আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলাতকা... (দশম পর্ব)

আগামীর স্বপ্নে বিভোর... যূথী খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তার ডিপার্টমেন্টের পঞ্চাশতম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান হবে। এই অনুষ্ঠানের যাবতীয় আয়োজনের দায়িত্ব যাদের উপর দেয়া হয়েছে যূথী তাদের মধ্যে অন্যতম তাই তার ব্যস্ততা এখন এক কাঁঠি উপরে। এই ডিপার্টমেন্ট থেকে পড়া শোনা শেষ করে বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত বেশ ক'জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তার মধ্যে সম্প্রতি মাউন্ট এভারেষ্টের চূড়ায় পা রাখা প্রথম বাংলাদেশী মূসা ইব্রাহিমও আছেন। মূসা ইব্রাহিমের জনপ্রিয়তা এখন বিশ্বজুড়ে তুঙ্গে তাই তার আগমনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার শেষ নেই।

যূথী নিজেই পুরান ঢাকা থেকে কর্কশীট কিনে এনেছে, রঙ কিনেছে নীলক্ষেত থেকে। কর্কশীট কেটে নানান রকম ফুল, পাখি বানিয়ে তাতে রঙ লাগাচ্ছে। এই ফুল পাখি দিয়ে মঞ্চ সাজানো হবে। কর্কশীট কেটে একটা বিড়ালও বানিয়েছে কিন্তু বিড়ালটা যুৎসই হয়নি বলে যূথীর মন কিঞ্চিত খারাপ। মঞ্চের সামনে রঙ দিয়ে অন্যরা আল্পনা আঁকছে যূথী সেটাও মনোযোগ দিয়ে তদারকি করছে।

যূথীর ইচ্ছে ছিলো ভালো কোন ব্যান্ড দল এনে গান করাবে কিন্তু ডিপার্টমেন্ট থেকে যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তা দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই এই আয়োজন সম্পন্ন করা সম্ভব নয় তাই ডিপার্টমেন্টের ষ্টুডেন্টরা নিজেদের মধ্য থেকে চাঁদা তুলে মোটামোটি মানের একটা আয়োজন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এবং সেটা যূথীর দূরদর্শিতার কারণেই সম্ভব হচ্ছে। এতো ব্যস্ততার মাঝেও যূথী আমার খোঁজ খবর রাখছে। যদিও যূথীর সাথে আমার রাতের বেলায় দীর্ঘ মেয়াদী কথা হয় কিন্তু দিনের বেলাও ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে কেমন আছি কি করছি দুপুরে খেয়েছি কিনা এসব খোঁজ খবর নিতে ভুলেনা। - হ্যালো... - মিঁউ মিঁউ... কি করছিলে ? - কিছুনা, বসে বসে গান শুনছি।

- কেন আজ বাইরে যাওনি ? - না। এমনিতেই ভালো লাগছিলো না তাই যাওয়া হয়নি। - ও। কি গান শুনছিলে ? - ওই একটা আধ্যাত্বিক টাইপের গান... এটা তোমার ভালো লাগবেনা। - আপনি বলেন আমার ভালো লাগবে।

আমার মনটাও ভালো না। - মন ভালো না ? কেন কি হয়েছে ? - তেমন কিছু না মঞ্চ সাজানোর জন্য কর্কশীট দিয়ে একটা বিড়াল বানিয়েছিলাম কিন্তু দেখতে ওটা ইঁদুরের মতো লাগছে। - অন্য কাউকে দিয়ে বানিয়ে নিলেই পারতে। - না আর বানাবোনা ওটা... আচ্ছা বাদ দেন। আমাকে গানটা গেয়ে শোনান।

- মাথা খারাপ ! আমি কখনো গাইনি, আমার সুর তাল কিছুই ঠিক থাকেনা। - সুর তাল কিছু লাগবে না আপনি আমাকে গেয়ে শোনান তাহলেই হবে। তাড়াতাড়ি গানটা শুনিয়ে দিন অনেক কাজ পড়ে আছে, আপনার গলায় গানটা শুনে আজকের বাকি কাজগুলো দ্রুত শেষ করে ফেলবো। - আমার গলায় গান শোনে তুমি হাসবে। - এই প্রমিজ করলাম হাসবো না।

আপনি শুরু করুন। - হাওয়ার উপর চলে গাড়ি লাগেনা পেট্রল ডিজেল মানুষ একটা দুই চাক্কার সাইকেল, কি চমৎকার গাড়ির মডেল গো চমৎকার গাড়ির মডেল মানুষ একটা দুই চাক্কার সাইকেল। দুই চাক্কায় করেছে খাঁড়া জায়গায় জায়গায় ইস্কুরুপ মারা বাত্তর হাজার ইস্পত দিয়ে এই সাইকেল গড়া। চিন্তা করে দেখনা একবার, চিন্তা করে দেখনা একবার দুইশ ছয়টা হয় এক্সেল... মানুষ একটা দুই চাক্কার সাইকেল... - বাহ ! আপনার গলাটা খারাপ হলেও গানটা দারুন। খুব ভালো লাগলো।

সুন্দর গানের জন্য ধন্যবাদ। - আমি ত আগেই বলেছি আমার গানের গলা ভালো না। এটা আবার ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলার কি দরকার ? - রাগ করলেন নাকি। সত্যি বলতে কি আপনার গানের গলাও অসাধারণ বিশ্বাস করুন আমি মজা করেছি আপনার সাথে। - থাক থাক আর বাতাস দিতে হবেনা।

- আমি চাইলেও বাতাস দিতে পারবোনা হাতে আর খুব সময় নেই কাজ শেষ করে সোজা বাসায় দৌঁড় দিতে হবে, রাতে কথা হবে। - আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থেকো। - আচ্ছা আচ্ছা শুনুন। - কি ? - আপনাকে একটা ধাঁধাঁ বলবো, দেখি উত্তর দিতে পারেন কিনা। - ধাঁধাঁ ? - হুম।

- আমি জানি আমি তোমার ধাঁধাঁ উত্তর দিতে পারবো না, তারপরও বল দেখি উত্তর দিতে পারি কিনা। - এখন উত্তর দেবার দরকার নাই রাতে দিলেও হবে। এবার ধাঁধাঁটা শুনুন... তিনটা চোর একটা কমলা বাগানে গেলো কমলা চুরি করতে। কিছু কমলা পাড়ার পর মালিক টের পেয়ে গেলো। চোরেরা সেটা বুঝতে পেরে যে যত গুলো কমলা হাতের কাছে পেলো সেগুলো নিয়ে তারা দৌঁড়ে পালিয়ে এলো।

রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় চোরেরা আর কমলা ভাগা ভাগি না করে একটা বনের ভেতর লুকিয়ে রাখলো এবং বলল সকালে সবাই একসাথে এসে ভাগ করে যার যার ভাগ নিয়ে যাবে। পরদিন সকালে প্রথম চোরটা আসলো বনের ভেতর। সে বাকি দুজনের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে দেখলো তারা আসছে না তাই সে কমলাগুলোকে তিন ভাগ করে সে এক ভাগ নিয়ে গেলো। এরপর আসলো দ্বিতীয় চোর সেও অপেক্ষা করলো অন্য দুজনের কিন্তু তারা না আসায় সেও কমলাগুলোকে তিন ভাগ করে দেখলো একটা অবশিষ্ট রয়ে গেছে তখন সে তার ভাগটা নিয়ে সাথে অবশিষ্ট কমলাটাও নিয়ে গেলো। সব শেষে আসলো তৃতীয় চোর, সেও অন্য দুজনের অপেক্ষা করতে করতে বিকেল হয়ে গেলো কেউ না আসায় সে সব কমলাগুলো নিয়ে চলে গেলো।

সন্ধ্যায় সব চোর একত্র হলে প্রথম চোর জানায় সে কমলা ভাগ করে তার ভাগ নিয়ে এসেছে, দ্বিতীয় চোরও জানায় সেও ভাগ করে তার কমলা নিয়ে এসেছে এবার তৃতীয় চোর মুচকি হেসে বলে সেও তার ভাগ নিয়ে এসেছে। কিন্তু হিসেব করে দেখা গেলো প্রত্যেক চোরের ভাগে সমান কমলা পড়েছে। এখন আপনাকে বলতে হবে মোট কয়টা কমলা ছিলো আর কে কয়টা করে পেলো... গ্রুপ বানানোর চিন্তা তমালের মাথা থেকে সরে গেছে জেনে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। যাক আর কোন উঠকো ঝামেলায় আমাকে জড়াতে হচ্ছেনা। কিন্তু তমাল কিছুক্ষণ আগে আমাকে ফোন করে জানালো তার মাথায় নতুন আরো একটি প্ল্যান এসেছে।

প্ল্যানটা ঠিক ভাবে এ্যাপ্লাই করতে পারলেই ওদেরকে ঠিক মতো শায়েস্তা করা যাবে। আমি অনেকটা অনিচ্ছায় জানতে চাইলাম কি ধরনের প্ল্যান করেছিস ? সে জানালো তার ফ্রেন্ড লিষ্টে বেশ কিছু ইন্ডিয়ান আর পাকিস্থানী মেয়ে আছে। সেসব ইন্ডিয়ান আর পাকিস্থানী মেয়েদের মধ্যে খুব সুন্দরী দেখে একজনের বেশ কিছু ছবি সংগ্রহ করবে। তারপর তার ছবি দিয়ে একটা ফেক আই ডি বানাবে। সংগ্রহ করা সব গুলো ছবি এক সাথে দিবেনা।

কিছু ছবি রেখে দিবে কয়েক দিন পর পর নতুন ছবি এ্যাড করবে তাহলে প্রোফাইলের গ্রহণীয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে এবং সবাই মনে করবে এটাই আসল। তারপর সেই ফেক আই ডি দিয়ে ওদের গ্রুপে জয়েন করে ওদের প্রত্যেকটা পোষ্টে আকর্ষনীয় মন্তব্য করে ওদেরকে আকৃষ্ট করা হবে তারপর তারা নিজেরাই ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাবে। তারা যখন ফ্রেন্ড লিষ্টে ঢুকে পড়বে তখন তাদের সাথে এক্সটা খাতির লাগানোর চেষ্টা করা হবে। মেয়ে পটানোর চাইতে ছেলে পটানো সহজ বলেই ওরা পটে যাবে। ওদের জন্য আলাদা একটা সিম কেনা হবে ওরা যখন মোবাইল নম্বর চাইবে তখন সেই নাম্বার তাদেরকে দিবে।

অবশ্য এটা তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে যে পরিবার রক্ষণশীল হবার কারণে সব সময় ফোন করা যাবেনা। তারপর সুযোগ বুঝে তার বান্ধবী তৃণাকে দিয়ে দিনের বেলায় মাঝে মধ্যে কথা বলিয়ে নিলেই হবে। তৃণা ব্রড মাইন্ডেড ওর কাছে এসব কোন ব্যাপারই না। তৃণাকে না পেলে দিনের বেলায় ফোনে একদম কথা বলবে না রাতেই বলবে তাও বেশিক্ষণ না দুই চার মিনিট এবং সেটা ফিসফিস করে বলবো তাহলে তারা কিছুই বুঝতে পারবেনা। মূল লক্ষ্য হলো ওদেরকে প্রেমের ফাঁদে ফেলানো।

ওরা যখন পুরোপুরি প্রেমে মজে যাবে তখন সুযোগ বুঝে হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিবে। এবার আর ওদের গ্রুপিং করতে হবে ফেসবুক ছেড়ে পালাতে হবে। আমি বললাম এক সঙ্গে সবার সাথে প্রেম করবে কিভাবে ? তখন সে জানালো তার আসল টার্গেট হবে গ্রুপের এ্যাডমিন, এ্যাডমিনকে জালে ফেলতে পারলেই হলো বাকিদের নিয়ে তার মাথা ব্যাথা কম। আমি বুঝতে পারছিনা তমালকে এই মুহুর্তে কি বলবো। তমালের প্ল্যান শুনে আমি মনে মনে খুব হাসলাম।

আমি এখন হাসিটা চেপে রেখে গান শুনছি... ...নতুন সাইকেল পুরান হইবে কলকব্জায় জং যে ধরিবে বেল বাত্তির ঐ ঠং ঠং আওয়াজ বন্ধ হইবে এক কদম আগে না বাড়বে হাজার বার মারলে প্যাডেল মানুষ একটা দুই চাক্কার সাইকেল কি চমৎকার গাড়ির মডেল গো চমৎকার গাড়ির মডেল মানুষ একটা দুই চাক্কার সাইকেল... ফুরাইলে সাইকেলের বাতাস সেই দিন হবে সর্বনাশ গিয়ার তোমার কাজ করবে না রাখিও বিশ্বাস মুনি সরকার হইয়া লাশ থাকবে ভব মেডিক্যাল মানুষ একটা দুই চাক্কার সাইকেল কি চমৎকার গাড়ির মডেল গো চমৎকার গাড়ির মডেল মানুষ একটা দুই চাক্কার সাইকেল... চলবে... সুমন আহমদ সিলেট। ২৯শে জুন ২০১১ খৃষ্টাব্দ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।