আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলাতকা... (তৃতীয় পর্ব)

আগামীর স্বপ্নে বিভোর... মীরার সাথে এখন আমার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ ছয় বার ফোনে কথা হচ্ছে। যদিও এসব কথা বার্তার মধ্যে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকেনা। মীরার সাথে আমার সাধারণত যেসব কথা হয় তা হলো। - অফিসে কখন এলে ? - এইতো কিছুক্ষণ হলো।

- এখন কি করা হচ্ছে ? - কিছু না তোমার সাথে কথা বলছি। (আমাদের সম্পর্কটা আপনি দিয়ে শুরু হলেও কোন নোটিশ ছাড়াই তুমিতে প্রমোশন হয়ে গেছে, এখন দুজন দুজনকেই তুমি সম্বোধন করা হয়) - সকালে নাশতা করে বের হয়েছো ? - হুম। - তোমার চকোলেট স্যারের খবর কি ? (মীরার অফিসে একজন কর্মকর্তা আছেন যিনি সব সময় আলপেনলিবে ক্যান্ডি মুখে পুরে রাখেন। উনার ড্রায়ার খুল্লেই সব সময় এক প্যাকেট আলপেনলিবে ক্যান্ডি পাওয়া যায়, তাই আমি তাকে চকোলেট স্যার বলে ডাকতাম। যদিও চকোলেট স্যারের সাথে আমার কোন পরিচয় নেই এবং ভবিষ্যতে কখনোই হবেনা এটাও নিশ্চিত) - ভালো।

- তোমাকে আজ তিনি কোন ক্যান্ডি দেন নাই ? (মীরা অফিসে ঢোকার পথেই চকোলেট স্যার মীরার হাতে একটা ক্যান্ডি ধরিয়ে দেন) - হ্যাঁ। - সেটা খেয়ে ফেলেছো ? - না এখন ক্যান্ডিটা মুখে পুরে ইঁদুরের মতো কুট কুট করতে ইচ্ছে করছেনা। - ঠিক আছে, যখন কুট কুট করতে ইচ্ছে করবে তখন মুখে নিলেই হলো। আচ্ছা শোন এখন রাখবো। - কেন কোন তাড়া আছে ? - না তেমন কোন তাড়া নেই।

- তাহলে আরো একটু কথা বলি। - আচ্ছা ঠিক আছে। - নাসিমা ম্যাডামের সাথে আমি স্যুট করতে পারছিনা। উনি এখনো আমার দিকে কেমন করে যেন তাকান, দেখলেই রাগ উঠে। - তুমি উনার চেয়ে দেখতে সুন্দর ত তাই তোমাকে তিনি সহ্য করতে পারছেন না।

একটা মেয়ে কখনোই অপর একটা সুন্দরী মেয়েকে সহ্য করতে পারেনা। মেয়েদেরকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময় প্রকৃতিই মেয়েদের মাথায় মধ্যে এ্যান্টি বিউটি নামক একটা ডিফল্ট সফটওয়্যার ইনস্টল করে দিয়েছে। এই সফটওয়্যারের কাজই হলো অপর সুন্দরী মেয়েদেরকে হিংসা করা... হা হা হা - একটা মজার কথা শোন। - হুম বলো। - সান্টু ভাইয়ার ফেসবুক প্রোফাইল ডিসাবল্ড হয়ে গেছে।

(আমি সান্টু মামাকে মামা ডাকলেও মীরা সান্টু ভাইয়া ডাকে) - তাই নাকি ? কখন হলো ? - হুম, গত রাতে। - আহা বেচারা। তুমি জানলে কিভাবে ? - আমাকে ফোন করেছিলো। নতুন একটা প্রোফাইলও বানিয়ে ফেলেছে, সেটা থেকে আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট করেছে আমি এখনো এক্সেপ্ট করিনি। - কেন করোনি ? এক্সেপ্ট করো নইলে বেচারার মন খারাপ হবে।

- না, করবো না। আমি বলে দিয়েছি আমি এখন আর ফেসবুক তেমন একটা ব্যবহার করছিনা। অফিসের ব্যস্ততা, বাসায় গিয়ে আবার পড়াশোনা সব মিলিয়ে ফেসবুকে আর বসার সময় পাচ্ছিনা। আচ্ছা আমি তোমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠালে আমাকে এক্সেপ্ট করবে ত ? - আচ্ছা পাঠিয়ো, আমি এক্সেপ্ট করবো। মীরা আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছে আমি সেটা এক্সেপ্টও করেছি।

এখন প্রায়ই আমার স্ট্যাটাসে এসে মীরা কমেন্ট করে। এমনকি আমার ওয়ালে এসেও প্রতিদিন গুড মর্নিং জানায়। সান্টু মামার প্রোফাইল ডিসাবল্ড হয়ে যাওয়ায় তিনি আর আমাকে তার নতুন প্রোফাইল দিয়ে খুঁজে পাচ্ছেনা না। কারণ আমার প্রোফাইল আগে থেকেই পাবলিক সার্চ বন্ধ করা আছে তাই আমাকে ফেসবুকে যে কেউ সার্চ অপশন দিয়ে খুঁজে বের করা কঠিন। মীরার সাথে আমার রাতের বেলা কথা হয় বেশী যদিও সেসব কথা একেবারেই অর্থহীন তবুও মীরার কথা বলার ধরণটা আমার মনে ধরেছে বলে তার সাথে ঘ্যানর ঘ্যান করি।

এমনও হয় মীরা কথার পৃষ্ঠে কথা বলছে কখনো একনাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছে আমি হুঁ হ্যাঁ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছি। মীরা যখন বুঝতে পারে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি তখন সে লাইনটা কেটে দিতো তারপর সকালে ফোন করে এ নিয়ে হাসা হাসি করতো। মীরার হাসিও শোনার মতো। হাসিটা দেখার মতোই বলতাম কিন্তু আমি তার হাসি দেখিনি শুধু শুনতেই পাচ্ছি বলে শোনার মতো বললাম। মীরা একজন হাসি সংগ্রাহক।

মীরার সংগ্রহে নানান রকমের হাসি আছে। সংগ্রাহকেরা সাধারণত তাদের সংগ্রহ তালাবন্ধ করে রাখেন কিন্তু মীরা তা করেনা সে তার সংগ্রহীত হাসি নানান সময়ে ব্যবহার করে থাকে। দৈনিক প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড় পত্র ছুটির দিনে-তে শখের দুনিয়া নামাক একটা বিভাগ আছে সেখানে যদি মীরার সংগৃহীত হাসি ও সাক্ষাৎকার নিয়ে একটা প্রতিবেদন ছাপা হতো তাহলে মীরার এই বিরল সংগ্রহের কথা মানুষ জানতে পারতো। আমি মীরার সাক্ষাৎকার ও সংগ্রহ নিয়ে মনে মনে একটা প্রতিবেদন তৈরী করি। পৃথিবীতে মানুষ বড় আজিব প্রাণী।

আর আজিব প্রাণী বলেই তাদের কর্ম কান্ডও আজিব। আমাদের অনেকেরই অনেক ধরনের জিনিষ সংগ্রহ করার শখ থাকে। কেউ মুদ্রা সংগ্রহ করে, কেউ ফোন কার্ড সংগ্রহ করে, কেউ দিয়াশলাই সংগ্রহ করে আবার কেউ নানান রকমের ঘড়ি সংগ্রহ করে। কিন্তু আজ আপনাদেরকে এমন একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো যিনি হাসি সংগ্রহ করে থাকেন। তার নাম মীরা রহমান।

ঢাকার শ্যামলীতে বাস করেন। তাহলে তার মুখ থেকেই শুনি তার এই বিরল সংগ্রহের কথা। - আপনি এতো কিছু থাকতে হাসি সংগ্রাহক হলেন কেন ? - হাসি সংগ্রহ করতে তেমন কোন খরচা পাতির ঝামেলা নেই তাছাড়া হাসি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। - কখন থেকে আপনি হাসি সংগ্রহ করছেন ? - সেটা এক বিরাট কাহিনী... আমি যখন...... (আমি তাকে এই পর্যায়ে থামিয়ে দিলাম) - না না আমি কোন কাহিনীতে যেতে চাচ্ছিনা কাহিনী লিখতে গেলে লেখা বড় হয়ে যাবে তাতে পাঠক বিরক্ত হবে, পাঠককে বিরক্ত করে কোন লেখা জমে উঠেনা। তারচেয়ে বলুন আপনার কাছে কত প্রকারের হাসি আছে ? - ম্যালা প্রকার হাসি আছে আমার সংগ্রহে।

সংখ্যার মাপ কাঠিতে ফেলা যাবে না। - হাসি সংগ্রহ করতে গিয়ে কি এমন কোন মজার ঘটনা ঘটেছে যা আমাদের সাথে শেয়ার করা যায় ? - শ্যামলী থেকে আমি একবার বাসে করে অফিসে যাচ্ছিলাম। আমার পেছনের সীটে দুজন মহিলা বসেছেন। জানালার পাশে বসা মহিলাটি তার পাশের জনের সাথে গল্প করতে করতে যাচ্ছিলেন হঠাৎ করেই তার মুখে চমৎকার একটা হাসি শুনতে পাই। আমি এতোটাই চমৎকৃত হই হাসিটা শুনে যা বলে বুঝাতে পারবোনা।

তারপর আমি অনেক্ষণ থেকে আমার মোবাইলের রেকর্ডার অন করে রেখেছিলাম মহিলাটির হাসি রেকর্ড করার জন্য কিন্তু তিনি আর হাসেন নি। আমার অফিস বনানীতে, অফিসের স্টপিজে বাস থামলো আমি নামলাম না। আমি মহিলাটির হাসির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু বাস বনানী ছাড়িয়ে উত্তরা পেরিয়ে টঙ্গির দিকে চলে যাচ্ছে আমি নামছিনা। আমি মহিলাটির হাসি না শোনে নামবো না বলে প্রতিজ্ঞা করলাম।

কিন্তু আমাকে নামতে হলো। টঙ্গি ব্রীজ পার হওয়ার পর মহিলাটি নেমে গেলেন আমিও সাথে সাথে নেমে গেলাম। মিনার মসজিদের গলি দিয়ে মহিলাটি নামতেই আমি তার পিছু নিলাম এক পর্যায়ে তাকে থামালাম তারপর তাকে খুব বিনয় করে বললাম আমি একজন হাসি সংগ্রাহক বাসের মধ্যে আপনি যে হাসিটি দিয়েছিলেন সেই হাসিটা যদি আরো একবার দিতেন তাহলে আমার মোবাইলে রেকর্ড করে নিতাম। মহিলাটি আমার কথা শোনে যেন মঙ্গল গ্রহ থেকে লাফিয়ে পড়লেন। তিনি আমাকে কি ভেবেছিলেন জানিনা তবে আমার কথা শোনে তিনি আমাকে যে ঝাড়ি দিয়েছিলেন তাতে আমি কোন রকমে পালিয়ে এসেছি নইলে কি যে কেলেংকারী হতো কে জানে।

- তার মানে সেই হাসিটি আর আপনি সংগ্রহ করতে পারেন নি ? - না সেই হাসিটা আর সংগ্রহ করতে পারিনি তবে সিমিলার অনেক হাসি সংগ্রহ করেছি। আমি তাতেই খুশী। - আমরাও খুশী আপনার এই বিরল সংগ্রহের কথা জানতে পেরে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় থেকে কিছুটা সময় আমাকে ও আমাদের পাঠকদের দেবার জন্য। - আপনাকেও ধন্যবাদ।

তমালের প্রতি এখন আর মীরার এখন কোন রাগ নেই এমনকি তমালকেও তার ফেসবুকে এ্যাড করে নিয়েছে। এটা অবশ্য তমালের জন্য আমি বিশেষ চমক ছিলো। যদিও তমালকে এখনো বলা হয়নি যে মীরার সাথে আমার এখন প্রতিদিন ফোনে কথা হচ্ছে এটা অবশ্য বলার মতোও তেমন কিছুনা। মীরাকে আমি একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই দেখি অন্য কিছু নয়। তমালের ঘাড় ত্যাড়া স্বভাব, সব কিছুকেই প্রথমে ব্যাঁকা চোখে দেখার অসাধারণ এক ক্ষমতা আছে তার মধ্যে যেটা স্বয়ং ঈশ্বর প্রদত্ত।

এই ক্ষমতা মানুষ দুই ভাবে লাভ করে থাকে একটা হলো সাধনা করে আর অন্যটা হলো ঈশ্বর কর্তৃক। সাধনা করার মতো ছেলে তমাল নয় এটা ঈশ্বর বুঝতে পেরেছিলেন বলে তিনি আর তাকে দিয়ে বাড়তি খাটুনি করাতে চাননি। আমি তমালের সাথে পারতপক্ষে কোন যুক্তি তর্কেও যেতে চাইনা। তমালের সাথে যুক্তি তর্কে যাওয়া মানে সমান মাটিতে উষ্টা খাওয়া। আমি উষ্টা খেতে রাজি নই কারণ অদ্ভুত সব যুক্তি তার সংগ্রহে আছে বলেই হার অবধারিত তাই মীরার ব্যাপারে ঝামেলা মুক্ত থাকার কারনে প্রথমে তমালকে কিছু জানাতে চাইনি।

তবে মীরার প্রোফাইল থেকে আসা ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দেখে তমাল কিছুটা ভড়কে গিয়েছিলো। তমাল আমার দিকে রহস্যের দৃষ্টি নিয়ে তাকালে আমি এড়িয়ে যাই। এই মুহুর্তে এড়িয়ে যাওয়াই উচিত বলে মনে করি। চলবে... সুমন আহমদ সিলেট। ১৮ই মে ২০১১ খৃষ্টাব্দ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।