]সমুদ্রের গভীরে জ্বালানির আধার মিথেন হাইড্রেট. বিকল্প জ্বালানির উৎস খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানীরা দিনের পর দিন চেষ্টা করছেন৷ এবার তারা গভীর সমুদ্রের তলেও সেই উৎস খোঁজার কাজ শুরু করেছেন৷ সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের সমুদ্র এলাকায় তারা অভিযান চালান৷ গভীর সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে একটি জাহাজ৷ নীল পানির তরঙ্গ কেটে জাহাজটি চলেছে নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রসীমার মধ্য দিয়ে৷ জাহাজে রয়েছেন জার্মান গবেষকরা যাদের অন্যতম বিজ্ঞানী ইয়র্গ বিয়ালাস৷ এই অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে বিজ্ঞানী বিয়ালাস বললেন, ‘‘আমরা গ্যাস হাইড্রেট খুঁজে বের করতে যাচ্ছি৷ এটা হচ্ছে জমাট বাধা বরফের টুকরোর মত যেটা আসলে মিথেন গ্যাস৷ এই গ্যাস হাইড্রেট ভবিষ্যতে জ্বালানির উৎস হয়ে উঠতে পারে৷ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এটা সত্যিই বেশ আশ্চর্যের ব্যাপার যে কীভাবে এই গ্যাস হাইড্রেট তৈরি হয় এবং কীভাবে এর মধ্যে থাকা উপাদানগুলোতে নানা ধরণের পরিবর্তন আসে৷'' এক টুকরো গ্যাস হাইড্রেট নিয়ে পরীক্ষাগারে গবেষণায় ব্যস্ত ইয়র্গ বিয়ালাস গ্যাস হাইড্রেট মূলত জমা থাকে সমুদ্রের তলদেশে এবং নিউজিল্যান্ডের উপকূলে এই ধরণের গ্যাস হাইড্রেটের অস্তিত্ব রয়েছে৷ সেটা খুঁজে বের করতে চান ইয়র্গ বিয়ালাসের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের দল৷ সঙ্গে থাকা এক টুকরো গ্যাস হাইড্রেট নিয়ে পরীক্ষাগারে গবেষণায় ব্যস্ত ইয়র্গ বিয়ালাস৷ তিনি বললেন, ‘‘মিথেন হাইড্রেট হচ্ছে জমে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাস৷ এটা মনে করা হয় যে জমে থাকা তেল, কয়লার চেয়ে জমে থাকা মিথেন হাইড্রেটের মধ্যে জ্বালানি শক্তি অনেক বেশি জমা থাকে৷ সত্যি বলতে কি, এটাই যে ভবিষ্যতে জ্বালানি হয়ে উঠবে, তা নয়৷ তবে এটি কার্বন গ্যাসের পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানির সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করতে পারে৷'' সমুদ্রে গবেষণা করাটা সহজ ব্যাপার নয়৷ কারণ সমুদ্র কখনো হয়ে ওঠে উত্তাল৷ তখন জাহাজে থাকাটাই কঠিন হয়ে যায়৷ কাজ বন্ধ রাখতে হয় দিনের পর দিন৷ আবহাওয়া ভালো হয়ে ওঠার পর সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷ এছাড়া মাঝে মধ্যে যন্ত্রপাতি বিগড়ে যাওয়ার একটা ঝামেলা তো রয়েছেই৷ মিথেন হাইড্রেট হচ্ছে জমে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাস সেন্সর অপারেটর বিজ্ঞানীদের অভিযানের সপ্তম দিনের মাথাতে সমুদ্রে নামানো হয় একটি বিশাল আকারের সেন্সর অপারেটর৷ চার মাথায় চারটি বড় আকারের বল সম্বলিত এই অপারেটরের মধ্যে রয়েছে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড৷ সমুদ্রের তলদেশ ফুটো করে এটি আরও নীচে নেমে যাবে৷ কারণ হিসেবে বিজ্ঞানী বিয়ালাস জানান,‘‘ এটা দিয়ে সমুদ্রের তলদেশের মিথেন হাইড্রেটের আধার চিহ্নিত করা এবং তার পরিমাণ নির্ণয় করা যাবে৷ এবং ফলে সমুদ্রের তলদেশে গ্যাস হাইড্রেটের দেয়াল ফুটো করার আগেই বোঝা যাবে যে কতটুকু মিথেন গ্যাস আমরা পাবো৷'' শক্ত গ্যাস হাইড্রেটের দেয়াল খুঁজে বের করার ব্যাপারে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়৷ অনেক সময় দেখা যায় ড্রিলিং করাটা নিরাপদ নয়, কারণ তাহলে অনেক বেশি মিথেন গ্যাস পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ক্ষতিকর৷ জ্বালানির উৎস বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা হলো, সমুদ্রের নীচে জমে থাকা মিথেন হাইড্রেটের আধারের দেয়াল ফুটো করে সেখানে দুটি পাইপ ঢোকানোর৷ তারপর সেই পাইপের একটি দিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড পাঠানো হবে মিথেন গ্যাসের ভাণ্ডারে৷ কার্বন ডাই অক্সাইড সেই মিথেন হাইড্রেটের আধারের ভেতরে ঢোকার পর অন্য পাইপ দিয়ে মিথেন গ্যাস বের হয়ে আসবে৷ এবং সেই মিথেন গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হবে৷ গবেষক বিয়ালাসের মতে এটা অনেকটা এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত৷ এটা ভবিষ্যতে আমাদের জ্বালানির উৎস হয়ে উঠবে, অন্যদিকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইডকে মাটির নীচে আটকে রাখা যাবে৷ অভিযানের প্রাথমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন মিথেন হাইড্রেট৷ এখন তারা এই মিথেনের টুকরো নিয়ে গবেষণা করবেন৷ এছাড়া তারা আরও মিথেনের আধার খুঁজে বের করতে বের হবেন অন্য কোন দেশের উদ্দেশ্যে৷
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।