পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের প্রতি দায়িত্বশীল হোন
অতীত ছাড়া বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কল্পনা করা যায় না। সুখকর বর্তমান রচনায় যারা তাদের সোনালি যৌবনকে বিসর্জন দিয়েছেন তারাই হচ্ছেন আমাদের সমাজের প্রবীণ সদস্য। বাবা-মায়ের অস্তিত্ব ছাড়া ছেলের উপস্থিতি আশা করা যায় না। তাই প্রবীণ সদস্যের প্রতি আমাদের বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু আমরা ক’জন পরিবারের প্রবীণ সদস্যের প্রতি আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছি বা করছি? পবিত্র ইসলাম ধর্মে বাবা-মায়ের প্রতি বেশকিছু দায়িত্ব পালনের জন্য সন্তানের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইহকালীন এবং পারলৌকিক মঙ্গল অর্জনের জন্য এই দায়িত্ব পালন খুবই জরুরি। কোনো সন্তান যে যত পরহেজগারই হোক না কেন বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খেদমত না করলে তার পক্ষে বেহেস্তে গমন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, একবার নবী করিম (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র রমজান মাস পেল অথচ জান্নাত কামাই করে নিতে পারলো না তার জন্য আল্লাহর অভিসম্পাত। যে ব্যক্তি তার বাবা-মাকে পেল অথবা তাদের দু’জনের একজনকে পেল কিন্তু জান্নাত কামাই করতে পারলো না তার জন্যও অভিসম্পাত। যে ব্যক্তি আমার নাম উচ্চারিত হবার পর দরুদ পাঠ করলো না তার জন্য অভিসম্পাত।
’ এই হাদিস থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় ইসলামে বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনের ওপর কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অন্যত্র বলা হয়েছে, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি এমন আচরণ করা যাবে না যাতে তারা সামান্যতম কষ্ট অনুভব করতে পারেন। কিন্তু আমরা ক’জন বাবা-মায়ের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করছি? কোনো কোনো সন্তান আছেন যারা মা-বাবার প্রতি নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করে থাকে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ওল্ড হোম কালচার অনেক দিন ধরেই চালু আছে। এক সময় তারা বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধ নিবাসে পাঠিয়ে দেয়।
মাঝে মাঝে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে আসে। এতেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।
এক সময় আমাদের দেশের পারিবারিক বন্ধন উন্নত দেশগুলোর জন্য ঈর্ষণীয় ছিল। কিন্তু এখন এই পারিবারিক বন্ধন অনেকটাই শিথিল হয়ে গেছে। আমাদের দেশেও এখন ‘ওল্ড হোম’ কালচার ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করছে।
আমরা যারা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি যত্নবান নই তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, একবার ভাবুন তো ছোট বেলায় যখন আপনি হাঁটাচলা এমন কি নিজের হাতে খেতে পারতেন না তখন কে আপনার দেখাশোনা করতো? কে রাতে না ঘুমিয়ে আপনার দেখাশোনা করতো? কে আপনার আহার-পোশাক-পরিচ্ছদ যোগাতো? আপনি যখন শিশু ছিলেন তখন আপনার বাবা-মা যদি আপনার প্রতি দায়িত্ব পালনে সামান্যতম গাফিলতি করতেন তাহলে কি আপনি বেঁচে থাকতে পারতেন? আপনি যখন বৃদ্ধ হবেন, রোজগারের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না তখন যদি আপনার আদরের সন্তান আপনার প্রতি একই আচরণ করে তাহলে কেমন লাগবে? এটা কোনো ভাবাবেগ নয় বাস্তব সত্যি। আপনি আজ বাবা-মায়ের প্রতি যে ধরনের ব্যবহার করছেন ভবিষ্যতে আপনার সন্তানও আপনার প্রতি একই রকম আচরণ করবে না তার নিশ্চয়তা কী? আমাদের দেশে সাধারণত একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় আর তা হলো, একটি ছেলে বিয়ে করার পর সম্পূর্ণ বদলে যায়। তারা বাবা-মায়ের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে। এজন্য ছেলের বউকে এককভাবে দায়ী করা ঠিক হবে না। ছেলের বউ শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে এক সংসারে থাকতে না চাইলেই ছেলে কেন তা মেনে নেবে? ছেলের উচিত তার বউকে বোঝানো যে বাবা-মায়ের প্রতি তার দায়িত্ব রয়েছে।
অনেক বউকে দেখা যায়, তার বাসায় অবস্থানকারী শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি অত্যন্ত বাজে আচরণ করে। এটা মোটেও ঠিক নয়। কারো বৃদ্ধ বাবা-মা জীবিত থাকলে তাদের প্রতি যত্নবান হওয়া একান্ত আবশ্যক। ভারতে সম্প্রতি প্রণীত একটি আইনে বলা হয়েছে, কোনো সন্তান যদি তার বাবা-মায়ের প্রতি খারাপ অচরণ করে কিংবা তাদের ভরণ-পোষণে কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন করে তাহলে তাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। আমাদের দেশেও এ ধরনের একটি আইন প্রণয়ন করা একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
অন্যথায় ওল্ড হোম কালচার আমাদের দেশেও বিস্তার লাভ করবে। এ ছাড়া সামাজিক সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে ভাবতে হবে। আমাদের একটি গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে- কোনোক্রমেই তা বিঘ্নিত হতে দেয়া যায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।