দূর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশিথে যাত্রিরা হুশিয়ার।
নারায়ণগঞ্জ: ‘আমাদের কয়েকজনকে ধাওয়া দিয়ে রাস্তার পাশের কাদায় ফেলে কুকুরের মত পেটাতে লাগলো পিকেটাররা। মোটা লাঠির একেকটি আঘাত আমার শরীরকে ব্যাথায় কাঁপিয়ে দিতে থাকে। ’
এমনভাবে পেটাতে লাগলো মনে হচ্ছিল আর বুঝি বাঁচবো না, মরে যাবো। বারবার আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম।
ওদের (পিকেটারদের) পায়ে ধরে মাপ চাইলাম- তবুও তাদের মন গললো না। এভাবেই একসময় মৃত্যুর দুয়ার থেকে কোনোমতে বেঁচে আসলাম। ভাইরে, জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। ’
রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একটি শয্যায় শুয়ে তার ওপর চলা বর্বরোচিত হামলার বিবরণ দেন পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ার হোসেন।
তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন তার সারা শরীর ছিল রক্তে মাখা।
পুলিশের পোশাকটিও চেনা যাচ্ছিল না রক্তের কারণে। শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে ঝরছিল রক্ত। কথা বলতে পারছিলেন না ঠিকমত। কথা বলার সময়ে বারবার তার কথা আটকে যাচ্ছিল।
‘আল্লাহ আমাকে হাতে ধরে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
যে অবস্থা ছিল, তাতে আমার বেঁচে থাকার কথা না। ’ ডাক্তাররা তার চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে চলছিল কথোপকথন। একসময়ে চোখের কোণ বেয়ে চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। গুরুতর আহত এ পুলিশ সদস্যকে পরে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-পাগলা সড়কের ফতুল্লায় পিকেটারদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন আনোয়ার হোসেনসহ পুলিশের ১৩ জন।
তারা হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজান ও মনির হোসেন, সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ার হোসেন, হাবিলদার শফিকুর রহমান, কনস্টেবল তরিকুল, ডালিম, রাজিব, কবির হোসেন, ওয়াজেদ, শামীমুল হক, সেলিম ও আজম।
অপরদিকে আহত পিকেটারদের মধ্যে সাইদুর রহমান, কবির হোসেন ও আনোয়ারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়।
খানপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কথা হয় হামলায় গুরুতর আহত পুলিশের জেলা পুলিশ সুপার সাইদুর রহমানের সঙ্গে। হামলায় তার মাথা ও বাম হাতে মারাত্মক জখম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমিসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পঞ্চবটি মোড়ে রাস্তা অবরোধকারীদের শান্তভাবে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করি।
কিন্তু কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাঠিসোটা দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমি হামলাকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু এতে হামলাকারীরা আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং আমাকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটাতে থাকে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পঞ্চবটি এলাকার দোকানদার আলী হোসেন বাংলানিউজকে জানান, রোববার ভোর থেকেই অন্তত ২ হাজারের মত পিকেটার পঞ্চবটি মোড়ে অবস্থান নেয়। তাদের বেশীরভাগের হাতে ছিল মোটা মোটা লাঠি এবং সবার পরনে ছিল পাঞ্জাবি-পায়জামা ও টুপি।
পিকেটাররা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-পাগলা সড়ক ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কের কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে।
আলী হোসেন জানান, পিকেটাররা সংখ্যায় ২ হাজারের মত হলেও তখন সেখানে পুলিশ ছিল মাত্র ২৫ থেকে ৩০ জন। তবে ফতল্লা মডেল থানার ওসি আইনুল হক জানান, প্রথমাবস্থায় ৩৫-৪০ জন পুলিশ ছিল।
আলী হোসেন আরও জানান, সকাল সাড়ে ৬টায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার-সাইদুর রহমান রাস্তা অবরোধকারী পিকেটারদের কয়েকজনকে ডেকে শান্তভাবে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
কিন্তু হঠাৎ করেই পিকেটারদের মধ্য থেকে ৪০-৫০ জন একজোট হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পিকেটাররা পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দিয়ে রাস্তায় ফেলে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা পঞ্চবটি মোড়ের মোজাফফর ফিলিং স্টেশনে গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চালানো হয়। পুলিশের এএসআই আনোয়ার হোসেনকে রাস্তার পাশে একটি কর্দমাক্ত স্থানে ফেলে বেধড়ক লাঠিপেটা করে পিকেটাররা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একদিকে পুলিশ সদস্যরা যখন বেধড়ক মারধরের শিকার হচ্ছিল তখনো অন্য পুলিশ সদস্যরা গুলি করেনি কিংবা এগিয়ে আসেনি। তখন মারধরের শিকার পুলিশ সদস্যরা ‘বাচাঁও বাচাঁও’ বলে চিৎকার করছিল।
তবে মারধরের পর পিকেটারদের কবল থেকে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে তৎপর হয় অন্য পুলিশ সদস্যরা। তখন ফতল্লা মডেল থানার ওসি আইনুল হক গুলি বর্ষণ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের নির্দেশ দিলে পুলিশ অন্তত শতাধিকর রাউন্ড টিার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। পিকেটাররা পিছু হটার পর গুরতর আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
পুলিশ সদস্যদের হামলার খবরে খানপুর হাসপাতালে ছুটে যান জেলা পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম, জেলা প্রশাসক সামছুর রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘রোববার সকালে পুলিশ কোনও ধরনের অ্যাকশনে যায়নি কিংবা পিকেটারদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান তার স্বভাবসুলভ ভদ্র ও শান্তভাবে পিকেটারদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করামাত্র পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। ’ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।