আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতালের সহিংসতার আগুন নিভিয়ে দিল মোশাররফের জীবন প্রদীপ

শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না হতভাগ্য ফলব্যবসায়ী মোশাররফকে। হরতালের সহিংসতার আগুন নিভিয়ে দিল তার জীবন প্রদীপ। চিকিৎসকের চেষ্টা, মা-বাবাসহ সবার দোয়ায় জীবন ফিরে পায়নি হাজারীবাগের ফলব্যবসায়ী মোশাররফ (২৩) ৯০ ভাগ পুড়ে যাওয়া শরীরের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে গত শনিবার রাত দেড়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবার চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে চিরতরে সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় মোশাররফ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এভাবে চলে যাওয়ায় হতবাক পুরো পরিবার। নির্বাক বাবা আইয়ুব আলী মাতবর।

ছেলের শোকে পাগলের মতো বিলাপ করছেন মা মেহেরজান। 'আমার পোলারে আইনা দাও। আমি আমার পোলারে ফেরত চাই। ও আল্লা তুমি এইডা কি করলা?' বলে উচ্চস্বরে চিৎকার করেন মেহেরজান। 'আমার পোলা কোন রাজনীতি করে না।

তাইলে কেন আমার পোলারে হেরা জানে মারল। আমার পোলার কী অপরাধ?' বলতে বলতে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। বড় বোন নূরতাজ কোলে কন্যা সন্তানকে নিয়ে ভাইয়ের জন্য কেঁদে যাচ্ছেন অবিরাম। বললেন, ভাই কখনো নিজের কথা ভাবে নাই। ১১-১২ বছর বয়সেই সংসারের হাল ধরছে।

অভাবের সংসারে নিজের লেখাপড়াটাও করতে পারে নাই। অথচ ছোট ভাই-বোনগুলারে ঠিকই পড়াশুনা করাইছে। বুড়া বাবা-মাসহ পুরা সংসারের হাল ধরছিল যে মানুষটা সেই মানুষটা এমনে চইলা যাইব আমরাতো স্বপ্নেও ভাবি নাই। ভাবছিলাম ভাইরে বিয়া দিমু। ভাইয়ের সংসার হইব।

বাচ্চা-কাচ্চা হইব। ভাইরে নিয়া কত স্বপ্ন দেখছিলাম। সবইতো মিথ্যা হইল। মেহেরজান জানান, ছেলের সঙ্গে তার কথা হয়েছে গত মঙ্গলবার সকালে। ছেলে তাকে বলেছে তার যন্ত্রণার কথা।

বলেছে কিভাবে ঘটনা ঘটল। পানি এবং বাঁচার জন্য চিৎকার করলেও প্রথমে এগিয়ে আসেনি কেউই। শরীয়তপুরে গ্রামের বাড়ি হলেও ঢাকার হাজারীবাগে মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে থাকত মোশাররফ। পাইকারি বাজারে আম বিক্রির পাশাপাশি হাজারীবাগের ঢালে নিজেও আম বিক্রি করত মোশাররফ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোশাররফের পরিবার জানায়, তার লাশ এখনো মর্গে রাখা হয়েছে।

ময়নাতদন্তের পর তার লাশ নিয়ে যাওয়া হবে। প্রসঙ্গত, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের ডাকা দু'দিনের হরতালের প্রথম দিন বুধবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম কিনে তা ট্রাকে তুলে সন্ধ্যায় ঢাকায় উদ্দেশে রওনা দেয় মোশাররফ। রাত ১১টায় নাটোর শহরের বাইপাস সড়কের তেবাড়িয়া এলাকায় পিকেটাররা গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আমবোঝাই ট্রাকে (ঢাকা-মেট্রো-ট-১১-৪৪৮১) পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পরে একটা বোমা মারে। এ সময় ট্রাকের চালক ও হেলপার গাড়ি থেকে নামতে পারলেও ট্রাকের কেবিনে থাকা মোশাররফ আগুনে ঝলসে যায়।

মঙ্গলবার সকালে তাকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.