নবুয়তের যুগের সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্ত ধর্ম প্রচার, ধর্ম শিক্ষা ও ধর্ম পালনের প্রক্রিয়াকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে প্রত্যক নবীর ক্ষেত্রে যে সাধারণ বিষয়গুলি ধরা পড়বে তা হলো
* তারা প্রত্যকে ছিলেন আল্লাহ কতৃক মনোনীত
*তাদের সাথে আল্লাহর যোগাযোগ ছিল, অর্থাৎ তারা আল্লাহর সাথে সংবাদ আদান প্রদান করতেন
*তারা আল্লাহর নির্দেশে নিজেকে ও অনুসারীদেরকে পরিচালিত করেছেন। তাদের অনুসৃত আদর্শ ও নীতিসমূহ সংকলিত হবার পর তা পরবর্তীতে কিতাবে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ নবী পূর্ববর্তী রাসূলের উপর অবতীর্ণ আসমানী কিতাবের অনুশাসন মেনে চললেও তারা ঐ িকতাবের অন্ধ অনুসারী ছিলেন না। পুর্ববর্তী কিতাবের অনুশাসন বা শরীয়তের সীমারেখার মধ্য অবস্থান করে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যেম তারা ধর্ম প্রচারের গুরুদায়িত্ব পালন করে গেছেন।
উপরোক্ত বিষয়গুলি থেকে ধর্ম সম্পর্কে যে মহাসত্যটি বেরিয়ে আসে তা হলো-নবুয়তের যুগে সঠিকভাবে ধর্ম পালন ও ধর্ম পরিচালনা সম্পুর্ণরুপে আল্লাহ কতৃক মনোনীত ব্যক্তিকেন্দ্রিক ছিল।
আমাদের প্রিয়নবী হযরত রাসূল (স) এ ধর্ম পালনের প্রক্রিয়াকে পুর্ণতা দান করলেন এবং মানব জাতির পুর্ণাংগ জীবন বিধান হিসাবে আল কুরআন রেখে গেছেন। যার ফলে পরবর্তী নবী প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা রহিত হয়ে গেছে।
কিন্তু হযরত রাসূল (স) কে বাদ দিয়ে শুধু কিতাব অনুসরণ করে ইসলাম ধর্ম পালন করা নিস্ফল। কারন হযরত রাসূল (স) এর শাফায়াত ছাড়া কোন মুসলমান কেন কোন মানুষের মুক্তি হবেনা। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে , সেই উমাইয়াদের যুগ থেকে হযরত রাসূল (স) ের ভুমিকা ও ভাবাদর্শের অবমূল্যয়েনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, অদ্যবধি আরব সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর চর্চা অব্যহত রয়েছে।
ফলে এসব দেশে এরূপ ধারনা প্রচলিত আছে যে " হযরত মুহাম্মদ (স) ছিলেন কেবলমাত্র একজন বার্তাবাহক, তিনি আল্লাহর বার্তা বা কুরআন মানুষের কাছে পৌছিয়ে তার দায়িত্ব শেষ করেছেন। এখন মানুষ পবিত্র কুরআন অনুসারে জীবন পরিচালনা করবে সুতরাং রাসূল (স) এর প্রসংগ টেনে এখন আর কোন প্রয়োজন নেই। বার্তা কে এনেছে সেটা বড় কথা নয়, কি বার্তা এসেছে সেটাই গুরুত্বপুর্ণ" তাই দেখা যায় , যে দেশে এমন ধারণার প্রবণতা বেশি সেখানে সুন্নত নামাজ পড়া হ্য়না, নবীজীর শানে দুরদ ও মিলাদ পাঠ করা হয়না, নবীজীর প্রতি কোন প্রেম ভালবাসা বা আবেগ তাদের অন্তরে দেখা যায়না। এমনকি নবীর জন্মদিন পালন করাও দূষণীয় মনে করে । বরং কেউ নবীর প্রতি প্রেমাবেগ প্রকাশ করলেও বলা হ্য় এগুলো হারাম ও বেদাৎ।
আমাদের দেশেও কিছু নামসর্বস্ব মুসলমান এ ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। ফলে মানুষ ধর্মের প্রাণ বা হযরত রাসূল (স) এর প্রকৃত আদর্শ থেকে দুরে সরে পড়ছে। তাদের ধর্মাচার আচার সর্বস্ব ও ফলহীন বৃক্ষে পরিণত হচ্ছে
হাদীসে কুদসীতে আছে " হে রাসূল (স) আপনাকে সৃজন না করলে আমি জগতের কিছুই সৃজন করতামনা"
রাসূল (স) তার পাক জবানীতে বলেন" আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথম আমার নুর সৃষ্টি করেছেন, তারপর আমার নূর থেকে অন্য সব কিছু সৃজিত হয়েছে" তাহলে একথা পরিস্কার যে, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় সত্তা হচ্ছে 'নুরে মোহাম্মাদী'। সৃষ্টি জগতের সূচনা হয়েছে তাকে সৃজনের মাধ্যমে এবং তার সম্মানে আঠারো হাজার মাখলুখাত দিয়ে সুন্দর করে এ জগতকে সাজানো হয়েছে।
নুরে মোহাম্মাদী হলো সৃষ্টি জগতের প্রাণ ও কুলকায়ানাতের জন্য রহমত।
"কেবলমাত্র রহমতসরূপে জগতসমূহের জন্য আপনাকে প্রেরণ করেছি"
( সূরা আম্বিয়া- আয়াত-১০৭)
তিনি সর্বযুগে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন, পবিত্র কুরআন থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
"হে নবী! নিসন্দেহে আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে,সুসংবাদ দাতা ও সতর্কীকরণ রুপে এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তার দিকে আহবানকারী ও উজ্জল প্রদীপরুপে" ( সুরা আহযাব, আয়াত ৪৫-৪৬)
হযরত রাসূল (স) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ফরমান, আপনাকে আমি সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদ দাতা ও সতর্কীকারীরুপে পাঠিয়েছি , কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বুঝেনা। এখন প্রশ্ন হলো -হযরত রাসূল (স) সাক্ষী বা প্রত্যক্ষদর্শী হবেন কেন, কখন তার সাক্ষ্য আমাদের প্রয়োজন হবে? এ প্রশ্নের জবাব ও আমরা খুজে পাই পবিত্র কুরআনে। হাশরের দিন প্রত্যক ব্যক্তিকে তার সাক্ষী সহ আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। এ সাক্ষী যিনি হবেন হাশরের দিনে আল্লাহর সামনে মানুষের সামনে সওয়াল জবাবের সত্যাসত্য প্রত্যয়ন করবেন।
কোন ব্যপারে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো স্বশরীরে উপস্তিত থেকে ঘটনা প্রত্যক্ষ করা। হযরত রাসূল (স) সব যুগের মানুষের জন্য সাক্ষ্যদাতা হবার অর্থ হলো- তিনি সর্বযুগে ও সর্বস্থানে বিদ্যমান। এজন্যই পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে হযরত রাসূল (স) এর জন্মের হাজার হাজার বছর আগেরকার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা ফরমান, হে রাসূল! আপনি কি দেখেন নি ফেরাউনকে কিভাবে নীলনদে ডুবিয়ে মেরেছি, আপনি কি দেখেন নি আদ ও সামুদ জাতিকে আমি কিভাবে ধ্বংস করেছি, আপনি কি দেখেন নি আবরাহা বাদশাহর হস্তি বাহিনীকে কিভাবে ধ্বংস করেছি? ইত্যাদি। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূল (স) ফরমান,'আমি আদম সন্তানের প্রত্যক যুগের উত্তম শ্রেণীতে যুগের পর যুগ স্থানান্তরিত হয়ে এসেছি। শেষে ঐ যুগে জন্মগ্রহন করি, যে যুগে আমি বর্তমানে আছি' ( বোখারী-১৬৫৮,মেশকাত-৫৪৯৩
হযরত রাসূল (স) তার উম্মতদেরকে কতখানি ভালবাসেন এর প্রমাণ পাওয়া যায় অপর একটি হাদীস থেকে।
তিনি ফরমান 'আল্লাহর দরবারে প্রত্যক নবীর একটি করে দোয়া বিশেষভাবে গ্রহনযোগ্য হবে। প্রত্যক নবী তাদের নিজেদের ব্যাপারে সে দোয়া আল্লাহর দরবারে পেশ করে রেখেছেন। কিন্তু আমি সে দোয়া আমার উম্মতের জন্য রেখে দিয়েছি। কেয়ামতের দিন উম্মতের শাফায়াত স্বরুপ সে দোয়া আমি কাজে লাগাবো। যে ব্যক্তির রূদয়ে তিল পরিমাণ ঈমাণ থাকবে , ইনশাল্লাহ আমার শাফায়াতে তার মুক্তি হবে'।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে " সেদিন ( শেষ বিচারের দিন ) আমি প্রত্যক সম্প্রদায় হতে তাদেরই একজন নবী সাক্ষী হিসাবে উথ্থিত করবো এবং আপনাকে [রাসুল (স)] আমি তাদের সত্যয়নকারী হিসাবে আনয়ন করবো"
( সুরা নহল-আয়াত -৮৯)
'ঈদ' শব্দের অর্থ খুশী, 'মিলাদুন্নবী' শব্দের অর্থ হচ্ছে হযরত রাসূল (স) এর জন্ম । তাই ঈদে মিলাদুন্নবী (স) এর অর্থ দাড়ায়- হযরত রাসূল (স) এর জন্মদিনের খুশী।
আল্লাহ তাবারূকুতায়ালা এরশাদ করেন ' হে রাসূল ! সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য আপনাকে রহমত স্বরুপ প্রেরণ করেছি। আর নিজের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন 'আলহামদু লিল্লাহি রাব্বীল আলামীন'-সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি সমস্ত মাখলুকাতের জন্য প্রভু। আল্লাহতায়ালা যতটুকু রাজ্যর জন্য প্রভু, ততটুকু রাজ্যর জন্য হযরত রাসূল (স) হলেন রহমত।
হযরত রাসুল (স) এর এলাকার কোন সীমা পরিসীমা নেই। তিনি কোন কওমের মধ্য সীমাবদ্ধ নন। সমগ্র সৃষ্টি জাহানের জন্য , আল্লাহর সমগ্র রাজত্বের জন্য রহমত হিসেবে তিনি জগতে আগমন করেছেন।
"আমি রাসূল (স) না পাঠানো পর্যন্ত কোন কওম বা জাতিকে শাস্তি দিইনা"
( সূরা বনী ইস্রাইল-আয়াত -১৫)। সুতরাং সৃষ্টির শুরু থেকে প্রতিটি কওম, প্রতিটি জাতির কাছে আল্লাহ দয়া করে নবী পাঠয়েছেন, যারা স্বজাতিকে রাহমাতাল্লিল আলামীনের সুসংবাদ জানিয়ে গেছেন।
সবার পরে এলেন রাহমাতাল্লিল আলামীন,সরকারে দো আলম রাহমাতাল্লিল আলামিন হযরত রাসূল (স) যিনি সমগ্র মানব জাতির জন্য, অর্থাৎ-কেয়ামট পর্যন্ত যত মানুষ জন্ম নেবে তাদের সবার জন্য তিনি প্রেরিত রাসূল। রাহমাতাল্লিল আলামিন যে পবিত্র দিনে ও যে শুভ মুহুর্তে জগতের বুকে আগমন করলেন, এ ধূলি ধরায় তিনি তাশরীফ নিলেন সংগে সংগে যত বাতেল ফেরকা ছিল সব ধংসের ভয়ে কাপতে শূরু করলো। বাতেল মতবাদ ধংশের দিকে যেতে লাগলো। বিশ্বজুড়ে আনন্দের জোয়াড় বইতে লাগল।
আল্লাহর নবী দয়া করে ঘোষনা করেছেন' সে পর্যন্ত কোন মানুষ মুমেন হতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জান মাল পিতা পুত্র এবং সব মানুষের চেয়ে আমাকে বেশী ভাল না বাসবে'।
যার নুরে সমগ্র মাখলুকাত পয়দা সে রাহমাতাল্লিল আলামিনের জন্মদিন কি আমাদের জন্য আনন্দময় হতে পারেনা? যা মাহমানব কে জগতের বুকে পাবার জন্য সমগ্র মাখলুকাত লক্ষ লক্ষ বছর ধরে তার উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে যার আগমনের উপযুক্ত ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে গিয়ে মহান প্রভু হাজার হাজার অবাধ্য জনপদকে ধ্বংস করতেও কুন্ঠিত হন নি। আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় সেই বন্ধুর
জন্মদিন কি আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশী আনন্দের হওয়া উচিত ছিলনা? আমাদের মধ্য কি সেরকম কোন চিন্তা আছে? আমরা কোরবানির ঈদ পালন করি সেটা হলো সুন্নতে ইব্রাহীম। হযরত ইব্রাহীম (আ) এর ছেলে হযরত ইসমাইল (আ) কে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করতে গিয়ে ইসমাইলের পরিবর্তে আল্লাহ দুম্বা কোরবানি করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, তাদেরকে বন্ধু হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন। সেই আনন্দে হযরত রাসূল (স) হরত ইব্রাহীম (আ) এর বংশ ধর হিশেবে কোরবানির আনন্দ পালন করতেন তার অনুসারী হয়ে আমরাও সে অনুষ্ঠান পালন করি। কিন্তু যেদিন রাহমাতাল্লিল আলামীন জগতের বুকে তাশরীফ এনেছেন তাহলে সেদিন আমরা কি আনন্দ করছি? মুসলমানদের আজকের কর্মসূচী দেখে মনে হ্য় মুসলমানদের রাসূল আছেন, তার সাথে মুসলমানদের কোন সম্পর্ক আছে?
আমি যদি রাসূল (স) কে ভালবাসি, আমার মাঝে যদি সামান্যতম প্রেম ও থাকে তাহলে তার জন্মদিন আমার জন্য আনন্দের হবেনা কেন? তবে আজ আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সমাজ ও রাস্ট্রীয় জীবনে আনন্দের বহিপ্রকাশ নেই কেন? হযরত রাসূল (স) এর জন্মদিন আমাদের আনন্দ দিতে না পারলে তিনি কিভাবে আমাদের শাফায়াত করবেন? কোন মুখে আমরা তার সামনে গিয়ে হাজির হব এবং তার শাফায়াত কামনা করবো? নিজেদের ছেলেমেয়ের জন্মদিন আমরা কত ধুমধামের সাথে পালন করি।
যিনি সত্যিকারের মুসলমান তার কাছে পুত্র কন্যার জন্মদিনের আনন্দের চেয়ে হযরত রাসূল (স) এর জন্মদিনের আনন্দ কি কোন অংশে কম হওয়া উচিৎ? হযরত রাসূল (স) এর শাফায়াত ও সাহায্য পেতে গেলে তাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসতে হবে এবং আমাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে হবে।
আজকে সমাজের মানুষ বলে কোন সাহাবা কেরামগণ নবীজীর জন্ম ঈদ পালন করেন নাই সুতরাং আমরা কেন পালন করবো? আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে রাহমাতাল্লিল আলামিন জগতের বুকে এসেছিলেন,,তারপর কারবালায় ইমাম হোসেন শাহদাত বরণ করার পর ইসলামের ভেতরে সুনিপুন ষড়যন্ত্র মাধ্যমে অসংখ্য ইতিহাস বিকৃত করে মুসলমান গনকে রাসূল (স) হতে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলস্বরূপ আজকের দুনিয়ার মুসলামান গণ জানে রাসূল (স) গরীব ছিলেন, ইহুদির বাগানে শ্রম বিক্রি করতেন, ক্ষুধায় পেটে পাথর বাধতেন। অথচ রাসূল (স) আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী ছিলেন। ঠিক তেমনিভাবে রাসুলের জন্মদিনের যেসব বর্ণনা সেসময় প্রচলিত ছিল তা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুছে ফেলা হয়েছে।
এর একটাই কারণ মুসলমানদের স্বর্ন যুগে মুসলমান গণ যখন রাসুল (স) এর বাতেনী শক্তিতে বলীয়ান হয়ে বিশ্বজুড়ে প্রসার লাভ করছিল তখন বিধর্মী রা এর রহস্য অনুধাবনের জন্য তাদের কিছু লোক মুসলমানদের দলে ভিড়িয়ে দেয়। তখন তারা জানতে পারে মুসলমানদের মধ্য আসল জিনিষ হলো রাসূলের (স) প্রতি ভালবাসা এবং আল্লাহ তে অগাধ বিশ্বাস। তাদের কে যদি এই দুই থেকে দুরে সরিয়ে দেয়া হয় তাহলে তাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। এর পরে ইমাম হোসেনের কারবালায় শহীদ হবার পর থেেক শুরু হয় সেই ইতিহাস বিকৃতির কাজ। তাই আজকে আমরা জানি রাসূল (স) ছিলেন আমাদের মতই, উনি একজন সাধারণ বার্তাবাহক, উনার আগে উনার মতো আরো অনেক রাসুল (স) গত হয়েছেন ইত্যাদি।
রাসূলের জন্মদিনে সাহাবা কেরামগণ পালন করতেন। সাহাবী আবু দারদা বর্ননা
করেন যে, তিনি একদিন নবীজী (স) এর সাথে হযরত আবু আমের আনসারী (র) এর বাড়ীতে গিয়ে দেখলেন, আবু আমের তার ছেলেমেয়ে ও তার আত্মীয় স্বজনকে একত্রিত করে হযরত রাসুল (স) এর জন্মদিনের বিবরণ শোনাচ্ছেন। তার এ কাজে নবীজী অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করলেন এবং বললেন, হে আমের! নিশ্চই আল্লাহতায়ালা তোমার জন্য তার রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতারা তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। যারা তোমার ন্যয় এমন কাজ করবে তারাও তোমার মত ফযিলত পাবে। আর একটি ঘটনার বর্ণনায় জানা যায় ' একদিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস তার ঘরে পাড়া প্রতিবেশীদের একত্রিত করে রাসুল (স) জন্মদিনের বর্ণনা করছিলেন যা শুনে উপস্থিত সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে নবীজীর উপর দূরদ ও সালাম পেশ করছিলেন ।
এমন সময় নবীজী সেখানে উপস্থিত হলেন এবং খুশী হয়ে তাদের উদ্দেশ্য বললেন 'তোমাদের জন্য শাফায়াত করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে'
সুতরাং আমরা নালায়েকের দল যদি এ যুগে তার জন্মদিন পালন করি তাহলে নবীজী আমাদের উপর খুশী হবেন, আমাদের জন্য মুক্তির রাস্তা খুলে যাবে।
রাসূল (স) কে আনন্দ দিতে পারলে কি উপকার হয় তার জন্য জাবের (র) এর ঘটনা আমাদের জন্য উদাহারন স্বরূপ হতে পারে। হজরত জাবের (র) আল্লাহর নবীর কাছে আরজ করলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ দয়া করে গোলামের বাড়িতে দাওয়াত কবুল করে নিন। নবীজী দাওয়াত কবুল করে নিলেন। হযরত জাবের (র) খুশীতে আত্মহারা হয়ে বাড়ীতে গিয়ে স্ত্রীকে সুসংবাদ দিলেন, ঘরবাড়ী সুন্দর ভাবে সজ্জিত করলেন, নবীজীকে মেহমানদারী করার জন্য নিজের ঘরের পালিত খাশী জবাই করলেন এবং বড় ছেলেকে নিয়ে খাশীর চামড়া ছাড়িয়ে মাংস টুকরো করে নিলেন।
ইতিমধ্য জাবের (র) এর ছোট ছেলে ঘুম থেকে উঠে খাশীর খোজ করতে গেলে বড় ভাই তাকে জানাল যে খাশী জবাই হয়ে গিয়েছে। তখন ছোট ভাই বায়না ধরল কিভাবে জবাই হ্য় তা দেখানোর জন্য। বড় ভাই কিভাবে জবাই করে তা দেখাতে গিয়ে ছোট ভাইকে সত্যি সত্যি জবাই করে ফেলল। এবং ভয়ে গাছের উপর আত্মগোপন করে রইল। এদিকে জাবের (র) পুত্রদের খোজ করতে করতে ছোট ছেলের লাশ দেখে থমকে গেল এবং একটি কম্বল নিয়ে তা মুড়িয়ে দিল।
স্ত্রী রক্তমাখা সন্তান কে দেখে চিৎকার করলে স্বামী তােক সান্তনা দিয়ে বললেন, আজ আমাদের শোক প্রকাশের দিন নয়, আমাদের কষ্ট দেখলে নবীজীও কষ্ট পাবেন। এদিকে বড় ছেলের খোজ করতে গিয়ে বড় ছেলে গাছের উপর থেেক পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে মারা গেল। জাবের (র) পুনরায় কম্বল দিয়ে লাশ ঢেকে দিল এবং স্ত্রীকে আবারো এই বলে সান্তনা দিল যে 'ধৈর্য্য
ধর আজ আমাদের পরম আনন্দের দিন। এই বলে তারা পুনরায় কাজে কর্মে মনোযোগী হয়ে পড়লেন। কাজ কর্ম শেষ করে তারা বাড়ির সামনে গিয়ে নবীজীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
যথা সময় নবীজী তাশরীফ নিলেন। নবীজী যখন উট থেকে এক পা নামালেন তখন জিব্রাইল (আ) আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ নিয়ে উপস্থিত হয়ে বললেন ইয়া রাসুল (স) আল্লাহ আপনাকে জাবের এর ছেলেদেরকে সংগে নিয়ে খানা খেতে বলেছেন।
এর পর জাবের যখন রাসূল (স) এর সামনে খাবার উপস্তিত করলেন তখন রাসূল (স) বললেন হে জাবের! তোমার ছেলেরা কোথায়? তখন জাবের বলল আপনি খান তাদের কে আমি পরে ডাকব। তখন রাসূল (স) বললেন হে জাবের আল্লাহ আমাকে তোমার ছেলেদের সাথে নিয়ে খানা খেতে বলেছেন। তখন জাবের সমস্ত ঘটনা বর্ননা করলো।
তখন রাসুল (স) জাবের এর পুত্রদ্বয়ের উপর হাত মোবারক দিয়ে বললেন 'হে জাবেরে ছেলেরা তোমরা কি দেখনা তোমাদের আব্বা আম্মা আল্লাহর নবীকে কত ভালবাসেন? আমি মনে কষ্ট পাব বলে তোমাদের কথা আমােক তার জানায়নি। তোমরা শীঘ্র উঠো তোমাদের সংগে নিয়ে আমি খানা খাব। এ কথা বলার সংগে সংগে তারা দুজন উঠে দাড়াল' তখন নবীজীর প্রেমে কেউ সুস্থির ছিলেন না। সবাই কাদতে কাদতে বেহুশের মত হয়ে গেলেন।
তাহলে হযরত জাবের (র) কি নবীজীকে ভালবেসে ভুল করেছিলেন।
তার জন্মদিনে আমরা যদি তাকে স্বরণ করি , ছেলে মেয়ে নিয়ে তার জন্মদিন আনন্দ উৎসবের সাথে পালন করি তার শাফায়াত কামনা করি তিনি কি আমাদের জন্য শাফায়াত করবেন না।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্বাস (র) কতৃক একটি ঘটনা। তিনি বলেন আবু লাহাবের মৃত্যুর ১ বছর পর তাকে স্বপ্নে দেখি সে অত্যন্ত আযাবের মধ্য আছে। তার সম্পর্কে আবু লাহাব জানায় 'তোমাদের কে ছেড়ে আসার পর থেেক আমি শান্তির মুখ দেখিনি তবে প্রতি সোমবার আমার আযাব লাঘব করা হয়। এর কারণ হলো হযরত রাসুল (স) এর জন্মের সুসংবাদ নিয়ে আসার জন্য দাসী সুয়াইবাকে সে খুশী হয়ে মুক্তি দিয়েছিল।
একজন কাফের হয়ে যদি হযরত রাসূল (স) এর জন্মের সংবাদে খুশী হওয়ায় আবুলাহাব উপকৃত হতে পারে তাহলে নবীজীর উম্মত হয়ে তার জন্মদিন আনন্দ ও প্রেমের সাথে উদযাপন করে আমরা উপকৃত হবোনা কেন? যদি সারা বিশ্বের মুসলমানদের মাঝে হযরত রাসূল (স) এর প্রেমের জোয়ার আসে ,আমরা তার নেক দৃষ্টি পেয়ে যাবো, আমাদের প্রতি আল্লাহর অশেষ নেয়ামত বর্ষিত হবে। আর তাহলে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হবে যে, মুসলমানদের কে আর কোন জাতি দাবিয়ে রাখতে পারবেনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।