আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদআত কি জানুন , বিদআত থেকে দূরে থাকুন ।

আমি আমাকে চিনি না বিদআত হল, ধর্মের নামে ধর্মের মধ্যে নতুন আবিস্কৃত বিষয়। যা আল্লাহ বলেননি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ দ্বারা যা প্রমাণিত নয়, সাহাবায়ে কেরামের কেউ যা করেননি তা দীনি বা সওয়াবের কাজ বলে আমল করার নাম হল বিদআত। বিদআত যেমন কর্মে হয় তেমনি আকীদা- বিশ্বাসেও হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন - অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে? (সূরা ইউনুস আয়াত : ৩২) অর্থাৎ, ইসলাম পূর্ণতা লাভ করার পর ইসলামের নামে দীনের মধ্যে যা কিছু সংযোজিত, আবিস্কৃত ও প্রচলিত হবে সব কিছুই ভ্রান্ত বলে প্রত্যাখ্যাত হবে। আর তা বিদআত বলে গণ্য হবে।

আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন - আমি এ কিতাবে কোন কিছু বাদ রাখিনি। (সূরা আনআম, আয়াত : ৩৮) অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে সব কিছু যখন বলে দিয়েছেন তখন ধর্মে নতুন কোন বিষয় সংযোজন বা বিয়োজন করার প্রয়োজন নেই। যে কোন ধরনের সংযোজন ও বিয়োজনই বিদআত বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন - অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও। (সূরা নিসা, আয়াত : ৫৯) অর্থাৎ, যখন কোন বিষয়ে মত বিরোধ সৃষ্টি হবে তখন তার সমাধান আল্লাহ তাআলার কিতাব কুরআনুল কারীম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসে খুঁজতে হবে।

আল্লাহর বিধানে সমাধান না খুঁজে নিজেদের পক্ষ থেকে যুক্তি দিয়ে কোন বিষয় সংযোজন ও বিয়োজন করা যাবে না। কুরআন-সুন্নাহর মূল ধারার বাইরে কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন - আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। (সূরা আনআম, আয়াত : ১৫৩) অর্থাৎ, সত্য, সঠিক ও সরল পথ একটিই।

আর তা হল ইসলাম। ইসলাম বাদে আছে আরও অনেক পথ। কিন্তু সেগুলো সত্য, সঠিক ও সরল নয়। সেগুলো বিদআত। আল্লাহ তাআলা বলেন - বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।

তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১) অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণের দাবী হল, সকল প্রকার বিদআত পরিহার করা ও তাকে অনুসরণ করা। বিদআত থেকে দূরে থাকা। কারণ, তিনি বিদআতে লিপ্ত হতে নিষেধ করেছেন যা আমরা পরবর্তীতে কিছু হাদিসে দেখব ইনশাআল্লাহ । আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এ বিষয়ে (ধর্মীয় বিষয়ে) এমন কিছু সৃষ্টি করবে যা এর থেকে (প্রমাণিত) নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।

(বুখারী ও মুসলিম) মুসলিমের একটি বর্ণনায় এসেছে : যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করবে যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত। অর্থাৎ, বিদআত ইসলামে নিষিদ্ধ। ইহুদী ও খৃষ্টধর্মসহ অন্যান্য আসমানী ধর্মগুলো বিদআতের কারণেই নি:শেষ হয়ে গেছে। ধর্মে নতুন বিষয় প্রচলন করার কারণে এ সব ধর্মের মূল কাঠামো আর অবশিষ্ট থাকেনি। আলোচ্য হাদীসে ‘আমাদের এ বিষয়ের মধ্যে’ বাক্য দ্বারা ইসলামের ধর্মীয় বিষয় বুঝানো হয়েছে।

ইসলামের ধর্মীয় আচার-আচরণে কোন নতুন বিষয় সংযোজন, প্রচলন, আবিস্কার করা যাবে না। অতএব জাগতিক ও পার্থিব বিষয়ে নতুন আবিস্কার, উদ্ভাবন বা নতুন কিছুর প্রচলন নিষিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত নয়। সুতরাং, ধর্মে নতুন বিষয় প্রচলন করা, আবিস্কার করা যেমন অন্যায়, তেমনি এর অনুসরণ করে তা পালন করাও অন্যায়। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুতবা দিতেন তখন তাঁর চক্ষুদ্বয় লাল হয়ে যেত। কন্ঠস্বর উচ্চ হয়ে যেত।

রাগত ভাব প্রচন্ডভাবে প্রকাশ পেত। মনে হত তিনি কোন সৈন্যবাহিনীকে সতর্ক করছেন যে, সকালে বা বিকালেই শত্রু বাহিনী এসে পড়বে। তিনি আরো বলতেন, আমি আর কেয়ামত এমন নিকটবর্তী, এ কথা বলে মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুল দুটো একত্র করতেন। তিনি আরো বলেনঃ জেনে রাখ! সবচেয়ে ভাল কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ।

আর ধর্মের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে ধর্মে নতুন সৃষ্টি। (এটা বিদআত) আর সব বিদআতই পথভ্রষ্টতা। ... (মুসলিম) এ হাদিস থেকে আমরা সর্বোত্তম কথা ও সর্বোত্তম আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারলাম। একইভাবে সবচেয়ে খারাপ বিষয় সম্পর্কেও জানতে পারলাম। আর তা হল বিদআত।

কারণ, সকল বিদআতই মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। যেমন খৃষ্ট ধর্মে বিদআত খৃষ্টানদেরকে পথভ্রষ্ট করে পৌত্তলিকতায় লিপ্ত করেছে। আমরা আরও জানতে পারলাম, জুমার খুতবায় লোকদেরকে বিদআত সম্পর্কে সতর্ক করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নাত। আবু নাজীহ ইরবাজ ইবনে সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে এমন এক বাগ্মীতাপূর্ণ ভাষায় ওয়াজ করলেন, তাতে আমাদের হৃদয় সন্ত্রস্ত হয়ে গেল আর চোখ থেকে অশ্রুপ্রবাহিত হতে লাগল। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা যেন আপনার বিদায়ী উপদেশ।

আপনি আমাদের আরো উপদেশ দিন। তিনি বললেন: আমি আল্লাহর ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বনের জন্য তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি। আরো উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা তোমাদের নেতার অনুসরণ ও আনুগত্য করবে। যদি হাবশী গোলাম তোমাদের আমীর নির্বাচিত হয়, তবুও। আর তোমাদের মধ্যে যে জীবিত থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে।

তখন তোমাদের কর্তব্য হবে, আমার সুন্নাত আঁকড়ে ধরা ও সৎপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ অনুসরণ করা। এ সুন্নাত ও আদর্শকে খুব মজবুতভাবে ধারণ করবে। আর (ধর্মের মধ্যে) সকল প্রকার নবসৃষ্ট বিষয় থেকে দূরে থাকবে। জেনে রাখো, প্রত্যেকটি বিদআতই পথভ্রষ্টতা। (আবু দাউদ, তিরমিজি) অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের বিপরীত যা কিছু ধর্ম হিসাবে চালু হবে তার নাম বিদআত।

বিদআত হল সুন্নাহর বিপরীত। বিদআত ইসলামে একটি মারাত্মক অপরাধ। এ হাদীসে বিদআত থেকে দূরে থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, ‘ধর্মের জন্য নতুন বিষয়ের প্রচলন’ আর ‘ধর্মের মধ্যে নতুন বিষয়ের প্রচলন’ এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথমটি বিদআত নয়।

দ্বিতীয়টি বিদআত। প্রথমটি উদাহরণ হিসাবে আজকের যুগের মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আজান ও নামাজে মাইক ব্যবহার, ইসলামের দাওয়াতে টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদির ব্যবহার পেশ করা যেতে পারে। এগুলো সব ধর্মের জন্য প্রচলন করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় প্রকারের উদাহরণ হিসাবে মীলাদুন্নবী উদযাপন, শবে বরাত পালন, ওরস অনুষ্ঠান ইত্যাদি পেশ করা যেতে পারে। এগুলো হল ধর্মের মধ্যে নতুন আবিস্কার।

বিদ'আতের কুফলঃ (১) বিদআত মানুষকে পথভ্রষ্ট করে - নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা উম্মতের জন্য নিয়ে এসেছেন তা হল হক। এ ছাড়া যা কিছু ধর্মীয় আচার হিসাবে পালিত হবে তা পথভ্রষ্টতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন - হক আসার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কি থাকে ? (সূরা ইউনুস: ৩২) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন - সকল ধরনের বিদআত পথভ্রষ্টতা। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ) (২)সুন্নাতের বিলুপ্তি ঘটায় - বিদআত অনুযায়ী কেউ আমল করলে অবশ্যই সে এক বা একাধিক সুন্নাত পরিত্যাগ করে। উলামায়ে কিরাম বলেছেন :- “যখন কোন দল সমাজে একটা বিদআতের প্রচলন করে, তখন সমাজ থেকে কম করে হলেও একটি সুন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়।

” যেমনঃ রমজানের শেষ দশ দিনের রাতসমূহে রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু ১৫ শাবানে রাত জাগাকে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয়, তেমনিভাবে এ সুন্নাতী আমলের প্রচলন দেখা যায় না। বরং শবে কদরের মূল্যায়ন দিয়ে দেয়া হচ্ছে শবে বরাতকে। ফরয সালাত আদায়ের পর সর্বদা নিয়মিতভাবে জামাতবদ্ধ হয়ে মুনাজাত করা একটি বিদআত। এটা আমল করার কারণে ফরয সালাত আদায়ের পর যে সকল যিক্র-আযকার সুন্নাত হিসাবে বর্ণিত আছে তা পরিত্যাগ করা হয়।

(৩) বিদআত আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করে- এর জ্বলন্ত উদাহরণ আজকের খৃষ্টান ধর্ম। তারা ধর্মে বিদআতের প্রচলন করতে করতে তার মূল কাঠামো পরিবর্তন করে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পথভ্রষ্ট হিসাবে অভিহিত হয়েছে। তাদের বিদআত প্রচলনের কথা আল-কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে - আর সন্ন্যাসবাদ! এটাতো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রচলন করেছিল। আমি তাদের এ বিধান দেইনি। (সূরা হাদীদ: ২৭) সন্ন্যাসবাদ তথা বৈরাগ্যবাদের বিদআত খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মে প্রবর্তন করেছে।

তাদের উদ্দেশ্য ভাল ছিল; উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি। কিন্তু ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত যে কোন কাজ করলেই তা গ্রহণযোগ্য হয় না। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুমোদন প্রয়োজন। এভাবে যারা ধর্মে বিদআতের প্রচলন করে তাদের অনেকেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভাল থাকে। কিন্তু তাতে নাজাত পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

ইয়াহুদী ও খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মে অন্য জাতির রসম-রেওয়াজ ও বিদআত প্রচলন করে ধর্মকে এমন বিকৃত করেছে যে, তাদের নবীগণ যদি আবার পৃথিবীতে ফিরে আসেন তাহলে তাদের রেখে যাওয়া ধর্ম তাঁরা নিজেরাই চিনতে পারবেন না। এমনিভাবে আমাদের মুসলিম সমাজে শিয়া সম্প্রদায় বিদআতের প্রচলন করে দ্বীন ইসলামকে কিভাবে বিকৃত করেছে তা নতুন করে বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। (৪) বিদআত ইসলামের উপর একটি আঘাত : যে ইসলামে কোন বিদআতের প্রচলন করল সে মূলতঃ অজ্ঞ লোকদের মত এ কথা স্বীকার করে নিল যে, ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান নয়, তাতে সংযোজনের প্রয়োজন আছে। যদিও সে মুখে এ ধরনের বক্তব্য দেয় না, কিন্তু তার কাজ এ কথার স্বাক্ষী দেয়। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।

(সূরা মায়িদা, আয়াত : ৩) (৫)রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে খিয়ানাতের অভিযোগ: যে ব্যক্তি কোন বিদআতের প্রচলন করল বা আমল করল আপনি তাকে জিজ্ঞেস করুন ‘এ কথা বা কাজটি যে ইসলাম ধর্মে পছন্দের বিষয় এটা কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন?’ তিনি উত্তরে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলবেন। যদি ‘না’ বলেন, তাহলে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, ইসলাম সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কম জানতেন। আর যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তাহলে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি জানতেন, কিন্তু উম্মাতের মধ্যে প্রচার করেননি। এ অবস্থায় তিনি তাবলীগে শিথিলতা করেছেন। খিয়ানত করেছেন আমানতের ব্যাপারে।

(নাউযুবিল্লাহ!) (৬) বিদআত মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে বিদআত মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শত্রুতা ও বিবাদ-বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে তাদের মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, একদল লোক মীলাদুন্নবী পালন করল। আরেক দল বিদআত হওয়ায় তা বর্জন ও বিরোধিতা করল। যারা এটা পালন করল তারা প্রচার করতে লাগল যে, অমুক দল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিনে আনন্দিত হওয়া পছন্দ করে না। তাঁর গুণ-গান করা তাদের কাছে ভাল লাগে না।

তাদের অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বত নেই। যাদের অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বত নেই তারা বেঈমান। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুশমন। আর এ ধরনের প্রচারনায় তারা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের দুশমনে পরিণত হয়ে হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ল। এভাবে ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই বিদআতকে গ্রহণ ও বর্জনের প্রশ্নে মুসলিম উম্মাহ শিয়া ও সুন্নী এবং পরবর্তী কালে আরো শত দলে বিভক্ত হয়ে গেল।

কত প্রাণহানির ঘটনা ঘটল, রক্তপাত হল। তাই মুসলিম উম্মাহকে আবার একত্র করতে হলে সকলকে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে আহ্বান ও বিদআত বর্জনের জন্য অহিংস ও শান্তিপূর্ণ পন্থায় পরম ধৈর্যের সাথে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে সকল মানুষ ও মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রদর্শন করে। কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন আচরণ করা যাবে না। এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যা হক ও সত্য তা-ই শুধু টিকে থাকবে।

আর যা বাতিল তা দেরীতে হলেও বিলুপ্ত হবে। (৭) বিদআত ‘আমলকারীর তাওবা করার সুযোগ হয় নাঃ বিদআত যিনি প্রচলন করেন বা সেই অনুযায়ী আমল করেন তিনি এটাকে এক মহৎ কাজ বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন এ কাজে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হবেন। যেমন আল্লাহ খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলেছেন তারা ধর্মে বৈরাগ্যবাদের বিদআত চালু করেছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে। যেহেতু বিদআতে লিপ্ত ব্যক্তি বিদআতকে পাপের কাজ মনে করেন না, তাই তিনি এ কাজ থেকে তাওবা করার প্রয়োজন মনে করেন না এবং তাওবা করার সুযোগও হয় না।

অন্যান্য পাপের বেলায় কমপক্ষে যিনি পাপে লিপ্ত হন তিনি এটাকে অন্যায় মনে করেই করেন। পরবর্তীতে তার অনুশোচনা আসে, এক সময় তাওবা করে আল্লাহ তাআলার ক্ষমা লাভ করেন। কিন্তু বিদআতে লিপ্ত ব্যক্তির এ অবস্থা কখনো হয় না। (৮) শাফাআত হতে বঞ্চিত - রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন - শুনে রাখ! হাউজে কাউছারের কাছে তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব করব।

সেই দিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিওনা। জেনে রেখ! আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাব। কিন্তু তাদের অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব – হে আমার প্রতিপালক! তারা তো আমার প্রিয় সাথী-সংগী, আমার অনুসারী। (কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে ?) তিনি উত্তর দেবেন, আপনি জানেন না, আপনার চলে আসার পর তারা ধর্মের মধ্যে কি কি নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে।

(ইবনে মাজাহ) অন্য এক বর্ণনায় আছে এর পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তাদের উদ্দেশে বলবেন – দূর হও! দূর হও!! (৯) বিদআত মুসলিম সমাজে কুরআন ও হাদীসের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়- (১০) বিদআত প্রচলনকারী অহংকারের দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে ও নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে দ্বীনকে ব্যবহার ও বিকৃত করতে চেষ্টা করে তাই প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সব কাজে সকল ক্ষেত্রে আমাদের একমাত্র অবলম্বন হতে হবে আল কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ। তাতেই মুক্তি এবং তাতেই প্রশান্তি। তাই সর্বতোভাবে বিদআত থেকে সতর্ক থাকতে হবে। পরিত্যাগ করতে হবে কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী সকল আচার-প্রচলন। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.