আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভাবের তাড়নায় বগুড়ায় সন্তান বিক্রি মাত্র ৬ হাজার টাকায়

বোরহান উদ্দিন আহমেদ (মাসুম) ঢাকা রিপোর্ট ডট কম, বগুড়া (২২ জুলাই): বৃহস্পতিবার বগুড়া শহরতলীর পালশা আদর্শ গুচ্ছগ্রামে অভাবের তাড়নায় মাত্র ৬ হাজার টাকায় ১২ দিনের ফুটফুটে পুত্র সন্তানকে বিক্রি করলেন জন্মদাত্রী মা। ঔ গ্রামের দিনমজুর মোকছেদ সন্তানটি কিনে নেন। পুত্র সন্তানের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ১২ দিন বয়সী এ সন্তানটি কিনে নেন তিনি। এখন থেকে এই সন্তানটি মোকছেদের ঘরেই বড় হবে। ভবিষ্যতে তার জন্মদাত্রী মা কোনো দাবি করতে পারবে না মর্মে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তিও করেছেন দিনমজুর মোকছেদ।

জানা গেছে, বগুড়ার ট্রাক চালক এমদাদুল যশোরে ট্রাক নিয়ে গেলে সেখানে পরিচয় হয় নূপুর (২০) নামের এক মেয়ের সঙ্গে। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান তারা। কিন্তু এমদাদের প্রতারণার ফাঁদে আটকা পড়ে যায় নূপুর। প্রতারক এমদাদুল তার স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নূপুরকে বিয়ের কথা বলে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে নূপুরকে বিয়ে করে বগুড়া নিয়ে আসে ট্রাক চালক এমদাদুল।

এদিকে বাবা-মা'র নিষেধ উপেক্ষা করে বগুড়ার অপরিচিত ব্যক্তিকে বিয়ে করায় নূপুরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তার পরিবার। এমদাদুল নূপুরকে বগুড়ায় নিয়ে এসে শহরের নাটাইপাড়ার (বউ বাজার) একটি বাড়িতে ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই ফাঁস হয়ে পড়ে এমদাদুলের প্রতারণার বিষয়টি। নূপুর জেনে যায় এমদাদুলের আরেক স্ত্রী এবং সন্তানের কথা। এ নিয়ে দু'জনের মধ্যে দেখা দেয় মনোমালিন্য।

এরই মধ্যে নূপুর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এর কিছুদিন পর এমদাদুল নূপুরের কাছে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। এক সময়ের প্রাণপ্রিয় মানুষটি কোনো খোঁজ-খবর না নেয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে নূপুরের। ধীরে ধীরে গর্ভের সন্তানও বড় হতে থাকে। পেটে সন্তান নিয়ে নূপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায় প্রতারক স্বামী এমদাদুলকে।

কিন্তু এমদাদুলের সঠিক কোনো ঠিকানা না থাকায় সে কোথাও দেখা পায়না তার। শেষ পর্যন্ত মানুষের বাড়িতে ঝি'য়ের কাজ নিয়ে গর্ভের সন্তানকে বড় করে তোলে নূপুর। এভাবে কেটে যায় আরও ৭/৮ মাস। সন্তান প্রসবের সময়ে বাড়ির মালিক প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং খাবার কিনে দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ১০ জুলাই ভাড়া বাড়িতেই নূপুর প্রসব করে ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান।

সন্তান জন্ম দিয়ে খুশি হওয়ার বদলে বরং আরও দিশেহারা হয়ে পড়ে নূপুর। সন্তান লালন পালন করবে না কি নিজের খাবার যোগাড় করবে এ নিয়ে সে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। বাড়ির মালিকের ঘরেই খাওয়া-দাওয়া চলে কয়েক দিন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? বাড়ি মালিকের আয়ও সীমিত। তাই অভাব অনটনে পড়ে বাধ্য হয়ে সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় নূপুর।

বাড়ির মালিকের সহযোগিতায় খুঁজে পায় পুত্র সন্তানহীন দিন মজুর মোকছেদকে। আলাপ আলোচনা চূড়ান্ত করে বুধবার সন্ধ্যায় আদরের সন্তানকে নিয়ে যায় মোকছেদের বাড়িতে। সেখানে রাত যাপনের পর বৃহস্পতিবার ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে আদরের সন্তানকে তুলে দেয় মোকছেদের স্ত্রীর কোলে। ভবিষ্যতে আর যেন সন্তানের দাবি করতে না পারে এজন্য গুচ্ছগ্রামের লোকজনের উপস্থিতিতে নূপুরের সঙ্গে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি করে দিনমজুর মোকছেদ। বৃহস্পতিবার পালশা গুচ্ছগ্রামে গিয়ে দেখা পাওয়া যায় মোকছেদের স্ত্রীর।

সন্তান কেনার কথা জিজ্ঞেস করতেই কাপড়ে মুখ ঢেকে চলে যায় অন্যদিকে। এরপর মুহূর্তের মধ্যে সন্তানটিকে সরিয়ে রাখে অন্যত্র। সাংবাদিক এসেছে শুনে অনেক নারী-পুরুষ জমে যায় সেখানে। গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, এই শহরে অনেক বড় লোক থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি নূপুরের পাশে। কিন্তু দিনমজুর মোকছেদ সন্তানটি কিনে নেয়ায় তাকে যেন ঝামেলায় পড়তে না হয়, কোনো আইন যেন তার সন্তানকে কেড়ে না নেয় এই দাবি সকলের।

এইখান থেকে..................  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.