ঢাকায় ঝুম বর্ষা নেমেছে।
জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছি। একটু দূরে ধানমন্ডি লেকে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির ধারা চারপাশে একটা ধোয়াসা তৈরী করে রেখেছে।
আমি জানালা খুলে দিলাম।
বৃষ্টির ছাট এসে মুখে লাগছে, শাড়ী ভিজে যাচ্ছে। খুব ইচ্ছে হচ্ছে ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করি। কিন্তু এপার্টমেন্টের ছাদ, অন্য কেউ এসে পড়তে পারে। তাছাড়া, চারি পাশের বিল্ডিংগুলোতে কেউ যে ক্যামেরা ফিট করে বসে নেই, সেই নিশ্চয়তা কে দিবে!
ডোর বেল বাজলো।
এই অসময়ে কে আসলো?
আধাভেজা শাড়ীতে দরজা খুলে দেখি, সামনের ফ্লাটের ভাবী।
- আসেন ভাবী।
- না, ভিতরে আসবো না, একটা জরুরী ব্যাপার আপনার সাথে শেয়ার করতে আসলাম।
- কি ব্যাপার?
- আপনাদের ড্রাইভার তো মনে হয় হিন্দু।
- হ্যা, কিন্তু তাতে কি?
- না, মানে একটু সাবধানে থাকবেন। হিন্দুরা যেভাবে মুসলমান মেয়েদের রেপ করছে, তাতে কখন কি ঘটে যায়, বলা যায় না।
আমার খুব রাগ হলো। এই পরিবারটিকে খুব প্রগতিশীল এবং খোলা মনের বলে জানতাম। অথচ, ভিতরে ভিতরে এমন সাম্প্রদায়িক মানসিকতা!
একটু কঠোরভাবে বললাম,
- রেপের আবার ধর্ম কি? রেপ কে কেবল হিন্দুরাই করছে? মুসলমানেরা কি রেপ করছে না? মাদ্রাসার শিক্ষরাও তো রেপ করছে।
ভাবী বললেন,
- বাংলাদেশে হিন্দুদের অনুপাত কত?
- ৯-১০%
- গত একমাসে যতগুলো ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে, তার কতগুলো হিন্দুরা করেছে?
- ৭০-৮০%
- বিষয়টা কি খুব স্বাভাবিক?
আমি কিছু বললাম না। ভাবী বললেন,
- আপনি অন্যভাবে নিবেন না, আপনাকে ভালোবাসি বলেই বললাম।
সাবধানে থাকতে তো ক্ষতি নেই।
ভাবী চলে গেলেন। আমি মইনকে ফোন দিলাম। তাকে ভাবীর কথাগুলো বললাম।
মইন বললো,
- খুবই চিন্তার কথা।
তুমি এক কাজ করো।
- কী?
- তুমি আমাকে তোমার বডিগার্ড রাখো। তোমাকে সারাক্ষণ পাহারা দিয়ে রাখবো।
আমি বললাম, ফাজলামি করো না।
সে বললো, সম্প্রতি ধর্ষণ যে বেড়েছে তা যেমন সত্য, একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষদের দ্বারা ধর্ষণ বেশী হচ্ছে, এ কথাও সত্য।
- কিন্তু, এর কারণ কি?
- অনেকগুলো কারণ রয়েছে।
প্রথমত: দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রকমের খারাপ। যে দেশের বিচার ব্যবস্থা যত খারাপ হবে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ততো নীচে নামবে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতো নীচে নামবে নারীরা ততো নির্যাতিত হবে।
আমি বললাম, কিন্তু এখানে সাম্প্রদায়িক মাত্রাটি কেন আসছে?
সে বললো,দলীয় খুনীদের প্রতি আমাদের রাষ্ট্রপতির অতিমাত্রায় প্রশ্রয়, বিচার-ব্যবস্থার অতিমাত্রায় দলীয়করণ, প্রশাসনে নগ্ন দলীয়করণ - এসবের ফলে দেশের ছেলে-বুড়ো সবাই বুঝে গেছে, এদেশে কে জেলে থাকবে আর কে বাইরে থাকবে, কার ফাসি হবে আর কে বেচে থাকবে তা নির্ধারণের মাপকাঠি মাত্র একটি - তা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাথে তার সম্পর্ক। কেউ যদি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হয়, প্রতিটি খুন, ধর্ষণ তার জন্য ফুলের মালা হয়ে ফিরে আসবে।
আর কেউ যদি আওয়ামী লীগের বিরোধী হয়, তাহলে তার জন্য ফাসির রশি কিংবা জেলখানার কোন বিকল্প নেই।
আমি বললাম, তোমার কথা না মেনে উপায় নেই, কিন্তু এখানে সাম্প্রদায়িক মাত্রাটি কেন আসছে?
সে বললো, সেই কথাই বলছি। ১/১১ এর পর শেখ হাসিনা এবং তার শুভাকাংখীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের খাটিত্ব নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন। যে কারণে দলটির বড় বড় নেতাদের প্রায় কাউকেই মন্ত্রীত্ব দেয়া হয়নি। প্রায় সব অচেনা মুখকে মন্ত্রী বানানো হয়েছে।
তাছাড়া এবার দলটির প্রধান এজেন্ডা ইসলাম ধর্ম বিরোধী। ফলে, যারা কোন না কোনভাবে ইসলাম ধর্মের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, তাদের উপর ততোটা ভরসা করতে পারছে না নীতি নির্ধারকেরা। খাটি আওয়ামী লীগার বাছতে গিয়ে স্মরণাপন্ন হতে হচ্ছে বামপন্থী এবং অমুসলিমদের।
আমি অধৈর্য্য হয়ে বললাম, এর সাথে ধর্ষণের সাম্প্রদায়িক মাত্রার সম্পর্ক কি?
সে বললো, খারাপ মানুষ সব ধর্মেই রয়েছে। হিন্দু ধর্মের খারাপ মানুষগুলো বুঝেছে, তারা যাই করুক, তাদের কেশাগ্র কেউ স্পর্শ করতে পারবে না, কেননা, শাসক দলটির বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে, এই সম্প্রদায়ের কেউ তাদের বিরোধী হতে পারে না।
আমি বললাম, কিন্তু পরিমলকে তো পুলিশ আটক করেছে এবং তাকে রিমান্ডেও নিয়েছে।
সে বললো, হ্যা, রিমান্ডে নিয়েছে, কিন্তু অনেক আন্দোলনের পর। এরপরও মিডিয়ার একটি বড় অংশ তাকে বাচানোর চেষ্টা করছে। তাছাড়া তুমি আরেকটি জিনিস কি লক্ষ্য করেছো?
- কি?
- রিমান্ডের পর পরিমলের চেহারায় কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করেছো? তাকে কি নিস্তেজ দেখাচ্ছিল? তার নাক দিয়ে কি রক্ত পড়ছিল? তার মুখ কি ফোলা ছিল?
- না, সে তো সতেজ স্বাভাবিকই ছিল।
- হ্যা, পরিমলের রিমান্ড আর মাহমুদুর রহমানের রিমান্ড একরকম নয়।
আমাদের জেলখানায় প্রভাবশালী কয়েদিরা রাজার হালে থাকে। পরিমলও হয়তো সে ভাবেই রয়েছে। রিমান্ডের নামে তার সাথে হয়তো হাস্য কৌতুক করা হয়েছে, তার বীরত্ব কাহিনীর সচিত্র বিবরণ জানা হয়েছে। খবর নিলে দেখা যাবে, এখন সে হাজত খানায় রাজা না হোক জমিদারের হালেই রয়েছে। আর আদালত ভুল করে কোন সাজা দিয়ে দিলে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি তো আছেনই।
আমি বললাম, কিন্তু এর ফলে কি বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ফাটল ধরতে যাচ্ছে না?
সে বললো, একটি রাজনৈতিক দলের অবিচার, অত্যাচারের দায় যেন কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের ঘাড়ে না চাপে সে জন্য সেই সম্প্রদায়কেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
- এ জন্য তারা কি করতে পারে?
- এই জাতীয় ঘটনাগুলোর প্রতিবাদে তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে হবে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ পরিমল এবং অন্যান্য ধর্ষকদের ফাসির দাবীতে মানব বন্ধন করতে পারে। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আছেন, তারাও এ নিয়ে লিখতে পারেন, টিভিতে কথা বলতে পারেন।
তাছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়কে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে।
দেশে বিরোধী দলের উপর দমন-পীড়ন চলছে। এর বিরুদ্ধে তাদেরকে সোচ্চার হতে হবে।
মইন আবার বললো, একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় যেন একটি রাজনৈতিক দলের লেজুড়ে পরিণত না হয়, সে ব্যবস্থা উক্ত সম্প্রদায়কেই করতে হবে, তাদেরকে বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মূল ধারায় সম্পৃক্ত হতে হবে।
আমি ফোন রেখে দিলাম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।