জীবনকে এমন ভাবে সাজান যেন আপনার ব্যক্তিগত ডায়েরীটা কখনো লুকাতে না হয়। বাংলাদেশের আজকের পরিস্থিতির অনেক গুলো কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো শেখ হাসিনা তথা আওয়ামীলীগের ১৮ দলীয় জোট ভীতি। আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে ১৮ দলীয় জোট ব্যালেট হিসেবে অনেক বেশী শক্তিশালী। জাতীয় পার্টি আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণে সেই শক্তি আরো অনেক বেড়ে গিয়েছে ১৮ দলের। যার কারণে আওয়ামীলীগ সরকারের টার্গেট হয়ে দাঁড়ায় ১৮ দল।
১৮ দলকে অকার্যকর করতে আওয়ামীলীগ অনেক বিচার বিবেচনায় বেছে নেয় জামায়াত-শিবিরকে। কারণটা সুস্পষ্ট জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে দাবা খেললে সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগাতে পারবে, জামায়াত-শিবিরকে রাজাকার হিসেবে চালিয়ে দিয়ে নিজেদের ফায়দা ঠিকমত উসুল করা যাবে। বরশিতে ঠোপ দিলে যেমন অনেক রকম মাছ লাগানোর সম্ভাবনা থাকে, জামায়াত অনেকটা সেরকম ঠোপ। জামায়াতকে রাস্তায় নামালে যেমন উগ্র মৌলবাদী বা জঙ্গি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, তেমনি সন্ত্রাস বলেও চালানো যাবে, সাথে আছে সংখ্যালঘু নির্যাতন, মুক্তিযুদ্ধের শত্রু ইত্যাদি বিষয়। এক ঢিলে অনেক গুলো পাখি মারতে আওয়ামীলীগের সামনে জামায়াত ছাড়া আর কোন ঢিল নেই।
তাই সরকারের শুরু থেকেই জামায়াতকে চাপে রেখেছিল এবং জোট ভাঙ্গাতে অনেক গোপন বৈঠক হয়েছিল বলে তথ্য আছে। ৪ বছর কোনভাবেই জামায়াতকে কাবু করতে না পেরে সরকারকে শেষ পর্যন্ত আসতে হলো যুদ্ধাপরাধী বিচার অধ্যায়ে। এই অধ্যায় দিয়েও অনেকটা পানি ঘোলা অবশ্যই করত। কিন্তু শাহবাগ আন্দোলনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তই কাল হয়ে দাড়াল আওয়ামীলীগের। স্বীকার করতে বাঁধা নেই প্রথম সপ্তাহে শাহবাগে প্রচুর নিরপেক্ষ মানুষ হাজির হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ আবেগের বশে।
আওয়ামীলীগের পরিকল্পনা ছিল শাহবাগে কয়েকদিন হৈ হুল্লোড় করে দেশের মানুষকে দেখাবে তারপর ফাঁসি দিবে যাতে করে সামনের নির্বাচনে আবেগের ছটায় ব্যালেটের সিলটা নৌকায় পড়ে। বিধিবাম শাহবাহ যতটা প্রশংসায় প্রচার পেয়েছিল তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী বিতর্ক নিয়ে প্রচার পেল। ফলে এখন শাহবাগ শুধুমাত্র আম-বাম-রাম-জাম ও ছাত্রলীগের একটা ডিজিটাল সমাবেশ ছাড়াও কিছু নয়, ওদের সাথে আছে বাংলাদেশের সব নাস্তিক। নাস্তিকদের নিয়ে অন্যদের সন্দেহ থাকলেও আমার নেই। এইসব নাস্তিককে আগে থেকেই চিনি, শাহবাগের আন্দোলনের শুরুর দিন আমার এক বন্ধুকে বলছিলাম যে, নাস্তিক একটা ইস্যু অতিসন্নিকটে।
ব্লগার না হয়েও মেয়ে পটানো ও টাংকি মারা ছাড়াও যারা ফেসবুক বহুলভাবে ব্যবহার করে ওরাও জানে নাস্তিকরা নব্য নয়। জামায়াতের বানানো কোন কাল্পনিক রোল নয়।
আওয়ামীলীগ নাস্তিকদের ব্যবহারের পেছনেও কারণ আছে। কারণ হলো অন্যান্যরা শাহবাগ থেকে সরে গেলেও নাস্তিকরা সরবে না। বাংলাদেশের বুকে নাস্তিকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জামায়াত।
ক্ষমতার পালাবদল হলেই নাস্তিক গুলোকে জেলে ঢুকতে হবে সেটা ওরা খুব ভালভাবেই জানে। আওয়ামীলীগ সময়ে সুযোগের ব্যবহার করল শাহবাগে।
শাহবাগের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল গত চারবছরের দুশাসন চাপা দেওয়া, এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ সফল।
"নাস্তিকদের বিষয়ে হিন্দুদের একটা তথ্য দেই। নাস্তিকরা আপনাদের ছেড়ে দিয়েছে ভাবলে ভুল করবেন।
আপনাদের জন্য নূরানী চাপা সমগ্র আছে। মনের সুখে বেলুন উড়াবেন না। সম্মান রেখেই বলছি "দূর্ঘা এখন গর্ভবতী" "দূর্ঘা আর ... এর লীলাখেলা" নামেও অনেক ব্লগ আছে, ফেসবুক পেজ আছে"। হিন্দু ভাইয়েরা অন্য খাতে প্রবাহত করবেন না আশা করি।
শাহবাগ থেকে খুব বেশী ফলাফল আসেনি আওয়ামীলীগের, ফাঁসি ফাঁসি করে ফাঁসি দিল সাঈদীকে, যার জনপ্রিয়তা জামায়াতের বাইরেও বিস্তৃত।
প্রতিক্রিয়াও হলো সেভাবে। জন্ম হলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বপ্রথম গণহত্যার যা আওয়ামীলীগকে সারা জীবন ঘাড়ে বয়ে বেড়াতে হবে। গণহত্যা চাপা দিতেই উদ্ভূদ হলো সংখ্যালঘু নির্যাতন। গত চার বছর জামায়াত সংখ্যালঘু নির্যাতন করে নাই, ২৯শে ফেব্রুয়ারী হঠাৎ সংখ্যালঘু নির্যাতন। জামায়াত ক্ষমতায় ছিল তখন তো সংখ্যালঘু নির্যাতন করে নাই।
আওয়ামীলীগ সাথে সাথে লাফ দিল সংখ্যালঘু ইস্যুতে।
হিন্দুরা কি রাজনীতি করে না?? অবশ্যই করে তার প্রমান সুরঞ্জিত সেন ও গায়েশ্বর চন্দ্র রায়। আল্লাহ না করুক এখন সুরঞ্জিত বাবুকে হত্যা করা হলে সেটা সংখ্যালঘু নির্যাতন হবে নাকি আওয়ামীলীগ হত্যা হবে?? অবশ্যই আওয়ামীলীগ হত্যা। কয়েকজন হিন্দু কিন্তু রাজনৈতিক রোষানলের শিকার। হিন্দু বলে নয়, আওয়ামীলীগ বলেই ওরা টার্গেট হয়েছে।
একটা জিনিস হয়ত আপনারা খেয়াল করেন নাই, শুধু এইবার নয় আওয়ামীলীগ যতবার ক্ষমতায় ছিল প্রতিবার শেষের বছর সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুটি তৈরী হয়। হিন্দুদের ভোট জমা করাই এই ইস্যুর কারণ। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মী মন্দির ভাঙ্গতে গিয়ে ধরা পড়েছে সেটা আমরা জানি। এইসব ব্যাপার গুলো মগজওয়ালা মানুষদের মাথায় রাখা উচিত।
জামায়াতকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে বেঁছে নিয়ে আওয়ামীলীগ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
কারণ বর্তমান বাংলাদেশে নির্বাচনের ফলাফল অনেকটা জামায়াতের হাতেই সেই হিসেবে জামায়াত আসলেই ট্রাম্পকার্ড। জামায়াতের ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে যদি না গত নির্বাচনের মত কারচুপি না হয়ে থাকে।
আজকে জামায়াতের উপর এতো মিথ্যাচার ও নির্যাতনের অন্যতম কারণ হলো আওয়ামীলীগের সাথে জোটবদ্ধ না হওয়া। আমি ৫০০% নিশ্চিত এই মুহুর্তে যদি জামায়াত মহাজোটে যোগ দেয় তাহলে তাদের সব অপরাধ অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে এবং সেটা আওয়ামীলীগেই করবে।
জামায়াতের উপর এতো নির্যাতনের পেছনে অন্যতম কারণ হল জামায়াত-শিবিরকে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে বাধ্য করা, জামায়াত-শিবির কর্মীরা যাতে অস্ত্র হাতে রাজপথে আসে।
জামায়াত-শিবির অস্ত্র হাতে রাস্তায় নামলে আওয়ামীলীগ পুরো ১৮ দলকে হাইলাইট করবে। যার ফলে দেশের মানুষ ১৮ দলের উপর আস্থা হারাবে, সিলটা নৌকায় চড়বে। এরি মধ্যে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার একটা সহজ উপায় হাতে আসবে। এইটা দিয়ে হয়ত জামায়াতকে ব্লাকমেল করবে আওয়ামীলীগ, নিষিদ্ধ করবে না। কারণ জামায়াত নিষিদ্ধ হলে আর কারো লাভ না হলেও ২০০ % ক্ষতি আওয়ামীলীগের।
যেই ক্ষতির প্রভাবে সামনের নির্বাচনে গদিও হারাতে হতে পারে। কারণ খুব সরল, জামায়াত নিষিদ্ধ করলে জামায়াতের সব ভোট ধানের শীষে জমা হবে কোন সন্দেহ ছাড়া। "আউটলুক"এর মতে বাংলাদেশের ২৫% মানুষ জামায়াতকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন করে। ২৫ টা ২০ ধরলেও এই ২০% এর রিস্ক আওয়ামীলীগ নিবে বলে আমার মনে হয় না।
অথচ এই মুহুর্তে আওয়ামীলীগের সামনে ইস্যু জীবিত আছে দুইটা।
জামায়াত নিষিদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধী। নাস্তিক ইস্যুটাও হালকা উপর গভীর বলা যায়।
আওয়ামীলীগকে এখন নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে হবে। বিকল্প নেই কোন।
দেখি আওয়ামীলীগ কি করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।