কুড়িলনিবাসী হাজী পরিবারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের ১০২ কাঠা জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন যমুনা গ্রুপের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুল। সে জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে যমুনা ফিউচার পার্ক ও যমুনা টিভি ভবন। শুধু জমি দখনই নয়, মিথ্যা হত্যা মামলা দিয়ে জমির মালিক পরিবারের সবাইকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ৭৫ বছরের বৃদ্ধ হাজী মো. জমির আলী। তিনি আকুতি জানিয়ে বলেন, 'আমি ও আমার পরিবার প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ হায়েনার হাত থেকে আমরা বাঁচতে চাই।
'
২০০১ সালের দিকে কাউকে কিছু না জানিয়েই বাবুলের সন্ত্রাসী বাহিনী আকস্মিকভাবে হাজী জমির আলীর পৈতৃক সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। একই সঙ্গে তাদের ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এ দৃশ্য তারা শুধু তাকিয়ে দেখেছেন। যমুনা ফিউচার পার্কের অধিকাংশ জমিই একইভাবে দখল করার সময় সেখানে নুরুল ইসলাম বাবুলের নির্দেশে একটি খুন করা হয়। এ খুনের পর এলাকার আদি বাসিন্দাদের বাবুল এ বলে হুমকি দেন- বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের লাশ ফেলে দেওয়া হবে, যে কারণে এলাকার নিরীহ ভূমি মালিকরা তার ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি।
জোয়ারসাহারা মৌজার ১৪৫০, ১৪৪৬, ১৪৪৯ ও ১৪৫২ নম্বর সিএস ও এসএ দাগে তাদের ৫ বিঘা ২ কাঠা জমির মালিক হলেন কুড়িলের শরীয়ত আলীর ছেলে হাজী জমির আলী, মৃত অ্যাডভোকেট আবদুল বারেক, মৃত নাসির উদ্দিন ও এস এম আল আমিন। একইভাবে সিএস ও এসএ ১৪৭৭ ও ১৪৪৯ দাগের দেড় বিঘার মালিক হলেন কুড়িলের অ্যাডভোকেট আবদুল বারেক। পুরো জমিই যমুনা দখল করে নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, পৈতৃকসূত্রে তারা এসব জমির মালিক। একসময় তারা ভাওয়াল রাজার প্রজা ছিলেন।
চেকের মাধ্যমে ভাওয়াল রাজার নায়েবের কাছে খাজনা দিতেন। ১০০ বছর আগে সিএস জরিপ হলে সেসব জমি তাদের নামে রেকর্ড হয়। এরপর পাকিস্তান আমলে এসএ এবং বাংলাদেশ আমলে আরএস ও সিটি জরিপ অনুযায়ী তাদের নিষ্কণ্টক মালিকানা রয়েছে। যমুনার অবৈধ দখলের কারণে এই আদিবাসীরা বর্তমানে নিঃস্ব জীবন যাপন করছেন। হাজী জমির আলীর মতো একইভাবে নিঃস্ব হয়েছেন কুড়িলের অ্যাডভোকেট আবদুল বারেক, গিয়াসউদ্দিন ও নর্দ্দার মো. হাবিব উল্লাহর মতো আরও অনেক পরিবার।
অ্যাডভোকেট বারেকের দেড় বিঘা, হাবিব উল্লার এক বিঘা, গিয়াস উদ্দিনের পৌনে এক বিঘা ও শহর খানের চার কাঠা জমি জোরপূর্বক দখল করে নেন যমুনার বাবুল। এরা জমির মূল্য বাবদ বাবুলের কাছ থেকে এক পয়সাও পাননি। টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো হুমকি-ধমকি পেয়েছেন বলে জানান অ্যাডভোকেট বারেক। তিনি বলেন, বাবুল কোনো মানুষের কাতারে পড়েন না। যদি পড়তেন তাহলে এতগুলো নিরীহ মানুষের জমি দখল করতে পারতেন না।
হাজী জমির আলীর অন্য ভাইয়েরা বলেন, জমি দখল হওয়ার পর তারা তিনটি মামলা দায়ের করেন জজকোর্টে। মামলাগুলো জজকোর্ট, হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টে নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রতিটি মামলায় যমুনার মালিক বাবুল হেরেছেন। তার পরও সেই জমির ওপর জোরপূর্বক ফিউচার পার্ক, অ্যাপার্টমেন্ট, যমুনা টিভি, যুগান্তর পত্রিকার অফিস গড়ে তোলা হয়েছে। বাবুল মানুষের কাছে দম্ভোক্তি করে বলেন, আদালতও তার কাছ থেকে জমি ফেরত নিতে পারবেন না।
তিনি জানান, জমির মালিকানার রেকর্ডও যমুনার নামে নেই। সিএস, এসএ, আরএস ও সিটি জরিপ তাদের নামে হয়েছে। সে মতে তারা ভূমি অফিসে খাজনা দিচ্ছেন। অথচ বাবুল সে জমির ওপর জাঁকজমক ফিউচার পার্ক গড়ে তুলেছেন। জমির প্রকৃত মালিকরা জানান, বাবুল কাউকেই তোয়াক্কা করেন না।
তাদের এ বলে ভয় দেখাচ্ছেন, যে আদালতেই রায় হোক না কেন, বাবুলের কাছ থেকে কেউ জমি কেড়ে নিতে পারবে না। পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তি নেই যারা তার একটি চুলও ছিঁড়তে পারবে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তারা অনেকবার বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু তার দুর্ব্যবহারের কারণে এখন আর যোগাযোগ করেন না। ভূমি মালিক আল আমিন বলেন, তার কাছে গেলে তিনি (বাবুল) বলেন, এখানে এসে কোনো লাভ নেই।
এ জমি তোদের নয়। এ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেও কোনো লাভ হবে না। দেশের মন্ত্রী-মিনিস্টার তো দূরের কথা, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীও তার কিছু করতে পারবেন না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।