আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারত ও চীন (জনসংখ্যা- ৮)

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভারত। দেশটির জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে, শিক্ষার হার কম, জনগণও দরিদ্র। তবে অর্থনৈতিক সংস্কার ও উন্নয়নের ফলে দেশটির দারিদ্র্যের হার দ্রুত কমছে। পৃথিবীর মোট ভূমির প্রায় ২.৪ শতাংশ ভারতের হলেও পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ এ দেশটি ধারণ করে। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতি ছয়জন মানুষের মধ্যে একজন ভারতে বাস করে।

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার এই দেশটি আগামী ৪০ বছরের মধ্যে চীনকে ছাড়িয়ে জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর প্রথম স্থানে যাবে। দ্রুত জনসংখ্যা বাড়ার কারণে ভারতের অধিকাংশ মানুষই তরুণ। প্রায় ৩২ শতাংশ ভারতীয় ১৫ বছরের চেয়ে কম বয়সি। প্রায় দুই হাজারেরও বেশি জাতিসত্ত্বা সমৃদ্ধ ভারতে রাষ্টীয়ভাবে স্বীকৃত ২৩টি ভাষা থাকলেও ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। ২০০৮ সালে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১১৫ কোটি ছিল এবং ২০৫০ সালে জনসংখ্যা হবে ১৮০ কোটিরও বেশি।

পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ভারত সর্বপ্রথম ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি শুরু করে। তবে এ কর্মসূচি দেশটির জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে ব্যর্থ হয়। ২০০০ সালে দেশটির জনসংখ্যা যখন এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করে সে বছরই ১৫ ফেব্রুয়ারি ভারত নতুন জনসংখ্যা নীতি ঘোষণা করে। এ নীতিতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। আর্থিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।

এছাড়াও দুইয়ের কম সন্তান আছে এমন দম্পতিদের পুরস্কার প্রদান, জন্ম নিবন্ধন, বিয়ে নিবন্ধন, ২১ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত সন্তান না নেয়া, গর্ভপাতের সুযোগ বৃদ্ধি, সঠিক বয়সে বিয়ে করা, দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর জন্ম বিরতিকরণ ব্যবস্থা নেয়া, শিশু মৃত্যুর হার কমানো, বাল্যবিয়ে বন্ধ করা ইত্যাদি ব্যবস্থা নেয়া হয়। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মি. এন টি শানমুগাম বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুবিধা বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পরিবার পরিকল্পনায় পুরুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পৌছানো হবে। এ জনসংখ্যা নীতির পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১০ সালে ভারত রিপ্লেসমেন্ট ফার্টিলিটিটে প্রবেশ করবে (প্রত্যেক দম্পতির দুই সন্তান)। এ নীতিতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকেও কাজে লাগানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ সব নীতি কতোখানি বাস্তবায়ন করতে পারে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির লাগাম কতোখানি টেনে ধরতে পারে, তার দিকেই এখন সবার দৃষ্টি।

চীন চীনে ১৯৭৮-এর আগে বিশেষ করে মাও সেতুংয়ের শাসনামলে বেশি সন্তান নেয়াকে উৎসাহিত করা হতো। ফলে পরবর্তীকালে দেশটিতে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এর পর ডেং জিয়াওপিং চীনের ক্ষমতা নেন। তিনি অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে উন্নয়নের বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং ১৯৭৯-এর পর তিনি প্রত্যেক পরিবারকে একটি করে সন্তান নিতে উৎসাহিত করেন। ফলে জন্ম নেয় পৃথিবী বিখ্যাত "এক সন্তান নীতি"।

চীন সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে এক সন্তান নীতিকে বাধ্যতামূলক করেনি। এক সন্তান নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রতিটি এলাকার জন্ম পরিকল্পনা কমিশন-এর। তারাই জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর অধিকাংশই বিনামূল্যে দেয়া হয়। চীনের এক সন্তান নীতির পোস্টার ১৯৭৫ সালে চীনে পরিবারপ্রতি গড়ে তিনটি করে সন্তান ছিল।

এই পরিস্থিতি যদি চলতেই থাকতো তাহলে ২০৭৫ সালে চীনের জনসংখ্যা হতো ১৯৮০ সালের পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার সমান। তবে চীনের সরকার কঠোর নীতির মাধ্যমে বর্তমানে জনসংখ্যার এই বৃদ্ধিকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে চীনের মোট জনসংখ্যা ১.৩ বিলিয়ন, জন্মহার ১.৭ এবং বৃদ্ধির হার ০.৬ শতাংশ যা এশিয়ার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। (চলবে)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.