আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙালীর মর্মে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞার যন্ত্রণা

সুখ চাহি নাই মহারাজ—জয়! জয় চেয়েছিনু, জয়ী আমি আজ। ক্ষুদ্র সুখে ভরে নাকো ক্ষত্রিয়ের ক্ষুধা কুরুপতি! দীপ্তজ্বালা অগ্নিঢালা সুধা জয়রস, ঈর্ষাসিন্ধুমন্থনসঞ্জাত,সদ্য করিয়াছি পান—সুখী নহি তাত, অদ্য আমি জয়ী। (এটি একটি খসড়া রচনা। জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে নিজের ভাবনাগুলোকে টুকে রাখার একটা প্রয়াস। ভবিষ্যতে এটিকে আরো সুসংবদ্ধভাবে বিস্তারিত লিখবার ইচ্ছা রাখি।

জানি, ব্লগের পরিসরে রচনাটি দীর্ঘ হয়ে গেল। দুই কিস্তিতে পোস্ট করবো ভেবেছিলাম, কিন্তু এতে পড়বার ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন হবে বলে আমার ধারনা। যাঁদের আগ্রহ থাকবে, ধৈর্য্য ধরে পড়বেন ব’লে আমার বিশ্বাস। ) মানুষের চিন্তার ইতিহাসকে বুঝবার জন্য যখন তৎপর হয়ে উঠি, তখন গোটা চিন্তা জুড়ে এক ধরনের অস্থিরতা টের পাই। হয়তো পদ্ধতিগত ভাবে চিন্তা করতে না শিখলে এ অস্থিরতা আরো বাড়ে।

আমার ভিতর এ অস্থিরতা আরো বেশী করে প্রকটিত হয়েছে এ জন্য যে, আমি আমাদের “বাঙালী” ও “মুসলমান”- এ দ্বৈত পরিচয়ের সামনে বেশ হতবিহবল হয়ে পড়ি। বাঙালী, বাংলাদেশী ও মুসলমান বাঙালী- এসব অভিধার কোনটা আমাদের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত, তা নিয়ে ভাববার প্রেরণা আপন বিকাশের মোটা মোটা দাগগুলো চিনবার খাতিরে বেশ প্রখর। এই লেখায় আমি জাতীয়তাবাদের সংকট নিরসনের জন্য সচেষ্ট নই, বরং জাতীয়তাবাদের প্রশ্নটি এখানে যেভাবে উপস্থাপিত হয়, সেটা যে কতটা একদেশদর্শী ও অগভীর হয়ে উঠেছে, সেটাই বলবার চেষ্টা করবো। আমাদের পূর্বপুরুষদের চিন্তার মৌল প্যাটার্ন ধরবার জন্য একটা নৃতাত্বিক অনুসন্ধান অবশ্যই দরকার এবং মৌল প্যাটার্নের আঙ্গিকে কিভাবে এখানে চিন্তার আন্দোলন গড়ে উঠেছে, সে প্রশ্নও আলোচিত হতে পারে। কিন্তু যারা এ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে শুধু দৈহিক গরন সংক্রান্ত নৃতত্ব ও ভাষা দিয়ে বুঝতে চান জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন মীমাংসার দরকারে, তাঁদের সাথে অনেকেরই মৌলিক বিরোধ ছিল; আমারও রয়েছে।

বাঙালী জাতি বলতে আদিতে কিছু ছিল কি না, এর উত্তরের পুরোপুরি সন্ধান নৃতাত্বিকরা এখনও খুঁজে পাননি। কোন কোন নৃতাত্বিক বলেছেন, বাংলার প্রাচীণ জনসাধারণ ছিলো অস্ট্রো-এশিয়াটিক জাতি উদ্ভুত। আমার আলোচনার বিষয় ভিন্ন। আমাদের পূর্বপুরুষদের চিন্তার মৌলিক প্যাটার্ন সম্পর্কে সুনিশ্চিত না হয়েও এ কথা বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলা যায় যে, এখানে নানা ধরনের চিন্তার আন্দোলন ও লড়াই সংগঠিত হয়েছে এবং সেই সব লড়াইয়ের ভিতর দিয়ে উঁকি দিয়েছে জাতি হিসেবে বাঙালীদের পরিগঠনের সাথে এ সব চিন্তা আন্দোলনের সুগভীর সম্পর্কের দিকটি। আমাদের বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে যাঁরা বাঙালী বলতে একটা সার্বজনীন প্রত্যয় দাঁড় করাতে ব্যস্ত, তাঁরা বাঙালীর মানবীয় চৈতন্য আবিষ্কারে ব্রতি না হয়ে ঢালাও ভাবে শুধু এ কথাটুকু বলে নিস্তার পাবেন না যে, যেহেতু বাঙালীদের ভাষা এক, যেহেতু বাঙালী জাতির উত্থানের হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে, অতএব “বাঙালী জাতীয়তাবাদ”-ই হচ্ছে সবচে’ সঠিক।

কারণ, বাঙালীর মানবীয় সত্ত্বার ক্রমবিকাশের যে ধারা নানা ভাবে স্ফূর্ত হয়েছে, সে ধারাকে অনুধাবন করা ছাড়া পরবর্তিকালের চিন্তা অন্দোলনগুলোকে বোঝা দুষ্কর। বাঙালীর চিন্তা আন্দোলনের প্রধান প্রেক্ষাপট ছিল- মানবীয় সত্ত্বার সাথে সমাজের অনড় শোষন-নিপীড়নমুলক সত্ত্বার সংঘাত। এ ‘সংঘাত’ শব্দটা খুবই জরুরী। কারণ, এ সংঘাতের ব্যাপারটা নিয়ে এখানকার অনেক বুদ্ধিজীবি খুবই বিব্রত। যখন তাঁরা হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ দেখেন, সেটাকে তাঁরা স্রেফ কতিপয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের উস্কানি হিসেবেই দেখেন।

নির্দিষ্ট রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য কোন কোন নেতৃত্ব বিরোধকে উস্কে দিতেই পারেন। কিন্তু উস্কে উঠার মতো প্রয়োজনীয় দাহ্য উপাদান মানুষের চিন্তা ও বাস্তব জীবনের ভেতর বিরাজিত থাকা চাই। ঐতিহাসিক তথ্যগুলো আমাদেরকে এই ধারনাই দেয় যে, এ ধরনের উপাদান যথেষ্ঠ ছিল। ভারতে হিন্দু ও মুসলমান ব’লে যে আলাদা দু’টো অংশ, সেটা বাঙালী সত্ত্বার চেয়ে কতটা পৃথক- এ প্রশ্নটা অবান্তর; তবুও অনেকে করেছেন। এ পৃথকীকরণকে আমার কাছে মনে হয়েছে নির্মম বিশুদ্ধতা।

কেননা, কোন নির্দিষ্ট যুগের চিন্তা যখন ধর্ম রূপে আবির্ভুত হয়, সে চিন্তাকে অস্বীকার করার ভেতর দিয়ে প্রগতিশীল হয়ে উঠা যায় না। বরং সে চিন্তাকে ব্যাখ্যা করার ভেতর দিয়েই প্রগতিশীল অবস্থান গ্রহণ করা সম্ভব। রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে যত সহসা আমরা পৃথক করতে পারবো, তত সহসা চিন্তা থেকে ধর্মকে পৃথক করা যাবে না। সে কারণে বাঙালী জাতির পরিগঠনের ইতিহাসের সাথে এখানকার ধর্মীয় আন্দোলনগুলোর বেশ সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমরা যদি মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের সংকীর্ণতার ও ইতিহাস সচেতনতার অপ্রতুলতার বিরুদ্ধে লড়তে চাই, তাহলেও হিন্দু ও মুসলিম চিন্তার মানবীয় ও সংবেদনশীল দিকগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।

আমরা যদি বাঙালী সত্ত্বার পরিপূর্ণ উপলব্ধি চাই, তাহলে কোল, দ্রাবিড়, মোংগল জাতির সেই সুদূর অতীত ইতিহাসকে জানাটাই যথেষ্ঠ নয়। জানতে হবে কী করে সেই ইতিহাস ক্রমাগতভাবে পরিপুষ্ট হয়ে উঠলো লড়াইয়ে-সংঘাতে, চিন্তা ও চৈতন্যের প্রাখর্য্যে। রামমোহন, কেশবচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের ভেতর দিয়ে মূর্তমান বাঙালী জাতি এবং শ্রীচৈতন্য, নানক, কবীর, বিবেকানন্দের ভেতর দিয়ে প্রকাশিত বাঙালী সত্ত্বা- এ সব কিছুই বিশ্লেষনের মনোযগ দাবী করে। কিন্তু খসরা আকারে লেখা এই ছোট্ট রচনায় এ কাজটা সারা খুবই দুরুহ। সেই বিদ্যাও আমার নেই।

তাই আসুন আমরা দেখি, ইসলামী চিন্তা ও হিন্দু জাগরণ বাঙালী সত্ত্বার উপর কি প্রভাব বিস্তার করেছে এবং আমাদের চিন্তার প্যাটার্নের ভেতর কি কি পরিবর্তন সাধন করেছে। আমি প্রথমেই ইসলামী চিন্তার প্রসঙ্গে আসবো। এ চিন্তা আরব মুলুক থেকে তার আদিরূপে কখনই এই অঞ্চলের জনগনের সামনে আসেনি। বাঙালীদের ভেতর ইসলামের যে সব চিন্তা, তার উদার অন্তঃর্জ্যোতি নিয়ে ভারতীয় সমাজকাঠামোর নিষ্পেষনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দরিদ্র ও ভাবুক বাঙালীদের এক উদার ও মানবিক সমাজ গড়বার বাসনায় মশগুল করে তুলেছিল, তা বাঙালীদের চিন্তার মৌল প্যাটার্নের উপর কি প্রতিক্রিয়া তৈরী করেছিল- এ প্রশ্ন সমাধানের জন্য দীর্ঘ অনুসন্ধান প্রয়োজন। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাঙালী সত্ত্বার সাথে প্রথম দিককার সেই শক্তিশালী ইসলাম কোনো তীব্র বিরুদ্ধতার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল কি না।

এর উত্তর হলো, হিন্দু সংস্কৃতির সাথে ইসলামকে তেমন কোন প্রণিধানযোগ্য বিরোধে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়তে হয়নি। এর কারণ কি এই যে, সে সময় ভারতে একেশ্বরবাদী চিন্তা গড়ে উঠেছিল? এবং সে চিন্তার মানবীয় আবেদন ভারতের অনেক অংশে বিস্তার লাভ করেছিল? এক্ষেত্রে শংকরের মতো মনীষীদের অবদান উল্লেখ করবার মতো। এ নিয়েও যথেষ্ঠ তর্ক হয়েছে যে, ভারতে একেশ্বরবাদী চিন্তা গড়ে উঠবার পেছনে ইসলামের কোন অবদান ছিল কি না। ইসলাম ভারতে এমন একটা মানবিক দর্শন হাজির করেছিল, যার প্রভাব সমাজের নানা স্তরে নানা ভাবে পড়েছিল। বস্তুগত বৈষয়িক রূপান্তরের প্রেরণা সে সময়কার প্রচলিত ইসলামে অন্যভাবে ছিলো।

মানুষের বৈষয়িক জীবনের সাথে ধর্মের সম্পর্ক বেশ জোড়ালোভাবেই ইসলাম স্বীকার করে। আর সে কারণে সমাজের উৎপাদ্ক শ্রেণীর একটা বড় অংশকে আকর্ষন করবার ক্ষমতাও তার ছিল। ইউরোপের সাথে এ অঞ্চলের একটা প্রধান তফাত হলো, এখানে বৈষয়িক রূপান্তরের দরকারে চিন্তার আন্দোলন গড়ে উঠেনি। সে সময়কার সমাজে বিকাশশীল সকল চিন্তা-আন্দোলন ছিল সমাজ কাঠামোর মধ্যে ব্যক্তির অবস্থান নির্ণয় ও স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলন। আর সে কারণে এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, ভারতে ভাবের সকল ধারা- যা মানুষের দিল্‌কে নাড়া দিয়েছে, তার মধ্যে সবচে’ প্রাণস্পর্শী ও মরমী চেতনাগুলোকেও যারা একসুত্রে গাঁথতে চান এবং তা থেকে একটা শান্তিময় ঐক্য ও সংহতির দোলায় আন্দোলিত ‘গলাগলি করে এগিয়ে যাওয়া’ বাঙালী সমাজ দেখতে চান, তাদের উচিত চেতনার বৈপ্লবিক মর্মতাকে অনুসন্ধান করে দেখা ও আদি বাঙালী সত্ত্বার সাথে ব্যক্তির টান ও টানাপোড়েনকে উপলব্ধি করা।

নইলে তারা এক ধর্ম নিরপেক্ষ বিশুদ্ধ অতীত খুঁজতে গিয়ে ভীম্‌রি খাবেন। ইউরোপীয় ভাবধারার সাথে এ অঞ্চলের চিন্তা-প্যাটার্নের মেশামেশি ঘটবার আগ পর্যন্ত, ধর্ম নিরপেক্ষ মানবিক দর্শন নির্মানের চেষ্টাটাও চলেছে ধর্মেরই ভিতর থেকে। আর সে কালের ধর্মের আধুনিকতাটা সেখানেই। এই আধুনিকতাটা আমাদের চেনা দরকার। রামমোহনের “তুহ্‌ফাতুল মুত্তহ্‌হি্দীন”-এর বিচার পদ্ধতি যে ইসলামের নৈয়ায়িক বিচার বুদ্ধির গঠনশৈলীতার সাথে সম্পর্কিত, সেটা সে সময়কার অনেকেই বলেছেন।

ইসলামে মোতাজেলাদের সাথে শাস্ত্রানুগত্যবাদীদের লড়াই আমরা প্রতক্ষ্য করেছি। কোনো ধর্মেই সম্ভবতঃ Reason-এর সাথে Orthodox–এর এতো লড়াই হয়নি ধর্মের পরিমন্ডলের ভেতরে থেকে। আর এই Reason তখনই ধর্মের খোলস থেকে বের হয়ে সার্বমানবিক হয়ে ওঠে, যখন এ Reason ধর্মনিরপেক্ষভাবে সকল ভাবলোককে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়ে উঠে। এই Reason ভারতে খুব একটা ঠাঁই লাভ করতে পারেনি। যে সুফীবাদ দ্বারা ভারতীয় মুসলমানরা আন্দোলিত ছিলো- সেই সুফীবাদ থেকে বেরিয়ে দেখা গেল ভারতীয় মুসলমানরা ভারতবর্ষকে দারুল-হরব ঘোষনা দিয়েছে এবং ওয়াহাবী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

ওয়াহাবী আন্দোলনকারীরা হিন্দুদের উপস্থিতিকে কখনও তাদের এবাদতের প্রতিবন্ধকতা মনে করেনি। বরং তারা বৃটিশ শাসকদেরকেই তাদের এবাদতের জন্য বাধা রূপে গন্য করেছে। ওয়াহাবী আন্দোলনের ইশ্‌তেহারগুলোতে যে বৃটিশ বিরোধী তেজ ছিল, সেটা এ আন্দোলনকে একটা রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপদান করেছিল। ওয়াহাবী আন্দোলনে যেমন উৎকট, চরম ও সরল শাস্ত্রানুগত্যের দিকটি মুসলমানদের হৃদয়ে ঠোক্কর দিয়েছিল, তেমনি সুফীবাদীরাও শাস্ত্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছেদ করেননি। ফলে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে চিন্তাজগত আল্লাহ্‌ ভীতির দিকে ধাবিত হয়েছে বারংবার।

বাঙালী সত্ত্বার সাথে ইসলামী সত্ত্বার বিরোধটা জীবিত থাকবে ততদিন, যতদিন আমরা এ দু’ সত্ত্বার জাগরণের বিভিন্ন পর্যায়ের সেনামুখ দিকটা ধরতে ব্যর্থ হবো। রামমোহন, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথের মধ্য দিয়ে যে হিন্দু জাগরণ তৈরী হয়েছিল, তা সর্বমানবিক হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়। কেননা, ঐ জাগরণের মধ্যে ইসলামী চিন্তার ধারাগুলো অস্বীকৃত থেকে যায়। রামমোহন ‘পরধর্মের প্রতি ইসলামের’ নির্মমতা দেখেছেন। তাই তিনি খ্রীষ্টধর্মের প্রতি উৎসাহী হয়ে উঠেন।

কিন্তু ইসলামী চিন্তা-চৈতন্যের মানবীয় সত্ত্বাকে তিনি ঠিক তাঁর বোধের আওতায় নিয়ে আসতে পারেননি। আর তাই, হিন্দু জাগরণের মানবিক দিকগুলো নিয়ে যেমন আজকে আমাদের ভাবতে হবে; তেমনি ইসলামী চৈতন্যের অসম্পদায়িক মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন ধারাটি সম্পর্কেও আমাদের সচেতন হয়ে উঠতে হবে। নইলে জাতীয়তাবাদের প্রশ্নের মীমাংসা করতে গিয়ে আমরা সাম্রাজ্যবাদী চিন্তার খপ্পরে পড়বো। কারণ, সাম্রাজ্যবাদের কাছে বিভিন্ন জাতির জাতিগত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য খুবই অপছন্দের। এবং সাম্রাজ্যবাদ সবসময়ই চায়- সকল জাতির সংস্কৃতি সাম্রাজ্যবাদী প্রেস্‌ক্রিপশন মাফিক গড়ে উঠুক।

আমাদের কল্পনার ভেতর শান্তি ও সংহতির প্রতীক-প্রতিম যে বাঙালী, সেই বাঙালীর বিকাশের বিভিন্ন ধাপ যদি আমরা অনুধাবন না করি, তবে কল্পিত চিন্তার ছাঁচে আমাদের জাতীয়তাবাদের প্রশ্নকে মীমাংসা করা যাবে না। বাঙালীর ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা যারা করেছেন, তাদেরকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। একদল বাঙালীর অস্তিত্বের হাজার বছরের ইতিহাস টেনে এ অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যেকার ঐক্য ও সংহতির জন্য ঐতিহাসিক উপাদান খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন; অন্যদল বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে এ অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে- বিশেষতঃ হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে বিরোধের সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে এবং সেইসব কারণ বিদূরিত করবার কাজটা খুবই কঠিন এবং এ জন্যে শুধুমাত্র নৃতাত্বিক ঐতিহাসিক উপাদানের অবলম্বন খুব একটা কাজে দেবে না। এই দ্বিতীয় দল নিয়ে আমি ভাবতে বসেছি। বাঙালী নামক যে ঐতিহাসিক ভাষাভিত্তিক পরিচয় রয়েছে, সে পরিচয়ের বিপক্ষেও নানান ধারা সক্রিও।

সে সব ধারাগুলোর রাজনৈতিক পরিচয় হচ্ছে- তারা সাম্প্রদায়িক। ভারতবর্ষে যে সব সাম্প্রদায়িক শক্তি হাতে উদ্ধত তরবারি নিয়ে ইসলামের বীজ বপনের জন্য মানুষ হ্ত্যা ক’রে ভারতের জমিন প্রস্তুত করছিল, তাদের হাতের তরবারি এখনও উদ্ধত। জামায়াত-ই-ইসলামীর সেই বিভৎস খড়্গ আমরা একাত্তুর সালে দেখেছি। এ খড়্গ আরো নানাভাবে আমাদের গর্দানের উপর পতিত হবে ভবিষ্যতে। সমাজের একটা নির্দিষ্ট বস্তুগত অবস্থাকে কেন্দ্র করে নানা তত্ত্ব ও হরেকরকম মতামত গড়ে উঠতে পারে।

সে সব তত্ত্বগুলো পরস্পরের সাথে লড়াইয়ে খুবই জীবন্ত রূপ ধারণ করে এবং বহু জীবনের বিনিময়ে সমাজকে অগ্রসর চিন্তার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমরা ভারতবর্ষে ইসলামী চিন্তা ও ভাবধারার বিকাশের এতো নানাদিক দেখেছি যে, আমাদের মগজের ভিতর তা এখনও বেশ নাড়া দেয়। আর সে কারণে বিশ্লেষন করতে চাই, জাতীয়তাবাদের প্রশ্নের সাথে যাঁরা হিন্দু-মুসলমান বিরোধকে জড়িয়েছেন, তাঁরা আসলে খুবই সংবেদনশীল একটা জায়গা ছুঁয়েছেন। এ কথা বেশ প্রগাঢ় তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে জাজ্জ্বল্যমান যে, কোন ধর্মই তার আদি রূপে সামাজিক ভাবে চর্চিত হচ্ছে না। সকল ধর্মমতই মানুষের উৎপাদন ও মগজের পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা বোধের সাথে মিশে নয়া রূপ পরিগ্রহণ করেছে।

কোনো ধার্মিক লোকের উৎপাদনের ক্ষেত্রে রূপান্তর মানে তাঁর ধর্মের ক্ষেত্রেও রূপান্তর। বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে ভারতের মুসলমানরা নিজেদের জাগরণের প্রশ্নটিকে মীমাংসা করেছেন কোর্‌আন ও সুন্নাহ্‌র আদলে নয়, বরং যে সব মত শাস্ত্র ও প্রজ্ঞার সংঘাত থেকে উৎপন্ন, তার দ্বারাই মুসলমানরা আবিষ্ট হয়েছে বেশী। ভারতে ইসলামের অগ্রযাত্রার শুরুতে এক মানবিক ইসলামের উদারতা দ্বারা চমকিত হয়েছিল বাঙালীরা। তারপর ধীরে সুফীবাদ এ অঞ্চলের মুসলমানদের মানসজগত পরিপক্ক করে তুললো। সুফীবাদের ভেতর এক ধরনের বৈরাগ্য থাকলেও ভারতে উৎপাদনের প্রশ্নটি সুফীবাদের অন্তর্গত ছিল।

আল্লামা ইকবাল সহ আরো অনেক মুসলিম জাগরণের তাত্বিকেরা সুফীবাদকে ভারতের মুসলমানদের উত্থানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকরূপে চিহ্নিত করলেও সুফী দর্শনের ভিতর দিয়ে আদি ইসলামের যে রূপান্তর মানুষের ভাবজগতে ঘটেছে, সে প্রশ্নকে খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা দরকার। কিন্তু সুফীবাদের ভেতর শাস্ত্রানুগত্যের দিকটি খুব জোড়ালোভাবে ছিল বলে তা বিকাশ লাভ করতে পারেনি। ইকবাল যে “আমিত্ব”র সন্ধান করেছেন সেই আমিত্ব রসকষহীন, খট্‌খটে ও একরোখা “আমিত্বে” পরিণত হতে পারে, যদি না সুফীবাদের মরমী “আমি”র যে অসম্পূর্ণ বিকাশ ভারতে হ্যেছিল, তার সাথে কোন ঐতিহাসিক যোগাযোগ না থাকে। এ কথাগুলো বলছি এ কারনে যে, আমরা আমাদের জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন মীমাংসা করতে উদ্যোগী হলে আমাদের ইতিহাসের দিকে নির্মোহ ভাবে তাকানোর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আর তার জন্য দরকার আমাদের ভাবলোক গড়ে উঠেছে কি ভাবে- সেদিকে নজর দেয়া।

আমাদের ভাবলোকের ভেতর যে টান ও টানাপোড়েনের ইতিহাস গেঁড়ে বসে আছে, তা থেকে আমাদের নিস্তার নেই। নিস্তার নেই এই অর্থে যে, আমাদের ইতিহাসবিদরা ধরে নিয়েছেন মানুষের ধর্মীয় জগত আর ধর্মনিরপেক্ষ জগত বুঝি বা আলাদা। আমার মতামত এবং যে মতামতকে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণসিদ্ধ করা সম্ভব, তা হলো- ভারতে ধর্মের ভেতরে ধর্মনিরপেক্ষতা চর্চার একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন ছিলো বহুকাল ধরে। আর রাজতন্ত্রের পক্ষপুটে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে লালন করার ইতিহাস আমাদের নেই বললেই চলে। ইউরোপীয় গীর্জাগুলো ধর্ম ও রাষ্ট্র সংরক্ষনে যে গোম্‌রাহী ভুমিকা পালন করেছে, সে রকম কিছু ভারতে প্রতক্ষ করা যায়নি।

অবশ্যিই ভারতে কিছু কিছু ঐতিহাসিক সময়ে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে। ভারতীয় সমাজে ধর্ম থেকে উদ্ভুত হয়েছে নানা দর্শনের। কিম্বা দর্শন স্বয়ং ধর্মীও রূপে আবির্ভুত হয়েছে। আমাদের জাতীয়তাবাদের প্রশ্নকে যদি মীমাংসা করতে চাই, তাহলে ভারতীয় সমাজের চিন্তার আন্দোলন ও সমাজে এর প্রভাবের ব্যপ্তি ও গভীরতা নিয়ে ভাবা দরকার। প্রথমেই মুসলমানের চিন্তার ইতিহাস নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করা যাক।

আব্দুল ওদুদ তাঁর ‘শাশ্বত বঙ্গ’ গ্রন্থে খুবই সংক্ষেপে এ ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন এভাবেঃ “মুসলমানের চিন্তার ইতিহাসে খুব বড় যে ব্যাপারটি চোখে পড়ে সেটি হচ্ছে বিচার-বুদ্ধি ও শাস্ত্রানুগত্য এই দুইয়ের ভিতরে কঠোর সংগ্রাম, আর সে সংগ্রামে জনগনের প্রাধান্য। ভারতেও বিচার-বুদ্ধি ও বেদানুগত্যের ভিতরে যে সংগ্রাম হয়েছিল তা কঠোর, কিন্তু সে সংগ্রামে জনসাধারন সাধারণত হয়েছিল অনুবর্তি, নেতা নয়। এর বড় কারণ হয়তো এই যে ইসলামের বাহন হয়েছিল একটি দুর্ধর্ষ চির-স্বাধীন জাতি। বহু বিরুদ্ধতার পরে একবার তারা হযরত মোহম্মদের বিরাট ব্যক্তিত্বের কাছে মাথা নত করেছিল; কিন্তু বিকাশোন্মুখ মানুষকে যে নানা মতবাদের কাছে বারবার মাথা নত করতে হয়, অবশ্য কৌতুহলে ও অনুরাগে, সে কথা ভাল করে বুঝবার মতো অনুকূল অবস্থার সৃষ্টির পূর্বেই আরেকটি দুর্ধর্ষ জাতি, অর্থাৎ তাতার জাতি, এসে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল ইসলামের পরিচালনার। তাই ইসলামের আবির্ভাব থেকে প্রায় চারশত বৎসরের মধ্যে চিন্তার প্রভুত বৈচিত্র্য মুসলমান জগতে প্রকাশ পেলেও সর্বসাধারণ মুসলমানের জন্য একাল পর্যন্ত বিশেষ শ্রদ্ধার সামগ্রী হয়ে আছে দুইটি বিষয়- কোরআন ও হযরত মোহম্মদের বাণী, অথবা সোজাসুজি ভাবে এই দুইয়ের অনুবর্তিতা।

এর বাইরে আরেকটি ব্যাপারও দীর্ঘকাল তাদের চিত্ত আকৃষ্ট করেছিল- সুফীর অধ্যাত্মবাদ বা অন্তঃর্জ্যোতিবাদ, বিরাট ব্যক্তিত্বশালী ইমাম গাজ্জালীর প্রভাবে এই মতবাদের বিস্তার ঘটে। কিন্তু শাস্ত্রানুগত্যের সঙ্গে যেভাবে যুক্ত করে এই তত্ত্ব তিনি জনসাধারনকে দিয়েছিলেন তারই ভিতরে নিহিত হয়েছিল এর ভবিষ্যত অসার্থকতার বীজ। ” মানুষ তার বৈষয়িক অবস্থার রূপান্তরের আনন্দ কিংবা বেদনা কাটিয়ে ওঠার পর বৈষয়িক অবস্থার উপর ভিত্তি করে তার নিজস্ব দার্শনিকতা গড়ে নেয়। আর সেরকমটিই আমরা দেখেছি ভারতের মুসলমানদের মধ্যে। ভারতের দরিদ্র চাষীদের কলজের দিকে সামন্ততন্ত্রের সকল উপাদানগুলোকে তীক্ষ্ণ করে তুললো বৃটিশরা।

সেগুলোকে বহাল ও বিকশিতও করে তুললো বৃটিশরা। তারা নিজেরা ব্যবসায়িক পুঁজির বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়রকম সামঞ্জস্যপূর্ণ করে গড়ে তুললো তাদেরই সামন্ততন্ত্রকে। অপরদিকে মুসলমান সামন্তরা হিন্দু সামন্তদের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হলো এবং ধনী চাষীরা বেশ দরিদ্র হয়ে পড়লো। এই পরিস্থিতিতে একটি সাংস্কৃতিক বিলোড়নও ঘটেছিল। আর সেই বিলোড়নের জন্যে দার্শনিক মর্মসার সন্ধানে সকল ধর্মের মানবকল্যানী তত্ত্বকে যেমন এক সুতায় গাঁথবার প্রয়াস আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, তেমনি এ-ও দেখেছি যে এক নির্দিষ্ট ধরনের স্বাতন্ত্র্যবোধ মানুষের মধ্যে সক্রিয়।

এই যে নির্দিষ্ট ধরনের স্বাতন্ত্র্যবোধ, এটা বুঝবার ক্ষমতা থেকেই জন্ম নেয় চিন্তা-নিরপেক্ষ দৈহিক গড়ন কেন্দ্রিক এক প্রাকৃতিক জাতির ধারনা। প্রাকৃতিক ভাবে নির্ধারিত ও চালিত জাতি সত্ত্বাই শেষ বিচারে ‘ট্রাইব’। জাতির প্রাকৃতিক সত্ত্বা কখন কি ভাবে নৃতাত্ত্বিক শারীরিক গড়নকে অতিক্রম করে, সে প্রশ্নের মিমাংসা করা দরকার। বাঙালী শব্দের সার্বজনীন প্রয়োগ একটা ভাষাগত ঐক্যের নিরিখেই যাঁরা দেখতে চান, তাঁরা বাঙালীর রাজনৈতিক সংগ্রামের দিকটিকে উপেক্ষা করেন। জাতি হিসাবে পরিগঠনের জন্য এ অঞ্চলের মানবগোষ্ঠী যে নানাবিধ রাজনৈতিক সংগ্রাম করেছে এবং সে সকল সংগ্রামের মর্মসার যে তাদের চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে, সে উপাদানগুলোকে উদ্ধার করা ছাড়া আর কোনভাবে আমাদের জাতিসত্ত্বার পরিচয়কে লিপিবদ্ধ করা যাবে না।

অতএব বাঙালী জাতির সমগ্র রূপকে শুধুমাত্র নৃতাত্বিক অনুসন্ধানের ভেতর দিয়ে চিনলে চলবে না (যদিও এ অনুসন্ধানও অনেক আয়াসসাধ্য)। এই সমস্ত রূপ বাঙালী জাতির চিন্তা-আন্দোলনের ভেতর দিয়েই কেবল মূর্ত হয়ে উঠেছিল, এবং সেই চিন্তা-আন্দোলনের মর্মশাঁসকে আমাদের এই মূহুর্তেই উপলব্ধি করা দরকার। অতএব, জাতীয়তাবাদের প্রশ্নটি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষার ব্যাপার রয়েছে। ভারতীয় মুসলমানদের চিন্তার ক্রমবিকাশ ও এক একটা ঐতিহাসিক সময়ে তার অভিপ্রকাশ সম্পর্কে যেমন আমাদের সচেতন উপলব্ধি জাগ্রত রাখবার প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি হিন্দু জাগরনের পুরোধাদের ভারতীয় জনসাধারণের ঐক্যের প্রশ্নে অটল মনোভাবকেও শ্রদ্ধার চোখে দেখবার মতো। হিন্দু জাগরনের মানবীয় পর্বটা সম্পর্কে আমরা যদি উদাসিন থাকি, তাহলে মুসলিম জাগরনের মানবীয়তাকেও আমরা বুঝে উঠতে পারবো না।

এ দেশে হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ যেমন তীব্রতর হয়েছে, তেমনি এ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করে গেছেন অনেকেই। মধ্যযুগে কবীর ও তার পরে দাদু ও রজ্জবজীর; শাসকদের মধ্যে আকবর এ বিরোধ নিরসনের জন্য সচেষ্ট হয়েছেন। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো পরবর্তীকালে অনেক চিন্তাবিদ এ বিরোধকে একটা সামাজিক সংগ্রাম রূপে দেখেছেন মাত্র এবং দু’পক্ষের ভাবধারাকে অস্বীকার করে ইউরোপীয় প্যাটার্নে এর সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। এবং পরবর্তীকালে এ ধারাটি ভীষণ ভাবে হোঁচট খেয়েছে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধারকদের সামনে। বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা যারা, তারা ইসলামকে বাঙালী জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে দাঁড় করাবার চেষ্টায় লিপ্ত।

এবং তারা মূলতঃ কোলকাতাকেন্দ্রিক এক ধরনের মধ্যবিত্তসুলভ বাবুপনার ন্যাকামোতে লাগামহীন ভাবে ভুগে চলেছেন। বাঙালীর চিন্তার মৌল প্যাটার্নের ভেতর ইসলামিক ভাবধারা কি ভাবে বিন্যস্ত হয়েছে, সেটাই জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন মীমাংসার জন্য সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাতি হিসাবে মুসলমান বলে যেমন কোন জাতি নেই, তেমনি হিন্দু বলেও কোন জাতি থাকতে পারে না। এ কথা সত্যি যে ইসলাম শুরু থেকেই তার চিন্তা দ্বারা আন্তর্জাতিকতাকে স্পর্শ করতে পেরেছিল। কিন্তু কোন আন্তর্জাতিক ভাবধারাই বিভিন্ন জাতির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করে বিকশিত হয়ে উঠতে পারে না।

সে কারণে, আমাদের জাতীয়তবাদের প্রশ্ন নিরসনের জন্য আমাদেরকে তৎপর হয়ে উঠতে হবে এটা বোঝার জন্য যে, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মমত নিরপেক্ষ একটা বাঙালী সত্ত্বার অস্তিত্ব কেবল কল্পনায় নিরূপন করা সম্ভব। বাস্তবে নয়। আর সে কারণে সমস্ত কূপমুন্ডকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে আমাদের বলার সময় এসেছে যে- হিন্দু ও ইসলামী জাগরনের মানবীয়তা এতো বেশী বিপরীতে অবস্থিত নয় যে তাকে মেলানো সম্ভব নয়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.