আর কয়েক ঘন্টা পরই শুরু হবে নতুন বছর। পুরনো বছরটা যে সুখুকর ছিল তা কিন্তু নয়। চারদিকে শুধু ধর্ষণের খবর। বলা যায়, ধর্ষণের সাথেই আমাদের বসবাস। এসব ঘটনাই নিয়ে শুরু হচ্ছে ইংরেজী নববর্ষ।
ঘটনা : ০১
মধ্যখানে মাত্র একটি মাস।
তারপর হতো বিয়ে।
কিন্তু তা আর হলো না।
পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো তাকে।
ফেব্রুয়ারিতে সাতপাকে আবদ্ধ হওয়ার কথা ছিল নয়াদিল্লির সেই মেয়েটির।
১৬ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে নরপশুদের হাতে নষ্ট হওয়ার ১১ দিন পর শনিবার পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে মেয়েটি। আশঙ্কাজনক অবস্থার মধ্যেও বাঁচতে চেয়েছিল হতভাগিনী সেই ২৩ বছর বয়সী মেয়েটি।
ঘটনার সময় দুর্বৃত্তদের বেদম মারপিটের শিকার ছেলেটি ছিল তার হবু স্বামী।
মেয়েটির এক প্রতিবেশি জানায়, বিয়ের কেনাকাটা করতে শহরে গিয়েছিল মেয়েটি ও তার স্বামী। তিনি বলেন, “তারা বিয়ের সব প্রস্তুতি শেষ করেছিল এবং দিল্লিতে বিয়ে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।
আমরা জানতাম ফেব্রুয়ারিতে তার বিয়ে হচ্ছে। ”
পাড়া-প্রতিবেশি সবার মাঝে আগ্রহ-উত্তেজনা বিরাজ করছিল বলে জানান ওই প্রতিবেশি। তবে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের বিষয়টি ঠিক করা হয়নি। তারা একে অপরকে ভালোবাসত। মেয়েটির বন্ধুরা বিয়ের ব্যাপারটি জানত।
ছেলেটিরও অবস্থা ভালো নয়। ঘটনার পর থেকে কথা বলছে না ছেলেটি। ১৬ ডিসেম্বর রাতে ‘দ্য লাইফ অব পি’ সিনেমা থেকে তারা ফিরছিল। বাসায় ফেরার সময় একটি চলন্ত বাসে উঠে তারা। চলন্ত বাসটির ছয় আরোহী পালাক্রমে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে এবং ছেলেটিকে মারধোর করে।
অনেকে জানিয়েছে, প্রায় রাতেই তাদেরকে সিনেমা হল থেকে বের হতো দেখা যেত।
মেয়েটিকে নিজের চোখের মণি মনে করত তার বাবা। উত্তর প্রদেশের দরিদ্র পিতার স্বপ্ন ছিল মেয়ে চিকিৎসক হয়ে তার সুনাম বয়ে আনবে। অনেক কষ্ট করে রাজধানীতে পড়ুয়া মেয়ের খরচ চালাতে স্বপ্নাতুর বাবা।
[ সূত্র: বাংলানিউজ ২৪ডটকম]
ঘটনা : ০২
ভারতের নয়াদিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার মেডিকেল ছাত্রীর মৃত্যুর পর এবার টাঙ্গাইলে এক স্কুলছাত্রী (১৫) গণধর্ষণের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই স্কুলছাত্রী কোনো পুরুষ দেখলেই ভয়ে আতকে ওঠে এবং চিৎকার করছে। এমনকি চিকিৎসকদের দেখলেও একই আচরণ করছে সে। তার আচরণে ওই ওয়ার্ডের অন্য রোগীরাও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভয় পাচ্ছে।
অপরদিকে ওই স্কুলছাত্রীর বাবা মেয়ের এ ঘটনা জানতে পেরে স্ত্রী ও মেয়ের বাড়িতে প্রবেশ নিষেধ করে দিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বর সোমবার সদর উপজেলার রসুলপুর এলাকায় রেল লাইনের ওপর থেকে এক স্কুলছাত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে এলাকাবাসী।
পরে তাকে টাঙ্গাইল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ওই স্কুলছাত্রী সেখানে চিকিৎসাধীন।
[ সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম][/si
# ঘটনা: ০৩
আসুন, বিবিসির একটা প্রতিবেদন দেখা যাক। এই প্রতিবেদনের শিরোনাম- দিল্লি কাণ্ড, কতটা নিরাপদ ঢাকার নারীরা। এখানে লেখা হয়েছে-ভারতের নয়াদিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকায় মানববন্ধন হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশের পৈশাচিক ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে আসা নারীরা জানিয়েছেন নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথা।
নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানবন্ধনে কয়েকশ’ নারী-পুরুষ অংশ নেন। দক্ষিণ এশিয়ার নারীবাদী সংগঠন ‘সাংগাত’ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
আয়োজকরা জানান, ভারতে গণধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত ওই তরুণীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং বাংলাদেশে নারীদের ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের এই মানববন্ধন।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের বিভিন্ন খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে উঠে আসে।
ঢাকায় যেসব নারী কাজ বা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ঘরের বাইরে বের হন, তারা নিজেদেরকে কতটা নিরাপদ মনে করেন সে সম্পর্কে বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে কিছু তথ্য।
এতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মৌমিতা নাবিলা জানান, ‘দেখা যাচ্ছে- আমরা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, পাশ থেকে কয়েকজন ছেলে উত্যক্ত করছে। তারা বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কথাবার্তা বলে। তাদের তাকানোর ভঙ্গিমা এমন যে মনে হয়, মেয়েরা তাদের ভোগের বস্তু। ’
মৌমিতার এক সহপাঠী বলেন, ‘বাইরে বের হতে ভয় করে।
কারণ অধিকাংশ সময় একাকী বের হতে। ফলে খুব সাহস নিয়ে বের হতে হয়। ’
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ সময় বাসেই যাতায়াত করতে হয়। অনেক বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। এজন্য একটু সাহস যোগাতে এবং নিরাপত্তার খাতিরে আমি মনে করি- মেয়েদের এখন অস্ত্র নিয়ে বাইরে বের হওয়া উচিত।
’
গত ১৬ ডিসেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন এক প্যারামেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী। স্থানীয় সফদরজং হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হলেও অবস্থার অবনতি হলে গত ২৭ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৩০ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় ভোর ৪টা মিনিটে তার মৃত্যু হয়। পরে সেখান থেকে তার মৃতুদেহ ভারতে এনে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
এ ঘটনায় ভারতের সর্বোত্র চলছে বিক্ষোভ।
এই গণধর্ষণের ঘটনায় ঢাকায় মানববন্ধনের আয়োজকদের মধ্যে ফৌজিয়া হক নামের এক তরুণী বলেন, দিল্লির এই ঘটনায় তারা শোকাহত এবং ক্ষুব্ধ। একই সাথে তারা বাংলাদেশে এই ধরনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে চান তারা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দেখা যায়- এই ধরনের ঘটনা ঘটলে মেয়েরা নীরবে মেনে নেয়। তারা লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে বিষয়টা জানায় না। আমরা নারীদের এ ধরনের নীরবতা ভাঙানোর চেষ্টা করছি।
নারীদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। সেই লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ’
ফৌজিয়া হক আরো বলেন, ‘আমরা নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরকেও আমাদের এই আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা তাদেরকে নারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বলছি। তাদেরকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানাচ্ছি।
’
‘কারণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে কেবল নারী কথা বললে বা সোচ্চার হলে হবে না, পুরুষদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে’ যোগ করেন তিনি।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তাহমিনা হক বলেন, কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য তিনি যে পরিবহন ব্যবহার করেন সেখানে অনেক সময় নানা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাকে।
তিনি বলেন, ‘অফিসে যাতায়াতের সময় বাসে যখন আমরা উঠি তখন সিট পাওয়ার আশা করি না। কিন্তু এতটুকু আশা করি যে, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে কেউ এসে আমাকে বিরক্ত করবে না বা উত্যক্ত করবে না। ’‘কিন্তু বাসে যখন অনেক ভিড় থাকে তখন অনেক সময়ই আশেপাশে যেসব পুরুষ দাঁড়িয়ে থাকেন তারা একটু গায়ের ঘেঁষে দাঁড়াতে বা গায়ে একটু হাত ছোয়ানোর চেষ্টা করেন, যা খুবই অপ্রীতিকর ও অস্বস্তিকর’ যোগ করেন তাহমিনা হক।
তিনি আরো বলেন, পেশার কাজে বাইরে গেলে অনেক সময় সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরতে হয়। কিন্তু বাসে করে যখন বাসায় ফিরি তা কোনোভাবেই নিরাপদ মনে হয় না। সব সময় ভীতি নিয়ে চলতে হয়।
[ সূত্র: বিবিসি]
প্রিয় পাঠক, কী আর বলব!
এই মুখ আমরা কীভাবে দেখাব?
আসুন আমরা প্রতিবাদী হই।
সমাজ থেকে দূর করি এইসব কুলাঙ্গারদের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।