২৩ জুলাই । আমার দৃষ্টিতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মেধাবী রাজনীতিবিদ তাজউদ্দিন আহমেদ-এর জন্মদিন । দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো বাদে আর কিছুই করতে পারলাম না । আমাদের ক্ষমা করবেন । আপনি বলেছিলেন, "মুছে যাক আমার নাম, তবু বেঁচে থাক বাংলাদেশ"- আমরা আপনার প্রথম কথা প্রায় সত্যে রূপ দিয়েছি, দ্বিতীয়টি পারব কিনা জানি না...
তাজউদ্দিন আহমেদের একটা রাজনৈতিক মেধার কথা বলি ।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব মোটামুটি নিজের মনমত ৬ দফা দাবী দিলেন । তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো সামরিক শাসক আইয়ুব খানকে বললেন, "আমাকে একটা সুযোগ দিন, আমি ঢাকার মাটিতে বসে Open challenge meeting-এ জনগণের সামনে শেখ মুজিবকে প্রমাণ করে দিয়ে আসবো যে ছয়দফা বাস্তব-সম্মত নয় । " তিনি অনুমতি পেলেন ।
ই বছরই আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া তার নিজ বাছাইকৃত সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন কিনা । তাজউদ্দিন সাহেব বললেন, "অবশ্যই গ্রণ করবেন, মুজিব ভাই" ।
জুলফিকার সাহেব ঢাকায় আসলেন । Meeting-এর দিন সকাল বেলা তাজউদ্দিন আহমেদ তার সাথে দেখা করতে গেলেন কিছু file বগলে নিয়ে ।
অতঃপর দেখা গেল, বিকালের meeting-কে তোয়াক্কা না করে জুলফিকার সাহেব দুপুরেই অনিবার্য কারণবশত পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন । হা হা হা । তাজউদ্দিন আহমেদের সাথে জুলফিকার আলী ভুট্টোর কি আলোচনা হল, হতভাগা বাঙালী কখনোই সেটা জানার প্রয়োজন বোধ করেছে বলে আমার জানা নেই...
তাজউদ্দিন আহমেদের জীবনের তিনটা Emotional কাহিনী বলি (যেহেতু বাঙ্গালী, জীবনে এমন কিছু ঘটনা থাকবেই...)
১।
১৯৭০ সালে নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের সময় (ডিসেম্বরে ছিল নির্বাচন)অনেক মানুষ তাঁর বাসায় আশ্রয় গ্রহণ করেন । এমন সময় তাঁর বাড়ির জানালায় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে একটা বুলবুলি পাখির মৃত্যু হয় । অন্ধকারে লুকিয়ে ক্রন্দনরত তাজউদ্দিন আহমেদকে তাঁর মেয়ে দেখে ফেলেন। ইহাহিয়ার বিরুদ্ধে সারাদিন আন্দোলনরত তাজউদ্দিন মেয়েকে কান্নাভেজা কন্ঠে বলেন, "আমার বাসায় এত মানুষের জায়গা হল, অথচ এই ছোট্ট বুলবুলি পাখিটার জায়গা হল না..."
২। ১৯৭১ সালে যখন ভারতে বসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এবং দেশের শাসনকার্য নিয়ে ব্যস্ত, তখনকার ঘটনা ।
On Time অফিসে আসা তাজউদ্দিন সাহেব এসে দেখলেন, তাঁর পিয়ন তখনো আসেনি । তিনি থিয়েটার রোডের পিয়নের সেই বাসায় চলে গেলেন । তাঁর অন্য এক কর্মচারী অফিসে এসে, তাঁকে না পেয়ে সেই পিয়নের বাসায় গেলেন । গিয়ে দেখেন, বাসায় আর কেউ নেই, শুধু প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন সাহেব জ্বরে আক্রান্ত পিয়নের মাথায় বদনা দিয়ে পানি ঢালছেন । (আজকের দিনে আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীদের কাছে এর সামান্য সহানুভূতিও কি আশা করতে পারি না ?)
৩।
১৯৭১ সালে যখন ভারতে বসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এবং দেশের শাসনকার্য নিয়ে ব্যস্ত, তখনকার ঘটনা । ডঃ আনিসুজ্জামান (আমরা অনেকেই তার লেখা বাংলা বই Inter-e পড়েছি) একদিন তাজউদ্দিন আহমেদের কাছে যান । তিনি গিয়ে দেখলেন, তাঁর চুল উস্কখুস্ক, চোখ লাল । বললেন, "আপনার শরীর খারাপ নাকি ?" তাজউদ্দিন সাহেব জবাব দিলেন, "গতরাতে শুতে যাওয়ার পর, হঠাত ঝড়ে আমার ঘরের জানালার একটা অংশ খুলে গেল, তখন মনে হল, এই ঝড়ে আমার ছেলেরা না খেয়ে না ঘুমিয়ে যদ্ধ করছে, আর আমি ঘুমাচ্ছি ? আমি রাতে আর ঘুমাতে পারি নাই..."
তাজউদ্দিন আহমেদের কয়েকটি রাজনৈতিক মেধা এবং চিন্তাধারার কথা আর নমুনার কথা বলতে চাই ।
১।
১৯৭১-এর ২৫-এ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর তাজউদ্দিন আহমেদ তখনকার তরুণ ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম-এর সাথে কুষ্টিয়ার টঙ্গীতে স্বাধীন সরকারের পরিকল্পনা করেন এবং ভারতে থেকে সেটা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেন । কিন্তু তিনি ভারতে পা রাখার আগমুহ...ুর্তে ঘোষণা দেন, "আমি একজন স্বাধীন দেশের নেতা। অন্য কোন দেশের আমন্ত্রণ বা Protocol ছাড়া আমি অন্য দেশে যেতে পারি না । " তখনই ভারত থেকে সৈন্যবাহিনী এসে তলোয়ারের কুর্নিশের মাধ্যমে তাকে ভারতে নিয়ে যায় ।
২।
স্বাধীন দেশের অর্থমন্ত্রী হলেন তাজউদ্দিন আহমেদ । World Bank-এর তৎকালীন chief, Robert McNamara-র সাথে তিনি প্রথমে ভাল খাতির রাখতে চাননি । কিন্তু পরে বুঝলেন যে world bank ছাড়া অর্থনৈতিক অবস্থা গতিশীল হবে না । পরে তিনি World Bank-এর সাথে কাজকর্মে রাজী হন । কিছুদিন পর তাজউদ্দিনের আড়ালেই তার সহযোগীদের কাছে, McNamara ঘোষণা করেন, "Tajuddin Ahmed is the best finance minister I have ever seen."
৩।
ঝানু রাজনোইতিক নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের বলেন, "শেখ মুজিবকে Emotion দিয়ে কাবু কোন সমস্যা না, কিন্তু তার পিছনে যে খাটো মত লোকটা File বগলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, He is very dangerous. I tell u that this Tajuddin will be our only pr...oblem."
৪। সবশেষে একটা কথা বলি, কনকোফিলিপস নিয়ে অনেক আলোচনা হয়ে গেল। তাজউদ্দিন সাহেবের নিজের হাতে লেখা এই লেখাটুকু যদি আমদের সরকার Apply করতে পারতেন...
courtesy: Anindya Bbijoy Das ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।