রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিত্সাধীন গুরুতর অসুস্থ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জামিন আবেদন দ্বিতীয় দফা নাকচ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসেসরে কোরআন মাওলানা সাঈদীর জামিন আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবীরা। এদিকে গতকাল একই
ট্রাইব্যুনালে সরকার পক্ষের আইনজীবীদের কাছে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেছে সরকার নিযুক্ত তদন্ত সংস্থার সদস্যরা। আগামী ১১ জুলাইয়ের মধ্যে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আবেদন জমা দেয়ার জন্য আদালত সরকার পক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন।
একাত্তরের কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়ের করা মামলায় সরকার মাওলানা সাঈদীকে গ্রেফতার করে প্রায় এক মাস রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে।
এতে হৃদরোগে আক্রান্ত সাঈদী আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জামিনের আবেদনের শুনানি উপলক্ষে তাকে গতকাল হাসপাতাল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি মাইক্রোবাসে করে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় হাজির করা হয়। হুইলচেয়ারে করে মাওলানা সাঈদীকে হাজতখানায় নেয়ার কিছুক্ষণ পর তার বুকের ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় তাকে দ্রুত আবার হাসপাতালে নেয়া হয়। বেলা পৌনে ১১টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে মাওলানা সাঈদীর জামিনের প্রার্থনা জানিয়ে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন। শুনানিতে তারা বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি কারাগারে বিনা চিকিত্সায় থাকায় তার রোগ জটিল আকার ধারণ করেছে। তিনি কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে চিকিত্সা নিচ্ছেন। ফলে স্বাধীনভাবে চিকিত্সা নিতে পারছেন না। যে কোনো শর্তে জামিন মঞ্জুরের প্রার্থনা জানিয়ে তারা আরও বলেন, মাওলানা সাঈদী বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও তিনি একজন সুবক্তা হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
জামিন দিলে তিনি আত্মগোপন করবেন না। আদালতে পাসপোর্ট জমা দেবেন। এর আগেও এ ধরনের শর্তে এলডিপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল আলিমকে জামিন দিয়েছেন এই আদালত। কাজেই জামিন দেয়ার এই রীতি নতুন নয়। আদালত জামিন মঞ্জুর করলে আদালতের সব নির্দেশনা তিনি মেনে চলবেন।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের এ বক্তব্যের জবাবে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, তিনি অসুস্থ এটা ঠিক। আর এ কারণেই তাকে উপযুক্ত চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে। শিগগির চার্জ গঠনের শুনানির আবেদন করা হবে। এ অবস্থায় তাকে জামিন দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সরকার পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হায়দার আলী মাওলানা সাঈদীর বিষয়ে শুনানিতে আরও বলেন, তিনি একজন সুবক্তা। তার সুমধুর কণ্ঠের ওয়াজ শুনতে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়। তারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো নীরবে ওয়াজ শোনে। আমরাও বিভিন্ন সময়ে তার ওয়াজ শুনেছি। তার ওয়াজের ক্যাসেট বিভিন্ন গাড়িতে ও অনুষ্ঠানে বাজানো হয়।
তিনি একজন ধর্মীয় নেতা—এগুলো সবই ঠিক। তবে তিনি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, সেটাও আজ প্রায় প্রমাণিত। তিনি কয়েক লাখ নারীকে ওই সময় ধর্ষণ করেছেন :। কাজেই তাকে জামিন দিলে বিচার কাজ ব্যাহত হতে পারে। সরকার পক্ষের আইনজীবীদের এ বক্তব্যের জবাবে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সরকার রাজনৈতিক ইর্ষাকাতর হয়ে তাকে হেয় করার জন্য এ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনেছে।
স্বাধীনতার ৪০ বছর পর এখন এসে সাঈদীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে। অথচ এর আগেও আওয়ামী লীগ একাধিকবার ক্ষমতায় ছিল। তার বিরুদ্ধে এতদিন ধরে দেশের কোথাও একটি মামলা তো দূরের কথা, একটি জিডিও করেনি আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা। কাজেই সরকারের উত্থাপিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন, যেখানে সরকার বলছে যুদ্ধের সময় সারাদেশে আড়াই লাখ নারী ধর্ষিত হয়েছেন।
এখন বলা হচ্ছে, মাওলানা সাঈদী একাই নাকি দুই লাখ নারী ধর্ষণ করেছেন। এ ধরনের আজগুবি গল্প সরকারের লোকরা বিশ্বাস করলেও দেশবাসী বিশ্বাস করবে না। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে গঠিত ট্রাইব্যুনাল মাওলানা সাঈদীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে আগামী ১১ জুলাইয়ের মধ্যে সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন জমা দিতে সরকার পক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, মাওলানা সাঈদীকে আওয়ামী লীগ নেতাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কথিত অভিযোগ এনে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে গত বছর গ্রেফতার করা হয়।
এরপর তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেয়া, পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়া, পুলিশকে ধাক্কা দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হাস্যকর অভিযোগ এনে ১৪টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় তাদের দীর্ঘদিন রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায় সরকার। পরে সরকারি দল তাদের পছন্দের লোকদের দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেল গঠন করে। শুরুতেই তদন্ত সংস্থার প্রধান আবদুল মতিন একাত্তরে রাজাকার ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠায় তাকে বাদ দেয়া হয়। বর্তমানে তদন্ত সংস্থা তথাকথিত গণআদালতের আদলে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করছে।
এসব কারণে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের দমন-পীড়ন ছাড়া এ আদালতের ন্যায়বিচার করার কোনো সক্ষমতা নেই বলেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠন মতামত পেশ করেছে।
View this link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।