হরতাল আহবানকারীদের জালিম আখ্যা দিয়ে আসা ক’টি ইসলামী দল সুর পাল্টে এখন হরতালের পক্ষে সাফাই গাইছে। এসব দলের নেতারা সপ্তাহ দুয়েক আগেও হরতালের বিপক্ষে সোচ্চার থাকাটা ঈমানি দায়িত্ব বলে মনে করছিলেন। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে সরে এসে এখন তারা রীতিমতো হরতাল করতে নেমে পড়েছেন। রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া হরতালে তারাও আছেন মাঠে।
যার যার পক্ষে সাফাই গেয়ে তারা বলছেন, ‘আমরা হরতালের মতো জুলুমের বিপক্ষে।
কিন্তু জীবনের চেয়ে ঈমান বড়। ঈমান রক্ষার জন্য হরতাল ডেকেছি। ’
এসব দলের মধ্যে চরমোনাই পীরের দল ‘বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন’ ও হাফেজ্জী হুজুরের দল ‘বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন’ অন্যতম।
মাত্র মাস পাঁচেকের ব্যবধানে পর পর দু’দফা অন্য ইসলামী দলের ডাকা হরতাল নাকোচ করে দিয়েছিলো তারা।
প্রথম দফায় তারা হরতাল নাকোচ করে গত বছর শেষ দিকে।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ পাস হওয়ার পর গজিয়ে ওঠা সংগঠন সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ ২৬ ডিসেম্বর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকলে তারা সমালোচনা করেন।
দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের প্রথম দিকে তারা বাতিল করেন মুফতি ফজলুল হক আমিনীর হরতাল। বিএনপি-জামায়াত জোটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের আমীর আমিনী নারীনীতি ২০১১ প্রণয়নের প্রতিবাদে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে ৪ এপ্রিল হরতাল ডাকেন।
ওই দুই হরতাল সম্পর্কে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অবস্থান জানতে চাইলে চরমোনাই পীরের দল ‘বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন’ ও হাফেজ্জি হুজুরের দল ‘বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন’-এর শীর্ষ নেতারা হরতালের বিরুদ্ধে তাদের পরিষ্কার অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন।
ওই সময় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর শাহ্ আহমাদুল্লাহ আশরাফ, মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান ও ঢাকা মহানগর আমীর মুজিবুর রহমান হামিদী বাংলানিউজকে দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন, ‘হরতাল ডেকে যারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে, জান-মালের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত হয়, খেটে খাওয়া মানুষের রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করে তারা জালিম।
আর যাদের কারণে এই হরতাল ডাকা হয় বা যারা হরতাল ডাকতে বাধ্য করে তারাও জালিম। আমরা জালিম ও জুলুমের বিরুদ্ধে। ’
ওই সময় তারা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মানুষের কল্যাণে কাজ করে। হরতাল ডেকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও সমর্থন করে না।
এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ্জি হুজুরও কখনো হরতাল সমর্থন করতেন না। ’
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতাদের মতো হরতাল প্রসঙ্গে প্রায় একই কথা বলেছিলেন চরমোনাই পীরের দল ‘বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন’-এর একাধিক শীর্ষ নেতা।
কিন্ত গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর সম্পূর্ণ ইউ টার্ন নেয় ‘বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন’ ও ‘বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন’।
পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ১০ ও ১১ জুলাই টানা ৩০ ঘণ্টা হরতাল আহ্বান করে তারা। তাৎক্ষণিকভাবে গঠন করে ১২ দলের একটি ইসলামিক রাজনৈতিক মোর্চা।
পরে অবশ্য ১২ দল থেকে বাংলদেশ ইসলামী আন্দোলন আলাদা হয়ে যায়।
তাদের এই স্ববিরোধী অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগরের আমীর এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘জুলুম বলেন আর নির্যাতন বলেন- এগুলো জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জীবনের চেয়ে ঈমানের মূল্য অনেক বেশি। সেই ঈমান রক্ষার জন্যই আমরা হরতাল ডাকতে বাধ্য হয়েছি। ’
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুনিয়ার লাভ লোকসানের জন্য যারা হরতাল ডেকে জ্বালাও পোড়াও করে ও যারা করতে বাধ্য করে তারা জালিম।
আমরা হরতাল ডেকে জ্বালাও পোড়াও করছি না। ইসলাম ও ঈমান রক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করছি। ’
প্রসঙ্গত, চলমান হরতালে আমিনীর অংশগ্রহণ না থাকলেও ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ অংশ নিচ্ছে।
বাংলানিউজ
আমার ব্যাক্তিগত মাতামত:
হরতাল দিলে আমি খুশি। বৃষ্টির মৌসুম চলতেছে।
ভার্সিটি বন্ধ, সাথে ঝুমসে বৃষ্টি। আর ঘুম আর ঘুম। এই বৃষ্টির মৌসুমী আমি আরো অন্তত ডজনখানেক হরতাল চাই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।