ঘুরে এলাম প্রকৃতির অপার বিস্ময় আমাদের পার্বত্য অঞ্চল। বাংলাদেশে এত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তা ছিল আমার চিন্তার বাইরে। এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে আপনাকে যেতে হবে প্রথমে বান্দরবান। ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে যেতে পারেন,অথবা চট্রগ্রাম হয়ে যেতে পারেন মাঝখানে যাত্রা বিরতি নিয়ে। চট্রগ্রাম থেকে সড়কপথে আড়াই ঘণ্টার পথ বান্দরবান।
মূলত বান্দরবান শহরকে ঘিরেই আবর্তিত হয় এখানকার পর্যটন।
আপনারা খুব সহজেই যেতে পারেন চিম্বুক এবং নীলগিরি। বান্দরবান থেকে ৩০ কিমি দূরে হল চিম্বুক.. ওখানে সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প আছে,মাঝখানে ভ্রমন বিরতি নিতে পারেন ওখানকার ক্যান্টিনে। মূলত,ওখান থেকেই শুরু হবে আপনার মুগ্ধতার পালা। চিম্বুক থেকে নীলগিরি ১৮ কিলো দূরে।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা কখনোই আপনাকে বুঝতে দিবে না যে আপনি বাস্তবে আছেন, নিজেকে মনে হবে কোন ছবির অংশ।
নীলগিরি তে কিছু কটেজ আছে থাকার জন্য, আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে থাকার জন্য। মেঘ স্পর্শ করার অনুভূতি আপনি নীলগিরিতেই পাবেন। চমৎকার সব অসামান্য অনন্যসাধারণ বিমুগ্ধকর দৃশ্য আপনাকে উপহার দিতে পারে এই নীলগিরি। আমি এমন কাউকে পাই নি যে নীলগিরি থেকে ঘুরে এসে অনুভব এবং প্রতিজ্ঞা করে নাই যে, তার প্রেয়সী কে নিয়ে এখানে না আসলে জীবনটা ই বৃথা!!!!
এখানে গাড়ি পারকিং এর জায়গা আছে, একটি দোকানও আছে, আছে ক্যান্টিন ও।
আপনার টার্গেট যদি হয় কেওক্রাডং তাহলে আপনাকে যেতে হবে রুমা..................এই জন্য আপনাকে ফিরে যেতে হবে আগের রাস্তায় চিম্বুক এর পথে, চিম্বুক থেকে আরও ৫ কিলো যাওয়ার পরে পাবেন একটি তিন রাস্তার মোড়, ওখান থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা লাগে রুমা যেতে, এই জন্য আপনাকে অবশ্যই চান্দের গাড়ি ভাড়া করতে হবে। গাড়ি ভাড়া করার কাজে সেনাবাহিনীর সাহায্য নিলে খরচ কিছু কমবে। অসংখ্য গর্তে এবং বাঁকে পরিপূর্ণ উঁচু নিচু এই রাস্তা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে পাহাড়ি জীবন কত কঠিন!! একটা উপদেশ দিয়ে রাখি, চান্দের গাড়ীর ভিতরের দিকে বসার চেষ্টা করবেন, বিশ্বাস করেন, চাকার দিকে বসলে জীবনের আয়ুষ্কাল ৬ মাস কমে যাওয়ার আশংকা আছে!!!
রুমা থেকে নৌকাতে করে যেতে হবে রুমা বাজারে, প্রায় ১ ঘণ্টার মত লাগে নৌকাতে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, এই নৌকা ভ্রমনটা আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ নৌভ্রমন হতে যাচ্ছে সন্দেহাতীতভাবে। রুমা বাজারে থাকার জন্য কিছু হোটেল আছে, তবে আমার মতে কষ্ট করে হলেও দিনের মধ্যেই বগালেক চলে যাওয়া উচিত, রুমা বাজারে অবশ্যই বিকাল ৪ টার মধ্যে পৌছাতে হবে, ৪ টার পরে সেনাবাহিনী আর নতুন কোন চান্দের গাড়ি বগালেক এর উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়ার অনুমতি দেয় না।
রুমা বাজার থেকে চান্দের গাড়িতে ৪ ঘণ্টা লাগে বগালেকে যেতে । এটা নিঃসন্দেহে বাস্তবের রোলার কোস্টার। রাস্তায় দেখবেন পাহাড়ি জীবনধারা, পার্বত্য বনাঞ্চল, হাতি। সবচেয়ে অবাক হবেন, এই খাড়া পাহাড়ে গাড়ি কিভাবে উঠবে ? প্রতিটা বাঁকেই আপনার মনে হবে, এইবারই বুঝি গাড়িটা নিচে পড়ে যাবে। ড্রাইভার গুলি খুবই দক্ষ, আর রিস্ক নিতে না চাইলে ঝিরিপথ দিয়ে হেটে চলে যেতে পারেন,কিন্তু তাতে সময় এবং শ্রম দুটাই বেশি খরচ হবে।
বগালেকে থাকার জন্য কিছু কটেজ আছে, আর খাবারের জন্য সেনাবাহিনীর একটি হোটেল আছে। বগালেকে রাত্রিযাপন করাই শ্রেয়।
পরদিন খুব সকালেই রওয়ানা দিতে হবে কেওক্রাডং এই উদ্দেশে। আপনি পুরা ফিট হলে, হেটে উঠার জন্য সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। ভাল কোন জুতা পরে যাওয়া ভাল।
পথে চিংরিঝিরি পাবেন, অত্যন্ত সুন্দর এই ঝিরি, ছবির মত। উপর থেকে বগালেক ও পুরা ছবির মত লাগে। এইভাবে বেশ কিছু গ্রাম পার হয়ে আপনাকে উপরে যেতে হবে। শেষ গ্রাম টা থেকে লাগে ৪০ মিনিতের মত। এইভাবে একসময় আপনি চলে আসবেন কেওক্রাডং ।
পথে পাহাড়ি কলা,পেপে এইসব পাবেন। উপরে উঠে যে ফীলিংস পাওয়া যায় তা বর্ণনা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
এখানে বিশ্রামের জন্য,দুপুরের খাবারের জন্য একটি হোটেল আছে। পাহাড়ি রান্নার টেস্ট পাবেন এইখানে, এত উপরে উঠার পরে এই খাবারকে মনে হয় অমৃত!!! কিছু ছবি শেয়ার করলাম
ছবি দেখতে এইখানে Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।