শফিক হাসান আরও চাই, আরও...
মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি সন্তুষ্ট না হওয়া। সবাই যা আছে তারচেয়ে বেশি চায়। 'অনেক হয়েছে, আমার আর লাগবে না'_ এ কথা বলার মানুষ জোনাকির আলো দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ। জাতি হিসেবে আমাদের অনেক সুনাম-বদনাম থাকতে পারে; কিন্তু আমরাও তো মানুষ; মানুষের প্রবৃত্তি থাকবেই_ সুতরাং সন্তুষ্ট হব কেন! অন্যদের মতো আমরাও 'বড়' হতে চাই, পরিমাণটাকে ঊধর্ে্ব তুলতে চাই। তাই তো বাংলাদেশে জনসংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলে, বেড়েই চলেছে।
আদমশুমারি কিংবা সরকারি নথিপত্রে সংখ্যার যে হিসাব দেখানো হয়, তার ভেতরে অনেক গোঁজামিল। সঠিক হিসাবটা কেউই জানে না। এমনকি যারা তথ্য গোপন রাখতে চেষ্টা করে তারাও!
ছোট্ট এ দেশে জনসংখ্যার যে ঘনত্ব, তা দেখে ভিনদেশি মানুষ টাসকি খায়। শুধু টাসকি কেন, আরও অনেক কিছুই খেতে পারে। তারা কি জানে আমাদের কারিশমা আর শক্তির কথা! যেভাবে আমরা দিন দিন জনসংখ্যা বাড়িয়ে চলেছি, নিশ্চয়ই তা একদিন না একদিন সর্বোচ্চ সংখ্যাটাকে অতিক্রম করবে।
তখন গিনেস বুকে নাম উঠবে আমাদের। মনোবল অটুট থাকলে উপাধিটা পাওয়া ঠেকাবে কে!
...স্বপ্ন দেখে মন
ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখাটা হয়তো দোষের, কিন্তু স্বাভাবিক স্বপ্নচর্চা নিশ্চয়ই বেঠিক কিছু না! এ দেশ অন্তত একটা বিষয়ে 'সারাবিশ্বের বিস্ময়' হয়ে আছে। সবারই পুত্রসন্তান চাই। এবার তিনি বাবা হন, আর মা-ই হন। বিয়ের পর যখন প্রথম সন্তান নেবেন, সিংহভাগ বাবা-মায়েরই পছন্দ পুত্র।
কেন পুত্র পুত্র কি খুব বাবা-মা ভক্ত? না, পুত্র রোজগার করতে পারে। অন্যদিকে কন্যাসন্তান 'বোঝা'। এ 'আপদ' কারও প্রত্যাশিত নয়। থাকলেই বরং জ্বালা। দুটি পয়সা আনতে পারবে না, উল্টো বিয়ের সময় যৌতুক বাবদ লাখ টাকা গচ্চা।
তার ওপর জামাই বাবাজির, ও বাড়ির মানুষদের এটা-ওটা আবদার তো আছেই! সুতরাং পুত্র চাই, পুত্র। কন্যার বিয়েতে টাকা যায়, পুত্রের বিয়েতে আসে_ সোনার হরিণ পুত্রসন্তান। কিন্তু বৈজ্ঞানিক কারণে হোক, অন্য কোনো কারণেই হোক, সবার পুত্রসন্তান হয় না। একটা মাত্র পুত্রসন্তানের জন্য বছর বছর একের পর এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন এমন মানুষ খুঁজলে ভূরি ভূরি পাওয়া যাবে। ৫, ৭, ১০... করে সংখ্যা বাড়তে থাকলেও পুত্রসন্তান ধরা দেয় না।
কাঙ্ক্ষিত পুত্র অধরা। ফলে অবহেলা আর গালমন্দ জুটতে থাকে স্ত্রী আর পুত্রের 'বিকল্প' হিসেবে জন্মানো কন্যাসন্তানদের কপালে। সব চেষ্টা চরিত্র করার পরও যদি ব্যর্থ হয়, জন্ম দেওয়ার শক্তি লোপ পায় তখন না হয় দত্তক পুত্র নেবে; তবু লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া চাই-ই!
মানুষ নয়, ভোটার বাড়ে!
জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অনেক সুবিধা থাকলেও এটা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করার মানুষের সংখ্যাও প্রচুর। বিশেষ করে তথাকথিত সভ্যতার ঝাণ্ডাধারীরা। তাদের মতে, জনসংখ্যার চাপ মানেই সমস্যা।
পৃথিবী নাকি হেলে পড়েছে জনভারে। তারা এবং এ দেশের কিছু মানুষের খেয়েদেয়ে কাজ নেই, ঘটে বুদ্ধিও নেই; উল্টাপাল্টা বকতেই পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা। তারা মানুষ বাড়তে দেখেন না, ভোটার দেখেন। একটা আদম= একটা ভোট।
যেদিকে তাকান ভোটার_ চোখ জুড়িয়ে যায়। আহা, ক্ষমতার মসনদে আরোহণের জন্য কত্ত কত্ত সিঁড়ি। কত রকমের আদম। এই আদম সন্তানের প্রদত্ত ভোটেই তো তারা জাতীয় সংসদে ঢোকার যোগ্যতা অর্জন করেন। সুতরাং আদম তথা ভোটার বাড়লে পুলক মাথাচাড়া দেবেই।
পুলকবোধের কারণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেন না। যদিও স্বদেশে এবং বিদেশে দেখানোর জন্য কিছু কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি এক-আধটু স্লোগানও দেন_ দুটির অধিক সন্তান নয়, একটি হলেই ভালো হয়! আজতক কোনো রাজনীতিক কি বলেছেন_ দুটির অধিক ভোট নয়, একটি হলেই ভালো হয়! সুতরাং ভোটার বাড়ূক, পঙ্গপালের মতো। তারপর আদমরা নিজেদের মাথা নিজেরা ভাঙুক।
মানুষ নামের মানুষ আছে...
পুরনো দিনের একটা জনপ্রিয় গান_ এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই/মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই...। চারদিকেই মানুষ, যেদিকেই চোখ যায় শুধু মানুষ।
মানুষের এমনই বিরল বৈশিষ্ট্য, যদি কোনো মানুষকে প্রশ্ন করা হয়_ পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কী? আবার অপ্রিয় বস্তু কী? সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুটি প্রশ্নের একই উত্তর! চারদিকে এত্তো মানুষ, সত্যিকার অর্থে মানুষ ক'জন? দুই-পেয়ে জীবের সংখ্যাই বেশি, যাদের ভেতর-বাইরে ঘাপটি মেরে আছে চারপেয়ে ইতর প্রাণীর বৈশিষ্ট্যগুলো। এরা মানুষ পরিচয় নিয়ে থেকে মানুষেরই গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হায়, মানুষ চেনার কোনো যন্ত্র যদি থাকত! তাহলে বের করা যেত কে আসলে মানুষ আর কে মানুষ না। মানুষের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকে যে অমানুষটা, সেই অমানুষটার শক্তিই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু শুভ-অশুভ সত্তা চেনার কোনো পদ্ধতিই নেই।
'জন্মের উৎসব এখানে গম্ভীর...'
আজ ১১ জুলাই, বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। কতটি শিশু জন্মাল আজ_ এ শিশুর ভবিষ্যৎ কী? দিনকে দিন কঠিন হয়ে ওঠা জীবন কীভাবে পাড়ি দেবে সে? সমস্যাসংকুল পৃথিবীতে তার আগমন বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনের জন্য সাময়িক সুখের বার্তা বয়ে আনলেও অভিভাবকরা কি কখনও উপলব্ধি করেছেন কত বড় বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন আত্মজ/আত্মজাকে? এসব ক্ষেত্রে সপক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য আমরা দু-তিনটি মুখস্থ আপ্তবাক্য ঝাড়ি। শিক্ষিত-অশিক্ষিত উভয়েই। আপ্তবাক্য যদি আপাত-নির্ভরতা দিতে পারে, সেটাই বা কম কী!
ঘরহীন কত শিশু আজ ফুটপাতে, এখানে-ওখানে ঘুমাবে, ক্ষুধার্ত পেটে আগুন নিয়ে পাথর বাঁধবে বুকে! মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কবে বলে গেছেন 'জন্মের উৎসব এখানে গম্ভীর'; কিন্তু আমরা সেটা বুঝেও যেন বুঝতে চাই না! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।