আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলাতকা... (অষ্টম পর্ব)

আগামীর স্বপ্নে বিভোর... যূথীর সাথে এখন আমার ফোনে নিয়মিত কথা হয় কিন্তু তা রবিন জানেনা। রবিনকে জানানো খুব প্রয়োজন। অবশ্য ইদানিং যূথীর সাথে আমার যেসব কথা বার্তা হয় তার বেশির ভাগই বিড়াল বিষয়ক। একটা জিনিষ খুব করে লক্ষ্য করলাম যূথী শুধু শুধু যে বিড়ালদের পছন্দ তার নয় বিড়াল বিষয়ক যাবতীয় খুঁটি নাটি তথ্য সবই তার নখ দর্পে। বিড়ালের মন মর্জি কখন কি রকম থাকে তার সব কিছু যূথী জানে।

ক্ষুধা লাগলে কোন স্বরে ডাকে, আদর পেতে কোন স্বরে ডাকে বা কতটুকু রেগে গেলে কেমন করে চিৎকার করে তাও যূথী জানে। যূথীর কাছ থেকে বিড়াল বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ যেসব তথ্য পেলাম তা হলো আমাদের দেশে মোট ৮ প্রজাতির বিড়াল বা কেট পাওয়া যায়। এগুলো হল বন বিড়াল, সোনালী বিড়াল, গেছো বাঘ বা লাম চিতা, চিতা বাঘ, বাঘ, মেছো বাঘ বা মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল ও মারবেল বিড়াল। ১। বন বিড়াল (Jungle Cat): বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই এই বন বিড়াল পাওয়া যায়।

গ্রামের ঝোপঝার, নলখাগরা, চারণভূমি ও বাদাবনে এরা বসবাস করে এবং বসতি সংকোচন ও বেপরোয়া নিদনের ফলে এই বাংলাদেশে আজ বিপন্ন। ২। সোনালী বিড়াল (Golden Cat): বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের চিরসবুজ ও আংশিক চিরসবুজ বন এবং বনের পাশের তৃণভূমি অঞ্চলেও এদের পাওয়া যায়। ব্যাপক হারে বন নিধনের কারনে এটি আজ মহাবিপন্ন বা বিলুপ্তির একদম কাছাকাছি। ৩।

গেছো বাঘ বা লাম চিতা (Clouded Leopard): পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমিতে পাওয়া যায় তবে গাছপালা ও বন না থাকায় তা আজ মহাবিপন্ন বা বিলুপ্তির একদম কাছাকাছি অবস্থানে দাঁড়িয়ে। ৪। চিতা বাঘ (Leopard): এটি আজ বাংলাদেশে আদৌ আছে কিনা না বিলুপ্ত সন্দেহ আছে। ক্ষিপ্র গতিতে গাছ থেকে গাছে বিচরণ করে বেড়ানো এবং হরিণ, বানর, শুয়োর শিকার করে বেড়ানো এই প্রাণীটি আজ মহাবিপন্নের কাতারে যার প্রধান কারণ খাবারের অভাব, বন ধ্বংস, দেখা মাত্র হত্যা। ৫।

বাঘ (Tiger): একসময় বাংলাদেশের সর্বত্র থাকলেও আজ সুন্দরবন ছাড়া কোথাও নেই যদিও পার্বত্য চট্টগ্রামে আছে বলে ধারনা করা হয়। সুপ্রিয় চাকমা নামে একজন গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধীনে পিএইচডির কাজে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই বাঘ সহ সব বিড়ালের সন্ধান বা সার্ভে করছেন গত এক বছর ধরে। ৬। মেছো বাঘ বা মেছো বিড়াল (Fishing Cat): শহরের বাইরে যে কোন জায়গায়, মানুষ্যবসতির পিছনে ঝোপ ঝাড় ও সুন্দরবনে এই মেছো বাঘ বা মেছো বিড়ালের বসবাস। মানুষ এটাকে দেখা মাত্র হত্যা করার করনে তা আজ মহা বিপন্ন।

৭। চিতা বিড়াল (Leopard Cat): এটার সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমান তথ্য জানা নেই কারন এটা খুবই কম এবং এখন এই প্রজাতির বিড়াল দেখা যায় না বললেই চলে। ৮। মারবেল বিড়াল (Marbled Cat): এটা এতই কম যে এর সম্পর্কেও যথেষ্ট তথ্য আমাদের দেশের প্রাণিবিজ্ঞানীদের কাছে নাই। সিলেটের শ্রীমঙ্গলের সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা থেকে তোলা একবার দুইটা বাচ্চা মারবেল বিড়ালের ছবি দেখেছিলাম।

এটা ১৮৪৬ সালে পার্বত্য জেলা গুলোতে দেখা যেত বলে তথ্য আছে। মানে এটা বিলুপ্ত প্রায়। যুথীর দেয়া তথ্য থেকে বুঝতে পারছি আমাদের দেশে বিড়ালরা ভালো নেই সবাই বিপন্নের তালিকায় চলে এসেছে এক দিন যদি সব প্রজাতির বিড়াল বিপন্ন হয়ে যায় তবুও কিছু বিড়াল থেকে যাবে আর তা যূথীর হৃদয়ে। আমি এতো দিন জানতাম বিড়াল হলো বাঘের গোত্রীয় কিন্তু যূথীর তথ্যানুযায়ী এখন দেখছি বাঘই হচ্ছে বিড়ালের গোত্রের একজন... কি আশ্চার্য্য ! যূথীর এই অতি বিড়াল ভক্তির কারনে তার ভার্সিটির বন্ধুরা তাকে বিলাইয়ের মা, বিলাই, বিড়াল, বিল্লি, বিল বলে ডাকা ডাকি করে অবশ্য তাতে যূথীর কিছু আসে যায় না সে বরং আরো খুশী। যূথীর সাথে কথা বলার সময় আমি চেষ্টা করি বিড়ালের প্রসঙ্গটা এড়িয়ে চলতে কারণ বিড়াল নিয়ে বাড়া বাড়ি আমার পছন্দ হচ্ছে না কিন্তু যূথী প্রতিটা কথার প্রসঙ্গে বিড়ালকেই অবধারিত ভাবেই টানবেই।

আমরা কারো টেলিফোন রিসিভ করে সাধারণত হ্যালো বলি কিন্তু যূথী তার পরিচিত জনের ফোন রিসিভ করে বলবে মিঁউ মিঁউ... এবং এই মিঁউটা এতো বেশি বাস্তব যে মনে হবে কোন প্রশিক্ষিত বিড়াল বুঝি টেলিফোন রিসিভ করলো। একদিন রাতে তার সাথে আমার কথা হচ্ছে... - হ্যালো... - মিঁউ মিঁউ... - কেমন আছো ? - ভা-লো আছি, আপনি কেমন আছেন ? - হুম, আমিও ভালো আছি। তুমি কি করছিলে ? - একটা এ্যাসাইনমেন্ট তৈরী করছিলাম। - ও তাহলে কি আমি তোমার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলাম... - আরে না না না আমার কাজ শেষ। - ভালো।

আচ্ছা তুমি কি কবিতা লেখো ? - না। আমি কবিতা বুঝিনা। - আমিও বুঝিনা তবে পড়তে ভালো লাগে। তুমি ডায়েরী লিখো ? - নিয়মিত লিখিনা তবে মাঝে মধ্যে লিখি। - তোমার লেখা ডায়েরীর পাতা থেকে দু-এক পৃষ্ঠা আমাকে পড়ে শোনাবে ? - আচ্ছা দাঁড়াও ডায়েরীগুলো আমার আলমারীতে তুলে রাখা, বের করে তোমাকে শোনাচ্ছি... ১৪.৩.২০১০, সন্ধ্যা ৭.১৬ মিনিট।

প্রিয় লাল্টু... (সদ্য প্রয়াত প্রিয় বিড়ালদের একজন) তুমি আজ আমাদের মাঝে নেই ভাবতেই আমার হৃদয়টা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। যত বারই তোমাকে নিয়ে ভাবি ততবারই আমার হৃদয় ভেঙ্গে যাচ্ছে। তোমাকে যে করবে শুইয়ে রেখে এসেছি আমি জানিনা তুমি আসলেই ওখানে আছো নাকি তুমি অশরীরি ভাবে আমার পাশেই আছো। তুমি যেখানেই থাকনা কেন তুমি শান্তিতেই থাকো এটাই কামনা করি। লাল্টু তুমি ত দেখেছো তোমাকে বাঁচানোর জন্য আমি বা আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করিনি।

কিন্তু মহান আল্লাহ পাক চাননি তুমি আর আমাদের মাঝে থাকো তাই তিনি তোমাকে আমাদের মাঝ থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। লাল্টু, তুমি যখন অসুস্থ্য হয়ে সব রকমের খাবার দাবার বন্ধ করে দিয়েছিলে তুমি নিশ্চয় দেখেছো আমিও কিছু খেতে পারিনি। তোমাকে না খাইয়ে আমি কি কখনো খেয়েছি ? লাল্টু, আমি আজও ঠিক মতো খেতে পারিনা, যখনি খেতে বসি তখনি মনে হয় আমার পায়ের কাছে তুমি ঘোর ঘোর করছো। তখন আর মুখে কিছু তুলতে পারিনা। লাল্টু তুমি কি জানো আমাদের পাশের বাসার বাসিন্দা তোমার প্রেমিকা এখনো নিয়মিত আমাদের বাসায় আসে কিন্তু তোমাকে না পেয়ে বিষন্ন মন নিয়ে ফিরে যায়।

জ্যাকসন, বল্টু, বিল্লী, তুষি, পুষিরা এখনো তোমার জন্য চোখের জল ফেলে। তোমার খাবারের বাটি, বিছানা, জামা কাপড় গুলো তুলে রেখেছি যত্ন করে। জানি তুমি কখনো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু তোমার স্মৃতি আমার কাছে আজীবন থেকে যাবে। তুমি কি জানো তোমার সব ছবিগুলো আমার ফেসবুকে সব বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেছি তারা যখন জানতে পেরেছি তুমি আর নেই তখন তারাও যে কত সমবেদনা জানিয়েছে তা তুমি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেনা।

তোমার একটা ছবি আমার প্রোফাইলে দিয়ে রেখেছি কি সুন্দর দেখাচ্ছিলো তোমাকে সেই ছবিতে... আহ ! লাল্টু... তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো। আমি আর লিখতে পারছিনা আমার খুব কান্না পাচ্ছে। আমি এখনো একটু কাঁদবো... চলবে... সুমন আহমদ সিলেট। ২৫শে জুন ২০১১ খৃষ্টাব্দ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।