আমি বাংলার...।
ইউকেবিডি ডেস্ক:: ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে শনিবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুখ খুলেছে। ওই মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন- মনমোহন সিং যা বলেছেন তা তার বাংলাদেশ সম্পর্কে বদ্ধমূল ধারণা নয়।
ওদিকে প্রবল সমালোচনার মুখে ভারতীয় মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সম্পর্কে যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন তা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি ওয়েবসাইট থেকে শেষ পর্যন্ত বাদ দেয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটে আগের ভাষ্যকে সরিয়ে নতুন করে সংশোধিত ভাষ্য হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে সম্পাদকদের সঙ্গে মতামত বিনিময়ের বিষয়টি।
সেখানে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোন মন্তব্যকে রাখা হয়নি। প্রতিবেশীদের সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শুধু বলেছেন, হ্যাঁ, প্রতিবেশীরা আমাকে খুব উদ্বেগে রেখেছে। এর পরই শুধুমাত্র শ্রীলঙ্কার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বেলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মিডিয়া উপদেষ্টা হরিশ খারে স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য ছিল ‘অফ দ্য রেকর্ড’।
ভুল করে তা আমরা প্রকাশ করে দিয়েছিলাম। এখন তা সংশোধন করা হয়েছে। অথচ মাত্র দু’দিন আগেও প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দীর্ঘ মন্তব্য রাখা হয়েছিল। সেখানে তার বক্তব্য হিসেবে বলা হয়েছিল, মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ মানুষই জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক, যারা খুবই ভারতবিদ্বেষী। জামায়াতে ইসলামী অনেক সময় আইএসআই-এর ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছে।
সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেছিলেন, আইএসআই নানা রকম চক্রান্তের জাল ছড়িয়ে রখেছে বাংলাদেশে। তাই যে কোন সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে। আর সেজন্যই বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ককে স্থায়ী রূপ দিতে ভারত প্রয়াসী হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে ভারতে ও বাংলাদেশে প্রবল বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত ভারতের সাবেক কূটনীতিকদের অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রবল সমালোচনা করেছেন।
ভারতের কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের একটা প্রভাব পড়বে মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে। এমনকি সফরের সময় বাংলাদেশী মিডিয়ার কঠিন প্রশ্নের মুখেও তাকে পড়তে হবে। আবার একাংশ মনে করেন, আগামী সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণ ঢাকা সফরে এলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তার মতামত জানতে চাওয়া হতে পারে। ভারতের সাবেক কূটনীতিক দেব মুখার্জি বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বাস্তবের ওপর ভিত্তি করে মন্তব্য করেননি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
দেব মুখার্জির মতোই বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি-ও বলেছেন, এইভাবে অন্য দেশের মানুষ সম্পর্কে মন্তব্য করা সঠিক নয়। বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ জামায়াতের সমর্থক প্রসঙ্গে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জামায়াতের সমর্থক সম্পর্কে সংখ্যাটা কোথা থেকে পেয়েছেন? বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেন, আর এক-তৃতীয়াংশ ভোট দেন আওয়ামী লীগকে। বাকি এক-তৃতীয়াংশ ভাসমান ভোটার, তারা ভোট দেন স্বাধীনভাবে বিচার করে। তাই কোনভাবেই বলা যায় না, বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ মানুষই ভারতবিদ্বেষী। তবে বীণা সিক্রি বলেছেন, বিএনপি মনে করে ভারত কখনওই বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা করে না।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চান। কেননা, তিনি মনে করেন বাংলাদেশের স্বার্থেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি। দিল্লির ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস-এর গবেষক রাধা দত্ত বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে ভারত যেখানে প্রয়াস নিয়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের মন্তব্য বাস্তবতা বর্জিত ও অপ্রয়োজনীয়। ওদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ওই বক্তব্যের পর শুক্রবার রাত অবধি ঢাকা কোন সরকারি পর্যায় থেকে প্রতিবাদ জানায়নি। সূত্রগুলো বলছে, এর ফলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পড়েছে বেকায়দায়।
ফলে দীর্ঘদিন যারা বাংলাদেশে পিছনে পড়ে ছিল এটি তাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় এক অস্ত্র হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শতকরা ২৫ ভাগ জনসংখ্যা সম্পর্কে পুরো বিকৃত একটি তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি সূত্রের। প্রায় আড়াই বছর আগে বাংলাদেশে যে সংসদ নির্বাচন হয় তাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পেয়েছিল শতকরা মাত্র ৪ ভাগ ভোট। গত ২০ বছরের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী সর্বোচ্চ যে ভোট পেয়েছে তার পরিমাণ শতকরা ৬ ভাগ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণ ৬ থেকে ৮ই জুলাই ঢাকা সফরে আসছেন।
এ সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর ওইসব বক্তব্য ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
মনমোহনের মন্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের মন্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না বলে দাবি করেছে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন। কমিশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়। সেখানে বলা হয়, নয়াদিল্লিতে সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকের সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর যে মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তা তার বদ্ধমূল ধারণা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সে দেশের সরকার ও জনগণের বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর মমত্ববোধ রয়েছে এবং এ সম্পর্কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়।
গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত যে কোন সরকারের স্থায়িত্বকে ভারত স্বীকৃতি দেয়। কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর নীতি রয়েছে ভারতের। তাছাড়া, সামপ্রতিককালে ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যতিক্রমে উন্নীত হয়েছে। ফলে ব্যাপক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চলছে। উন্নত সহযোগিতা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে একত্রে কাজ করছে দু’দেশ।
এ সহযোগিতা জোরদার করতেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক সফরে ঢাকা আসছেন। ঢাকার সঙ্গে দিল্লির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রক্ষায় গভীরভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ বলেও জানানো হয় ভারতীয় হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।