আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলা হলো : নিরাপত্তাহীনতায় নুরুল ইসলামের পরিবার

ইতিহাসের পেছনে ছুটি তার ভেতরটা দেখবার আশায় লক্ষ্মীপুর শহরে স্থাপিত অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের স্মৃতি স্তম্ভটি গতরাতে ভেঙে দেয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের গডফাদার তাহেরের স্ত্রী নাজমা তাহেরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি চালিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেয়। গত বিএনপি সরকারের সময়ে লক্ষ্মীপুর শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌরসভার সামনে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। এতে অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের ছবি ও নাম উত্কীর্ণ ছিল। লক্ষ্মীপুর থেকে সাংবাদিকরা জানান, রাত সাড়ে দশটায় সন্ত্রাসী ক্যাডাররা ভাঙার কাজ শুরু করে।

ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙার তদারকি করেন তাহেরের স্ত্রী নাজমা তাহের ও ছেলে শিপন। এ সময় ক্যাডারদের হাতে ছিল দেশীয় অস্ত্র। অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের ভাই অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, লক্ষ্মীপুরে আমরা এখন অসহায়। লক্ষ্মীপুরের চাঞ্চল্যকর বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় সেখানকার গডফাদার খ্যাত এম এ তাহের পুত্র কারাবন্দি এইচ এম বিপ্লবের মৃত্যু দ-াদেশ রাষ্ট্রপতি মওকুফ ঘোষণার পর তার পরিবার ও মামলার বাদী, সাক্ষীসহ সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত এইচ এম বিপ্লবকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পুরো লক্ষ্মীপুর জেলা যেন এক ভুতুড়ে ও আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়।

সবার মুখে একই প্রশ্ন একজন দ-প্রাপ্ত খুনিকে রাষ্ট্রপতি কিভাবে ক্ষমা করলেন। নুরুল ইসলামের স্ত্রী রাশেদা ইসলাম এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানান, রাষ্ট্রপতি আইনের রক্ষক হয়ে একজন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমা করে দেয়ার পর এ দেশে আইনের শাসন আছে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, একজন দ-প্রাপ্ত খুনিকে ক্ষমা করে দেয়ার পর এ দেশে আইন আদালতের আর কি প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, স্বামীকে খুন করার পর তার লাশও পাননি। আদালতে তারা হত্যার বিচার পেলেও রাষ্ট্রপতি ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমা করে দেয়ার পর সে বিচারও আর বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

তিনি ও তার সন্তানরা কি দিয়ে নিজেদের সান্ত্বনা দেবেন। সে ভাষা তাদের জানা নেই। তিনি আরো জানান, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম হত্যার পর থেকে তিনি প্রতিনিয়ত খুনি ও তাদের স্বজনদের হুমকি ধামকিতে রয়েছেন। এ কারণে তিনি লক্ষ্মীপুর ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করছেন। ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি বিপ্লবকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দিয়ে জেল থেকে বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করায় তিনি এখন সন্তানদের নিয়ে পুরোপুরি নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন।

অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামের ছোট ভাই ও মামলার সাক্ষী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ৭নং বশিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শামছুল ইসলাম আজাদ একই রকম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানান, খুনিকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেয়ার মধ্যদিয়ে এ দেশে খুনিরা আরো খুন করতে উৎসাহিত হবে। তিনি তার ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে বলেন, যেকোনো মুহূর্তে তারা স্বপরিবারে খুনের শিকার হতে পারেন বলে তাদের আশঙ্কা। অপর দিকে মামলার বাদী লক্ষ্মীপুর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তারেক উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী জানান, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেয়ার মাধ্যমে দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পথ আরো একবার রুদ্ধ করল সরকার। লক্ষ্মীপুর ৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, রাষ্ট্রপতির ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমা করে দেয়া সম্পূর্ণ অন্যায়। এ আদেশ সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার বহির্প্রকাশ।

দেশে এখন আইনের শাসন হুমকির মুখে। উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে শহরের উত্তর মজুপুরের বাসা থেকে তাহেরের ছেলে বিপ্লবের নেতৃত্বে অপহরণ করে তাকে শহরের থানা রোডে গডফাদার তাহেরের পিংকী প্লাজায় রেখে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে বালির বস্তায় ভরে মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন লক্ষ্মীপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তারেক উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম হাসান ইমাম ২০০৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তাহের পুত্র এইচ এম বিপ্লব, আবদুল জব্বার লাভলু, আলমগীর হোসেন,তানভীর হায়দারও জিয়াউর রহমানকে মৃত্যুদ- এবং ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ প্রদান করেন। একই আদালত ২০০৪ সালের ২০ মার্চ যুবদল নেতা কামাল হত্যা মামলার রায়ে এইচ এম বিপ্লবকে যাবত জীবন কারাদ-াদেশ প্রদান করেন।

দুটি মামলায় সে উচ্চ আদালতে আপিল করলে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে। এ ব্যাপারে বিপ্লবের পিতা এম এ তাহের রাষ্ট্রপতির নিকট পুত্রের প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করার পর ফেরারি বিপ্লব মে মাসে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। রাষ্ট্রপতি ১৪ জুলাই বিপ্লবের ফাঁসির দ-াদেশ মওকুফ করেন। লক্ষ্মীপুরের পুলিশ প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, গডফাদার তাহের পুত্র এইচ এম বিপ্লব জেলার তালিকাভুক্ত শীর্ষসন্ত্রাসী।

সে যুবদল নেতা কামাল, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, শিবির নেতা জায়েদ, মহসিনসহ বেশ কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি। এর মধ্যে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় সে মৃত্যুর দ- এবং কামাল হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ প্রাপ্ত হয়। ওই দুটি মামলায় হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট তার দ-াদেশ বহাল রাখেন। বর্তমানে তাহের পুত্র বিপ্লব কয়টি মামলায় সাজা ভোগ করছেন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের জেল সুপার নুরশেদ আহাম্মেদ ভূইয়া মুঠো ফোনে জানান, তাহের পুত্র বিপ্লব সম্পর্কে তিনি কোনো তথ্য দিয়ে বিপদে পড়তে চান না। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা তা প্রকাশ করে দিয়ে তাদের বিপদে ফেলেন।

তিনি বিপ্লবের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিয়ে বিপদে পড়তে পারবেন না, এ বলে তিনি লাইন কেটে দেন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.