আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিচ্ছিন্নতার দ্বিপ্রহর

কী আর কমু, হেহ্...!! বিচ্ছিন্নতার দ্বিপ্রহর সোমবারের থার্ড পিরিয়ড ক্লাস। বণ্যা মিস ক্লাসে ঢুকলেন । আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছিল আমার। এই পিরিয়ডে প্রসুন স্যারের ক্লাস হওয়ার কথা। একটা উপপাদ্য ছিল হোমওয়ার্ক ।

আজ হোমওয়ার্ক করতে পারনি । পাটীগণিত বীজগণিতে কোন সমস্যা ছিল না, জ্যামিতির এই উপপাদ্যগুলো আমি একেবারেই বুঝি না। হোম টিউটর থাকলে অবশ্য বুঝে নিতে পারতাম কারন অন্যরা তাই ই করে। অনেকদিন পর ক্লাস শেষে স্কুলের কেন্টিনে ঢুকলাম। আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে খুব।

একটা আইসক্রিম দেন তো। কত টাকা দাম এটার? বিশ টাকা? দেখলাম সাত টাকার নিচে কোন আইসক্রিম নাই। আম্মু তো মাত্র পাঁচ টাকা দিল। আমি একটা আচার নিয়ে ব্যাগে রাখলাম, বাসায় গিয়ে খাব। কেন্টিন থেকে বের হয়ে বন্ধুদের গার্ডিয়ানদের ভীড় ঠেলে রাস্তায় পা রাখলাম।

বাইরে কড়া রোদ। রাস্তা ধরে হাঁটছি বাসার দিকে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে একাই স্কুলে আসি। আম্মু লিয়াকে নিয়ে ওর স্কুলে যায়। লিয়া নার্সারীতে পড়ে আর আমি ষষ্ট শ্রেনীতে বিদ্যাময়ী গার্লস স্কুলে।

বাবা যে কলেজে পড়াত আম্মু ওখানে একটা চাকরী নিয়েছে। দুমাস আগে আমরা নতুন বাসায় আসলাম। বাসায় এসইে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। ছোট টিনশেড বিল্ডিং। শেওলা পরা দেয়াল।

এক পাশে কতগুলো ঘর বস্তির মত। পাশের বাসার ছেলেমেয়েগুলো নোংরা ভাষায় কথা বলে। এই তো সেদিন সাকীর আম্মুর সাথে একটা মহিলা ঝগড়া বাঁধিয়ে দিল। আর সে কী অসভ্য গালিগালাজ! আমার গা শিরশির করে। তবে ভাল লাগার মত একটা ব্যাপার আছে, সেটা হচ্ছে নাভিদ ভাইয়ার্ কর্মকান্ড।

ও ক্লাস সেভেনে পড়ে মুকুল নিকেতনে। ফর্সা রং, খাড়া চুল, লম্বা ছেলে। পড়াশোনা বাদে বাকী সময় খেলাধূলা, দাপাদাপি, এলাকা মাতিয়ে বেড়ানো এগুলোই কাজ। স্কুলে যায় সাইকেলে চড়ে। নাভিদ ভাইয়া মাঝে মাঝে বাবার কম্পিউটারে গেমসে খেলতে আসে ।

আমার আবার এগুলো খেলতে ভাল লাগেনা। তবে দেখতে খুব মজা লাগে। ও যখন খেলে আমি পাশে দাড়িয়ে দেখি। সেদিন কী একটা নতুন গেমস নিয়ে এল গেমসটা ইনস্টল হচ্ছিল না। ভাইয়ার সাথে সাথে কেন জানি আমারও মনটা খারাপ হয়ে গল।

তিন চার দিন আগে লিয়া, নাভিদ ভাইয়া আর আমি আমার পছন্দের Bee Movie দেখছিলাম, এমন সময় আম্মু এসে কানে টান দিয়ে ধমকে বলল ”যাও উঠে পড়তে বস”! অথচ এই সময়টাতে অন্যদিন পড়তে বসতে হয়না। একই রকম হল গতকালও। আমি ওখান থেকে চলে আসি। লিয়ার হোম টিউটর আসলে সে পড়তে যায়। আমার হোম টিউটর বাদ দেওয়া হয়ছে।

আম্মু মনে হয় পে’মেন্ট দিতে পারছে না। আমি যে বৃত্তির টাকাটা প্রতিমাসে পাই সেটাই লিয়ার টিচারকে দেওয়া হচ্ছে। আমি ভাবি, লিয়াকে তো আম্মুই পড়াতে পারে। আর পারবেই বা কী করে । সারাদিন অফিস করে রান্নাবান্না করে সময় কই? আজকাল ক্লাসেও বকাঝকা খাই, হোমওয়ার্ক ঠিকমত না করায় টিচাররা পানিশমেন্ট দেয়।

ক্লাসে টিচাররা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয় না। কারন প্রায় সবাই বাসায় প্রাইভেট পড়ায়। কত দিন ধরে বাইরে কোথাও যাই না । না ঘুরতে না বেড়াতে । বাসায় কেউ বেড়াতেও আসে না।

ইমা, এষা, মুন এদের কেউ ই এ বাসায় আসে না। ওরা আগের বাসায় প্রায়ই আসত। এষার কত ফুটফুটে একটা বিড়াল ছিল। আমাদের বাসায় আসলেই সাথে করে নিয়ে আসত। আমাদের পোষা জার্মান শেফার্ড পাপিটার সাথে যা শুরু করত ! বাসা বদলানোর সময় পাপিটা আসতে চায়নি পরে ওকে সামিরা কিনে রেখে দিল।

এখন বিনোদন বলতে ঘরে বসে টিভি দেখা। এদিকে টিভির সামনে বসলে রিমোট থাকে আম্মু অথবা লিয়ার কাছে। আম্মু দেখবে সিরিয়াল, লিয়া দেখবে CBeebies। ওরাই পাল্টাপাল্টি করে টিভি দখল করে থাকে। আমি ইচ্ছেমত কিছু দেখতে পারি না।

বাবা, যখন ছিল, দেখত বাংলা নাটক আর খবর। দুটোই আমার ভাল লাগত। হাটতে হাটতে বাবার কথা মনে পড়ে। ফুঁপিয়ে উঠি। চোখে পানি আসে।

রাস্তাটা অস্পষ্ট হয়ে উঠে। আমি হাতের তালুতে চোখ মুছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।