অশরিরী আলোর তীব্র অপেক্ষায় পার করি প্রতিটি ন্যানো সেকেন্ড !!! লক্ষ্মীপুরের বিএনপি নেতা ও পিপি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি এইচএম বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। আসামির বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান গত ১৪ জুলাই বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করেন। বিপ্লব লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের ছেলে। সে লক্ষ্মীপুর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় খালাস পেলেও কামাল উদ্দিন হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে লক্ষ্মীপুর কারাগারে আটক রয়েছে বিপ্লব।
গতকাল মঙ্গলবার নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফ হওয়ার কাগজপত্র চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগার থেকে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে আসামি বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফ হওয়ায় নিহতের পরিবার ও মামলার বাদী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এর আগেও রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় দণ্ড মওকুফ করা হয় কয়েকজন ফাঁসির আসামির।
লক্ষ্মীপুর জেল সুপার নুরশেদ আহমেদ ভঁূইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, "ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এইচএম বিপ্লব চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল (মামলা নং-৪৮/২০০৩) মৃত্যুদণ্ড প্রদান করায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির পিতা কর্তৃক ছেলের প্রাণভিক্ষার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি 'মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করা হলো' লিখে স্বাক্ষর করেছেন বিধায় সংশ্লিষ্ট বন্দি গত ১৪ জুলাই থেকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন। বর্তমানে অন্য একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি হিসেবে কারাগারে আটক আছে বিপ্লব।
(স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কারা শাখা-২ এর পি ২০/২০১১ (অংশ) ২৭০
তাং ১১/০৭/১১, কারা অধিদফতরের স্মারক নং-পরি ৭/২০১১ ১৬৭৫(৩) তাং ১৭/০৭/২০১১)। "
লক্ষ্মীপুর কারাগারের জেল সুপার নুরশেদ আহমেদ ভঁূইয়া বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, 'মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত এক আদেশে নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি এইচএম বিপ্লবের সাজা মওকুফ করা হয়েছে। তাই এ আদেশনামাটি চট্টগ্রাম দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। অন্য একটি মামলায় সে কারাগারে আটক রয়েছে। '
চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট আইয়ুব খান জানান, নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি এইচএম বিপ্লবের সাজা মওকুফ হওয়ায় সে এ মামলা থেকে খালাস পেয়েছে।
অনুলিপি পাওয়ার পর মামলার নথিতে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেখানো হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নিহত নুরুল ইসলাম ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সরকারি কেঁৗসুলি পিপি। ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। তার লাশ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
ঘটনার পর থেকে বিপ্লব পলাতক রয়েছে। মামলার অন্য আসামি আবদুল জব্বার, আলমগীর হোসেন, তানভীর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্বীকার করে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে হত্যা করে তার লাশ মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। ২০০৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম হাসান ইমাম আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিপ্লবসহ আবদুল জব্বার, আলমগীর হোসেন, তানভীর হায়দার ও জিয়াউর রহমানকে ফাঁসি ও নয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার পর নিয়ম অনুযায়ী গত মে মাসে বিপ্লব আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
১৯ মে নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় তাকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে এ মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার রায়ে ২০০৩ সালের ৯ ডিসেম্বর আসামি বিপ্লবকে মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক। একই আদালত পরের বছরের ২০ মার্চ লক্ষ্মীপুরের চাঞ্চল্যকর কামাল হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিপ্লবকে। দুটি মামলায় সে উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে। হাইকোর্টে আপিল করলে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।
পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। সুপ্রিম কোর্টও তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে। পরে এ মামলায় প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করে তার বাবা। গত ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি এ মামলা থেকে বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফ করেন।
নিহতের স্ত্রী শাহীন রাশেদা ইসলাম সমকালকে বলেন, 'বিপ্লবের নেতৃত্বে আমার স্বামীকে হত্যা করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তার লাশও পাইনি আমরা। ধৃত আসামিরা তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার পর আদালত বিপ্লবসহ অন্য আসামিদের ফাঁসি দিয়েছিল। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি কীভাবে ওই আসামির দণ্ডাদেশ মওকুফ করলেন মনকে বোঝাতে পারছি না। ' একই প্রসঙ্গে মামলার বাদী অ্যাডভোকেট এইচএম তারেক উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী জানান, নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বিপ্লবের দণ্ড মওকুফ করে দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করল বর্তমান সরকার। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।