোট ব্যয়ের শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ। পিআইইউ পরিচালনা ব্যয় যেমন অফিস ভাড়া, অফিস স্টেশনারি, টিএএন্ডডিএ, বিদু্যত বিল, টেলিফোন বিল ও যানবাহনের জ্বালানি ব্যয় বাবদ ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, যা মোট ব্যয়ের শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ।
কর্মশালা দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি আয়োজনের জন্য ২ কোটি ৪ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ ইত্যাদি।
প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের (২০১১-১২) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অনত্মর্ভুক্ত রয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।