আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লেখাটা পরে খুব ভালো লাগলো - ‘দ্য ব্লেড রানার’

DO I NEED TO REMIND THAT I RULE দুটো পা নেই বলেই তাঁর স্বপ্নের মৃত্যু হয়নি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পর দক্ষিণ আফ্রিকার অস্কার পিস্টোরিয়াস এবার দৌড়াবেন লন্ডন অলিম্পিকেও। নকল পা জোড়ার কারণে হাঁটু মুড়ে বসতে কষ্ট হয় ভীষণ। তার পরও ফাইবারের তৈরি বাঁকানো পা-জোড়া ছড়িয়ে দিয়ে তিনি বসে পড়লেন। হাতজোড়া প্রার্থনার ভঙ্গিতে।

দুচোখ বেয়ে তখন নামছে অশ্রুর প্লাবন। অস্কার পিস্টোরিয়াস কাঁদছেন। না, এ কান্না হতাশার অনুবাদ নয়। প্রচণ্ড আবেগ, প্রচণ্ড উচ্ছ্বাসের পরেও তো মানুষ কাঁদে! গত মার্চে প্রিটোরিয়ার একটি মিটে এমন আবেগ-উচ্ছল দৃশ্যের জন্ম দেন ‘দ্য ব্লেড রানার’। তাঁর প্রিয় ইভেন্ট ৪০০ মিটারে টাইমিং করেন ৪৫.২০ সেকেন্ড।

পেয়ে যান লন্ডন অলিম্পিকের টিকিট। গত সপ্তাহে ২৫ বছর বয়সী দক্ষিণ আফ্রিকান এই দৌড়বিদের আনন্দটা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অলিম্পিকের বাছাই কমিটি এসএএসসিওসি তাঁকে ৪-৪০০ মিটার রিলেতে দৌড়ানোরও অনুমতি দিয়েছে। অলিম্পিকের কোয়ালিফাইং টাইমিং ৪৫.৩০ সেকেন্ড। কিন্তু রিলে দলেও থাকার জন্য ৩০ জুনের মধ্যে তাঁকে এই টাইমিং আরও একবার করে দেখাতে হতো।

বেনিনে অনুষ্ঠিত আফ্রিকান চ্যাম্পিয়নশিপে কোয়ালিফাইং টাইমিংয়ের চেয়ে পিস্টোরিয়াস সময় নিয়েছেন দশমিক ২২ সেকেন্ড বেশি। তার পরও অ্যাথলেটিকস দক্ষিণ আফ্রিকা (এএসএ) পিস্টোরিয়াসের ব্যাপারটি বিশেষ বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল এসএএসসিওসিকে। অবশেষে গত সপ্তাহে সবুজ সংকেতই দিয়েছেন এসএএসসিওসির প্রধান নির্বাহী টাবি রেডি। স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছেন বিশ্বের পা-বিহীন দ্রুততম মানব। ছেলে ঠিকমতো হাঁটতে পারবে কি না, এ নিয়েই তাঁর শৈশবে দুশ্চিন্তায় বিনিন্দ্র রাত কাটিয়েছেন বাবা-মা।

অথচ সেই ছেলেই কিনা অলিম্পিকের মতো খেলাধুলার তীর্থ-আসরে যাচ্ছে দৌড়াতে! লন্ডনে শিরোপা এনে দিতে পারুন আর না-ই পারুন, ইতিহাস গড়া নিশ্চিত। এই প্রথম সুস্থ-সবল প্রতিপক্ষদের সঙ্গে লড়বেন দুটো পা হারিয়ে ফেলা কোনো দৌড়বিদ। আশ্চর্য তাঁর জীবনের গল্প! এক বছর বয়স হওয়ার আগেই দুটো পা-ই কেটে বাদ দিতে হয়েছিল পিস্টোরিয়াসের। ফিবুলা ছাড়াই জন্ম নিয়েছিলেন। যাঁর শৈশবের একটা বড় অংশ কেটেছে হুইল চেয়ার আর ক্রাচে, সেই তিনিই একদিন বিশ্বের সেরা দৌড়বিদদের একজন হবেন—এত বড় একটা স্বপ্ন দেখার জন্যই তো পিস্টোরিয়াসকে স্যালুট ঠোকা উচিত।

পিস্টোরিয়াস শুধু স্বপ্নই দেখেননি, মানুষ যে তাঁর আশার সমান বড়, সেটা প্রমাণ করেছেন। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই প্রতি পদে তাঁকে পেরোতে হয়েছে একেকটি পাহাড়-বাধা। যার সাহায্যে দৌড়ান, সেই ফাইবারের তৈরি পিস্টোরিয়াসের ব্লেড দুটো তাঁকে বাড়তি ও অন্যায় সুবিধা এনে দেয় বলে কথা উঠেছিল। আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস সংস্থা (আইএএএফ) নিষিদ্ধও করেছিল তাঁকে। মূল অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন তখন ফ্যাকাশে, পিস্টোরিয়াস খেলতে পারছিলেন না প্যারালিম্পিকেও।

কিন্তু যে মানুষটা কখনো হাল ছাড়েননি, এই প্রতিবন্ধতাও বা তিনি মানবে কেন। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে গিয়েছিলেন পিস্টোরিয়াস। সেই আদালত রায় দিয়েছেন তাঁর পক্ষেই। কিন্তু গত বেইজিং অলিম্পিকেও স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

যদিও ২০০৮ প্যারালিম্পিক গেমসে ১০০, ২০০ মিটারের পাশাপাশি সোনা জিতেছিলেন ৪০০ মিটারেও। প্রথম পা-বিহীন অ্যাথলেট হিসেবে অংশ নিয়েছেন গত বছর দেগুতে অনুষ্ঠিত অ্যাথলেটিকস বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও। কিন্তু তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না। তাঁর স্বপ্ন যে অলিম্পিক! অতৃপ্ত নেই স্বপ্ন পূরণের নেশায় বুঁদ পিস্টোরিয়াস অবশেষে গত মার্চে কোয়ালিফাইং টাইমিং করেন ৪০০ মিটারে। আর ৪-৪০০ মিটার রিলেতে তাঁকে দেওয়া হলো ‘ওয়াইল্ড কার্ড’।

‘আজ আমার জীবনের অন্যতম সেরা আনন্দের দিন। লন্ডনে আমি অলিম্পিক আর প্যারালিম্পিক—দুটো গেমসেই লড়াই করব,’ তাঁকে দলে নেওয়ার খবর শোনার পর টুইট করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন পিস্টোরিয়াস। পিস্টোরিয়াসের সামনে এখনো প্রতিবন্ধকতার দেয়াল। এখনো অনেকেই বলছেন, পিস্টোরিয়াসের টাইমিংয়ের দ্রুত উন্নতির পেছনে আছে আরও আধুনিক প্রযুক্তির ফাইবারের ওই পা-জোড়াই। ডালাসের সাউদার্ন মেথডিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষক পিটার ওয়েয়ান্ড বলেছেন, ‘বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটা পরিষ্কার...মিস্টার পিস্টোরিয়াস তাঁর কৃত্রিম পা-জোড়া দিয়ে যথেষ্ট দ্রুত দৌড়াচ্ছেন।

’ তবে এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে পিস্টোরিয়াস বলেছেন, ওসুরের তৈরি চিতা নামের এই কার্বনের পা-জোড়া দিয়ে ২০০৩ সাল থেকেই দৌড়াচ্ছেন। এটা তিনি পাল্টাননি। টাইমিংয়ে তাঁর উন্নতি শুধুই তাঁর কঠোর পরিশ্রমের ফসল। অলিম্পিকে অংশ নিতে পারাটা সে পরিশ্রমের স্বার্থকতাও। Source ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।