আবদুল্লাহ আল-মামুন, ফেনী[
ফেনীর সোনাগাজীর দনি পূর্ব চর চান্দিয়া গ্রামের বৃদ্ধ রাধেশ্যাম দাস ও আতর আলী দুঃখ করে বলেন, নদীতে বাপ দাদার ভিটাবাড়ী হারিয়ে অন্যের বাড়ীতে থেকেও মনে কোন শান্তি নেই। আগে ঝড় জলোচ্ছাসে বাড়ীর পাশে ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে উঠতাম। গত এক বছরে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া পাশে যেগুলি আছে সেগুলিতে উঠতে ভয় হয়। কারন কখন যে সেটি ভেঙ্গে মানুষের মাথায় পড়ে।
তখন জান বাঁচাতে গিয়ে জানটা না শেষ হয়। চর খোন্দকার গ্রামের পরিমল জলদাস দুঃখ করে বলেন, এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় তারা আশেপাশের সচ্ছল লোকদের ঘরে আশ্রয় নিতে হয়। গ্রামের অনেক লোক একসাথে উঠলে তখন তাদেরও কষ্ঠ হয়।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনাগাজীতে দুর্যোগকালে জনসাধারনের আশ্রয়ের কোন স্থান নেই বললেই চলে। উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়- জলোচ্ছ্বাসের সময় মানুষ ও গবাদি পশুর জীবন এসব আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছিল। বর্তমানে প্রচন্ড দুর্যোগ মহুর্তেও এসব আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষতো দূরে কথা, গবাদি পশুও এসব আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়না। ১৯৬৩ ও ‘৬৪ সালে নির্মিত এসব আশ্রয়কেন্দ্র এখন ব্যাবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত এক বছরে চর চান্দিয়া ইউনিয়নে ২টি আশ্রয় কেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরো একটি আশ্রয় কেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হতে চলছে।
সংশিষ্ট সূত্র জানায়, সোনাগাজী পৌর এলাকায় ৪টি ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ৩টি, চরমজলিশপুরের ২টির মধ্যে একটি, মঙ্গলকান্দির ৩টির মধ্যে ২টি, মতিগঞ্জের ২টি, চরদরবেশের ১২টির মধ্যে ৭টি, চরচান্দিয়ার ১৪টির মধ্যে ৭টি, সদর ইউনিয়নের ৮টির মধ্যে ৩টি, আমিরাবাদের ১১টির মধ্যে ৫টি, নববাবপুরের ৪টির মধ্যে ৩টি আশ্রয় কেন্দ্র যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। এগুলো ব্যাবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। বগাদানা ইউনিয়নে কোন আশ্রয়কেন্দ্রই নেই।
এলাকাবাসী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সুত্র জানায়, বর্তমানে সোনাগাজী সরকারী কলেজ সংলগ্ন আশ্রয়কেন্দ্র, দনি পূর্ব চরচান্দিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র, পূর্ব চর চান্দিয়া, পশ্চিম চরদরবেশ রাশেদীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন কেন্দ্র, উপজেলা সদরের মোহাম্মদ ছাবের পাইলট ইচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন কেন্দ্র, চর গণেশ নজরুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেিণ ভূঁইয়া বাড়ি সংলগ্ন কেন্দ্র, চরচান্দিয়া আলী আজ্জম বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন কেন্দ্র, সোনাপুর ছেরুমিয়া বাড়ি সংলগ্ন কেন্দ্র, মহদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন কেন্দ্র, সুজাপুর গ্রাম সাবসেন্টার আশ্রায়ন কেন্দ্র, পশ্চিম চরদরবেশ গ্রাম সাবসেন্টার আশ্রায়ন কেন্দ্র, বাগিশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন আশ্রয় কেন্দ্র, জিৎপুর-ভাদাদিয়া গ্রাম কমিউনিটি আশ্রয় কেন্দ্র, ওলমা বাজার হাজী সেকান্তর মিয়া উচ্চ াবিদ্যালয় সংলগ্ন আশ্রয় কেন্দ্র, আমিন উদ্দিন মুন্সির হাট আশ্রয় কেন্দ্র, নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন আশ্রয় কেন্দ্র, পূর্ব বড়ধলি গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল সংলগ্ন আশ্রয় কেন্দ্র, চর এলাহি সাবসেন্টার আশ্রয় কেন্দ্র, পশ্চিম চর দরবেশ গ্রাম সাবসেন্টার আশ্রয় কেন্দ্র, ভোর বজার সংলগ্ন স্বন্টোর আশ্রয় কেন্দ্র, দাসের হাট সাবসেন্টার আশ্রয় কেন্দ্র, চর চান্দিয়া আলী আজ্জম বেড়ী বাঁধ সংলগ্ন সারসেন্টার, আহম্মদপুর সামছু মেম্বার বাড়ীর পাশের সাবসেন্টার, সোনাপুর ছেরু মিয়ার বাড়ীর সামনের সাবসেন্টারসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র বেশী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, বেশীরভাগ আশ্রয়কেন্দ্র এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এখানে গ্রামের লোকজন এখন আর নিরাপদ বোধ করেনা। এগুলো মেরামতের ব্যাপারে সংশিষ্ট কর্তৃপরে কাছে বার বার চিঠি দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর উল্যাহ নুরি জানান, উপকূলীয় এ জনপদে প্রাকৃতিক দূর্যোগ অনেকটা নিয়মিত ব্যাপার। বিপদে পড়ে মানুষ এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। তাই এগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রণালয়ে জরুরি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমুদ্রের কাছাকাছি চরচান্দিয়া ও চরদরবেশ ইউনিয়নের কেন্দ্রগুলো সবার আগে মেরামত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জেডএম কামরুল আলম জানান, সমুদ্র উপকূলীয় সোনাগাজীতে ঝুকিপূর্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলি মেরামত বা সংস্কারের পাশাপাশি আরো নতুন কিছু ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান করা প্রয়োজন। কারন চরে আগের তুলনায় বসতি বাড়ছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে একাধিকবার উপজেলা ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উথআপন করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।