আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলাতকা... (পঞ্চম পর্ব)

আগামীর স্বপ্নে বিভোর... আমার অফিসিয়াল কাজ শেষ হয়ে গেছে ঘন্টা খানেক আগেই। এখন আমি দাঁড়িয়ে আছি মহাখালী ফ্লাইওভারের নীচে। মীরা আমাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে। দু'মিনিট আগে মীরার সাথে আমার কথা হয়েছে পনেরো মিনিটের মধ্যে চলে আসবে বলেই আমাকে জানালো। পনেরো মিনিট অনেক সময় এক কাপ চা খেয়ে একটা সিগারেট পুড়ানোর জন্য যথেষ্ট।

আমি একটা চায়ের ষ্টলে গিয়ে এক কাপ চা নিলাম চায়ের কাপে চুমুক দিতেই পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। মোবাইল হাতে নিয়েই দেখলাম মীরা ফোন করেছে। মীরার ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি মীরা আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। মীরা আমাকে দেখে মুচকি একটা হাসি দিলো। এই প্রথম আমি মীরার হাসি দেখলাম, এখন মনে হচ্ছে মীরার হাসি শোনার চাইতে দেখতে আরো বেশী ভালো লাগে।

মীরা আমাকে জিজ্ঞেস করলো এখন কোথায় যাবো ? আমি বললাম এটা তোমার শহর তুমি আমাকে যেখানেই নিয়ে যাবে আমি সেখানেই যাবো। - তোমার কি কোন চয়েজ নাই ? - না। মীরা হাতের ইশারায় একটা রিক্সা ডাকলো কিন্তু রিক্সাওয়ালার কোন ভাবান্তর হলোনা। আরো দুটো রিক্সাওয়ালাকে একই কায়দায় হাত ইশারা করে ডেকে বিফল হলো, বুঝালাম ঢাকা শহরের রিক্সাওয়ালারা এখন মেয়েদের খুব একটা পাত্তা দেয়না। যাক শেষের দিকে একজন বুড়ো টাইপের রিক্সাওয়ালা পাওয়া গেলো।

রিক্সায় চেপে আমরা একটা গলি দিয়ে ঢুকে ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছি রিক্সাওয়ালা বার বার পেছনে ফিরে তাকাচ্ছে আমার খুব বিরক্ত লাগছিলো। ফার্মগেটে পৌছে আমরা রাস্তা পার হয়ে অন্য একটা রিক্সায় চেপে গ্রীণ রোড হয়ে ধানমন্ডি লেকে পৌছালাম। পশ্চিম আকাশে সূর্যটা তখন লাল হয়ে আছে ডুবো ডুবো করছে কিন্তু ডুবছেনা। ধানমন্ডি লেকের পাশে একটা বেঞ্চিতে বসলাম। মীরা আমাকে দেখে বিশ্বাস করতে পারছেনা যে আমি তার সামনে বসে আছি।

- ঢাকায় আর ক'দিন থাকবে ? - আমার ত কাজ শেষ, আজ রাতেই চলে যাবো ভাবছি। - তুমি কি কাল পর্যন্ত থাকতে পারবে ? - কেন ? - কাল শুক্রবার আমার অফিস বন্ধ। তুমি ঢাকায় থাকলে তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতাম। - আচ্ছা দেখি। - দেখি না, এখনি বলো।

- কোথায় নিয়ে যাবে ? - তুমি কি কখনো নন্দনে গিয়েছো ? - না, সেটা কোথায় ? - আশুলিয়ায়। যেতে ঘন্টা দেড়েকের মতো লাগতে পারে। আমরা বিকেলের মধ্যে আবার ফিরে আসবো। নাম যেমন নন্দন জায়গাটাও বেশ নান্দনিক। ওখানে এর আগে আসা হয়নি কখনো কিন্তু এভাবে যে আসবো তা কখনোই ভাবা হয়নি আগে, এমন কি গতকাল সন্ধ্যার আগেওনা।

নন্দনের লেকের প্যাডেল বোটগুলোও দেখার মতো। প্যাডেল বোটে বসে আমি যতটা আনন্দিত মীরা ততটাই আতংকিত। যদি বোটটা ডুবে যায় তাহলে কি হবে এই শংকাটা তার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছেনা বলে দু হাত দিয়ে শক্ত করে বোটের দু পাশে ধরে আছে। আমি অত শত ভাবিনা যা হবার তা হবে, ঘটমান কোন কিছু কেউ কখনো রোধ করতে পারেনি কেউ কি কবে রোধ করেছিলো ? বোট থেকে মীরাকে পাড়ে তুলতে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম ওটাই আমার প্রথম বাড়িয়ে দেয়া হাত সেটাতে সে ভরসা খোঁজে পেয়েছিলো বলেই হয়তো তার বাকি জীবনটা ওই হাতে সপে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো। শ্যূট এন্ড উইন নামে দারুন একটা গেম আছে নন্দন পার্কে।

এয়ার গান দিয়ে শ্যূট করে লক্ষ্য ভেদ করতে হয়। আমি এর আগে এয়ার গান ত দূরের কথা খেলনা পিস্তলও হাতে নিয়েছি বলে মনে পড়ে না কিন্তু ওই গেমে আমি ঠিকই লক্ষ্য ভেদ করে প্রাইজ হিসেবে দারুন সুন্দর একটা পুতুল জিতেছিলাম। প্রাইজ হিসেবে পাওয়া পুতুলটা মীরার হাতে তুলে দিলাম, ছোট্ট একটা পুতল পেয়ে একটা মানুষ এতোটা খুশী হতে পারে তা আমার জানা ছিলোনা। মাথার তালুতে থাকা সূর্য্যটা কানের লতি স্পর্শ করে ঘাড় বেয়ে নেমে গেছে সেই কখন তাই ক্ষিধেও পেয়েছে বেশ, সকালে তেমন কিছু খেয়ে বের হতে পারিনি। এখনি লাঞ্চটা সেরে নিতে হবে।

নন্দনে একটা মাত্র রেষ্টুরেন্ট ওখানে গিয়ে আঁৎকে উঠলাম যখন ওরা জানালো সকালে লাঞ্চের অর্ডার না দিলে ওরা লাঞ্চ সার্ভ করেনা। কিন্তু এখন দুটো বাজে, নন্দনের আশে পাশে অন্য কোন রেষ্টুরেন্টও নেই। অগত্যা স্যান্ডউচ আর বার্গার গলা দিয়ে জোর করে নামিয়ে লাঞ্চ সারতে হলো। ফেরার সময় হয়ে এলো যাবার আগে আরোও কিছুটা সময় একটা বেঞ্চে বসা যাক, কে জানে হয়তো আর কখনোই আসা হবেনা কিংবা আসা হবে হয়তো মীরা সাথে থাকবেনা। লাঞ্চের আগে মীরাও বলছিলো নিরিবিলি দেখে কোথাও বসার জন্য ওর নাকি কিছু জরুরী কথা আছে সেগুলো সে সারতে চায়।

ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের পাশের জায়গাটা বেশ সুন্দর, বেশ কিছু বেঞ্চ পাতা আছে আমরা ওখানে গিয়েই বসলাম। - শোন বিয়ের পর আমি কিন্তু চিটাগাংয়ে গিয়ে থাকতে পারবো না। তোমাকেই ঢাকায় আসতে হবে। - মীরা তুমি এসব কি বলছো ? - ঠিকই ত বলছি, তুমি ভালো করেই জানো আমার পরিবারের অবস্থা এই মুহুর্তে আমি পরিবার ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে পারবো না। - মীরা তুমি যা ভাবছো আমি তা কখনোই ভাবিনি, আমরা খুব ভালো বন্ধু।

- বন্ধু হলেই কি বিয়ে করা যায় না ? - অবশ্যই যায় কিন্তু আমি এখনো সেভাবে কিছুই ভাবিনি। আমি স্বীকার করি তোমাকে আমি অনেক পছন্দ করি কিন্তু তাই বলে এখনি বিয়ে করতে হবে এমনটা ভাবা একদম ঠিক হবেনা। আমরা খুব ভালো বন্ধু আছি বন্ধু হিসেবেই থাকি, একটা সময় যদি আমাদের মনে হয় যে আমাদের এই সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া উচিত তখন না হয় আমরা বিয়ে নিয়ে ভাববো। তাছাড়া এখনো তোমার পড়াশোনা শেষ হয়নি আগে তুমি পড়াশোনাটা শেষ করো। - দেখো এতো ভুং ভাং আমার পছন্দ নয়।

ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলবে আর এক বছর দু বছর প্রেম করবে তারপর হঠাৎ করেই একদিন সব সম্পর্ক শেষ এমনটা আমি হতে দেবো না। তোমাকে এখনি সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের বিয়েটা কবে হচ্ছে। - মীরা শোন আমি শুধু তোমার সাথেই ফোনে কথা বলি না, আমার আরোও অনেক বন্ধু আছে যাদের সাথে ফোনে আমি কথা বলি তা তুমি জানো। - হ্যা জানি কিন্তু আমার সাথে তুমি যতটা সময় নিয়ে কথা বলো ওদের সাথে ততটা সময় কথা বলোনা। - তুমি ভুল বলছো মীরা তোমার সাথে আমি এখনো এক সাথে দুই ঘন্টার বেশী কথা বলিনি কিন্তু আমার অনেক বন্ধু আছে আমরা কনফারেন্স কলে পাচঁ ছয় ঘন্টা কথা বলে বলে কাটিয়ে দিয়েছি।

- আমি এতো কিছু শুনতে চাইনা তুমি আমাকে বিয়ে করবে কি না এখনি বলো। - মীরা আজকে আমরা উঠি। আমাকে আজই চিটাগাং যেতে হবে রাতে ফোনে কথা বলবো। - তার মানে তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছো না ? - দেখো মীরা তুমি আমার খুব ভালো একজন বন্ধু, আর বন্ধু হিসেবেই আমি তোমার সাথে এখানে বেড়াতে এসেছি। তুমি যেভাবে কথা বলছো তাতে আশ পাশের মানুষ আমাদের কথা শুনলে খুব খারাপ কিছু ভাবতে পারে।

আমরা এসব কথা ফোনেই বলবো। মীরার সাথে নন্দন পার্কে আমার আর কোন কথাই হয়নি। নন্দন থেকে বের হয়ে আমরা একটা বাসে উঠলাম, বাসের মধ্যে মীরা খুব চুপচাপ ছিলো আমার সাথে তেমন কোন কথাই বলেনি। আমাদের বাস শ্যামলীতে পৌছালে মীরা নেমে যায়। নামার আগে তাকে বলতে শুনেছি সাবধানে যেও ফোনে কথা হবে।

আমিও তাকে বিদায় জানালাম। মীরাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বন্ধু হিসেবে মীরা একশ'তে দুইশ কিন্তু বউ হিসেবে মীরা একশ'তে মাইনাস পঞ্চাশ !!! এটা ভালো করেই জেনে গেলাম। তাছাড়া মীরাকে বিয়ে করলে ঘর জামাই হিসেবে থাকতে হবে, এটা কি সম্ভব ? শ্রীলংকা হলে সম্ভব হতো। শ্রীলংকাতে বিয়ের পর ছেলেরা শ্বশুর বাড়ী উঠে এবং বাকি জীবন শ্বশুর বাড়িতেই কাটিয়ে দেয়।

কিন্তু আমাদের দেশে ঘন ঘন শ্বশুর বাড়িতে গেলেই বন্ধুরা ঘর জামাই বলে হাসা হাসি শুরু করে দেয়। চলবে... সুমন আহমদ সিলেট। ২২শে মে ২০১১ খৃষ্টাব্দ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।