বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ অ্যালসেষ্টিস। গ্রিক উপকথার এক অনন্য নারী চরিত্র। স্বামীর প্রতি সুগভীর ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ অ্যালসেষ্টিস গ্রিক উপকথায় অমর হয়ে রয়েছেন।
যে জগতে ঈর্ষা বিশ্বাসঘাতকতা এবং পরকীয়াই ছিল স্বাভাবিক ঘটনা সেই টালমাটাল জগতে অ্যালসেষ্টিস এর আত্বত্যাগী চরিত্রটি আমাদের সান্ত¦না দেয়। নিজের জীবনের বিনিময়ে স্বামী অ্যাডমিটাস কে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন অ্যালসেষ্টিস, নিজেকে সাঁপে দিয়েছিলেন মৃত্যুর দেবতার কাছে । তবে অ্যালসেষ্টিস- এর উপকথায় কোথায় যেন এক মহৎ ইঙ্গিত নিহিত রয়েছে বলে মনে হয় নইলে গ্রিক বীর হারকিউলিস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেনই-বা অ্যালসেষ্টিস কে বাঁচিয়ে তুলবেন?
প্রাচীন গ্রিসের মানচিত্রে থেসালির অবস্থান। এখানেই ফ্যারি নামে এক রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যের রাজা ছিলেন অ্যাডমিটাস।
গ্রিক বীর হারকিউলিস-এর সমসাময়িক ছিলেন অ্যাডমিটাস । অ্যাডমিটাস এর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল ওই গ্রিক বীরের। মাঝেমাঝে অ্যাডমিটাস-এর রাজপ্রাসাদে এসে আতিথ্য বরণ করতেন হারকিউলিস ...
অ্যাডমিটাস যখন রাজা হলেন সে সময় এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। গ্রিক দেবতা অ্যাপোলোর ছেলে এসক্লেপিয়াস জিউস এর বজ্রের আঘাতে নিহত হয়েছিল। জিউসের বজ্র নির্মাণ করত সাইক্লোপসরা।
সাইক্লোপস
দেবতা অ্যাপোলো সাইক্লোপস হত্যা করে প্রতিশোধ গ্রহন করে । শাস্তি হিসেবে দেবতা অ্যাপোলো কে এক বছরের জন্য অ্যাডমিটাস এর দাসত্ব করতে হয়। অ্যাডমিটাস অবশ্য অ্যাপোলোর সঙ্গে মধুর ব্যবহার করে। তারা দু’জনে বন্ধু হয়ে উঠেছিল।
অ্যালসেষ্টিস।
থেসালির আরেক রাজার নাম পেলিয়াস। তার এক কন্যার নাম অ্যালসেষ্টিস। মহাকবি হোমার অ্যালসেষ্টিস fairest among
the daughters of Peliasবলে উল্লেখ করেছেন । অ্যালসেষ্টিস কে বিয়ে করার জন্য রাজপুত্রেরা ভিড় করছিল। তাদের মধ্যে অ্যাডমিটাস ও ছিলেন।
এতে রাজা পেলিয়াস অসম্ভব বিরক্ত হচ্ছিলেন। রাজা পেলিয়াস এক বুদ্ধি আঁটলেন। তিনি একটি শর্ত জুড়ে দিয়ে বললেন, যে আমার দরবারে সিংহ এবং শূকর টানা রথে চেপে আসতে পারবে তার কাছেই আমি আমার কন্যাকে শঁপে দিব।
শর্তের কথা শুনে অ্যাডমিটাস এর চোখ কপালে উঠল।
অ্যাপোলো হেসে বললেন, সমস্যা নেই বন্ধু।
আমি আছি।
সিংহ এবং শূকর টানা রথে অ্যাডমিটাস এবং অ্যাপোলো । এসব অদ্ভুত দৃশ্য গ্রিক মিথের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার কারণ।
শর্ত পূরণ হওয়ায় অ্যালসেষ্টিস আর অ্যাডমিটাস এর বিয়ে হয়ে গেল। ওদিকে অ্যাপোলোর দাসত্ব শেষ।
এবার তিনি স্বর্গে ফিরে যাবেন। বন্ধু হিসেবে অ্যাডমিটাস কে ভালোবাসেন । তার জন্য কিছু করতে চান। অ্যাপোলো নিয়তিদেবীর কাছে গেলেন। নিয়তিদেবীর কাছে থেকে অ্যাডমিটাস- এর মৃত্যুর দিন ও মৃত্যুরোধের উপায় জেনে নিলেন অ্যাপোলো ।
এবং স্বর্গে যাবার সময় সেটি কে জানিয়ে দিলেন। বললেন, বন্ধু, তোমার মৃত্যুকালে অন্য কেউ তোমার পরিবর্তে মৃত্যুপুরীতে যেতে রাজী তাহলে তোমার আর মৃত্যু হবে না।
আশ্চর্য!
হ্যাঁ। আশ্চর্যই বটে বন্ধু। বলে অ্যাপোলো বিদায় নিলেন।
তারপর অ্যালসেষ্টিস এবং অ্যাডমিটাস- এর দিনগুলি সুখে কেটেছিল।
এরপর যথা সময়ে অ্যাডমিটাস- এর মৃত্যুর দিন এল। মৃত্যুর দেবতা থ্যানাটস এল ।
থ্যানাটস। একালের শিল্পীর কল্পনায়।
অ্যাডমিটাস এর মুখেচোখে মৃত্যুর ছাপ। অ্যাডমিটাস হাহাকার করে উঠলেন। কেউই তার বদলে মরতে রাজি হল না। তখন অ্যালসেষ্টিস। এগিয়ে এসে মৃত্যু বরণ করেন।
মৃত্যুর দেবতা থ্যানাটস অ্যালসেষ্টিস -এর আত্মা নিয়ে ছুটল পাতালের উদ্দেশে।
ফরাসি নিউক্লাসিকাল চিত্রকর পিয়েরে পেইরনের (১৭৪৪-১৮১৪) আঁকা The Death of Alcestis
সে সময় গ্রিক বীর হারকিউলিস রাজপ্রাসাদে উপস্থিত ছিলেন। এ লেখার প্রারম্ভে বলেছিলাম যে মাঝেমাঝে অ্যাডমিটাস-এর রাজপ্রাসাদের এসে আতিথ্য বরণ করতেন হারকিউলিস ... হারকিউলিস শুনলেন অ্যালসেষ্টিস মৃত্যু বরণ করেছেন । হারকিউলিস উর্ধ্বশ্বাসে ছুটলেন। ষ্টিক্স নদীর কাছে এসে থমকে দাঁড়ালেন হারকিউলিস ।
যে ষ্টিক্স নদী সম্বন্ধে বলা হয়: A river that separates the world of the living from the world of the dead. মৃত্যুর দেবতা থ্যানাটস পিছন ফিরে দেখল হারকিউলিসকে। মুহূর্তেই মৃত্যুর দেবতার ছোটার গতি দ্রুত হয়ে উঠল ।
ইংরেজ চিত্রকর ফ্রেডেরিক লেইটংএর (১৮৩০-১৮৯৬) আঁকা Hercules Wrestling Death (detail)
তার পর মল্লযুদ্ধে থ্যানাটস কে পরাজিত করে অ্যালসেষ্টিস এর আত্মা ছিনিয়ে এনে অ্যালসেষ্টিস কে আবার জীবিত করে তোলেন। এ লেখার প্রারম্ভে বলেছিলাম: অ্যালসেষ্টিস- এর উপকথায় কোথায় যেন এক মহৎ ইঙ্গিত নিহিত রয়েছে বলে মনে হয় নইলে গ্রিক বীর হারকিউলিস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেনই-বা অ্যালসেষ্টিস কে বাঁচিয়ে তুলবেন?
এই প্রশ্নটি নিয়ে মানুষকে ভাবতেই হয়।
আর এভাবেই মানবসভ্যতার আশ্চর্য মিথগুলো বেঁচে থাকে ...
প্রাচীন গ্রিক নাট্যকার ইউরিপিদেস (৪৮০-৪০৬ খ্রিস্টপূর্ব) অ্যালসেষ্টিস-এর কাহিনী অবলম্বন করে একটি নাটক রচনা করেছেন।
৪৩৮ খ্রিস্টপূর্বে নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয়। নাটক দেখে তৎকালীন গ্রিক দর্শকরা মুগ্ধ হয়েছিল। সে কালে নাট্যকারদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। অ্যালসেষ্টিস নাটকের জন্য ইউরিপিদেস দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।
নাট্যকার ইউরিপিদেস।
ইউরিপিদেস-এর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল মানবিক ; যুগের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিলেন তিনি। ছিলেন নির্মম দাসপ্রথার বিরোধী এবং নারীর প্রতি সহমর্মী। কাজেই অ্যালসেষ্টিস-এর আত্বত্যাগ যে ওই মহান নাট্যকারকে আকৃষ্ট করবে সেটি বোঝা যায়।
ছবি: ইন্টারনেট।
তথ্যসূত্র:
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।