রাজধানীর বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক কোচিং বন্ধে প্রয়োজনে আইন প্রণয়নের দাবি তুলেছেন। ছুটি শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের পড়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে তাঁরা মত দিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজপ্রধানদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তাঁরা এই মত দেন। সভায় উপস্থিত ৪২ জন অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের কেউই কোচিংয়ের পক্ষে মত দেননি।
সভার প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘কোচিং সম্পূর্ণ বন্ধ হোক।
সরকারও তা চায়। কিন্তু শ্রেণীকক্ষে ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। শ্রেণীকক্ষে পুরো শিক্ষা শেষ করা হলে কোচিং বন্ধ হয়ে যাবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাস্তবতা অনুসরণ করে চলতে চাই। ’ তিনি যেসব শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনির সঙ্গে অতিমাত্রায় জড়িত হয়ে পড়েছেন, তাঁদের ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু শিক্ষক ছাত্রীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে কীভাবে দূরে রাখা যায়, সে লক্ষ্যে এই সভার আয়োজন করা হয়।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষকদের নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। সারা দেশে স্কুল-কলেজে ছাত্রীদের মানসম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষায় যা যা প্রয়োজন সরকার তাই করবে। ছাত্রী নির্যাতন প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
’ তিনি আরও বলেন, ‘গুটিকয়েক নরপশুর কারণে এই পেশার মর্যাদা নষ্ট হতে পারে না। ’
মন্ত্রী প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের উদ্দেশে বলেন, ‘নিজ প্রতিষ্ঠানে আপনারা এ জাতীয় সন্দেহভাজন শিক্ষকদের চিহ্নিত করুন। আর কোনো মেয়ের জীবনে যাতে পাশবিক নির্যাতন নেমে না আসে তা নিশ্চিত করুন। ’
সভায় উদয়ন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ খালেদা হাবিব আইন করে হলেও কোচিং বন্ধের দাবি জানান। আরেকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেন, কোচিংভিত্তিক লেখাপড়া বন্ধ করে শ্রেণীভিত্তিক লেখাপড়া নিশ্চিত করতে হবে।
সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ কানিজ মাহমুদা আক্তার কোচিং বন্ধে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার এক মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ ও পরবর্তী স্তরে ভর্তির ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষের চলতি দায়িত্বে থাকা মঞ্জু আরা বেগম বলেন, কোচিং সেন্টারে পড়ানো বন্ধ করা গেলে লেখাপড়ার মান বাড়বে, শিক্ষকেরা সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পাবে। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে ছুটির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের পড়ানো যেতে পারে। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত পরিমল জয়ধর প্রসঙ্গে বলেন, ‘একে পশু বললেও পশুরা লজ্জা পাবে। শিক্ষক যদি ভক্ষক হয় তখন কিছু করার থাকে না।
’
নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা বলেন, ‘কোচিং ব্যাপারটা আমি মনে-প্রাণে ঘৃণা করি। ’ এ জন্য অভিভাবকদের কিছুটা দায়ী করে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় শিক্ষার্থীর বাবা-মা খোঁজেন কোন শিক্ষকের কাছে পড়লে বেশি নম্বর পাওয়া যাবে। ’ তিনি প্রয়োজনে দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ক্লাস নেওয়ার সুপারিশ করেন।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ এ এস এম মুশফিকুর রহমান বলেন, যদি যোগ্য লোক নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে এগুলো বন্ধ করা সম্ভব। তিনি প্রচলিত পরিচালনা কমিটি গঠনের নিয়ম সংশোধনের দাবি জানান।
শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের বাথরুম ঠিক আছে কি না তা তদারক করতে হবে। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরও আদেশ-নিষেধ মানতে হবে। ভর্তিতে সরকার নির্ধারিত ফির বেশি না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নোমান উর রশীদ বলেন, কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের চিহ্নিত করতে হবে।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাহিমা খাতুন বড় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, রাজউক ও রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের মতো এসব প্রতিষ্ঠানেও বিশেষ কমিটি করা যেতে পারে। এর ফলে বাইরের কেউ নাক গলাতে পারবে না। এ ছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠানের একাধিক শাখা খোলার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। চেয়ারম্যান আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের ক্যাম্পাসে থাকা উচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।