আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কে বেশি সুখি? (গল্প)

রফিক সাহেবের আজ ভয়াবহ মন খারাপ। তিনি সব সময় অফিসের কাজ গুলি যতটা সম্ভব নির্ভুল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আজ তার বস সামান্য একটু ভুলের জন্য তাকে যেভাবে অপমান অপদস্ত করলেন তাতে তিনি বিস্মিত। সবাই কেন যেন রফিক সাহেবের সাথে একটু বেশি খারাপ ব্যবহার করেন। অথচ তিনি কিন্তু কখনোই কাউকে বিরক্ত করেন না।

মাথা নিচু করে নিজের কাজটুকু করে যান। অফিস শেষে বাসের জন্য লাইনে দাড়িয়ে তার শুধু বার বার বসের কটু মন্তব্য গুলি মনে পড়তে ছিল। সে খুব আনমনা আর বিসন্ন হয়ে বাসের জন্য দাড়িয়ে ছিল। রফিক সাহেবের অমনোযোগীতার সুযোগটা নিল পকেটমার। কখন যে পকেট কেটে ম্যানিব্যাগ গায়েব হল রফিক সাহেব তা টেরও পেলেন না।

তিনি শুধু অপমান হবার প্রহরের কথা ভাবতে ছিলেন। রিকসা থেকে নেমে ভাড়া দেবার সময় পকেট হাত দিয়ে শিউরে উঠলেন। আরে পকেটতো দেখছি কাটা! তিনি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাড়িয়ে রইলেন। রিকসার ড্রাইভার চিঃকার করে বললো আমার ভাড়া দেন। বিপদ থেকের্ ক্ষা করলেন ফুটপাতের চায়ের দোকানদার আমির।

রিকসা ভাড়াটা দিয়ে সে বললো চাচা বাসায় যান । পড়ে চা খাওয়ার সময় টাকাটা দিয়েন। মনে মনে আমির কে অনেক ধন্যবাদ দিলেন। তারপর বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজলেন। খুব ক্লান্তি লাগছে তার।

কিন্তু ঘরে ঢুকতেই এক প্রকার তেড়ে এলেন তার স্ত্রী রেনু বেগম। ঝগড়াটে কন্ঠে বললেন, কি ব্যাপার তুমি পেপারওয়ালার টাকা দিছো কিন্তু দুধওয়ালার টাকা এখনও দাওনী কেন? দুধওয়ালার টাকা কালকে দিনের মধ্যে দিবা। রেনু বেগম গজগজ করতে করতে রুম হতে বের হয়। রফিক সাহেব শার্ট খুলে চেয়ারে ঝুলিয়ে রাখেন। রেনু বেগমের কথা তার আহত মনকে আরো বেশি আহত করলো যেন।

পেপার পড়তে তার মাত্র ২৫০ টাকা খরচ হয়, অথচ সুযোগ পেলে প্রায়ই রেনু বেগম তাকে এ নিয়ে কথা শোনায়। যত দিন যাচ্ছে রেনু বেগম গৃহবধু হতে যেন বাজখাই মহিলা পূলিশ হয়ে যাচ্ছেন। এই কর্কষ কন্ঠ শুনে কেউ হয়ত বিশ্বাস করবে না যে বিয়ের আগে রেনু বেগম কত সুন্দর রবীন্দ্র সংগীত গাইতো। হায় সময় তুমি কত নি:ষ্ঠুর! মন খারাপ করে তিনি খোলা জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলেন। পাশের দু’তলা ভবনের ছাদে একটা চড়–ই পাখি বসে আছে।

রফিক সাহেব একমনে পাখিটাকে দেখতে লাগলেন। মনে মনে বললেন চড়–ই পাখি তোরা খুব ভাল আছিস, তোদের বাসা ভাড়া দিতে হয় না। নির্বোধ বসের ঝাড়ি খেতে হয় না। বিদুৎ ,গ্যাস আর ফোন বিল দিয়ে ফতুর হতে হয় না। তোদের বাচ্চাদের পেছনে হাজার হাজার টাকাও খরচ করতে হয় না।

অকারনে বউয়ের ধমকে কেপে উঠতে হয়না। তোরা ভাই খুব ভাল আছিস! রফিক সাহেবের ক্লান্ত লাগে। জীবনের প্রতি চরম বিরক্তি বোধ হয় তার। কলুর বলদের মত অবিরাম সংসারের ঘানি টেনে যাওয়া কে বড় বেশি নিরর্থক মনে হয় তার। বড় মেয়ে সুপ্তি এসে খাটের উপর বসল।

তার হাতে মোবাইল ফোন। অনার্স সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ছে সে। তার দিকে তাকিয়ে রফিক সাহেবের মনে হল মেয়েটা বড় অস্থির। সে বললো, বাবা তোমাকে না বলে ছিলাম আমার মোবাইলে টাকা ফ্লেক্সিলোড করে দিতে? কৈ দিলে নাতো। রফিক সাহেব নিরাসক্ত গলায় সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললেন, পকেটমার আমার মানিব্যাগ চুরি করে নিয়ে গিয়েছে।

বল কি? চিৎকার করে উঠে সুপ্তি। তারপর উপদেশের স্বরে বলে ‘তুমি যে বাবা কি হচ্ছনা আজকাল! তোমার আরো সচেতন হওয়া উচিৎ ছিল। তা পকেটে কত টাকা ছিল? বেশি না ১৫০০ টাকা আর ব্যাংকের কার্ড। সুপ্তি উঠে গিয়ে ঘরের সবাইকে ব্যাপারটা জানায়। অবাক কান্ড বাসার কেউ তাকে সহানুভুতি না জানিয়ে রাস্তার অপরিচিত মানুষ গুলির মত কেবল উপদেশ দিল।

সাথে তারা এমন সব বিশেষন যোগ করলো যেন রফিক সাহেব অচল হয়ে গেছে। চারপাশের চালাক পৃথীবিতে যেন তার মত লোকদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে। তবে এতে রফিক সাহেব বিস্মিত হলেন না। কারন এরকমটা প্রতিনিয়তই হয়ে আসছে। সে উঠে গিয়ে পত্রিকাটা খুলে চোখের সামনে মেলে ধরলেন।

পত্রিকা জুড়ে রঙিন বিজ্ঞাপন আর রাজনীতির নানান ডায়লগ। যাত্রাপালার মত মুখস্ত ডায়লগ গুলো ঘুরে ফিরে বলছে রাজনীতিবিদরা। সুবিধাবাজ দল গুলির বোরিং ডায়লগ শুনতে বিরক্তি লাগছে রফিক সাহেবের। সে পত্রিকা ছুড়ে ফেলে দিল। বাইরে বেড়–নোর জন্য দাড়ালো।

ঠিক সেই সময়ে তার ছোট মেয়ে বরষা চা হাতে তার সামনে এসে দাড়ালো। হেসে বললো নাও বাবা চা খাও। রফিক সাহেব চা পেয়ে খুব খুশি হলেন। চায়ে চুমুক দিয়ে তার প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। সে বরষার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, মারেতুমিতো অসাধারন গুনবতী কন্যা! গত দশ বছর আমি এমন ভাল চা খাইনী।

একবারে মায়ের বানানো চায়ের মত। অসাধারন! রফিক সাহেব মায়ের কথা মনে করে বিসন্ন হয়ে যায়। বরষা তখন হেসে বলে বাবা তুমি দুঃখ করনা, আমি তোমাকে সারা জীবন এমন সুন্দর করে চা বানিয়ে খাওয়াবো। আমার ক মন হয় জানো বাবা? আমার মনে হয় তোমার মত এমন ভালো মানুষ পৃথীবিতে খুব বেশি নেই। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি বাবা।

রফিক সাহেবের মন ভালো হয়ে যায়। তার মনে হয় বরষার কথাটাই সত্যি সে আসলেই ভাল মানুষ। বরষা বলে তুমি হয়ত জানো না যারা জীবনে অসুখি তারা সুখি মানুষদের সহ্য করতে পারে না। তারা সুখি মানুষদের দেখে হিংসায় জ্বলে যায়। অথচ নির্বোধ মানুষ গুলো ইচ্ছে করলেই সুখি হতে পারতো।

বাকি অংশ আগামীকাল... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.