আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার জর্ডানের সাবেক রাষ্ট্রদূতের কেলেঙ্কারি

ইমানের পরীক্ষা হয় সংকট কালে। ইমানের পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত থাকুন। জাপানের পর এবার জর্দানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ আম্মানে দায়িত্ব পালনের সময় একাধিক নারী কেলেঙ্কারি, অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমাদান এবং দূতাবাসের কর্মচারীদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানোসহ শারীরিক নির্যাতনের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাবেক এ রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে তার জন্য আম্মানে নেওয়া ভাড়া বাড়ির মালামালও সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

এ জন্য সরকারকে ওই ভাড়া বাড়ির মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন একসময় আম্মান দূতাবাসে কর্মরত প্রথম সচিব তৌফিক ইসলাম শাথিল। তিনি ফেব্রুয়ারিতে আট পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হাইয়ের কাছে। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ আম্মান দূতাবাসের রিসিপশনিস্ট কাম অনুবাদক জর্দানি তরুণী হায়া তৌফিক আল-রুদিনিকে উপর্যুপরি অনৈতিক প্রস্তাব দেন।

এতে সাড়া না দেওয়ায় রাষ্ট্রদূত তাকে বরখাস্ত করতে চেয়েছিলেন। প্রথম সেক্রেটারি তার অভিযোগপত্রে লিখেছেন, এ বিষয়ে আমি হায়ার কাছে জানতে চাই। হায়া জানান, রাষ্ট্রদূত অসংখ্যবার তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। রাষ্ট্রদূত সরাসরি তাকে বলেন, আমাদের একসঙ্গে বিছানায় ঘুমানো উচিত যতক্ষণ পর্যন্ত আমার... (উই শুল্ড স্লিপ টুগেদার বিফোর আই লিভ...)। এভাবে একের পর এক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় রাষ্ট্রদূত হায়াকে প্রতিহিংসাবশত বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেন।

শাথিল বলেন, হায়া তৌফিক আল-রুদিনি জর্দানের সম্ভ্রান্ত বেদুইন পরিবারের সন্তান। তার বাবা জর্দান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার। রাষ্ট্রদূতের এমন আচরণের বিষয় যদি তার পরিবার জানত তাহলে রাষ্ট্রদূতের জীবনেরই সংশয় দেখা দিত। কারণ জর্দানে 'অনার কিলিং' নামে শিরশ্ছেদ প্রথা এখনো চালু আছে। এসব বিবেচনায় হায়াকে বরখাস্ত না করে তাকে রাষ্ট্রদূতের আম্মান ছাড়া পর্যন্ত ছুটি দেন প্রথম সচিব।

শুধু এ ঘটনাই নয়। রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ লেবাননে গিয়েও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। বৈরুতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল অফিসে এক লেবাননি তরুণীকে যৌন নির্যাতন করেন। হেবা নামের ওই তরুণী বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল অফিসে চাকরি করতেন। এই অভিযোগ আম্মান দূতাবাসের প্রথম সচিবের কাছে জানিয়েছেন সেখানকার কনসাল জেনারেল।

তৌফিক ইসলাম শাথিল লিখেছেন, 'এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগ আছে রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে। ' অপরদিকে রাষ্ট্রদূতের ছেলে রাফি নেওয়াজ নিরক্ষর মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে দূতাবাসে ড্রাইভারের চাকরি দেওয়ার নামে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রদূত প্রায়শই দূতাবাসের সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে নিজের বাসার ব্যক্তিগত কাজ করাতেন এবং সেখানে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন বলেও অভিযোগ দূতাবাসের কর্মচারীদের। রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ তার জন্য দূতাবাসের ভাড়া করা ফার্নিচার দিয়ে সাজানো বাড়ির কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আম্মান ছেড়েছেন বলে অভিযোগ করেন সেই বাড়ির মালিক। সে জন্য সেই বাড়ির মালিক বাংলাদেশ সরকারের কাছে ছয় হাজার ৭১৮ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণও দাবি করেন।

এ ছাড়াও রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে বেশকিছু আর্থিক অনিয়মেরও অভিযোগ জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদূত জর্দান ও সিরিয়া জনশক্তি আমদানির কাছ থেকে অভিবাসী শ্রমিকদের ভিসা ও অন্যান্য কাগজপত্র সত্যায়িত করতে বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত ১০ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ২৫ ডলার নিতেন। প্রথম সচিব অভিযোগপত্রে লিখেছেন, 'অতিরিক্ত টাকা কখনই রেজিস্ট্রার করা হতো না এবং টাকাগুলো তিনি আত্মসাৎ করতেন। ' আর্থিক অনিয়মের আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে প্রথম সচিবের অভিযোগপত্রে। সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রদূত গ্রেটার আম্মান মিউনিসিপ্যালিটি থেকে আম্মানে বাংলাদেশি একটি প্রদর্শনীর নামে চার হাজার ২৩৫ মার্কিন ডলার নেন।

সেই ডলারের চেক দূতাবাসের নামে না নিয়ে নিজের নামে নেন রাষ্ট্রদূত এবং তার ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করেন। রাষ্ট্রদূতের অনৈতিক নির্দেশ না মানায় প্রথম সচিব তৌফিক ইসলাম শাথিলের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেননি রাষ্ট্রদূত, বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তবে সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন বর্তমানে জাকার্তায় কর্মরত রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ। তিনি জাকার্তা থেকে টেলিফোনে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটি মহল এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। রিসিপশনিস্ট হায়া আমার স্ত্রীর টাকা চুরি করায় তাকে বরখাস্ত করি।

কাউকে চাকরি দেওয়ার নামে বা কারও কাছ থেকে সরকার-নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত ফি নেইনি। পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস বলেন, অভিযোগ প্রমাণ হলে বিধি অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এসব পদে দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ওই পদে তাদের থাকা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। কারণ তারা শুধু মানুষের সঙ্গেই কাজ করেন না, তাদের ওপর দেশের ভাবমূর্তিও নির্ভর করে। খবরের সুত্র ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.