আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লেড দিয়ে পেট কেটে সিজারিয়ান অপারেশন’র পর নবজাতক ও প্রসূতি দুজনেরই মর্মান্তিক মৃত্যু

সময়ের সমুদ্রের পার--- কালকের ভোর আর আজকের এই অন্ধকার সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, মা ও শিশু চিকিৎসায় বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতা তথা সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশে উন্নত প্রযুক্তির অবাধ ছড়াছড়ির যুগে নরসিংদীতে গর্ভবতী মায়ের অপারেশনে এক মধ্যযুগীয় বর্বর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তুহিন সরকার নামে এক ভুয়া ডাক্তার বিনা এ্যানেস্থেসিয়ায় ব্লেড দিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে নবজাতক সন্তানসহ ফাহিমা রনি (২০) নামে এক প্রসূতির জীবন খেলা সাঙ্গ করে দিয়েছে। ধ্বংস করে দিয়েছে একটি সাজানো সংসার। আর এ ঘটনার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে হতভাগী ফাহিমা রনি’র ছোট ভাই ফখরুল ইসলাম ও তার আত্মীয়-স্বজনরা। গত ১২ জুলাই নরসিংদী সদর উপজেলার ভাটপাড়ায় স্থাপিত ওয়েলকাম প্রাইভেট হাসপাতাল নামে একটি সনদবিহীন প্রাইভেট ক্লিনিকে এই বর্বরোচিত কা-টি সংঘটিত হয়েছে।

পুলিশ ভুয়া ডাক্তার তুহিনকে গ্রেফতার করছে না, নরসিংদীর স্বাস্থ্য বিভাগ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপও গ্রহণ করছে না। গতকাল সোমবার ফাহিমা রনি’র আত্মীয়-স্বজন নরসিংদী প্রেসক্লাবে গিয়ে এই হৃদয় বিদারক কাহিনী বর্ণনা করেছে। তারা সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছে, গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বরাইদ গ্রামের কামরুল হায়দারের কন্যা ফাহিমা রনি’র সাথে লক্ষ্মীপুর জেলার উত্তর জয়পুর গ্রামের আবুল কাসেমের পুত্র আবু সাইদ খোকনের ২ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। ফাহিমা রনি পার্ল ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কসমেটিক উৎপাদক কোম্পানী’র এরিয়া ম্যানেজার (মার্কেটিং) পদে কাজ করতো বিধায় সে স্বামীর সাথে ঢাকায় বসবাস করতো। তাদের ২ বছরের দাম্পত্য জীবনে ফাহিমা রনি গর্ভধারণ করার পর ডেলিভারির জন্য তাকে কালিগঞ্জে তার পিত্রালয়ে নিয়ে আসা হয়।

পিত্রালয়ে থাকাবস্থায় গত ১২ জুলাই ফাহিমা রনি’র প্রসব ব্যথা দেখা দিলে তাকে নরসিংদীর ভাটপাড়া ওয়েলকাম প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হাসপাতালের মালিক তুহিন সরকার নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তাকে হাসপাতালের ভিতর নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে ভুয়া ডাক্তার তুহিন সরকার জানায় ফাহিমা রনির অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে জরুরি ভিত্তিতে সিজারিয়ান অপারেশন করতে হবে। হাসপাতালে ভালো ডাক্তার আছে তাদেরকে দিয়ে অপারেশন করা হবে।

এ কথা বলে ফাহিমা রনিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তুহিন সরকার নিজেই কয়েকজন ভুয়া নার্স’র সহযোগিতায় কোন প্রকার অজ্ঞান না করেই ব্লেড দিয়ে ফাহিমার পেট কেটে বাচ্চা বের করে আনে। এরপর ফাহিমার পেট সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। অপারেশনের সাথে সাথেই প্রসূতি ফাহিমা রনি অজ্ঞান হয়ে যায়। অপারেশনের ৪০ মিনিট পর নবজাতক শিশুটির শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। কিন্তু হাসপাতালে কোন অক্সিজেন না থাকায় তুহিন সরকার তাকে জরুরি ভিত্তিতে একটি সিএনজিতে উঠিয়ে নরসিংদীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

সেখান থেকে নবজাতক শিশুটিকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানকার ডাক্তার জানায় অক্সিজেনের অভাবে বাচ্চাটি রাস্তায়ই মারা গিয়েছে। এদিকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রসূতি ফাহিমা রনি’র জ্ঞান ফিরে না আসায় তার আত্মীয়রা তুহিন সরকারকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে। পরদিন সকাল ১১টা পর্যন্ত ফাহিমা রনির জ্ঞান ফিরে না আসায় তুহিন সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করলে সে জানায় সন্ধ্যার মধ্যে জ্ঞান ফিরবে। এরপর রাত ৯টার সময়ও ফাহিমার জ্ঞান ফিরে না আসায় তুহিন সরকার তার আত্মীয়-স্বজনকে জানায় যে তার দ্বারা ফাহিমার জ্ঞান ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় পাঠাতে হবে।

এ অবস্থায় ফাহিমার আত্মীয়-স্বজনরা ফাহিমাকে একটি গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। গাড়িতে উঠানোর সময় অক্সিজেন লাগানোর কথা বলা হলে তুহিন সরকার জানায় অক্সিজেন লাগবে না আমি সাথে আছি। এ অবস্থায় ফাহিমা রনিকে বহনকারী গাড়ীটি নারায়গঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় পৌঁছলে রাত অনুমান ১০ টায় ফাহিমার শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় তাকে জরুরি ভিত্তিতে পাশ্ববর্তী একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানকার ডাক্তার জানায় যে ফাহিমা মারা গেছে। এ অবস্থায় তারা ফাহিমার লাশ নিয়ে ওয়েলকাম হাসপাতালে ফিরে আসে এবং ঘটনাটি নরসিংদী থানা পুলিশকে অবহিত করে।

খবর পেয়ে পুলিশ ওয়েলকাম হাসপাতাল থেকে ফাহিমা রনি’র লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ব্যাপারে ফাহিমা রনি’র ছোট ভাই ফখরুল ইসলাম বাদী হয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় তুহিন সরকার, ঝরনা, সোনিয়া ও মুক্তি নামে ক্লিনিক মালিক, দালাল ও নার্সকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। কিন্তু দীর্ঘ ১০ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ তুহিন সরকারকে গ্রেফতার করেনি। এ ব্যাপারে নরসিংদীর সিভিল সার্জন অফিসের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, তুহিন কোন ডাক্তার নয়। সে একটি ওষুধ কোম্পানীর এমআর পদে চাকুরী করতো।

ওয়েলকাম প্রাইভেট হাসপাতালের কোন রেজিষ্ট্রেশন নেই। এ ঘটনা জানার পরও জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওয়েলকাম হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। খবর সুত্রঃ দৈনিক ইনকিলাব ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.