কি লিখব ঠিক বুঝতেছিনা। গত কয়েক দিন থেকে ব্লগ, সোস্যাল নেটওয়ার্ক আর নিউজপেপার খুলেই যেভাবে ধর্ষণের খবরগুলো পাচ্ছি তাতে মানুষ হিসাবে নিজেকে ধিক্কার দেয়া ছাড়া অন্য কোন অপশনই মাথায় আসছে না। বারবার মনে হচ্ছে আমি কি তাদেরই একজন যাদেরকে মহান স্রষ্ঠা তার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন? কিন্তু যখনই উত্তরটা মাথায় নিয়ে আসার জন্য চিন্তা করি ঠিক তখনই শুরু হয় খটকা।
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রজাতির দ্বারা কিভাবে সম্ভব এতো নিকৃষ্ট কাজগুলো করা? শারীরিক দিক থেকে উনারা একটু দুর্বল বলেই কি আমরা শূকরের মত হিংস্র হয়ে যাব? গত কিছু দিনে এমন সব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে যা শুনলে আমার মনে হয় শূকরও লজ্জা পেত, কিন্তু না আমরা যে মানুষ জাতির কলঙ্ক, আমাদের লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আপনি ঘুমন্ত কোন প্রাণীকে সজাগ করতে পারবেন কিন্তু সজাগ প্রাণীকে সজাগ করবেন কিভাবে?
গত তিন বছরের বিভিন্ন পত্রিকা আর ব্লগের রিপোর্ট অনুযায়ী ধর্ষণের পরিমাণ এতই বেড়েছে যার ফলশ্রুতিতে বাদ পড়েন নাই ৩ বছরের বাচ্চা থেকে ৭০ বছরের বিধবা মহিলা পর্যন্ত। প্রতিদিনই তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ঘটনা।
একবিংশ শতাব্দীর তথ্য প্রযুক্তির এই দুনিয়ায় একটা কহিনী পড়ে শেষ করার আগেই দেখতে পাই আপডেট হয়ে গেছে নতুন আরেকটা কু-কাহিনী। অনেক সময় দেখা যায় একসাথে আপডেট হয়ে গেছে ৩/৪ ধর্ষণের গল্প। এই হলো আমার প্রিয় মায়ের মাটিতে ধর্ষণের বর্তমান অবস্থা। ধর্ষণ কোন নতুন বিষয় নয়; পৃথিবীর জন্ম থেকেই চলে আসছে এই ধিকৃত অপকর্ম। ১৮৬০ সালের বাংলাদেশ প্যানেল কোড এর ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে।
যার মোদ্দা কথা হল একজন মহিলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তার সাথে যৌনসঙ্গম করাকে ধর্ষণ বল। সেই সাথে উক্ত ধারার ৫ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে ১৪ বছরের নিচের কোন মেয়ের সাথে তার ইচ্ছা অনুযায়ী যৌনসঙ্গম করলেও তা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে।
বর্তমানে আমাদের নৈতিক অধপতন এমন নিচু স্তরে পৌঁছেছে যে পেশাগত দিক থেকে ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কাজের মেয়ে থেকে শুরু করে ডাক্তার পর্যন্ত। আর তিন ভাগের দুই ভাগ ধর্ষণের সাথে জড়িত আমাদের সমাজের তথাকথিত উচ্চ শ্রেনীর মানুষ। কাজের মেয়ে থেকে শুরু করে ডাক্তাররা যেমন ধর্ষিতা হচ্ছেন ঠিক তেমনি ধর্ষকগুলো হচ্ছে পুলিশ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালিয়ের শিক্ষক।
ইদানিং অনেকেই ধর্ষকের জন্য কঠোর আইন প্রণয়নের কথা বলছেন। অথচ বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনের ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হবে আর যদি ধর্ষিতার মৃত্যু হয় তবে ধর্ষকের ফাঁসি হবে।
যে দেশে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করা জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির মানিককে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরুস্কৃত করা হয়, যেখানে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত শিমুল বহাল তবিয়তে এখন পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসাবে কর্মরত সেখানে ধর্ষকের জন্য আর কি কঠোর আইন হতে পারে? যে দেশে আইন থাকার পরেও আদালত নড়ে অদৃশ্য এক দরবেশের শীতল এক অদ্ভুত বাতাসের ধাক্কায় সেই দেশে আর কঠোর আইন দিয়ে কি হবে যদি সেই আইন প্রয়োগ না করা হয়?
আমাদের সবকিছুতে পার্শ্ববর্তী একটা দেশকে অনুসরণ করা এখন আমাদের এক অলিখিত সংবিধানে পরিণত হয়েছে। মাঝে মাঝে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে। ওদের দেশে বাসে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেই আমরা একটি মেয়েকে বাসে ধর্ষণ করেই কান্ত হই নাই, গতকাল খবর পেলাম সিএনজিতেও নাকি আমরা একজনকে ধর্ষণ করেছি! কিন্তু যে জায়গাটায় ওদের অনুসরণ করার কথা ছিল সেটাই আমরা করিনি।
ওদের একটা মেয়ের জন্য লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এলেও আমাদের তথাকথিত নারীবাদী নেত্রী বলে মিডিয়ায় পরিচিত সুলতানা কামাল আর এলিনা খাঁন গংরা আজ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।
গত শুক্রবার ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছিলাম আমাদের স্টুডেন্টস ইউনিয়নের একটা মিটিংয়ে যোগ দিতে। ওখানে গিয়ে নতুন একজনের সাথে পরিচয়। আমি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ইন্টারন্যাশনাল অফিসার হওয়ার কারণে কথার ফাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কোথা থেকে এসেছি? বাংলাদেশের ধর্ষণের ঘটনাগুলো গত কিছু দিন থেকে মাথায় এমনভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে যে এই বিষয়টি ছাড়া আর কিছুই মাথায় আসেনা। যার ফলশ্রুতিতে আমি উনাকে প্রায় উত্তর দিয়েই ফেলেছিলাম যে, I AM FROM HEAVEN OF RAPE. কিন্তু স্রষ্ঠার অশেষ কৃপায় সেদিন বেঁচে যাই চরম এক লজ্জা থেকে | কিন্তু জানিনা কত দিন এভাবে নিজেকে সামলাতে পারব।
ধর্ষণ এভাবে চলতে থাকলে হয়ত বা কাউকে একদিন বলেই ফেলব যে, I REPRESENT THE PARADISE OF RAPE.
বিঃদ্রঃ এই লিখাটি জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখ লিখা এবং সোনার বাংলাদেশ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হওয়ার জন্য অপেক্ষারত ছিল কিন্তু তার আগেই সরকার সাইটটি বন্ধ করে দেয়, আমাদের বাকস্বাধীনতায় চরমভাবে আঘাতের তীব্র নিন্দা না জানিয়ে কি উপায় আছে? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।