গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার। গত ১০-০৬-১১ তারিখ থেকে ১৬-০৬-১১ তারিখ পর্যন্ত চীনের বেইজিং এ ছিলাম একটা কনফারেন্সে যোগ দেয়া উপলক্ষে। সেই সময়টাতে অবসরে একাধিকবার মার্কেটে ঘুরাঘুরি করার সুযোগ হয়েছে। কিছু কেনাকাটাও করেছি। কেনাকাটা করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি সেটা ব্লগের পাঠকদের সাথে শেয়ার করার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
যারা বেইজিং যাচ্ছেন বা যাবেন তারা যদি এই মার্কেটে কেনাকাটা করতে যান তাহলে আমার অভিজ্ঞতাটুকু মনে রাখলে উপকৃত হবেন।
মার্কেটটির নাম সিল্ক মার্কেট। আমাদের মতো কম পয়সার পর্যটকদের জন্য কেনাকাটার উপযোগী স্থান। প্রয়োজনীয় সব জিনিসি এক মার্কেটে পাওয়া যায় অর্থাৎ চন্ডিপাঠ থেকে জুতা সেলাই এই আর কি? আমার বস কিছুদিন আগে বেইজিং এ গিয়ে এই মার্কেট এর অভিজ্ঞতা অর্জন করে এসেছিলেন। সেই মতে আমাকে প্রয়োজনীয় টিপস দিয়ে দিয়েছিলেন।
মার্কেটে গিয়ে সেটাই আমি কাজে লাগিয়েছি।
এবার একটু বলি আসল কথাটা। এই মার্কেটে যে জিনিসের দাম হাঁকা হয় ১০০০ ইউয়ান (চীনের মুদ্রার নাম, ১ ইউয়ান সমান বাংলাদেশের ১০/১২ টাকা) পণ্যভেদে সেটা সর্বোচ্চ বিক্রী হয় ২০ ইউয়ান এ। এই বিষয়টা জানা না থাকলে পর্যটকদের ঠকে যাবার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়। আমি প্রথমেই গিয়ে এক জোড়া স্যান্ডেল পছন্দ করলাম।
দাম চাইল ১৫০০ ইউয়ান। আমি ২০ ইউয়ান দাম বললাম। দোকানী মেয়েটি ১৫০০ থেকে এক লাফে নেমে এলো ৫০০ ইউয়ান এ। আমাকে আর একটা দাম বলার জন্য বার বার অনুরোধ করল। এদের এই অনুরোধটাও বেশ মজার।
বার বার বলবে ইউর বেষ্ট প্রাইস, ইউর বেষ্ট প্রাইস। আমি ৩০ ইউয়ান বলায় সে রেখে দিল জুতাটা। বলল ইউ আর জকিং ইউথ মি। আমি অন্যদিকে চলে গেলাম। কিন্তু জুতাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আমি এর আগে দেখেছি দাম বলে চলে গেলে ওদের দেয়ার মতো হলে ওরা ক্যালকুটার হাতে পেছন পেছন দৌড়ায়। যেহেতু মেয়েটা জুতা জেড়া রেখে দিয়েছে সেহেতু এই দামে সে বিক্রি করবে না। তাই আমি আবার গিয়ে আর ১০ ইউয়ান বাড়িয়ে ৪০ ইউয়ান দিয়ে কিনেছি জুতা জোড়া। এমনিভাবে ১৮৫০ ইউয়ান এর ব্যাগ কিনেছি ১৫০ ইউয়ান দিয়ে। ৯৫০ ইউয়ান এর একটি জামা কিনেছি ৬০ ইউয়ান দিয়ে।
আর ছোটখাটো জিনিস যেমন পাথরের চূড়ি, মালা, কানের দুল, আংটি, মাথার ক্লিপ কোনটাই ১০ থেকে ২০ এর বেশী দামে কিনিনি। অথচ এই জিনিসের দাম হাঁকা হয়েছে ৫০০ থেকে ৮০০ ইউয়ান। আরও একটি তথ্য সবার জানা থাকা দরকার। মার্কেটের ৯৯% দোকানী মেয়ে। শুধুমাত্র পুরুষরা গিয়ে এখানে কেনাকাটা করাটা রীতিমতো অস্তস্তিকর।
কারণ, কোন জিনিসের দাম বলে না নিয়ে সহজে দোকান থেকে বের হয়ে আসা যায়না। দোকানী মেয়েগুলো হাত টেনে ধরবে, অথবা শার্ট টেনে ধরবে অথবা গায়ে মাথায় হাত বুলাবে। নিরেট ভদ্রলোক মাত্রই অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে শেষে ঠকে জিনিস কিনে আনতে বাধ্য হয়।
চীনার তাদের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে বিশ্ব বাজার দখল করতে যাচ্ছে এটা আমরা সবাই কমবেশী জানি। কিন্তু ওদের মার্কেটিং পদ্ধতিটা আমার ভালো লাগেনি।
ক্রেতাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেটা। যেমন মার্কেটের আশেপাশের রাস্তায় আপনি নিরিবিলি দাঁড়াতে পারবেন না একদন্ড। হকার মেয়েরা জিনিসপত্র নিয়ে জ্বালাতন করবে। একটি জিনিসির দাম চাইবে ১০০ ইউয়ান। অপনি নিবেন না বললে সেটার দাম নিজ থেকে কমাতে কমাতে ১০ টার দাম বলবে ১০০ ইউয়ান।
একই অবস্থা মার্কেটের আশেপাশের খাবার দোকানগুলোতে। এদের ইৎপাতে আপনি নিরিবিলি বসে খেতে পারবেন না। বিশেষ করে বিদেশী দেখলে এরা একেবারে হামলে পড়ে।
জানতে পারলাম চীনে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ। সবাইকে কিছু না কিছু করে খেতে হবে।
আর সেই করে খাওয়াটা যে বিদেশীদের কাছে কতটা উৎপাতের সেটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে এসেছি। তবে আমার ১০ দিনের বেইজিং অবস্থানের সময় ২ টি ভিক্ষুক এর মুখোমুখি হয়েছি আমি। আরও একটা বিষয় হলো যে, চীনে যে কোন ধরনের অপরাধের কঠিন শাস্তি হয়্। সেজন্য অপরাধী কার্যক্রম অনেকটাই কম। কিন্তু বিপনন ব্যবস্থার মাধ্যমে পর্যঠকদের ঠকানোর যে কৌশল চীনারা ব্যবহার করছে সেটা কি অপরাধ নয়? আমি তো মনে করি সেটা জাতীয় অপরাধ।
অবশ্য এই মার্কেট ছাড়াও কিছু কিছু শপিং মল আছে যেগুলোতে নির্ধারিত মূল্যে জিনিস বিক্রি হয়। কিন্তু সবার জন্য সেটা সুবিধাজনক নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।