আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ
একে আযাদ প্রেসিডেন্ট এফ.বি.সি.সি আই
১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তাজউদ্দিন আহমেদ ভারতের সাথে ৭ দফা চুক্তির একটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের নিজস্ব কোন প্রতিরক্ষা তথা সশস্ত্র বাহিনী থাকবে না। এই ৭ দফা চুক্তির কথা শুনে ঐ সময়কার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম(আজকে আলীগ সা.সম্পাদক আশরাফের পিতা) মূর্ছা যান। জেনারেল ওসমানী, মেজর জিয়া, মেজর জলিল সহ সেক্টর কমান্ডরদের বেশীর ভাগই ক্ষুদ্ধ হন। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ রণকৌশল এবং ভারতের এককছত্র নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের জন্য ওসমানী, জিয়া ও জলিলের সাথে ইন্দিরা সরকারের বিরোধ ছিল। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ১৬ই ডিসেম্বর ৭১এ আত্নসমপর্ণ অনুষ্ঠানে জেনারেল ওসমানীকে আসতে বাধা দেওয়া হয়।
পরে মুজিব তাজউদ্দিনের এই ৭ দফা চুক্তিতে ক্রুদ্ধ হলেও বাংলাদেশের নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী রাখা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দে ছিলেন। কিন্তু জেনারেল ওসমানী মূল এবং জিয়া সহ কয়েকজন সেক্টর কমান্ডারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মুজিব বাধ্য হন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী রাখতে। তবে ১৯৭২-৭৫ বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ছিল নখ-দন্তহীন বাঘ। ঐ সময়ে মুজিব সুযোগ পেয়েও সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও শক্তি বৃদ্ধি না করে রক্ষী-লাল-পঞ্চমবাহিনী গড়ে তুলেন। এরপর বিভিন্ন পট পরিবর্তনে জিয়াউর রহমানকে ৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ সিপাহী-জনতা ক্ষমতায় বসালে তিনি গণচীনের সাথে সম্পর্ক গড়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলেন।
আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ৮০-৯০% অস্ত্র, গোলা-বারুদ, ক্ষেপনাস্ত্র সহ সামরিক যানবাহন চীনের তৈরি। এর বেশীর ভাগই চীন আমাদেরকে বিনামূল্যে দিয়েছে। আজকে সেনাবাহিনীর যে ইউনিফর্ম তা জিয়ার নির্বাচিত। গভীর সমুদ্রে নৌবাহিনীর জন্য সৌদির আর্থিক সহায়তায় বৃটেন হতে চারটি ফ্রিগেট কিনে আনেন। এই চারটি ফ্রিগেট ইসলামের ৪ মহান খলিফা আবু বকর(রাঃ), উসমান(রাঃ), উমর(রাঃ) এবং আলী(রাঃ) এর নামে নামকরণ করেন জিয়া।
শুধু তাই নয় মুজিবের ভ্রান্ত নীতি যা চাকমাদের বাঙালী হওয়ার কথা বললে ভারত তাদেরকে সশস্ত্র শান্তিবাহিনী হিসেবে ত্রিপুরায় ট্রেনিং দিয়ে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে লেলিয়ে দেয় তার বিরুদ্ধে জিয়া রুখে দাড়ান। সেই সাথে প্রতিশোধ হিসেবে আসামের উলফাকে অস্ত্র সাহায্য দেওয়া হয়। ফলে একেতো শান্তিবাহিনীকে কোমড় ভেঙে দেওয়া হয় অন্যদিকে ভারতকেও দূশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। এভাবে পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে হাসিনা ক্ষমতায় এলে ৯৭ সালে তড়িঘড়ি করে তিনটি অসম শর্তে সন্ত্রাসী উপজাতি চাকমাদের সাথে শান্তি চুক্তি করে তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদকে এক প্রকার বৈধতা দেওয়া হয়। তাতে বাংলাদেশের প্রতিশোধ তথা উলফাকে সাহায্য করা হয়ে যায় সন্ত্রাসী আচরণ।
কি বিচিত্র সেলুকাস! ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথমে কিছু করলে সেটা বৈধ আর আমরা প্রতিশোধ নিলে তা হয় সন্ত্রাসী। দালাল আওয়ামী-বাকশালীরা থাকলে সবই সম্ভব। সে যাই হৌক দীর্ঘ ২১ বছর পর ঐ সময় ও ২০০৮এ আওয়ামী-বাকশালীরা ক্ষমতায় আসলেও ৭৫এর পরবর্তী সব সরকারই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করতে থাকে। যার দরুণ দেশের আভ্যন্তরীন তথা স্বাধীনতা-সার্বভোমত্ব রক্ষা, বন্যা-ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা সহ দেশের বিভিন্ন উন্নয়নে এমনকি আজকে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। তাদের বেতন সহ বিভিন্ন ব্যায় নির্বাহ এবং বিদেশ হতে অস্ত্র-যানবাহন কেনার জন্য চাই প্রচুর অর্থ।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে তা খুবই চ্যালেঞ্জিং। পৃথিবীর অনেক দেশেরই প্রতিরক্ষা ব্যায় তাদের মোট বাজেটের ৪০% যা আমাদের মাত্র ৮% এরও কম। পক্ষান্তরে ভারতের অর্থনীতি বর্তমানে অনেকটা ভাল যার দরুণ তাদের বর্তমান প্রতিরক্ষা ব্যায় ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১ লক্ষ ৬২ হাজার কোটি রুপি অথবা ২ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা;
Click This Link
যা ভারতের মোট বাজেট বাংলাদেশী মুদ্রায় ১ কোটির কোটি ১৯ লক্ষ কোটি টাকা(৭৪ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬৫৪ কোটি রুপি);
Click This Link
ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যায় তাদের মোট বাজেটের প্রায় ২২.৫%। সে তুলনায় আমাদের মোট বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ এবং প্রতিরক্ষা ব্যায়ের প্রায় ২৩ গুণ বেশী। স্পষ্টতই আমাদের জন্য ঠিক আছে।
অথচ এফ.বি.সি.আই প্রধান এ কে আযাদ এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। উনার মতে এটা অন্যায় ও ভুল। তিনি বলেন, ‘আমার মোট আয়ের ৬২ শতাংশ চলে যায় কর দিতে। আর সেই করের টাকার বাজেটের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বরাদ্দ পায় সেনাবাহিনী। আর কৃষিতে বরাদ্দ পায় ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
কৃষির বরাদ্দ কীভাবে খরচ হচ্ছে, এর ফল কী আসছে, তার সবই দেখতে পাই। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীতে বরাদ্দ দেওয়ার কোনো ফল দেখতে পাই না। ’
এ কে আজাদ বলেন, সেনাবাহিনী রাস্তা তৈরি করছে, উন্নয়নকাজে অংশ নিচ্ছে। তার জন্য জাতীয় বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দের দরকার আছে কি না, তা আলোচনা হওয়া উচিত।
Click This Link
দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ে স্রেফ শপথ নেওয়া সংসদ সদস্যগণই এর অডিট বা হিসাব নিরীক্ষা সমন্ধে পূর্ণ হিসাব নিতে পারেন।
তবে এক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা সাবেক সেনা সদস্য তাদের উপস্থিত থাকলেও ভাল হয়। এ বিষয়ে AGর(মহা হিসবা নিরীক্ষক) দপ্তরের বাইরে তার সমকক্ষ প্রতিরক্ষা অর্থ নিয়ন্ত্রক দপ্তর আছে বহুদিন ধরেই। একটি দেশের প্রতিরক্ষার অনেক বিষয়ই স্পর্শ কাতর যা বিদেশীদের হাতে গেলে দেশের জন্য হুমকি ও বিব্রত কর। পৃথিবীর স্রেফ গুটি কয়েক চামচা রাষ্ট্র বাদে তার ঘনিষ্ঠ জোটকে বা মিত্রকেও প্রতিরক্ষা বিষয়ে তেমন তথ্য দেয় না। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক ব্যায় নির্বাহ বাদে দেশ ও সামরিক কার্যে ব্যায়ের জন্য যে হিসাব-নিকাশ তা সরকারের ও সংদের সংশ্লিষ্ট যে না জানলেই নয় সেই জানবে।
এর বাইরে ঢালাও ভাবে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যায় বিষয়ে ঢালাও ভাবে সমালোচনা-কটাক্ষ করা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করার শামিল। এফ.বি.সি.আই প্রেসিডেন্ট আযাদ হলেন দৈনিক সমকাল প্রতিষ্ঠাতা। আমরা জানি সেখানে বেশীর ভাগই আওয়ামী-বাকশালী বুদ্ধিজীবিদের আড্ডা খানা। কবির ও শাহরিয়ার চৌধুরী, আগাচৌ মুনতাসির মামুন, আবেদ খানদের প্রায়ই সেখানে কলাম লিখতে দেখা যায়। বিশেষ করে কবির, শাহরিয়ার, মুনতাসির মামুন ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগ ভুল ছিল তথা আমাদের থাকার কথা অখন্ড ভারতে সেই বেদনা তাদের আজও তাড়া করে বেড়ায়।
তাতেই বোঝা যায় আযাদ সাহেবের কেন এত প্রতিরক্ষা ব্যায়ের বিরুদ্ধে গোস্বা। সরাসরি বলতে পারে না যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর দরকার নেই। তাই দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার চক্রান্ত ছাড়া কিছু নয়। বাণিজ্য মন্ত্রী ফারুক খান আযাদের বক্তব্য সমর্থন না করলেও জোড়াল ভাবে এই সমস্ত ভারত ঘেষা বুদ্ধিজীবিদের সমালোচনা করেন না। অবশ্য আলীগের জেনারেল শফিউল্লাহ ও এ কে ক্ষন্দকার গং হল প্রবল ভারত ঘেষা।
ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় যাতে বাংলাদেশের সার্বভৈৗমত্বের পক্ষে এমন বিষয়ে তারা কোনদিন সমর্থনতো দূর উল্টা বিরোধীতা করবেন। কিছু সামরিক অফিসারের র্দূনীতি, অন্যায়ের জন্য সবাইকে এক পাল্লায় দেখলে চলবে না। এরাও যেন সশস্ত্র বাহিনীতে বিশৃঙ্খল ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নতুবা বিডিআর বিদ্রোহের মত ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের রুপঞ্জেও কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যা কাম্য নয়।
কিছু অসৎ সেনা অফিসারের জন্য গোটা সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আশা করি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সতর্ক আছে। নতুবা ২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯ এর পিলখানা বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে ভারতীয় বিমান ও সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে পড়ত। তাই আযাদের মত ভারত ঘেষা ব্যাবসায়ী ও বুদ্ধিজীবিদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে এদেশে সশস্ত্র বাহিনী না থাকলে তা এতদিনে আফ্রিকার মাদাগাস্কার ও এঙ্গোলার মতন হত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।