আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাজেটটি সমর্থন করা যায় অন্তত একটি কারণে তা হল- বর্তমান সরকার ও সরকারি দলের প্রায় সকলেই বলেছেন- “কৃষিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ” আমরা এটাই আশা করতে চাই। কিন্তু একটু নিরুত্সাহিত হই যখন শুনি সরকারিভাবেই বলেন- ভর্তুকি কমানো হল, কৃষি গবেষণায় টাকা দেয়া হল না, কৃষি পণ্যে নতুন করে (প্রাণিসম্পদ খাত) কর বসানো হল ইত্যাদি। তবে আমরা চাই যেহেতু কৃষিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তাই কৃষি উন্নয়নের জন্য কৃষিমন্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থের অভাব না হয়, তা বিগত বছরের মত বা যেমন করেই হোক। কেউ যখন বলেন- ছেলের বউ খুবই সুন্দরী, তখন বউ সুন্দরী না হলেও তাকে নিজের কথা রক্ষার জন্য বউকে প্রয়োজনমত সুন্দরী লক্ষ্মী করে গড়ে তোলা হয়।
সরকার আশ্বস্ত থাকতে পারেন কৃষি খাতে সিস্টেম লস এখনো অনেক কম। যা হোক এতসব আশা করে সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখিত কয়েকটি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মধ্যে ৩টি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যেগুলোর উপর দৃষ্টি দিলে কৃষক লাভবান হবেন। যেমন- কৃষি সেক্টরের বাজার উন্নয়ন, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতির জন্য সারা দেশে শত হাজারটি বিপণন দল গঠন ও তা কার্যকর করা। এর সাফল্য নির্ভর করবে দলগুলোর সাংগঠনিক, আর্থিক ও সংবিধিগত শক্তির উপর। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগসহ আরো অনেক বিভাগে (এনজিওসহ) বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ ধরনের কৃষক দল গঠন করা হয়েছে, কিন্তু ফলাফল ততটা আশাব্যঞ্জক হয়নি।
এগুলো হল “প্রকল্প শেষ দলও শেষ”। এক একজন কৃষক একাধিক দলের সদস্য। এক একটি বিভাগে সময় ভেদে একাধিক ধরনের দল। তাই আমার সুপারিশ এ ব্যাপারে প্রতিবেশী বা সমপর্যায়ের দেশগুলোর মত সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অনুরূপ কার্যকর সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার পরই কেবল সুফল আশা করা যেতে পারে। নতুবা সকল বিভ্রান্তির কুফল বর্তাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপর।
দ্বিতীয় বিষয়টি হল- কৃষি বীমা বিষয়ে। কৃষি একটি বহুবিধ বিষয়ক জীবসমষ্টি বা পদ্ধতি বলে মানুষ, প্রাণীর বা গাড়ি-দালানের মত বীমা পরিচালনা বা সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। কৃষির ক্ষেত্রে বীমা করতে হলে আমাদের হাতে যে পরিমাণ স্ট্যান্ডার্ড কৃষিতাত্ত্বিক তথ্য থাকতে হবে তার কতটুকু আছে তা জানতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা যতটা না অর্থনীতিভিত্তিক তার চেয়ে অনেক বেশি কৃষিতাত্ত্বিক। তাই এমন একটি দুর্বল পর্যায়ে রাখা সেক্টরের একটি জীর্ণ-শীর্ণ পাইলট প্রকল্পের বরাত দিয়ে কৃষককে আশাবাদ শোনানো সমীচীন হবে না।
অন্তত এ সময় এখনো হয়নি। বিগত বছরও এ ঘোষণা হয়েছিল কিন্তু কাজ হয়নি। তাই কৃষি বীমা চালু করতে হলে এ খাতে কৃষি গবেষণা জোরদার করতে হবে। তারপর এর ফলাফলের ভিত্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সুদৃঢ় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এই মুহূর্তের কাজ কৃষি আবহাওয়া, মৃত্তিকা ভেদে ফসলেন ক্ষয়ক্ষতির ধরণ ও ধারা কৃষি পরিবশে অঞ্চলভিত্তিতে ক্রপ মডেলিং করা।
বুঝতে হবে বাজেটে যেভাবে বলা হয়েছে বিষয়টি সেরূপ নয়।
তৃতীয় বিষয়টি হল- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হাতে, কিন্তু এর উপকার ভোগী কৃষকের সকল সেবা কাজের দায়িত্ব কৃষি মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত রয়েছে। আশংকা হয় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সুফলতা পেতে বিলম্বের কারণে যেসব কুফল আসবে তা যেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার পাত্রে জমা না হয়। এই প্রকল্পে খামারের উত্পাদন ও বিপণন কম হলে তা জাতীয় কৃষি উত্পাদন ধারা প্রভাবিত করবে। আর তা নিয়ে বিবিএস ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য গরমিল নিয়ে বিতণ্ডা হবে- কেউ এগুলো ডাহা মিথ্যে কথা, কেউ বলবে রাবিশ..... ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার সুপারিশ হল- প্রস্তাবিত বাজেটের ভিত্তি ব্যাখ্যা হিসেবে কৃষক দল, কৃষি বীমা, বসত খামার, গুটি ইউরিয়া, এলসিস, মাটি উর্বরতা, বীজ-সেচ-সম্প্রসারণ অনুসঙ্গগুলোর যে চলতি সুবিধার করা হচ্ছে তা পেতে হলে এগুলো বাস্তব বিজ্ঞানভিত্তিক সংশ্লেষক প্রয়োজন, অবশ্যকভাবে প্রয়োজন। তাই আমার একান্ত অনুরোধ কৃষির জন্য বিগত বছরটি আমাদের জন্য অনেক আশাবাদের ছিল, তাই চলতি বাজেটও বিগত বছরের অনুরূপ ভর্তুকি ও উপকরণ মূল্য কমিয়ে দুর্যোগকালীন বর্ধিত সহায়তা বহাল রাখা হোক। অর্থাত্ ভর্তুকি প্রত্যাহার ও ইউরিয়ার মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব স্থগিত করা হোক। এতে কৃষি উত্পাদন ধারা অব্যাহত থাকবে। গরিব কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।
সূত্র: Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।