আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থানে আদিবাসী নারীদের প্রতি যৌন হয়রানি এবং মানসিক নির্যাতন

তাহলে, লড়াই শুরু করি। তৌববুদি মিরাং মহুমদা মিরাং অমা ওন্না লৈবাসিনা মনুঙাইখি...

ইদানিং কর্মস্থলে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের প্রতি বিভিন্ন ধরনের হয়রানি এবং মানসিক নির্যাতন নিয়ে বেশ আলোচিত। এসব আলোচনা- সমালোচনা - মন্তব্য গুলো পড়তে পড়তে স্বাভাবিক ভাবেই আদিবাসী নারী এবং কিশোরীদের কথা আমার মনে পড়ে গেল। এখানে কিছু ঘটনা এবং কিছু চালচিত্র তুলে ধরছি। নারী মাত্রই সমাজে কিছুটা উপেক্ষিত এবং অবহেলিত - এটাই আমাদের দৈনন্দিন বাস্তবতা।

নারী ক্ষমতায়নের যতই বুলি আওড়াইনা কেন, আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এখনও খুব একটা বদল হয়নি। সহজে হবে বলেও আমার মনে হইনা। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মধ্যে থেকেও কয়েকটি মাতৃপ্রধান আদিবাসী জাতীগোষ্ঠী (মাতৃতান্ত্রিক পরিবার) তার নিজস্ব ঐতিহ্য এবং স্বকীয় প্রথা নিয়ে আজও যুথবদ্ধ ভাবে বসবাস করছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়- সিলেটের খাসীয়া সম্প্রদায় এবং ময়মনসিংহ - নেত্রকোনার গারো (মান্দি) সম্প্রদায়। মাতৃপ্রধান সমাজ কাঠামোয় নারীর প্রভাব এবং ক্ষমতাবলয় স্বাভাবিক ভাবেই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ থেকে অনেক বেশী।

এ নিয়ে অনেক গবেষনা (নৃবিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান এর বিভিন্ন শাখায়) হয়েছে। তাই এ নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করছিনা। শুধু মাতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থার আদিবাসিদের নয় অন্যান্য আদিবাসী জাতীগোষ্ঠীতেও নারীর মর্যাদা তুলনামূলক ভাবে বাংলাদেশের মূলধারার বাঙালী জনগোষ্ঠীর তুলনায় একটু বেশী। এর অন্তর্নিহীত কারণ হয়তো আদিবাসীদের নিজস্ব সমাজ ব্যবস্থা, পারিবারিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ, নারীদের নিজস্ব আয় করার সুযোগ (অর্থনৈতিক ভাবে বেশীর ভাগ আদিবাসী নারীরা স্বাবলম্বী), পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহনে নারীদের মতামতের গুরুত্ব দেয়ার পারিবারিক ঐতিহ্য সহ আরও হয়তো অনেক কিছুই থাকতে পারে। প্রসংগত উল্লেখ করা যায়, সিলেটের মনিপুরী, রাঙামাটির চাকমা, বান্দরবনের মারমা কিংবা রাজশাহীর সাওঁতাল রমনী পুরুষদে সাথে সমান ভাবে মাঠে কাজ করছে, হাট-বাজারে যাচ্ছে, পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে।

কিন্তু কোনদিন আদিবাসী পুরুষরা তাদের সহচরী নারীদের হয়রানি কিংবা নির্যাতন ( সেটা শারিরীক ভাবেই হউক কিংবা মানসিক ভাবে হউক) করেনি। এর ব্যাতিক্রম যে একেবারেই নেই তা বলব না কিন্তু সংখ্যাই খুবই সামান্য। তা না হলে আদিবাসী মেয়েরা মাঠে-পাহাড়ে-বাজারে যাওয়া অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যেত। এখন প্রশ্ন হলো, এই আদিবাসী মেয়েগুলো যখন লেখাপড়া শেখার জন্য, জীবিকার জন্য আদিবাসী সমাজের বাইরে বের হয়, তখন কতটুকু নিরাপদ বোধ করে। আদিবাসী মেয়েদের হয়রানি- নির্যাতন নিয়ে সন্জীব দ্রং অনেক আগে বিভিন্ন পত্রিকায় কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু বড় ধরনের কোন প্রতিবাদ কিংবা আন্দোলন আজও হয়নি।

যেখানে আদিবাসীদের অস্তিত্ব নিয়ে এদেশে শংকিত তখন এসব ঠুনকো বিষয় নিয়ে হয়তো কেউ আন্দোলন করার কথা ভাবতে পারছে না। বাংলাদেশের বিভিন্ন আদিবাসী অধ্যুসিত অঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্ব স্ব গ্রামে থাকলেও হাইস্কুল এবং কলেজের জন্য অনেক দুরে যেতেই হয়। তাই স্কুল - কলেজে যাবার পথে আদিবাসী কিশোরীরা কি রকম হয়রানির শিকার হতে হয় হয় তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। শুধু রাস্তায় নয় স্কুল- কলেজের ক্লাশ রুম গুলোতেও সহশিক্ষার্থীদের দ্বারা - শিক্ষকদের দ্বারাও বিভিন্ন সময় হয়রানির মুখো মুখি হতে হয়। তারপরও আজ অনেক আদিবাসী মেয়ে কলেজ-ইউভার্সিটি ডিঙিয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে - হবে।

তারপর কর্মস্থানে যোগদানের পর চলে আরেক ধরনের নির্যাতন এবং হয়রানি - সহকর্মীদের এবং উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের দ্বারা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.